কলেজে একদিন ম্যাথ স্যার জিজ্ঞেস করলেন,”তোমরা কি অমুক ব্যক্তির নাম শুনেছো,যিনি বাংলাদেশে জন্ম নেয়া পৃথিবী ব্যপী খ্যতিমান বিজ্ঞানীদের একজন। অল্প কয়েকজনই উনার নাম জানতো। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর প্রথম এক বিজ্ঞান সেমিনারে গেলাম বিজ্ঞান অনুষদে,বিষয়-“ডিএনএ বার কোড” । গিয়ে শুনলাম,তিনিও বক্তব্য দিবেন। আমি অবাক হলাম,বায়লজিক্যাল সায়েন্সের সেমিনারে একজন পদার্থবিজ্ঞানী কেন আসবেন?এর জবাব পেলাম সেমিনার শেষ হবার পর। দুঃখজনক হলেও সয়,ঐ সেমিনারে উনার বক্তব্য বাদে আর বাকি সবাই “কে বা কোন বিভাগ ডিএনএ বারকোড নিয়ে কাজ আগে শুরু করেছে বা বেশি করেছে ” তাই নিয়ে কাদা ছোড়ছুড়ি শুরু করেন। তার মধ্যে আশ্চর্য ব্যতিকম ছিলেন শুধু এই পদার্থবিজ্ঞানী। সেদিন তাঁর কাছ থেকে আরো যা শিখেছিলাম,প্রকৃত জ্ঞান মানুষকে বিনয়ী করে,অহংকারী নয়।মানুষটি হলেন ড.জামাল নজরুল ইসলাম স্যার।
পরে তাঁর ব্যপারে আরো জানলাম,স্যার একাধারে বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ ও অর্থনীতিবিদ। তিনি মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিকাল এন্ড ফিজিকাল সায়েন্সের এর গবেষক ।
বিএসসি শেষে ১৯৫৭ সালে ইসলাম কেমব্রিজে পড়তে যান। কেমব্রিজের প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান থেকে আবারও স্নাতক ডিগ্রি (১৯৫৯) অর্জন করেন। তারপর এখান থেকেই মাস্টার্স (১৯৬০) ডিগ্রি লাভ করেন।১৯৬৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে এসসিডি (ডক্টর অফ সায়েন্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। কেমব্রিজে পড়ার সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং তার সহপাঠী ছিলেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডে ডক্টরাল-উত্তর ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ইসলাম কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট অফ থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি-তে (বর্তমানে ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমি)কাজ করেন ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভিজিটিং সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিতের প্রভাষক ছিলেন। এরপর ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা মূলক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।। ১৯৮৪ সালে ইসলাম বাংলাদেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
আমার মেডিকাল আর ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়া অনেক বন্ধু স্যারের বক্তব্য শুনে তাদের সশ্রদ্ধ প্রশংসা ব্যক্ত করেছে। যারা যারা তাদের জীবনের প্রধান দুই লক্ষ্য চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলি হতে পারে নি বলে নিজেদেরকে ব্যর্থ মনে করেছে,তাদের সামনে স্যার বিশাল এক উদাহরণ হয়ে থাকবেন। আর আমার নিজের ক্ষেত্রে, জীবনে যদি বিজ্ঞানের জগতে থাকার ন্যূনতম আকাঙ্খা অবশিষ্ট থাকে(যেটা নানা কারণে কমে যাচ্ছে),সেটা স্যারের জন্যই থাকবে।।
ভাল থাকবেন স্যার।