সুকান্ত ভট্টাচার্যঃচিরতরুণ কবির চোখে-জীবনঃ পর্ব ১  

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
সুকান্ত_ভট্টাচার্য,bio,biography

আমার সাথে তাঁর পরিচয় ছাড়পত্রের মাধ্যমে।  বইটা কে বা কারা আমার হাতে তুলে দিয়েছিলো আমার মনে নেই। এতটুকু মনে আছে তখন থেকেই সুকান্তের সাথে একান্ত আলাপন গড়ে উঠেছিলো মনের অন্তরালে।  

 

 

  “যে শিশু ভূমিষ্ঠ হলো আজ রাত্রে

                তাঁর মুখে খবর পেলুমঃ

               সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,

               নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার

               জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে

 

                                           – ছাড়পত্র

                                              – সুকান্ত ভট্টাচার্য

 

এতটুকু পড়েই থমকে দাড়ালাম, মনে হলো এ জীবন যেন নিরন্তর অধীকার আদায়ের জীবন। কবির চোখে  জগৎটা দেখতে পেলে হয়ত আমার চোখ-ও অধীকার আদায়ের জন্য স্ফুলিঙ্গ ঝরাতো! সুকান্ত ভট্টাচার্যেরে জন্মস্থান এর সাথে আমার ধীরে ধীরে যেন একটা সম্পর্ক গড়ে উঠছে।সে কথায় পরে আসছি। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার , উনশিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া সুকান্তের যেন জীবন দর্শন ই ছিলো জীবন-বদলে দেওয়া!  নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া সুকান্তের কবিতার প্রতিটি চরন যেন ছোটদের-বড়দের-সকলের অধীকার আদায়ের আর প্রাপ্ত সম্মান অনাদায়ে বিদ্রোহের দাবানল প্রজ্বলিত করত।

 

প্রবেশিকা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন কবি। থোড়াই  কেয়ার আছে তাঁর, যে কবি কালের কবি, যে কবি দেশের-দশের ,মহাকালের কবি   কোন-পরীক্ষার এক-গুচ্ছ প্রশ্ন তাঁর জীবন-দর্শনে কি-ই বা পরিবর্তন-পরিবর্ধন আনতে সক্ষম হবে! আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পরোয়া তিনি করেন নি, জীবন-পরিক্ষায় যিনি ভয়হীন ছিলেন, তাঁর কাছে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপার-সেপার নেহায়েত নস্যি ছিলো নিশ্চই।  

এই চিরতরুণ কবির চোখে শপথ ছিলো পৃথিবী বদলে দেওয়ার, জীবন বদলে দেওয়ার। ছাড়পত্রের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে এই অঙ্গীকার । আগামীর পৃথিবী নব-জাতকদের জন্য যেন হয় সুন্দর জীবনের অভয়ারণ্য ,সেই প্রত্যয়  কবির চরনে মিলে মিশে একাকার। কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়ি-এখানেই কেটেছে কবির জীবনের বেশিরভাগ সময়। কবি ছেলেবেলায় হয়েছিলেন মাতৃহারা। কবির অতি-প্রিয় বন্ধু ছিলো অরুনাচল বসু। তাই বুঝি সুকান্তের লেখা চিঠির অধিকাংশ এই অরুনাচলের প্রতি! সুকান্তের চরনাস্পর্শে আসা সেই বাড়িটি কালের গর্ভে এখনো টিকে আছে। সে বাড়ির পাশেই আরেকটি বাড়িতে বাস তাঁর ভাই বিভাস ভট্টাচার্যের। যে কবি অকালে মা হারিয়েছিলেন, সে মাতৃহারা কবি বুঝি সদ্য-ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর অধিকার আদায়ের দায় নিয়েছিলেন নিজ-হস্তে, কালি ও কলমে।

কবির চোখে কেমন ছিলো জীবন? সে জীবনের খোজ পাওয়া আমার কম্ম নয়, তবুও সাধনা করতে দোষ কি! সুকান্ত কে জানার জন্য ,তাঁর চোখে জীবন কে দেখার জন্য , এবং আপনাদের সবার সাথে কথা গুলো ভাগ করে নিতে আমার এই লেখার যাত্রা শুরু। দেখি কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়!         

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া