হয়তো এর নাম-ই ভালোবাসা , এর নাম-ই জীবন

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

হাসপাতালের সকল কার্য শেষ করে একটা এ্যাম্বুলেন্সে করে রাত ১২ টৃার সময় তামিম এর লাশ নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ির পথে রওনা দিলাম।ঢাকা থেকে বাড়ি আসতে প্রায় ৫-৬ ঘন্টা লাগবে। এ্যাম্বুলেন্সে আমি ছাড়াও দুলাভাই,অাপা ও তামিম এর বাবা রয়েছে।সবাই যেন বোবা হয়ে গিয়েছে।কেউ কোন শব্দ বা আর্তনাদ কিছুই করছে না।

এ্যাম্বুলেন্স তার নিজের গতিতে চলতে থাকে।সারাদিন অনেক ধকল যাবার কারনে শরীর অনেক ক্লান্ত।তাই কখন যে ঘুমায়ে গিয়েছি বুুঝতে পারিনি।

হঠ্যাৎ মৃদু কান্নার কিছু কন্ঠ মিশ্রিত একটা শব্দ কানের পর্দায় আঘাত  করলো।চোখ মেলে দেখি বাড়ি চলে এসেছি।আর কান্নার শব্দটা বাড়ির ভিতর থেকেই  আসছে।

চোখ কচ্লাতে কচ্লাতে গাড়ি থেকে বের হই।ততক্ষনে গাড়ির আশে-পাশে অনেকেই  জড়ো হয়েছে।কয়েক জন গাড়ি থেকে লাশটা নামায়ে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেল।কান্নার পরিমান যেন আরও বেরে গেল।এইটাই স্বাভাবিক।

হঠ্যাৎ কে যেন বলল,তিথি স্ট্রোক  করেছে।সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে ্ঐ এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের দিকে রওনা দিই।

এবার আসল ঘটনাই আসি।

তিথি আর তামিম একই স্কুলে পড়া-শোনা করতো।তামিম  যখন ক্লাস এইট -এ তখন তিথি সেভেনে পড়ে।তিথি আগে অন্য স্কুলে পড়ত কিন্তু কোন এক কারণে সে সেভেনে এখানে ভর্তি হই।তিথিকে প্রথম দিন দেখেই তামিম এর  অনেক ভাল লাগে।এর পর বন্ধু-বান্ধুবীদের সগযোগিতাই তাদের প্রেমটা হয়।যতদিন যায় তারা একে অপরের প্রতি আরও দুর্বল হয়ে পরে।

স্কুল লাইফ এর প্রেম তো তাই বুঝতেই পারছেন,যত দিন গিয়েছে তত তাদের প্রেম কাহিনী সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে গিয়েছিল।এক সময় তাদের পরিবারও এইটা জানতে পারে।দু-জনার পরিবারই মোটা-মোটি শিক্ষিত ছিল।তাই তারা তাদের সন্তানদের উপর চড়াও না হয়ে তাদের কে ডেকে বোঝায়।তাদের  কাছে সব ঘটনা শোনে।তারা বোঝতে পারে,এখন যদি এদেরকে কিছু রলা  হই তাহলে হইতো দু-জনার জন্যই ক্ষতি হরে।তাই তারা দুই পরিবার একটা সিদ্ধান্ত নেই।সিদ্ধান্তটা তামিম ও তিথিকে তারা জানায় ।তারা তাদের শর্ত মেনে নেয় ।

তাদের শর্ত ছিল,তোমাদের কে পড়া-শোনা ভাল করে করতে হবে।ভাল কোন বিশ্ববিদ্যালয়তে পড়তে হবে। জীবনের বাকি সময়টা ভাল থাকবার জন্য ভাল কিছু করতে হবে।কারণ কেউ যেন বলতে না পারে যে, প্রেম-ভালবাসা করার কারণে তোমরা নষ্ট হয়ে গিয়েছ।

তামিম ও তিথি বুঝতে  পারে,তাদের বাবা-মা তাদের ভালোর জন্যই এইগুলো বলছে।তাই তারা তাদের শর্তগুলো মেনে নেয় ।

তারা ঠিকই তাদের শর্ত অনুযায়ী পড়া-শোনা শেষ করে ভাল জব করে। 

আজ শুক্রবার। আজ তাদের সেই স্বপন পূরণের দিন ছিল।কিন্তু সেটা আর হল না।গত কাল বিয়ের জন্য কিছু কিনা-কাটা করে বাড়ি আসবার সময় বাসের ধাক্কায়  সে (তামিম) গুরুতর  আহত হয় ।তাকে ঢকাতে নেওয়া হলে সে ওখানেই মারা যায়।

তিথিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে ওর হাত ধরে বুঝতে  পারি ও আর আমাদের মাঝে নেই।তামিম এর মত ও-ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।চোখ বেয়ে নিরবে পানি ঝরতে শুরু করলো।তারপরেও হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।ডাক্তার দেখে আমাদের শিউর করল।সবাই কান্না ভেঙে পরলো।

ঠিক একই ভাবে তিথির লাশ নিয়ে বাড়িতে আসলাম।লাশ গাড়ি থেকে নামায়ে তামিমের লাশের কাছে রাখা হল। অনেক দূর-দূরন্ত থেকে মানুষ তাদেরকে দেখতে আসলো।

আফসোস এইটাই,মানুষ হই তো আজ তাদের বর-কনের সাজে দেখতে আসতো।তারা দু-জন ঠিকই আছে কিন্তু তাদের সাজের মধ্যে পার্থক্য টা।

আল্লাহ কার কপালে কি লিখে রেখেছেন আমরা কেউ জানি না।তাই আসেন সবাই নামাজ পড়ি আর আল্লাহর পথে চলি। 

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া