আষাঢ় মাস,দিন-রাত কান্না করেও যেন আকাশের চোখের জল শেষ হচ্ছে না। চারিপাশ আজ অনেক শান্ত। পরিবেশের সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষ গুলো যেন আপন গতিতে ছুটছে।
আমি রিসাদ। বর্ষার এই সু-মধুর সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ কপি হাতে বারান্দার এক পাশে দাঁড়ায়।কপিতে চুমুক দিতে দিতে পরিবেশকে পরম আদরে দেখতে থাকি। হাঠৎ ফোনটা বেজে উঠল! ফোনের উপর চোখ রাখতেই দেখি তিনা কল করেছে।
-হ্যালো…কেমন আছ?
-আলহামদুলিলাহ্। তুমি কেমন আছ?
-আলহামদুলিলাহ্।
-কলেজে আসবা কখন?
-ইনশাল্লাহ্ একটু পরেই বের হব। তুমি আসবা কখন?
-আমি আজ যাইতে পারবো কি-না শিওর বলতে পারবো না।
-কেন ? কিছু হয়েছে ?
-মায়ের শরীলটা ভাল না।তাই যেতে পারব না।
-ডাক্তার দেখায়েছ ?
-হুম, ডাক্তার দুই দিনের ঔষধ দিয়েছে।বলেছে,হাসপাতালে নিয়ে কিছু চেকাপ করাতে হবে। খুব টেনশনে আছি।
-টেনশন কারো না। সব ইনশাল্লাহ্ ঠিক হয়ে যাবে।
-তাই যেন হয়। আচ্ছা,এখন রাখছি।
-ওকে।কোন সমস্যা হলে বল।
-ওকে।
এখন তিনার সম্পর্কে কিছু বলি:-
তিনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায়। দেখতে মাশ্-আল্লাহ।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। সব সময় পর্দাশীল থাকতে পছন্দ করে।কথা একটু কম বলে। অর্থ্যাৎ প্রয়োজনে অতিরিক্ত কথা বলে না। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনা সবার বড়। ছোট ভাই ক্লাস ফোর-এ এবং বোন সেভেন-এ। বাবা পুলিশের কনস্ট্রাবল এবং মা একটা বে-সরকারী স্কুলে শিক্ষিকা। বাবা গত পাঁচ বছর আগে সন্ত্রাসীদের গুলিতে গত হয়েছে। বাবার জমানো পুঁজি ও মায়ের বেতনে গত চার বছর মোটা-মোটি ভালই চলেছে। কিন্তু বর্তমানে সব কিছুর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়াতে আন্টি হিমশিম খাচ্ছে। তাই তিনা পড়া-শোনার পাশা-পাশি দুইটা টিউশনি করাই।সকালে ও সন্ধ্যাই।পড়া-শোনাতে ভাল,তাই টিউশনি পেতে সমস্যা হয় না। টিউশনিতে যা পায়,তা থেকে নিজের চলার মত রেখে বাকি টাকা আন্টির হাতে দেয়। এভাবেই চলছে তাদের জীবন।
সকাল ৯:০০ টা। মা নাস্তা তৈরি করে টেবিলে পরিবেশন করে ডাকতে শুরু করে। আমি ও বাবা দ্রুত টেবিলে চলে আসি এবং নাস্তা করা শুরু করি।
এবার আমার সম্পর্কে একটু বলি:-
আমি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। একমাত্র সন্তান গুলা কেমন তা হয়তো আপনাদের আর বলা লাগবে না। আমিও তার ব্যাতিক্র ছিলাম না। বাবা-মা দু-জনাই সরকারী ব্যাংকে চাকরি করে।ফলে টাকা-পয়সার কোন অভাব নাই।টাকার অভাব না থাকলেও একটা জিনিসের খুব অভাব ছিল! সেটা হল ,বাবা-মায়ের কাছে পাওয়া সময়।তবে কখনোই বলব না ,তারা আমাকে কম ভালবেসেছে। যতটুকু সময় পেয়েছে আমাকে মাথাই তুলে রেখেছে। তারপরেও যেন একটা গ্যাপ্ রয়ে গিয়েছে। এই ভাবেই বেড়ে উঠেছি।ইচ্ছা মত টাকা উড়ায়েছি। বন্ধু-বান্ধব দের সাথে সময় পার করেছি।ভাবতাম,এটাই হয় তো জীবনের মূল অর্থ। কিন্তু এই অর্থকে পাল্টাতেই হয় তো সৃষ্টিকর্তা তিনাকে আমার কাছে পাঠায়।
কলেজের ভিতর বন্ধুদের সাথে বাইক চেপে বসে আছি, এমন সময় চোখে পরলো একটি মেয়েকে। পরম পর্দায় মোড়ানো আর দশটা মেয়ের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বন্ধুদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মেয়ে টিকে দেখতে থাকি।পরের দিন একাই ওখানে দাঁড়ায়ে থাকি।আমার প্রিয় বন্ধু সিফাত অামাকে বাসায় গিয়ে না পেয়ে ফোন করে:-
-হ্যালো, তুই কই?
-আসি এক জায়গাই।
-কই বল না!
-রাখ্,পরে ফোন করছি।
বলে কেঁটে দিই।কারণ,তখন মেয়েটিকে আসতে দেখি। এবার মেয়েটা আমাকে লক্ষ্য করে। কিন্তু হালকা তাকায়ে চলে যায়।তৃতীয় দিন সিফাতকে নিয়ে যায়। ঠিক একই সময় মেয়েটি আসে।মেয়েটি যখন আমাদের অতিক্রম করে তখন সিফাত আমাকে ঠেলে পাঠায় আর তার সামনে গিয়ে সব বলতে বলে। কিন্তু আমার হাত-পা যেন স্থির হয়ে যায়।মেয়েটি এবারও এগুলা লক্ষ্য করে এবং চলে যায়। চতুর্থ দিন মেয়েটি নিজেই আমার কাছে আসে এবং বলে,কিছু দিন লক্ষ্য করছি আপনি আমাকে ফলো করছেন।আপনি কি আমাকে কিছু বলতে চান? তাহলে প্লিস্ বলেন।আর না বলতে চাইলে আমাকে আর ফলো করবেন না। আমি কি বলব বোঝতে পারছি না।মেয়েটা যখন আমার কাছ থেকে চলে যাচ্ছে ঠিক তখন পিছু থেকে বলে উঠি,“আমি তোমাকে ভালবাসি।তোমাকে আমার অনেক ভাল লাগে। ”মেয়েটা আমার দিকে পিছু ফিরে কিছুক্ষন তাকায়ে রইলো এবং কি যেন ভেবে কিছু না বলে চলে গেল।……
““গল্পের বাকি অংশের জন্য AmarJiboni.com চোখ রাখুন”””