আমি মাথা নিচু করে বসে তাদের কথাবার্তা শুনছিলাম । মাথা নিচু করে ছিলাম যেন তারা নিজেদের মত কথা বলতে পারে,আমি আমি শুনতে পারি।
হাসিমুখো অফিসার আবার বলে উঠলো,” ক্ষমতা দেন,বড়লোক হই”
মজিদ সাহেব খানিকটা বিরক্ত হয়েই বললেন”বল্লাম না ক্ষমতা দেখাইবার পারবোনা”
“আরে আসেন আমাদের সাথে দুইটা খান”
“তোরা খা”
“আচ্ছা গেলাম, ক্ষিদা লাগলে আসিয়েন, আচ্ছা দশটা টাকা দেন পান খাবো”
‘আমি কেমনে টাকা দেবো, আমি কি ভিক্ষগা করি?’
“তো টাকা না থাকলে পান খান কেমনে ?”
“মায়ের থেইকা টাকা নিয়ে আসছি”
“হাহা,এই বয়সে মায়ের কাছ থেকে টাকা নেন?”
“শুন, মায়ের কাছে সন্তানের কোন বয়স নাই, সবসময় ছোট” ।
হুম বলে অফিসার সাহেব কিছুক্ষন চিন্তা করলেন বোধয় কিভাবে মজিদ সাহেবকে আটকানো যায় কথার পেঁচে । অফিসার আবার বলে উঠলেন “ টাকা জমান না?”
মজিদ এক গাল হেসে বললেন”আমার জমানোর দরকার নাই,তোরা জমা”
“আপনার দরকার নাই, তবে আপনার মৃত্যুর পরে তো দরকার হবে, এখন তো মানুষ মরলেও দাফনে ৩০ হাজার লাগে”
“তুই জমা তোর দাফনের জন্য”
“আমি তো জমাই”
“ভালা, ৩০ হাজার পার হইসে”
“অন্নেক আগেই”
“তাইলে আর জমাইস না,বেশি জমায়ে লাভ কি ।লাগবে তো এই ৩০ হাজার ই,তোর এমনেও টাইম হইসে ,আর জমাইস না”।
এই পর্যায়ে আমাদের হাসিমুখো অফিসার কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন বোধয়। তিনি মুখ গোমড়া করেই যে পথে এসেছেন সে পথ মাপলেন।
মজিদ সাহেব এর মধ্যেই আরেকটা পান খেয়ে এসেছেন। এর মধ্যে তিনি আমার সাথে কথা বলা শুরু করেছেন। কথা বলতে তিনি বলছেন আমি শুনছি, আর মাঝে মাঝেই হু হু করছি। কারন তার কথার বেশির ভাগের অর্থ আমি ধরতে পারছিনা। আবার মনে হচ্ছে কথা গুলো, নির্থক ও নয়।
তিনি আমাকে বললেন “কি মন খারাপ?”
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলাম,”না”।
তিনি আবার ধ্যানে মগ্ন হলেন। আমার মনে হলো উঠার সময় হয়েছে। এ বেলা আর না। এক বন্ধুর বাসায় যাবো,তারপর বাড়ি যাবো।
আমি উঠে হাটা দিতেই মজিদ সাহেব পেছন থেকে আমাকে ডাক দিলেন,
“কই যান, বাড়ি যান বাড়ি, বন্ধু নাই”
তিনি অনেক কিছুই বলছেন ,যার বেশির ভাগটা আমি বুঝছিনা। তবে বন্ধুর বাড়ি যাবো এ কথাটা ঠিক বলেছেন!
চিন্তা করলাম, বন্ধুর বাড়ি যাবো নাকি যাবোনা, লোকটা বাড়ি যেতে বলেছে বলেই আমাকে বাড়ি যেতে হবে নাকি!
যেই ভাবা সেই কাজ হাটা দিলাম বন্ধুর বাড়ির পথে। অনেকদিন পর বন্ধুর সাথে আজ দেখা হয়ার কথা। বন্ধু বৌনিয়ে বাড়িতে আমার জন্য অপেক্ষা ক্করছে। সকালেই কল করে আজকের মিটিং কনফার্ম করেছে সে।
আবার মজিদ সাহেব বলছে বন্ধু থাকবেনা, কিন্তু তার কথা আমি বিশ্বাস করবো কেনো! বাড়ি না থাক্ললে বন্ধু নিশ্চই আমাকে বলত।
চিন্তা করতে করতেই আমি হাটা ধরলাম। অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে যখন বন্ধুর বাড়ি কাছে পৌছুলাম , তখন দেখলান শুধু বন্ধু নয় বাড়িতে আরো লোক আছে। নিমিশেই আমি মজদ সাহেবের কথা ভুলে গেলাম। কিনা কি বলেছে সে!
যত কাছে যাচ্ছিলাম, একটা সরগোল কানে আসছিলো। কাছে গিয়ে দেখলাম একটা লাশের গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে ! খবর নিয়ে জানলাম আমার বন্ধু নেই! বেঁচে নেই!
বারবার মজিদ সাহেবের কথাটা কানে বাজতে লাগলো “ “কই যান, বাড়ি যান বাড়ি, বন্ধু নাই” । (সমাপ্ত)