নিজের সন্তানের হাত ছেড়ে দিলাম পরের সন্তান কে বাঁচাবো বলে

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
বাংলাদেশ, Bangladesh

নিজের  সন্তানের প্রতি মানুষের একটা আলাদা মোহ থাকে। জগতের সবকিছু তাঁর কাছে ফিকে হয়ে যায়। কিন্তু মাঝে মাঝেই মানুষ এমন কিছু করে যা তাঁর কল্পনায় আসেনা, তবে বাস্তবে ঘটে বটে!  এখনো কোন বৃষ্টিস্নাত দিনে, যখন ঝড়ের  বেগে কোনভাবে টিকে থাকে গাছ-পালা , তখন ২৭ বছর আগের সেই কাল-দিনের কথা অজান্তেই মনে পড়ে। কি হারিয়েছিলাম সেদিন, কি পেয়েছিলাম সেদিন।

 

আজ থেকে  প্রায় ২৭ বছর আগের ঘটনা,  ৯০ এর দশকের কথা।  সমূদ্রপাড়ে বাড়ি ছিলো । বৌ,সন্তান নিয়ে সুখের এক পৃথিবী। দিন কাটছিলো ভালই। হঠাৎ মেঘের আনাগোনা বেড়ে গেলো, সাগর বিভীষিকায় রূপ নিলো।  ঘর রূপ নিলো নিস্তব্দ কালো গহ্বরে । কারো ছুটে পালানোর জো ছিলোনা,  তীর ভাঙ্গা ঢেউ ভাসিয়ে নিচ্ছিলো  জনজীবন।

 

জীবন ভেঙ্গে-চূড়ে যাচ্ছিলো, ভেসে যাচ্ছিলো ঘর। যে সখের উঠোন জুড়ে আনন্দের মেলা বসত, চোখের সামনে ভেসে গেলো, গোগ্রাসে তাঁকে গিলে খেলো সাগর। সহায়-সম্পদ তখন বড় কথা  নয়, জীবন-ই সেখানে প্রাধান্যের বিষয়। যে যার সন্তানের হাত ধরে আছে, মাথায় আধো-বুলি বলতে থাকা সন্তান। একটাই আশা সব গেলে গেলো, জীবনটা যদি বাঁচে !

 

আমার দুই হাতে দুই সন্তানের হাত। তাঁরা ছোট সাঁতার জানেনা । আমার বৌ এর চিন্তা করছিলাম না। আল্লাহর হাতে সব ছেড়ে দিয়েছিলাম, জানতাম সে সাঁতার জানে, বাকিটা আল্লার ইচ্ছা। জীবন-মরন সবি তাঁর হাতে। কোনভাবে দুই সন্তান কে নিয়ে, পানির সাথে যুদ্ধ করে ভেসে ছিলাম, বেঁচে থাকার চেষ্টায়, বাঁচাবার চেষ্টায় ।

 

হঠাৎ পাশে একটা বাচ্চার আওয়াজ শুনি। ভেসে যাচ্ছে, চোখ পড়তেই দেখি আমারি বোনের মেয়ে, বুকটা কষ্টের নোনা জলে ভরে গেলো, দু চোখে হাহাকার, একবারি হয়ত সুযোগ আছে তাঁকে ধরার, এই তো পাশ দিয়ে ছোট দেহ টা ভেসে যাচ্ছে।

 

আমি আমার মেয়ের হাত ছেড়ে দিলাম অজান্তেই! সেই হাতে আকড়ে ধরলাম, বাচ্চাটার হাত, হ্যা ধরতে পারলাম। কিন্তু আমার মেয়ে কই?! চারপাশে তাকালাম, নেই নেই!  ছোট দেহ টা আর দেখা যায় না! এ আমি কি করলাম, কি জবাব দেব স্ত্রীকে! বোনের মেয়ের দিকে চাইতেই খুশি লাগলো, আর ভেতরে ছিড়ে যাচ্ছিলো কষ্টে, আমার মেয়ে কি আমাকে মাফ করবে! একজন কে বাঁচাতে গিয়ে নিজের মেয়েকে নিশ্চিত মৃত্যুর বুকে ছেড়ে দিলাম!

 

আজ এত বছর পরে, যখন সদ্য কৈশোর পার হওয়া মেয়েদের বিয়ে হতে দেখি, মনের কোনে আষাঢ়ের মেঘ জমে। আমার মেয়েরো আজ বিয়ে হওয়ার বয়স হত, জানিনা সে বেঁচে ছিলো কিনা! এখনো ঐ বয়সের কোন মেয়েকে দেখলে মনে হয় আমার মেয়েটা বড়  হলে এরকমি হত হয়ত, সে নয়তো? ভেতরটা ছিড়ে যায় বোবা কান্নায়।

 

জানিনা কেন সেদিন, নিজের মেয়ের হাত ছেড়ে আরেকজনের মেয়েকে বাঁচালাম । যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক আমার মেয়ে!শান্তিতে থাকুক।

 

                                                                                                                                               

 

 

                                                                                                                                                         ———————- ইসমাইল । 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া