একটি অদম্য দম্পতির-জীবনের ,অনুপ্রেরণার গল্প

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
বাংলাদেশ, অদম্য_দম্পতি

একজন চা দোকানী,লোকটির নাম আঃ রহমান আর তার স্ত্রী শাহানারা বেগম। হাতীবান্ধার বড়খাতা বাজারে ছোট্ট একটি দোকান আছে। এই দম্পতির তিন ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে বর্তমানে কৃষি অফিসার, মেজো ছেলে বিবিএ শেষ করার পর্যায়ে আর সব চেয়ে ছোট ছেলেটি মেধায় স্কলারশিপ পেয়ে তুরস্কে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। যত সহজে কথা গুলো লিখে ফেললাম, পরিবারটির পথ চলা তত সহজ ছিলো না। আব্দুর রহমান নিজের নামটিও লিখতে পারেন না,আর শাহানারা বেগম মোটে সেভেন এইট ক্লাশ পর্যন্ত লেখাপড়া শিখেছেন। এই দম্পতির জীবন যুদ্ধের মুল কাহিনী শুরু ২০০০ সালের দিকে। আঃ রহমান অন্যের চায়ের দোকানে কাজ করতেন।দিন এনে দিন খাওয়া মানুষটির হঠাৎ করে কাজ চলে যাওয়ায় বিপদে পড়তে হয়, না খেয়ে থাকার মত আবস্থা। ছোট ছোট তিনটি বাচ্চাকে নিয়ে তারা বিপদে পড়লেন।কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না, পাশে পেলেন তার স্ত্রীকে।

অনেক পরামর্শ করে দুজনে মিলে নিজের গরু বিক্রি করে, সমিতি থেকে লোন নিয়ে, আর শাহানারা বেগমের মুঠি করে চাল জমানোর টাকায় অনেক কষ্ট করে মোটামুটি একটা মূলধন দাঁড় করালেন। আঃ রহমান স্ত্রীর পরামর্শ পেয়ে বাড়ির অদূরে একটি ব্যাংকের সামনে মালিকানা জমি ভাড়া নিয়ে নিজে দোকান শুরু করলেন । শুরু হলো তাদের পথ চলা আর নতুন করে বাঁচার সপ্ন। তারা সপ্ন দেখতে লাগলেন তিন ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করার। নিজের দোকানে আঃ রহমান নিজেই কর্মচারী, তার কাজে সহযোগিতা করেন শাহানারা বেগম। তিনি দোকানের সমস্ত রান্নার কাজ বাড়ি থেকে সম্পন্ন করে দেন। ধিরে ধিরে তাদের দোকান সফলতার মুখ দেখতে লাগলো। তারা শিক্ষিত না হলেও সব সময় চাইতেন তাদের সন্তানরা অনেক বড় হোক। শাহানারা বেগম মুঠি করে চাউল জমা রাখতেন ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ করার জন্য।ধিরে ধিরে তাদের ভাগ্য ফিরতে লাগলো। কিন্তু ভালো মানুষের ভালো পাশের ঘরের মানুষও সহ্য করতে পারেনা।তাদের উন্নতি দেখে এক লোক পাশে আরেকটি দোকান দিলো,ফলে আঃ রহমানের দোকানে বিক্রি কমতে শুরু করলো।২০০৯ সালে কাছাকাছি অনেক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র চলে যাওয়ায় তাদের দোকানও বন্ধ হয়ে গেলো।

একদিকে সংসার খরচ, অপরদিকে ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ,” দুইয়ে মিলে তাদের উপর বিপদের খড়গ নেমে এলো। এমন আবস্থায় উপায় বের করলেন শাহানারা বেগম। তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঋণ নিয়ে আবারো একটা মূলধন দাঁড় করে তার স্বামীকে দিলেন। আঃ রহমান আবারো বড়খাতায় দোকান দিলেন। কিন্তু এক বছরের মাথায় দোকান অচলাবস্থা হয়ে পড়লো। ফলে তাদের মাথায় বিশাল ঋণের বোঝা নেমে এলো। বেশ কিছুদিন পর মহান আল্লাহ তায়ালা বোধকরি রহমত করলেন, আঃ রহমান সল্প মুল্যে একটি দোকান ভাড়া পেয়ে গেলেন। আবারো তিনি ব্যবসায় লাভ করতে শুরু করলেন। তিনি নিজেই দোকানের কারিগর, নিজেই কর্মচারী আবার নিজেই ম্যানেজার হিসেবে চলতে লাগলেন। এদিকে শাহানারা বেগম বাড়িতে বসে কিভাবে আরো এগিয়ে যাওয়া যায় তার পরামর্শ করতে লাগলেন। আর তাদের ছেলেরা লেখাপড়া করায়, অনেক মানুষ তাদেরকে হিংসে করে। ফলে এই পরিবারটির অজান্তে অনেক দুষমন তৈরি হলো। বিভিন্ন ভাবে তাদের ক্ষতি করতে লাগলো। কিন্তু অদম্য পরিবারটির বুদ্ধিমতী শাহানারা বেগমের বুদ্ধির কারণে পরিবারের কারও ক্ষতি হতোনা।

রহমান দম্পতি পরিবারের ছেলেরাও নানা ভাবে পরিবারের উপর খরচা কমাতো।যখন বড় ছেলেটি বুঝতে শিখলো যে সে কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারবে, তখন সে টিউশানি শুরু করে দিলো, ফলে বাবা মা কেও সে অনেক ভাবে সাহায্য করতে পারতো। এদিকে রহমান দম্পতির বাকি দুই ছেলেও তাদের লেখাপড়ায় ভালো ফল করে বিভিন্ন কলেজে পড়াশুনা করতে লাগলো। কত দিন গেছে আঃ রহমান দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় নেই, গোসল নেই, একাই দোকান করে নিজেকে শেষ করেছে পরিবারের জন্য। আর নিন্দুকেরা পেছন থেকে নিন্দা করে, “কিভাবে তারা এগোচ্ছে?। তাদের এই জীবন সংগ্রাম আলোর মুখ দেখলো ২০১৭ সালে এসে! বড় ছেলে উপ সহকারী কৃষি অফিসার পদে চাকরিতে টিকে গেলো। চারিদিকে হৈ হৈ রব পড়ে গেলো।একই বছর ছোট ছেলেটি তুরস্কে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চলে গেলো। পর পর দুটি সাফল্য এসে ধরা দেওয়ায় রহমান দম্পতি আশায় বুক বেঁধে আছে,তাদের বাকি ছেলেটিও এ বছর লেখাপড়া শেষ করবে, সেও সবার মুখ উজ্জ্বল করবে। যে পরিবারে এমন পিতা মাতা থাকে, যে পরিবার এত কষ্ট করে উপরে উঠতে পারে, মহান আল্লাহ কি তাদের আকুতি না শুনে পারেন?

 

স্যালুট এই সার্থক দম্পতিকে।দোয়া করবেন অদম্য এই পরিবারের জন্য।

 

                                                                                                                  এই লেখকের আরো লেখনী পড়তে ক্লিক করুনঃ

 আমার বিয়ে ও প্রেম কথা

                                                                                একজন হার না মানা সবজিওয়ালা  মেধাবি শিহাব আহমেদে এর গল্প  

                                                                               ছেলেবেলার গল্প 

                                                                            মোবাইল কাহিনী

                                                                            শালী ও পাঁচমিশালি 

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন