মোঃ ফরিদ হোসেন – যে জীবন হাসায়, যে জীবন কাঁদায়, যে জীবন ভাবায়

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
ফরিদ_হোসেন, ফরহাদ_হোসেন

তার সম্পূর্ন নাম সম্পর্কে আমি অনেকদিন জ্ঞাত ছিলাম না। যদিও পরিচয় প্রায় কয়েক মাস যাবৎ,তথাপি তাকে  ফরিদ ভাই হিসেবেই চিনতাম।

তার সাথে পরিচয়ের এক পর্যায়ে তার পরিবারের অন্যদের সম্পর্কেও জানতে পারি। তার বাবার নাম  মোহাম্মদ ইউনুস আলী আকন্দ। মা মোসাম্মত ফজিলা খাতুন। বড় বোন ইয়ারুন্নেসা লিলি এবং দুলাভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন।আরেক বোন হামিদা, আর দুলাভাই মোহাম্মদ রাসেল(প্রকৌশলী)।বড় ভাই মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন, আর আমাদের ফরিদ ভাই পরিবারের ছোট জন।

তাঁর সাথে প্রথম দেখা মিরপুর ডি ওএইচএসের হাজার বিয়াল্লিশ নম্বর বাসায়।  অফিসে এসেছিলেন রেজোয়ান ভাইয়ের সাথে। অনেকদিন ধরেই তাকে দেখতাম প্রায় অফিসে আসছেন। কিন্তু কি জন্য নিয়মিত আসছেন সে ব্যপারে বুঝতে পারিনি। অপেক্ষা করছিলাম সময়ে উত্তর পাওয়ার জন্য।

প্রায়শই দেখতাম ল্যাপ্টপের সামনে বসে আছেন। পরে বুঝলমা সেখানে তিনি ফটোশপে নিজস্ব দক্ষতার ছাপ রাখেন। মোটামুটি বুঝে নিলাম তিনি কি করেন। এবং দূরে থাকলাম, কারন এসব ক্রিয়েটিভ কাজের সূক্ষতা এবং এর জন্য প্রয়জনীয় দক্ষতা দেখে আমার ভেতরে অসংখ্য প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়।

প্রথম প্রথম তাঁর সাথে কথা কম হত। জনশ্রুতি তে শুনলাম ফরিদ ভাই দুষ্ট।  পরে বুঝলাম তাঁর দুষ্টামির অবশ্যই একটি মাত্রা আছে এবং সীমা লঙ্ঘনীয় দুষ্টমি তিনি করেন না। তাঁর সাথে প্রথম ক-মাস কথা কম হলেও ধীরে ধীরে কথাবার্তা হতে থাকে। এটাই হয়ত প্রকৃতির নিয়ম- বারংবার দেখা হতে হতে  একসময় অপরিচিত অনেকেই হয়ে উঠে পরিচিত।

তাঁর মুখ থেকেই একদিন শুনলাম তিনি ডেফোডিলের ছাত্র । ডেফোডিলে পড়েন ,উত্তরায় থাকেন আর মিরপুরে কাজে আসেন। বলা যায় দিনের মধ্যে তিনি ঢাকার জ্যাম ভেদ করে যাওয়া আসা করতে সিদ্ধহস্ত ।  ডেফোডিল নিয়ে ইংরেজি সাহিত্যে কবিতা আছে জানতাম, বাংলাদেশেই যে ডেফোডিল নামে ভার্সিটি আছে তা ফরিদ ভাইয়ের কল্যানে জানতে পারলাম।

ফরিদ ভাই শ্যম বর্নের, মাঝারি উচ্চতার মানুষ। তবে এই বয়সেই ঝরে পড়া চুল নিয়ে ঈষৎ চিন্তিত তিনি। তাঁর জন্ম ৯২ এর আশেপাশেই।   একটা মানুষকে দেখে অবশ্য সবটা একবারেই বুঝার উপায় নেই। যেমন আমি ভেবেছিলাম ফরিদ ভাই মা-বাবা-পরিবার নিয়ে আছেন । তাঁর পিতৃবিয়োগের কথা শুনি এই মাত্র কদিন আগে, চায়ের দোকানের সামনে আড্ডায়…

কথা হচ্ছিলো বাংলাদেশের ম্যাডিকেলের যাচ্ছেতাই অবস্থা নিয়ে। এর মধ্যেই তিনি জানালেন তাঁর বাবাও এরকম এক জঘন্য ম্যাডিকেল কেসের শীকার।তার বাবার নাম মোহাম্মদ ইউনুস আলী আকন্দ।তাঁর বাবা দূর্ঘটনায় ঘাড়ে ব্যাথা পান। ম্যাডিকেলে ভর্তির পর তাঁর চিকিৎসার সময় একটা অপারেশন হয় কোমরের এক পাশে।  যেটা কিছুটা অস্বাভাবিক ছিল অবস্থা দৃষ্টিতে। ঘাড়ের সমস্যায় কিডিনির জায়গায় কেনো অপারেশন এই প্রশ্ন মনে আসতেই পারে। সময়ের সুযোগ, এবং জরুরি সময়ের চাপে পড়ে সেসময় জিনিশটা অনেকের চোখ এড়িয়ে গেলেও। পরবর্তিতে অন্য ডাক্তার এবং অনেকেই সেই প্রশ্নটাই করেন। কিডনীর অপারেশন তো নয় , তবে ওখানে কেনো অপারেশ? তবে কি?…    যারা শুনছিলাম ঘটনাটা, আমাদের মনে প্রশ্ন ছিলো , সেই অপারেশন কেন করতে দেওয়া হলো। ফরিদ ভাইয়ের কথায় মোটামুটি যেটা বুজলাম… সে সময় ডাক্তার বলেছিলেন প্রধান অপারেশনের আগে আরেকটা অপারেশন করতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই ডাক্তারের কথায় কেউ অবিশ্বাস করেনি সে সময়।

হয়ত  একারনেই… হয়ত এভাবেই… লোভ বা ভুলের কারনে সহস্র জীবন ঝুকির মুখে থাকে।

শেষ পর্যন্ত ফরিদ ভাইয়ের সম্পূর্ন নাম সম্পর্কে জ্ঞাত হলাম। ওনার ভাইয়ের নামের সাথে তাল-লয় ঠিক রেখে নামটা কি হতে পারে সবাই হয়ত বুঝতেই পেরেছেন। তার সাথে আশা করি আরো অনেক না বলা কথা হবে, সেসব ধরে রাখার প্রয়াশ ইনশাল্লাহ  আমার থাকবে।

 

                                                            ****************

আসলে এই লেখাটা শুরু করেছিলাম দিনের শুরুতে ভালো মন নিয়ে। কিন্তু লেখাটা যখন শেষ ভাবছি- তখন মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ফরিদ ভাইয়ের বড় ভাইয়ের নাম মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন এতটুকুই আমি জানতাম। এর বেশি আসলে জানতেও চাইনি। কিন্তু যখন কথার মাঝখানে জানতে প্পারলাম তাঁর বড় ভাই ক্যন্সারে আক্রান্ত মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো। বড় ভাই দেশে ফিরছেন সামনের সোমবারে, দেশেই চিকিৎসা করাবেন।

ফরহাদ ভাইয়ের রোগমুক্তির ক্ষনের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া প্রার্থী।আশা করা আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া অন্য উপায় দেখছিনা। আল্লাহ যদি চান আজকের ভোরে যেমন ফরিদ ভাইয়ের বড় ভাইয়ের অসুখের কথা শুনে মন ভারি হয়ে গেলো, আরেকটি ভোর হয়তবা খুশির বার্তা নিয়ে আসবে।   

 

জীবনটা আসলেই বিচিত্র। জীবন হাসায়, জীবন কাঁদায়।  জীবন ভাবায়!

             

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া