বৃষ্টিস্নাত নগর-জীবনে একজন বদিউজ্জামান

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
বার্ধক্য, বাংলাদেশ, Bangladesh, jonaid

বৃষ্টিস্নাত নগর-জীবনে একজন বদিউজ্জামান হেটে যাচ্ছেন। বয়সের ভারে তাঁর শরীর নুয়ে পড়েছে। আমার-আপনার জন্য এই বৃষ্টিস্নাত দিনে হয়ত কোন  ভালো আয়োজন অপেক্ষা করছে। আর বদিউজ্জামানের জন্য অনেক পথ দূরে তাঁর পরিবার অপেক্ষা করছে।

                                                                                                      ******

 

সকাল থেকেই আজ বৃষ্টি ,বৃষ্টিতে জানালার পর্দা ভিজে গেলো। দমকা হাওয়ায় সুমনের মুখে শান্তির কি একটা পরশ যেন লাগে! আহ! কি শান্তি, মাকে আজ খিচুড়ির কথা বললে বেশ হয়। যদিওবা মা হয়ত ঝামেলায় যেতে চাইবেন না। তবুও যদি মাকে রাজি করানো যায় আরকি। হোস্টেল থেকে বাসা বেশি দূরের পথ না। ঝড়  মাথায় নিয়ে গিয়েও যদি খিচুড়িটা পাওয়া যায় মন্দ কি! স্বাধীনতার জন্য সে-ই জোর করে অবশ্য হোস্টেলে থাকার সীদ্ধান্ত নিয়েছিলো ।

 

                                                                                                      ******

 

বদিউজ্জামানের শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা!  কেউ দুইটাকা-কেউ পাঁচ টাকা করে দিচ্ছে আজ ।একবেলা, ভাতের টাকাই জোগাড় হয়নি।বৌ-বাচ্চার খাবারের খরচ কেমনে হবে!  সেই কোথায় তাঁর পরিবার আর কোথায় সে! এই ভিক্ষের টাকায় সংসার চলে । কিভাবে চলে আল্লায় ভালো জানে! বদিউজ্জামানের পায় খুবি সামান্য ,সেটার বেশির ভাগ গাড়ি ভাড়াতেই যায়। আর বাকি টাকায় কিছুদিন কাটে তাঁর আর পরিবারের। 

                                                                                                     ******

 

 

 

সুমন হেটে যাচ্ছে, দমকা হাওয়া, হালকা বৃষ্টি ,মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।  বৃষ্টি কিছুটা ধরে এসেছে,তবে মাতাল হাওয়ার কমতি নেই । রাস্তা ধারেই রম-রমা খাবারের ব্যবসা চলছে। গরম খিচুরি । বিক্রেতা ডেকেই যাচ্ছে খিচুরির সাথে ডিম ৫০, গরু ১০০, মুরগী ৭০। সুমন কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে। ঝড়ের বেগে বিক্রি চলছে, ধোঁয়া উঠছে গরম খিচুরি থেকে।

 

Bangladesh, Jonaid, bangladesh_Rain, বাংলাদেশ

 

এমন সময় একজন বয়স্ক মানুষ এগিয়ে আসে,হাতে বাটি  নিয়ে। সুমন লোকটার দিকে তাকায়,বয়স অনেক হবে লোকটার । সুমন টাকা দিতে চাইতেই লোকটার চোখ গরম খিচুরির দিকে গেলো। সে চোখে ভর করে আছে আদিম-ক্ষুদা । সুমনের কেনো যেন মনে হয় এ ক্ষুদার কাছে তাঁর মায়ের হাতের খিচুড়ি খাওয়ার ইচ্ছেও নস্যি। সুমনের তো ক্ষিদা নয়, লোভ জেগেছে,আর এই বৃদ্ধের লেগছে ক্ষুদা-ভয়ঙ্কর এক দূর্ভীক্ষে পড়া মানুষের ক্ষুদা। পকেটে ৬০ টাকা আছে, সুমন বৃদ্ধকে এক কোনে বসিয়ে খিচুরি-ডিম ৫০ এর ব্যবস্থা করলো। বৃদ্ধ তাঁর সেই বক্স এই খিচুরি আর ডিম নিয়ে রাস্তার পাশে বসে পড়লো । গোগ্রাসে যেন গিলে খাচ্ছে এক আদিম-মানব। শুধু মুখে নয়,তার চোখেও ক্ষিদার জ্বালা । ভাতের প্রতিটা লোকমা তাঁর গোগ্রাসে হলেও পরম যত্নে খাওয়া-একটা ভাত ও যাতে না পড়ে-সে দিকে বৃদ্ধের তীক্ষন নজর। এই ভাতের জন্য-ই তো তাঁর এত হাহাকার। 

                                                                                                   ******

 

সুমন দাঁড়িয়ে দেখছে, তাঁর অন্যধরনের অনুভূতি হচ্ছে। ভালো-মন্দে মিলিয়ে একটা অনুভূতি । এই দেশে এখনো বৃদ্ধরা পথে পথে এক-মুঠো খাবারের জন্য ঘুরে। আশ্চর্জ রকমের বিচিত্র দুনিয়া, কেও ভাতের জন্য কয়েক-ক্রোশ পথ পাড়ি দেয়, কেও ভাত-বিক্রি করে জীবন চালায়। আর সুমনরা বৃষ্টির দিনে খিচুরি খেতে চায়! সাদা ভাতে তাঁদের পোশায় না! সুমনেরি তো পোশাচ্ছিলোনা। আর কেও দু-মুঠো সাদা ভাত পেয়ে মহা-উল্লাসে মেতে উঠে।

                                                                                                    ******

 

 

বৃদ্ধের খাওয়া শেষ। বৃদ্ধ আল্লার কাছে দোয়া করে চলে যেতে উঠতেই, সুমন তাঁকে জিজ্ঞেস করে,

-আপনার নাম কি?

খুব নিচু স্বরে ,দূর থেকে ভেসে আসা আওয়াজে কেও বলে -বদিউজ্জামান।

-থাকেন কোথায়? বাড়ি কই?

-গাইবান্ধা থাকি।

-ঢাকায় কতদিন?

-আজকেই আসলাম?

-ছেলে,মেয়ে, পরিবার আছে?

-বৃদ্ধ বৌ, আর তিনটা মেয়ে আছে,বিয়ে হয়নাই,বিয়ে দেওয়ার সামর্থ নাই।

-ওরা খায় কেমনে,সংসার কে চালায়?

-আল্লাহ চালায়, আমি গাইবান্ধা থেকে মাঝে মাঝে এসে খুজে খুজে যা কিছু পাই তা নিয়ে গাইবান্ধা যাই,তা দিয়ে কিছুদিন চলে,তারপর আবার ঢাকা আসি।

-ঠিকাছে আপনি যান!

                                                                                                     ******

 

 

বৃষ্টিস্নাত নগর আর ভালো লাগেনা, এই  বৃষ্টিস্নাত দিনে  খিচুড়ির স্বাদ পাওয়ার ইচ্ছে আর সুমনের হচ্ছেনা। বৃদ্ধের খাওয়া দেখে তাঁর মন ভরে গেছে। মনের কোনে হতাশার মেঘ-তার জন্য কিছু করতে পারার ক্ষমতা তাঁর নেই। অথবা আছে,করছেনা! নিজের কাছেই আজ সে নিজে ছোট। সবাই  নিজের ভালো চায়, এ ক্ষেত্রে সেও কম যায় না! বদিউজ্জামান্দের কে নিয়ে ভাবার সময় কই! তারা কি এই সমাজের কেউ?তারা আমাদের কি কাজে আসবে! বড় বড় সাহেবের-ছেলেদের,শিক্ষিতদের খবর নেওয়া-আর দেওয়াই তো প্রধান কাজ ।

 

                                                                                            ****************** 

 

বদিউজ্জামান রা কি দূরের কেউ? নাকি  খুব কাছের কেউ? তা না হলে সব বুঝেও মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ভেতরে নিজের অজান্তেই খারাপ লাগে কেনো?  কোনো একদিন হয়ত আর কেউ  বদিউজ্জামান হবে! তুমি হবে! বা সে! বা আমি  তখন যে সমাজ এখন চারপাশে ঘুরছে,সে সমাজেই  ্সবাই পরিত্যাজ্য বলে গন্য হবে! হবেন!  বা হবো! 

 

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া