ঈদের স্মৃতি

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

                                                                                     ——ঈদের স্মৃতি————

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক, পবিত্র রমজানুল মুবারাকের শুভেচ্ছা জানাই। আজ আমার লেখায় তুলে ধরেছি অতীতের স্মৃতিপট থেকে ভেসে আসা কিছু স্মৃতি,আপনাদের ভালোই লাগবে অন্তত এ আশা করতে পারি।

ছোট বেলায় আমরা প্রত্যেকে ঈদে কতই না মজা করেছি। ঈদের আগের রাতটা আমাদের কাছে ঈদের দিনের চেয়েও বেশি আনন্দময় হতো। আমরা পাড়ার ছেলেরা সবাই মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে সবাই এক হতাম। তারপর চলতো আমাদের দৌড়ে চলা! সাইকেল মেরামতের দোকানের উপর থেকে টায়ার চুরি করে সেই টায়ারে আগুন লাগিয়ে আমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতাম। মাঝে মাঝে সেই টায়ারের জ্বলন্ত অংশ দিয়ে যুদ্ধ করতাম। সকালে দেখা যেত টায়ারের কালিতে প্রত্যেকেই ছোটখাটো ভুতের বাচ্চা হয়ে গেছি।ঈদের আগের দুই মাস থেকে টাকা জমানোর ইতি ঘটতো এই আগের রাতেই পটকা কেনার মধ্যেই! অনেকেই আবার নারিকেল চুরি করতো। আমি অবশ্য কোনদিন নারিকেল চুরি করিনি। সাহস পাইনি, কিন্তু চুরির ভাগ খেয়েছিলাম। চুরি করা নারিকেলের স্বাদ অন্যরকম, হারাম জিনিসে মজা বেশি, শয়তান ঢুকে থাকে, তাই মজাও বেশি লাগে। একবার এক ঘটনা ঘটেছিলো—

আমরা পটকা কিনে নিয়ে এসেছি পাড়ার কয়েক জন মিলে।বুড়িমার চকলেট বোম পাওয়া যেত ৬০ টাকা ডজন করে। তখন আমাদের বাড়ির সামনে পুলিশ ফাঁড়ি ছিলোনা। পটকা ফুটাতে ফুটাতে সবাই মিলে বুদ্ধি করলাম এবার রাস্তার চলন্ত গাড়ি গুলোর সামনে ফুটাবো। আসলে আমরাতো তখন বারো থেকে আঠারোর কোটায় সবাই! তাই আমাদের ভাবনা চিন্তার মধ্যে কোন খেয়াল ছিলোনা যে এর ফল কি হতে পারে। ড্রাইভার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সিডেন্ট করতে পারে তার বিন্দু মাত্র ভয় ছিলোনা। আমরা ড্রাইভারকে ভড়কে দিয়ে চেয়েছিলাম।যেই কথা সেই কাজ,আমরা চুপটি করে বসে থাকলাম কখন গাড়ি আসে। একটা গাড়ির আলো দেখতেই, আমাদের মধ্যে একজন পটকায় আগুন দিয়ে ছুড়ে মারলো গাড়ির সামনে। আর তিন সেকেন্ড পর দুম! আমরা এরপরের টা আশা করিনি! না পাঠক, এক্সিডেন্ট হয়নি।উল্টো, আমরা জান বাঁচাতে দৌড় মেরেছি সবাই! আমরা কেউই বুঝতে পারিনি সেটা পুলিশের গাড়ি ছিলো! গাড়ির ব্রেক কষে আমাদেরকে তাড়া করেছে। ভাগ্যিস গুলি করেনি! নইলে আমাদের মর্গে খুঁজে পাওয়া যেত।দৌড়ানি খেয়ে পরবর্তীতে আর কোন ঈদে পটকা ফুটানোর সাহস পাইনি।

 

ঈদের রাত্রে আমরা দল বেঁধে গোল্লাছুট খেলতাম।কার কত টাকা জমেছে তা হিসেব করতাম। তবে সাবধান থাকতে হতো, কেউ ধার চাইলে তার ধারেকাছেও যেতাম না।পাঠক, একটা মজার ঘটনা বলি– একবার আমি ঈদের জন্য অনেকদিন থেকে টাকা জমানো শুরু করেছিলাম। সে সময় বর্ষাকাল হওয়ায় আমার টাকাতে ছত্রাক ধরেছিলো, ফলে আমি টেবিলের উপর টাকা বিছিয়ে শুকাতে দিলাম। সেই টাকা গুনে দেখিনি কত হয়েছিলো। মা এসে দেখে ফেললেন, সেই টাকার সাথে আরো কিছু জোড়া দিয়ে আমাদের বাড়িতে একটা পুরাতন রংচঙা সাদাকালো টিভি এলো। আমরা মজা আর আনন্দে সারাদিন শুধু টিভির এন্টেনা ঘুরাতাম। কিন্তু ঝিরঝিরে বিটিভি ছাড়া আর কিছু আসতো না। প্রিয় পাঠক, রমজানের রোজায় তো কথাই নেই,ছোটবেলায় যদিও রোজা দিতাম সারাদিন শেষে পাঁচটার পর অন্তত পঞ্চাশবার ঘড়ি দেখা হয়ে যেত। ইফতারির আগে আগে পেটের ভিতর একতারা বাজতো, আর সেই একতারার সুর মুখ দিয়ে করুণ স্বরে চিঁ চিঁ করে বাজতো।

 

–আরেকবার ঈদে সবার কাপড় কেনা হয়েছে শুধু আমার কিছু কেনা হয়নি। সেদিন আমাদের এলাকায় হাট ছিলো। বাবা জামা কিনে দিতে চাইলো, কিন্তু সময় পেলো না। বর্ষাকাল বলে বাবা দোকান ছেড়ে যেতেও পারছেন না। শেষমেশ কিনলো ঠিকই, বাড়িতে এসে দেখি জামার পকেট নাই! আমার সেই কি কান্নাকাটি! সেদিন বাবা দোকানে না থাকায় প্রায় তিন লিটার তেল পানিতে নষ্ট হয়ে গেছিলো। খুব খারাপ লেগেছিলো,সেদিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাবাকে বলিনি, বাবা আমাকে জামা কিনে দাও…….. এখন আর আগের মত টাকা জমাতে হয় না। আগের মত আনন্দ নেই, আসলে আগের দিনগুলো হারিয়ে গেছে অতীত নামক কালের গর্ভে। তবুও, পাঠক, আমরা নতুন সব দিনের প্রত্যাশা করি। ঈদ আমাদের মাঝে ফিরে আসে প্রতি বছর, নতুন কিছুর বারতা নিয়ে। পরিশেষে, সবাইকে পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা” ঈদ মুবারাক“।

                   ঈদ মুবারক

 

লেখাঃ সাঈদ আল রবি

রচনাকালঃ ৩০শে মে ২০১৯।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া