মিরাজ -এর কষ্টের টাকায় ঘুরছে সংসারের চাকা
রোজ যেমন আজকের দিনটাও হয়তবা তেমন। অন্য আর কোন দিনের মতই। কিন্তু মিরাজ বা শহর থেকে দূরে, অদূরের পল্লীতে দুজন মানুষের কাছে হয়ত আজকের দিনটি নতুন আরেকটি যুদ্ধের সূচনা।
বন্ধুরা মিলে যখন কলেজ থেকে বের হই তখন বেলা গড়িয়ে বিকেল। শীতের বিকেলটা কিন্তু আসলেই মন্দ নয়। সুন্দর পরিবেশ, একটু গরম চা। জীবনটাই অন্যরকম। কিন্তু মিরাজের জন্য হয়তবা এমনটা নয়। তার জন্য জীবন যতটা না আনন্দের ততটাই যন্ত্রচালিতের মত কর্মের।
চট্টগ্রামের চকবাজারে আমাদের বন্ধুদের আড্ডা। ঢুকলাম কেয়ারির বিপরীতে জমজমে। আমরা বন্ধুরা মিলে একটা টেবিল দখল করে নিলাম। দখল বললাম এই জন্য যে সংখ্যাধিক্যের ব্যাপার ঘটলে খাবারের টেবিলে একসাথে বসতে গেলেই আসলেই দখলের ব্যাপারটা চলে আসে। আমরা বসতেই এগিয়ে এল অল্প বয়সি একটি ছেলে। তাকে আমাদের ফরমায়েশ জানাতেই সে ছুটলো সেসব নিয়ে আসতে।
তার বয়সের কাউকে দেখলেই আমার ইচ্ছে হয় তার সম্পর্কে জানতে। বিশেষ করে যখন দেখি এই বয়সেই কঠিন জীবন সংগ্রাম তার নিত্যসঙ্গী। তার সাথে বলা কথা গুলো আমাকে কিছুটা হলেও নাড়িয়ে দিলো। বন্ধুরা তার অনুচ্চ কন্ঠে বলা কথা গুলো হয়তবা শুনতে পায়নি।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার নাম কি?”
সে বলে উঠে “মিরাজ”।
আমি কি যেন চিন্তায় পড়ে যাই, কিন্তু কেন সেটা ধরতে পারনা। তাকে আবার
জিজ্ঞেস করি “বাড়ি কোথায়?”
জানায় “নোয়াখালী”।
বাড়িতে কেকে আছে?
মা-বাবা
স্কুলে যাওনা?
নাহ
কেন?
কেন যাইনা তা জানিনা।
হুম, কাজ কর কেন?
ঘরে টাকা দি।
বাবা কি করে?
অসুস্ত,কাজ করতে পারেনা।
তুমি কাজ করে টাকা দাও বাসায়।
হুম। ভাই আছে বড়, তারা বাসায় টাকা দেয়না। আমি দি।
মিরাজ কেন স্কুলে যায়না তার উত্তর দিতে না পারলেও। বুঝা গেল কাজের ঘোরে তার স্কুল এই শিশুবয়সেই শিকেয় উঠেছে। আর স্কুলের কথা মনে আসতেই মনে পড়ে গেলো, আমার হাসিখুশি ভাতিজার স্কুলে যাওয়ার কথা। দুজনের বয়স ও প্রায় একই।
সব মিরাজের জীবন তো আর এক নয়। কেউ এই বয়সে আবদার করে কিছু খাওয়ার জন্য, আর কোন কোন মিরাজ এই বয়সেই বা-মার আবদার পূরন করতে চেষ্টা করে!