মোবাইল কাহিনী

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

মোবাইল মানুষের একটি নিত্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস। বর্তমানে এটির ব্যবহার ছেলে থেকে বুড়ো সবাই জানে। এমনকি একটা এক মাসের বাচ্চার হাতে মোবাইল দিলেও কান্না বন্ধ হয়ে যায়। বাটন গুলো টেপার শক্তি না পাক অন্তত চুষে ক্ষান্ত হয়।

আমি যখন প্রথম মোবাইল ব্যবহার করি তখন আমি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। নতুন মোবাইল কিনেছি তাই আগ্রহের সীমা নেই। যেখানে সেখানে মোবাইল বের করে হিরোগিরি দেখাতাম।মনে পড়ে….একদিন আমার এক বন্ধুর দোকানে মোবাইল চার্জে দিয়ে আমি বাইরে গিয়েছি। ফিরে এসে দেখি বন্ধুর হাতে আর মাথায় মোটা ব্যান্ডেজ। সে মোবাইল ব্যবহার করা জানতো না(গ্রাম্য ছিলো)। আমি বের হবার কিছুক্ষণ বাদে মোবাইল নাকি কাঁপতে শুরু করেছে (ভাইব্রেশন মোড ছিলো)। বোমা আছে ভেবে ভয়ে দোকান থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে ধরাম করে পড়ে গেছে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি চারটা মিসকল!…..

এভাবে দিনকাল চলছিলো। কিছুদিন বাদে ইন্টারনেট চালানো শিখলাম।আমি আর ভাইয়া মজা করে Gp Wap এ ঢুকি। একদিন কষ্ট করে অন্য সাইটে যাওয়া মাত্র ১৫ টাকা কেটে নিলো। রাগে মোবাইল কে আছড়ে ফেলে দিলাম। বেচারা ফোন সেই সময়েই মৃত্যুবরণ করলো।

এরপর প্রায় দুইমাস মোবাইল ছাড়া চলেছি। এরপর নামি ব্রান্ডের টাচ মোবাইল কিনলাম(লক্কড়ঝক্কড়)। ব লিখতে গিয়ে ক হয়ে যায় (টাচের সমস্যা ছিলো)। নেট চালানোও শিখেছি। এক মামার বদৌলতে ফেসবুক খুললাম।ততদিনে সব বন্ধুরাও মোবাইল কিনেছে।……একদিন মোবাইলের ক্যামেরা কাজ করছেনা দেখে ক্যামেরার লেন্সে একটু কেরোসিন দিলাম ( সার্ভিসিং এর দোকানের পেট্রোলকে কেরোসিন মনে করেছিলাম) কিছুক্ষন বাদে দেখি ক্যামেরা আর চালু হয় না। আর রাত হতে হতেই মোবাইলের ডিসপ্লে আর কাজ করছে না। নিজে নিজে সেটা খুলে দেখি ক্যামেরার ফুটো দিয়ে সব কেরোসিন ডিসপ্লেতে বন্যা ঘটিয়ে দিয়েছে(হায় কপাল!এই ছিলো!)। অনেক কষ্টে সেটা কোনমতে ঠিক হলো অন্ধ মানুষের মত। হাতরায়া হাতরায়া কিছু দেখা যায়।…..

সেই মোবাইল দিয়ে বন্ধু শাহিনকে অনেকবার ফোন দিচ্ছি কিন্তু সে ফোন তুলছেই না।আমার মেজাজ বিগড়ে গেলো, কিছুক্ষণ বাদে সে যখন ফোন তুললো হ্যালো বলার আগেই তুমুল বেগে গালি শুরু করে দিলাম। যতরকমের গালি আছে তা এক নাগারে শেষ করার পর ওই পাশ থেকে বললো “কায় বাহে তোমরা মোক এমন করি গাইলানছোল ক্যা?” বুঝলাম এটা আমার বন্ধুর বাপে ফোন রিসিভ করেছে। লজ্জা আর ভয়ে ফোন কেটে দিলাম। পরদিন গুনে গুনে পঞ্চাশটা লাথি হজম করতে হয়েছিলো। আর সেই লাত্থির চোটে পিছনের পকেটে থাকা আমার একমাত্র অন্ধ ফোনটি অকালে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছিলো। আবার ফোন ছাড়া চলা শুরু করলাম। প্রায় তিন মাস পর ফোন কিনতে সামর্থ্য হলাম।

…….নতুন ফোন কিনেছি তাই সবসময় চালাই।কিছুদিন বাদে একদিন দুপুরে ভাত খেতে বসেছি, মোবাইল টিপতে টিপতে পিছলে গিয়ে সামনে রাখা ডালের গামলায় টপাক করে ডুবে গেলো। ভাত ফেলে ডালের গামলায় হাত ঢুকিয়ে দিলাম। ততক্ষণে সাধের মোবাইল আইসিইউতে চলে গেছে(নতুন বিয়ে করেই তালাক দেওয়ার মত আবস্থা হলো)।এদিকে ডালের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দেওয়ায় বাড়িতে মা ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। প্রায় তিন দিন বাড়িতে ঠিক মত খাওয়া হয় নি।…

এভাবে চলতে থাকলো আমি বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছি। নতুন প্রেম জুটেছে ফেসবুকে। বান্ধবীদের সাথে কথার চেয়ে বেশি আড্ডা হয় মেসেজে।দিন খুব ভালোই চলছিলো।….

একদিন আমার খুব ঘনিষ্ট একজন আপু আমাকে মেসেজ করলো “কেমন আছো?” আমি উত্তর দিলাম “ভালোই”। কিছুক্ষণ বাদে দেখি তিনি আমাকে ফোন দিয়েছেন। রিসিভ করতেই গালিগালাজ করলেন। কিছু বুঝতে না পেরে কেটে দিয়ে আবার লগ ইন করলাম। আপুর মেসেজ অন করতেই চক্ষু চড়কগাছ! আমার এক বন্ধুকে একটা প্রেমের মেসেজ লিখেছিলাম কপি হয়ে চলে গেছে।আর তিনি তাতেই ক্ষেপেছেন।……

এভাবে চলছে দিনকাল। অনেক ভাবে বন্ধুদের সাথে হাসি তামাসা করতে করতে পরিচিত হয়ে উঠেছি। সবার চাইতে আপন বন্ধু আমার মোবাইল। আমি আমার সব বন্ধুকে এই মোবাইলেই খুজে পাই।…. মনে পড়ে বিছানায় শুয়ে মোবাইল চার্জ দিতে গিয়ে বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে আমার পাশের রুমের একবন্ধুর চোখ প্রায় অন্ধ হয়ে গেছিলো। 

শেষকথাঃ এখন ব্যাস্ত থাকায় মোবাইল টেপার সময় হয় না। তবে ভালোও লাগেনা। তাইতো গভীর রাতের অবসরেও মোবাইল ছুঁয়ে দেখি।

রচনাকালঃ ( ২২শে মে ২০১৮ )

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

One comment on “মোবাইল কাহিনী

মন্তব্য করুন