ইশকুল থেকে স্কুলেঃচট্টগ্রামের  নাসিরাবাদ সরকারী উচ্চ বিদ্দ্যালয় (বালক)-৩য় পর্ব

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

চট্টগ্রামের  নাসিরাবাদ সরকারী উচ্চ বিদ্দ্যালয়ের (বালক)  রেজাল্ট এর বোর্ডে আমি আমার নাম খুজে পেলাম না। তাঁর পর আপুর চীৎকার শুনে বুঝলাম অন্য বোর্ডে আমার নাম আছে। আহ শান্তি! মাথায় আবার চিন্তা টা চলে আসলো”আজকের খেলাটা জম্বে,আমি এখন এখানের হয়ে গেলাম” । 

হ্যা আমি শহরের হয়ে গেলাম আবার। প্যান্ট ,শার্ট আর ব্যাগ নিয়ে ক্লাস সিক্সের ক্লাসে যাওয়া শুরু করে দিলাম। জুটিয়ে ফেললাম প্রথম লং লাস্টিং কিছু বন্ধু। রুমায়েত,মিজবাহ(ভাতিজা), তাহামিদ ,রিফাত আরো অনেকে্‌,… চলছিলো বেশ, শুধু বেশ না্‌, বলতে গেলে  বেশি বেশ চলছিলো অনেককেই হারিয়ে ফেলেছিলাম, আবার পরে খুজে পেয়েছি।

গ্রামের ছেলে বলে সবাই বোকা ভাবতো। এতে আমার সুবিধেই হতো।  কারো অনেক কিছুই বুঝে যেতাম সে বুঝার আগেই। স্বপ্নের মতই চলছিলো ইশকুল! শহরে এসে ভালোই মুটিয়ে গেলাম। খাদ্যগুদাম আখ্যা তো এমনি পাইনি সেকালে! 

এর মধ্যে ভাতিজা মেজবাহদের সাথে একসাথে বাসা নিলাম । তাদের সাথে বাসা নেওয়ার আগে আমরা জি,ই,সি তে থাকতাম। তাদের সাথে বাসায় থাকাটা নানা কারন বসত বেশিদিন স্থায়ী হলোনা।

এর মাঝেই চলে এলো ক্লাস এইটের বৃত্তি পরিক্ষা। আমার আবার সেই কোনভাবে চালিয়ে নেওয়া পড়া চলল। এতটুকুই মনে আছে, সব পারবো জেনেও ভাতিজা সহ পরীক্ষার হল থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়েছিলাম, খেলা ছিলো বলে!

সে সময় নিজের তাগিদেই পড়তাম। মাঝে মাঝেই দুই,তিন বা চার, রেঙ্কে চলে আসতাম।মাঝে মাঝেই দশ বা ১২/১৪ তেও গমন করতাম বটে!  নিজের  মধ্যে একটা আলাদা কনফিডেন্স চলে আসছিলো। এখানেই কেটেছে আমার শিক্ষাজীবনের অতি আনন্দঘন দিনগুলো । সেই মাঠ যেখানে, এক চক্কর ঘুরে না আসলে ভাত হজম হতোনা, এখনো তাঁর কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে পাটোয়ারি স্যার, আরিফ স্যারদের কথা। পাটোয়ারি স্যার আমাদের সাথে ফিল্ডে অনেকটা সময় কাটাতেন। আর আরিফ স্যার ছিলো আতঙ্কের আরেক নাম।  তাঁর এমন কোন ক্লাস নেই যেখানে কারো না কারো গায়ে মার পড়েনি। তাঁর ক্লাস এলে , একেবারে যাকে বলে পিন ড্রপ সাইলেন্স।

এতটাই সাইলেন্ট পরিবেশ যে, কেউ খুক করে কাশি দিলেও মনে হত বুঝি ক্লসে বোম ফুটলো। নেহায়েত শান্ত ছেলেটাও আরিফ স্যারের বেত্রাঘাত থেকে বেঁচে ফিরেনি।তাঁর একটা ডায়ালগ আমাদের সবার মুখে মুখে ঘুরত, হাতের  আঙ্গুলের ফোকড়  দিয়ে  তাকিয়ে থাকতেন আর কাউকে ঝামেলা করতে দেখলেই বা কারো থেকে পড়া নেওয়ার সময় হলেই  গম্ভীর চাপা গলায় বলে উঠতেন“এইই এদিকে আয়”।  আর আমাদের আত্মা খাঁচাছাড়া হতো!   কেউ যদি থাকেন যে আরিফ স্যারের ক্লাসে থেকেও কখনো আরিফ স্যারের শাসনে শাসিত হননি,বা বেত্রাঘাতের শিকার হননি, সে চাঁদমুখ আমি একবার দেখতে চাই। হয়ত থাকতেও পারে তেমন কেউ! আরিফ স্যারের শেষ মার খেয়েছি ক্লাস নাইন এ সাইন্স নেওয়ার পর। নিউটনের ৩য় সূত্র ভুলে গিয়েছিলাম বলে।

 

ফাতেমা নার্গিস মেডামের কথা মনে আছে, আরো অনেক শিক্ষক শিক্ষিকার কথাই মনে আসছে।আরিফ স্যারের শাসন, ফাতেমা মেডাম,পাটোয়ারি স্যারদের কথা চিরদিন মনে থাকবে আমার। 

নাসিরাবাদ সরকারী এর  আর সহ-পাঠিদের কথা ভোলার প্রশ্নই আসেনা, মিজবাহ,রুমায়েত,শাফায়েত(সজারু-শাফায়েত), তাহামিদ,রিফাত, আরো কয়েকজনের নাম এই মূহুর্তে মনে পড়ছেনা। একটা মোটা করে কালো-লম্বা ছেলে ছিলো, তাঁর নামটা মনে পড়ছেনা বলে বড্ড আফসোস হচ্ছে।

মিজবাহ এখন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার,রুমায়েত ও একি,রিফাতের কথা ঠিক জানিনা, বন্ধু তাহামিদ দন্ত-বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। সজারু শাফায়েতএখন কি করে আমি জানিনা। জানতে ইচ্ছুক,আশা করি সবার একদিন আবার দেখা হবে। তাদের সাথে টান-হেচড়া করে তিনগোয়েন্দা পরার স্বাদ এখনো মন জুড়ে আছে।

 

  নাসিরাবাদ  সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের   সেই প্রানের শিক্ষক-শিক্ষিকা,সহপাঠিদের সাথে একদিন হঠাৎ বিচ্ছেদ হলো।  সেই প্রানের স্কুল ও আমার ছাড়তে হলো। সেই দিনটা ছিলো আমার লাইফের একতা বড় সেটব্যাক। বা জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়া ঘটনা। ক্লাস নাইনের শুরুর দিকেই   স্কুল থেকে টিসি নিয়ে চলে আসার দিন, নীরবে কেঁদেছিলাম, মাঠের এক কোনে গিয়ে , এখনো সে আফসোস যায়নি! 

বিধি বাম, আমার আর নাসিরাবাদেও থাকা হলোনা। বলতে গেলেই এখানেইও আমার শিক্ষাজীবনের মধুরতম সময় অতিবাহিত হয়েছে।  আব্বুর এক্সিডেন্ট হলো, মেজ আব্বু মারা গেলেন্‌… আমরা আবার বাড়িতে। 

নাসিরাবাদ থেকে ক্লাস নাইনের ভর্তী বাতিল করে কালীপুরের এজাহারুল হক  উচ্চ বিদ্দ্যালয়ে ভর্তী হলাম। ইচ্ছে ছিলো সাইন্স নিয়ে পড়ে সাইন্টিস্ট হব,সে আশায় গুড়েবালি। গ্রামের স্কুলে আর পড়ালেখায় মন টিকেনা।  

গ্রামের স্কুলেও এসে ভর্তী হলাম সাইন্সে।  ক্লাস নাইনে যাওবা পড়েছিলাম, ক্লাস টেনে উঠে পড়ালেখা শিকেয় উঠলো।  বাদ গেলো স্কুলে যাওয়া। সবার কথা না মেনে, আবার এসে পড়লাম শহরে। মেট্রিক পরীক্ষার ঠিক ৩ মাস আগে। পাঠ্য বই নেই,! ঘুরে ঘুরে সময় কাটাচ্ছিলাম, আর গল্প বই পড়ছিলাম।   শহর থেকেই গ্রামের সেন্টারে পরীক্ষা দিতে গেলাম সকাল সকাল সি,এঞ্জি করে। শুধুই যেতাম আর চলে আসতাম সাথে বই ছিলোনা, কারন পাঠ্য বই বাড়িতেই পরে ছিলো অনাদরে। কি পরীক্ষা দিতাম আমি নিজেই জানিনা! অপ্সনাল সাব্জেক্ট ছিলো উচ্চতর গনীত ,যখন শুনলাম সেটাই বৃত্ত ভড়াট করে আসলেই হবে, ফেল গেলে সমস্যা নেই তখন সীদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। সেই পরীক্ষায় গিয়ে বৃত্ত ভরাট করে,১ ঘন্টার মাথায় বেরিয়ে আসলাম।  

কেমন পরীক্ষা, কি পরীক্ষা দিলাম জানিনা, আল্লার রহমতে টপকে গেলাম সে যাত্রায় মেট্রিক!   এর পরের কাহিনী ভিন্ন  ,সেটা স্কুলের সাথে যায়না। কাজেই অন্যদিন বলবো।     (সমাপ্ত) 

 

                                                                                                           ————————————-জুনাইদ বিন কায়েস

আরোঃ

ইশকুল থেকে স্কু লেঃপর্ব ১

ইশকুল থেকে স্কুলেঃপর্ব ২

 

অন্য লেখনীঃ

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর আদর্শ-জীবনঃ পর্ব ১  

জীবন এর মোহ : আসলের মোড়কে নকল জীবন

আবদুল্লাহ আল মুতী – কঠিন বিজ্ঞান কে শিশুদের কাছে সহজ ভাষায় তুলে ধরেছেন যিনি

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া