আমি ও আমার জীবন

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

আমার জন্ম সালটা ছিলো মূলত ১৯৯৪। বাবা মায়ের কোলে এসেছিলাম পরিবারের ২য় সন্তান হিসেবে। ছোট থেকেই প্রচুর বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ছিলাম। আমরা যখন একটু বড় হয়েছিলাম, তখন আমার বাবা চায়ের দোকান শুরু করেন,আমি তখন স্কুলে যেতে আরম্ভ করি। আমরা দুই ভাই (ছোট টা ছোটই ছিলো) মোটামুটি ভালো ছাত্র ছিলাম। স্কুলে যেতাম,  পড়াশোনাও ভালো করতাম। যখন একটু বড় হলাম তখন থেকেই আমি আমার বাবাকে সাহায্য করতাম, আমিও আমাদের দোকানে বসতাম। ক্লাশ ওয়ান থেকে ভালো ছাত্র হওয়ায় রোল মোটামুটি দশের ভিতরে থাকতো। যখন আরেকটু বড় হলাম তখন আরো ভালো ভাবে দোকানে সময় দেওয়া আরম্ভ করি( বাবা খুব কষ্ট করে দোকান চালাতেন)। বিকালে খেলাধুলা করার সময় কম পেতাম। সত্যি বলতে আমি এখনো ক্রিকেট বা ফুটবল ঠিকমত খেলতে পারিনা। স্কুল থেকে এসেই খাওয়া শেষ করে দৌড়ে দোকানে যেতাম। যত সময় হোক না কেন আমি বাবাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়ার চেষ্টা করতাম। আসলে সেই দিনগুলো আমার আজকের জীবনের মূল প্রেরণা তা আগে বুঝতে পারিনি।  যখন আমি মাধ্যমিকে উঠি, তখনো আমি দিনরাত দোকান করতাম।মাধ্যমিকে এসে আমার বন্ধু জুটেছিলো প্রায় ডজন খানেক। আমরা একটা শক্তিশালী বন্ধুগ্রুপ ছিলাম। সেই গ্রুপে আমি,সফিয়ার, রহমান,রাজ্জাক, শাহিনুর(নিরীহ), রিপন(বাঘা), বাশার(বিগবস) সহ আরো অনেকে ছিলো। স্কুল জীবনের অনেক ঘটনা আজো মনে পড়ে, যেমন রহমান,বাশারের বড় চুলের উপর স্যারদের প্রতিদিনকার আক্রমণ আজো সবাইকে হাসায়। স্কুল জীবনের শেষে যখন ক্লাশ টেনের টেষ্ট পরীক্ষা দেওয়া হলো, অনেকেই এসে বলতো পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। আর আমরা সেটা শুনে বুদ্ধি করতাম কিভাবে পরিক্ষা ভেস্তে দেওয়া যায়! কিন্তু কোনবারই বুদ্ধি করার বেশি কিছু করতে পারিনি। ২০১১ তে মাধ্যমিকের যেদিন ফল বের হবে, সেদিন আমরা তিনজন পালিয়ে পাশের এলাকা গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম যদি রেজাল্ট খারাপ হয় তাহলে অই অবস্থায় ঢাকা পালিয়ে যাবো। দুপুর বারোটা হতে হতেই আমরা সবাই একে অপরকে জড়িয়ে কান্নাকাটিও করেছি সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাবো বলে! একটা বেজে যাওয়ার পর অবশ্য ক্ষিদার চোটে বাড়িতে এসে খাওয়া দাওয়া করেছিলাম!  দুপুর দুইটার পর যখন রেজাল্ট পেয়েছিলাম, তখন আমরা দুইজন( আমি আর সফিয়ার) একসাথে আর বাকিরা বাড়িতে খাওয়ার জন্য চলে গেছে। যাহোক রেজাল্ট সবারই কাছাকাছিই হলো। সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যে যার মত খাওয়ালাম।

কিছুদিন পর যখন কলেজে ভর্তি হলাম,  নতুন কলেজের পরিবেশটা শুধু নতুন মনে হতো( বাড়ির পাশের কলেজ তবুও)। মনে পড়ে, কলেজের প্রথমদিন যখন সবাই কে ফুল দিয়ে বরণ করা হচ্ছিলো তখন সিনিয়র হাবিব ভাই বলেছিলেন”তুমি কার সাথে কলেজ এসেছো?” আমি উত্তরে বলেছিলাম,” আমি এই কলেজের নতুন ছাত্র”।  তিনি অবাক হয়ে গেছিলেন। আসলে আমি অনেক খাটো আর পিচ্চি চেহারার ছিলাম।
কলেজে উঠে ছেলেগুলো চাইতে মেয়ে গুলোই বেশি বন্ধুত্ব তৈরি করেছিলো আমার সাথে। এদিকে আমার যারা মাধ্যমিকের বন্ধুরা ছিলো তারাও আমার ভালো বন্ধু হয়েই থাকলো।
দোকানদারিও করতেই থাকলাম। তবে ইন্টারে আমি অতটা ব্যবসায়ীক দায়িত্ব পালন করিনি। বাবা বুঝতেন আমি বড় হয়ে গেছি তাই স্বাধীনতা দরকার। ইন্টারে যে বান্ধবীগুলো পেয়েছি তার মধ্যে ইতি,সাবিনা আর মৌরির বাড়ি প্রায়ই যেতাম।আজ আর কারো সাথে দেখা হয় না। যাহোক, ফাস্ট ইয়ার থেকে সেকেন্ড ইয়ারে উঠলাম প্রথম বর্ষের কলেজ পরীক্ষায় ৬ বিষয়ের মধ্যে তিন বিষয়েই ফেল! আজো জানিনা ভালো পরীক্ষা দিয়েও কেন ফেল করেছিলাম! পরে ভাইয়াকে নিয়ে গিয়ে “পাশ করবো” এই শর্তে ২য় বর্ষে ভর্তি হই।

আমার এক মামা অভিভাবক হিসেবে রাস্তার একজনকে নাস্তা খাইয়ে প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে গেছিলো! তখন থেকেই ভাবছিলাম কিভাবে ভালো পাশ করবো?। এদিকে কলেজের বাংলা স্যারের সাথে কোন বিষয় নিয়ে তর্ক করায় আমার উপর মহা ক্ষেপে ছিলেন,তাই বলেছিলেন যদি আমি কোন রকমে টেস্টে এক সাবজেক্টেও ফেল করি তাহলে তিনি আমার ফরম ফিলাপ করাবেন না। আর সেই জেদে ভালো ভাবে পড়াশোনা শুরু করি ফলে টেস্টে আমি অল সাবজেক্টে পাশ করে আমার বিভাগে ২য় স্থান অধিকার করি। আর সেই রেশ ধরে ফাইনালেও প্রথম বিভাগে পাশ করি। তারপর কিছুদিন পর ভর্তি পরীক্ষা শুরু হলো, আমার ইচ্ছা ছিলো বাড়িতেই থাকবো। তাই ডিগ্রীতে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাবা মা আর বিশেষ করে ভাইয়া চাইতো আমি আরো ভালো কিছু করি। তাই আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে হলো। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকায় আমি তাত হই নি। তাই বাধ্য হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর ফরম তুললাম। বাড়ি থেকে ষাট মাইল দূরে লালমনিরহাট সরকারী কলেজে পরীক্ষা দিলাম। কিন্তু কোন মেরিটেই রেজাল্ট না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়লাম। তবে ভাগ্যভালো সেকেন্ড মেরিটে চান্স পেয়ে গেলাম। আর চলে গেলাম লালমনিরহাট। বন্ধুদের অনেকের মাঝে আমি ছিলাম একটা প্রস্ফুটিত গোলাপের মত! আমি অনেকের মাঝে জনপ্রিয় হওয়ায় প্রেমের বাতাসও দরজায় কড়া নাড়তো! কত মেয়ের মনের রাজপুত্র ছিলাম আমি তাও নিজে জানতাম না! যখন আমি অনার্স ২য় বর্ষে উঠি,সালটা ২০১৫,তারিখ ২৯ নভেম্বর, জমি জায়গার ব্যাপারে প্রতিপক্ষের আঘাতে মাথায় চোট লাগে আমার। সেলাই দেয়া হয় মাথায়, সেই আঘাতের যন্ত্রণা আজো বয়ে বেড়াচ্ছি। আটদিন হাসপাতালে থাকার পর বাড়িতে দিন পনেরো বিশ্রাম করার পর লালমনিতে ফিরে গেলাম। কিন্তু আজো ভাবলে কান্না পায় যে আমি সেখানে অনেককেই চিনতে পারছিনা।
মাথায় আঘাতের দিন থেকে তার আগের মাস দুয়েকের( বেশিও হতে পারে) অনেক স্মৃতি আমার মনে নেই। অথচ সেই দিন গুলোকে এখনো আনি হাতরে বেড়াই স্মৃতির পাতায়। এই সমস্যা আমি বুঝতে পেরেছিলাম আরো এক বছর পর। সেই আঘাতের কারণে আমার চোখে -2 পাওয়ারের চশমা উঠেছে। একমাসে এক দুইবার প্রচন্ড মাথা ব্যাথার ভোগান্তি আসে। তখন টলফেনামিক এসিড খেতে হয়।যাহোক, এটা আরেকদিন আলোচনা করা যাবে। ২০১৬ সালের জুনে অনার্স ২য় বর্ষে আমি আর বৃষ্টি বিয়ে করি।  বাড়িতে প্রথমে মেনে না নিলেও পরে মেনে নিয়েছিলো আমার প্রচন্ড অসুস্থতা আর আমার ভবিষ্যতের কারণে। এরপর থেকে টিউশানিতে যুক্ত হয়ে পড়লাম। সারাদিন পড়াই আর রাতে একটু করে পড়ি সাথে বউকে পড়াই(ব্যবস্থাপনা দুজনই)। এভাবে পড়িয়ে আর পড়ে ৩য় আর ৪র্থ বর্ষ পাড় হয়ে গেলাম।
রংপুর মেডিকেলের ডাক্টার আমাকে বলেছিলো কোন চাপ বা টেনশন না নিতে, বেশি চাপ নিলে পাগল হয়ে যাবো।অথচ আমি আমার জীবনের সব চাইতে বেশি চাপ নিয়েছিলাম সেই সময়ে। থার্ড ইয়ারের তিনটা ইমপ্রুভ সাথে ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা এর সাথে ৮ ঘন্টা টিউশানি! কি আবস্থা পাঠক একবার অনুধাবন করুন! তারপরেও বহাল তবিয়তে টিকে আছি।

পাঠক, লেখালেখিটাও মূলত সেই সময় থেকে পরিপূর্ণতা পেয়েছে। আমি এখন অনুধাবন করি, আসলে ভবিষ্যত বলতে কিছু নেই। ভবিষ্যত হচ্ছে আমার বর্তমানের কৃতকর্মের ফল।তাই আমি চেষ্টা করতেছি বর্তমানটাকে মজবুত করতে…….(সমাপ্ত)

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

One comment on “আমি ও আমার জীবন

Comments are closed.