একটি অন্যরকম বিয়ের গল্প

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
বিয়ে, বিবাহ

মানুষের জীবন হাজারো গল্পে ভরা। কারো জীবনে দুঃখ ঘনিয়ে গল্প আসে আবার কারো সুখে ভরা গল্প। আজ যে বিয়ের ঘটনা লিখতে যাচ্ছি তা কিন্তু আমার জীবনের নয়। আমার দুরের এক ছোট ভাই হাসানের গল্প। হাসান বড়খাতার একটি কলেজে ডিগ্রি পড়ে, পাশাপাশি ঢাকায় থাকে। তার সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানতাম না। শুধু ফেসবুকে তার আইডিতে যোগাযোগ হতো। যা হোক মূল ঘটনায় আসি,২০১৭ এর ৪ ই মার্চের এর ঘটনা এটি। আমার বন্ধু জিয়া ঢাকায় থাকে আর আমি সংগত কারণে বাড়িতে। আগের দিন রাতে হঠাৎ সে ফোন দিয়ে বললো সকালে রেডী হয়ে থাকতে, জরুরী দেখা করবে। আমি অবাক হলাম না, কারণ সে এরকমই বাড়িতে আসে আর আমাকে এভাবে ফোন করে। তারপর আর এক সপ্তাহ খবর নেই।আমিও রেডি হই নাই, জানি ছ্যাচড়াটা আসবে না। কিন্তু সকালে আমাকে অবাক করে দিয়ে জিয়া আমার বাড়ির সামনে এসে হাজির!এসেই বললো তাড়াতাড়ি বের হ,কাজ আছে। আমিও বেরুলাম,আর ভাবলুম আল্লাহই জানে আমার কপালে আজ কি আছে। দুজন রিকশায় করে এসে সোজা কাজী অফিসের সামনে থামলাম। আমি ভাবলাম জিয়া নিশ্চয়ই কোন মেয়েকে ফন্দিফিকির করে বিয়ে করতে এনেছে। আমি ওকে রিকশা থেকে নামতেই গালিগালাজ শুরু করে দিলাম।

 

কোন মেয়ে বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করতে করতে গিয়ে দেখি হাসান সেখানে বসে আছে। আমি কিছুই বুঝতেছিনা যে কি ঘটছে। তারপর হাসান আর জিয়া যা বললো তার সারমর্ম হলো এইঃ হাসান “কল্পনা” নামের একটি মেয়ের সাথে মন দেয়া নেয়া করছে আজ প্রায় তিন চার বছর হলো। কল্পনার বাড়ি তার বাড়ি থেকে প্রায় এক দের কিলো দূরে।সে বড়খাতার একটি কলেজে ইন্টারে পড়ে। হঠাৎ মেয়েটির বাবা মা তার বিয়ে দিতে চাচ্ছে। কল্পনা বাড়িতে বলেছে সে হাসানকে ভালোবাসে কিন্তু হাসানকে তাদের পছন্দ নয়। তারা দুজনই পরিণত বয়সে পা রেখেছে তাই তারা বিয়ে করতে চায়। আমি আর জিয়া দুজন মিলে হাসানকে অনেক বোঝালাম, যে এভাবে বিয়ে ঠিক হবে না। আমার উদাহরণও দিলাম, যে বাবা মা কত কষ্ট পেয়েছে। এদিকে কল্পনাকে বোঝানোর সাধ্যি আমাদের নেই, কেননা কল্পনা কলেজে।আর হাসান যা বলবে তাতেই কল্পনা রাজী।কিন্তু হাসান বিয়ে করবেই। তাই আমি আর জিয়া বাধ্য হয়ে কাজীর সাথে আলোচনা করলাম কি করা যায়। কল্পনা কলেজে, তাকে আনা সম্ভব নয়। কাজী সাহেব বললেন, ঠিক আছে আমি বিয়ে রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করছি। তবে কল্পনার সই যেভাবে হোক লাগবে। রেজিস্ট্রি বইয়ে হাসান সই করার পর আমরা দুজন সাক্ষী হলাম। আর মটরগাড়িতে করে ছুট লাগালাম সোজা কলেজ। সেখানে গিয়ে কাজীর বই নিয়ে সই করে আনলাম( ব্যতিক্রম!)।কাজী সাহেবের কাছে রেজিস্ট্রির কাজ শেষ হলো।

 

এবার ধর্মীয় ভাবে বিয়ের পালা! হাসানকে দায়িত্ব দেয়া হলো কল্পনাকে যেভাবে হোক নিয়ে আসতে। আর আমি আর জিয়া মৌলভী আনতে গেলাম। এদিকে কল্পনার বাড়ি থেকে কঠোর নিষেধ আছে হাসানের সাথে দেখা করার। কল্পনা হলো বুদ্ধিমতী মেয়ে, তার বড় বোনকে ফাঁকি দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো হাসানের সাথে। তাদের ধর্মীয় রীতিতে বিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা হুজুরকে নিয়ে বড়খাতার একটি অটো রিজার্ভ করলাম। হাসান কল্পনাকে নিয়ে আর আমরা হুজুরকে নিয়ে মিলিত হলাম দোয়ানি নামক স্থানে। সেখানে আংশিক দোয়া পড়ানো শেষে মানুষের সন্দেহের চোখে আমরা আবার অটোতে চড়লাম। শুরু হলো এক অন্যরকম বিয়ে পড়ানো! অটো চলছে আর হুজুর অটোর সামনে! সেখান থেকেই সব কথা বলছেন আর আমরা সেই মত বিয়ের নিয়ম পালন করছি। হঠাৎ কিছুদূর গিয়ে অটোওয়ালা অটো ব্রেক করলো, সামনে জ্যাম। অগ্যতা হুজুর আমাদের মাঝে এসে বসলেন, এসে ফিসফিস করে বিয়ে পড়াতে লাগলেন।

 

কল্পনা আর হাসান পাশাপাশি বসেছে, আর জিয়া,হুজুর আর আমি পাশাপাশি। বিয়েতে উকিল থাকা লাগে, জিয়া হলো উকিল। হুজুরের নির্দেশমতো উকিল হয়ে কল্পনাকে কবুল বলতে বলা হলো।কল্পনা কবুল বলার পর দোয়া পড়ানো হচ্ছে। এদিকে অটো চলছেই। হঠাৎ অটো আবার ব্রেক হলো, আমরা দোয়া পড়ানো অবস্থায় অটো থেকে নামলাম।দেখলাম অটো বালুতে ফেঁসে গেছে! আর সামনে বিশাল গর্ত! তাই বাধ্য হয়ে সবাই অটো ঠেলা (ধাক্কা দেওয়া) শুরু করলাম! দোয়া পড়ানো কিন্তু বন্ধ নেই! হুজুর অটো সামনে টানছে আর দোয়া পড়াচ্ছে এবং আমরা ধাক্কা দিচ্ছি আর আমিন বলতেছি। শেষে অটো পার হয়ে এলো আর দোয়া পড়ানোও শেষ হলো! এরপর বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে আমরা পৌছুলাম জলঢাকায়! সেখানে দুপুরে আমরা হালকা নাস্তা করে তাদেরকে বাসে তুলে দিলাম। হাসান ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরী করে, তারা সেখানে গিয়েই উঠবে। যথারীতি তাই হলো। এদিকে আমরা ফিরে এসে চুপচাপ হয়ে গেলাম। জিয়াও ঢাকায় চলে গেলো। পরবর্তীতে কাজীর কাছে রেজিস্ট্রির কপি চাইলে সেই কাজী অস্বীকার করে বসে। ফলে হাসানের তিন হাজার টাকা গচ্চা গেছে। আবার রেজিস্টার করতে হয়েছে এবং আবার তার কলিগরা মৌলভী এনে বিয়ে পড়িয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী হাসান আর কল্পনা অনেক ভালো ও সুখে আছে।হাসানের পরিবার মেনে নিয়ে বাড়িতে এনে বিয়ে মৌলভি দিয়ে বিয়ে পড়িয়েছেন। কল্পনার পরিবার শুরুতে ঝামেলা করলেও পরে মেনে নিয়েছে। তারাও মেনে নিয়ে মৌলভী দিয়ে বিয়ে পড়িয়েছেন। পাঠক,প্রশ্ন হলো তাদের কতবার বিয়ে হলো??আর হ্যা, আমার গল্পের জুটিটির জন্য অবশ্যই আপনারা দোয়া করবেন। তারা যেন আজীবন সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারে।

 

 

 

লেখকঃ সাঈদ আল রবি

রচনাকালঃ ১৩ ই আগষ্ট ২০১৮। 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
1
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

1

মন্তব্য করুন