——————————-লোকমান মাষ্টার ————————–
আসসালামু আলাইকুম পাঠক, শুরুতেই পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানাই।
লোকমান মাষ্টারের বাড়ি আমার বাড়ির একদম সাথেই। লোকটি কিছুদিন আগে গত হয়েছেন। ছোট বেলা থেকেই তার সাদাসিধে জীবনযাপন দেখেছিলাম। মূল বাড়ি থেকে আলাদা হয়ে আমাদের বাড়ির পাশে এসে বাড়ি করেছিলেন।অনেক নিয়ম মাফিক জীবন পার করতেন তিনি। প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে তার শুরু হতো দিনের কঠোর পরিশ্রম।সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাঁকে দেখতাম বাড়ির বিভিন্ন কাজ করতে,তিনি নিজেই হালচাষ করতেন।ফসল আবাদ করতেন।তবুও ঠিক সময়েই স্কুলে যেতেন শিক্ষকতা করতে।
আবার বিকেলে এসেই বাড়ির বিভিন্ন টুকিটাকি কাজ করতেন। তাঁর মধ্যে কোন অলসতা দেখিনি। তার চার ছেলে মেয়ের মধ্যে ছেলে দুজনই সরকারী কর্মচারী।তারা বাইরে থাকেন। আর মেয়ে দুটোকে বিয়ে দিয়ে সংসারী কর্তব্য শেষ করেছেন। পাঠক, তার বিশদ বিবরণ শেষ হলো। এই লোকটির বিভিন্ন কাজ আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে! তিনি অবসর গ্রহণ করার পর ধর্মীয় কাজ নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। দুরের মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন বেশি সওয়াবের আশায়। একবার হজ্জ করেও এসেছিলেন। আমি যখন বাড়িতে আসতাম মাঝে মধ্যে কথা হতো।আমি দেখতাম, এককালের শক্ত সামর্থ্য মানুষটি কেমন বুড়িয়ে গেছে। বাড়ির সাথে লাগালাগি বাড়ি হলেও তেমন মিশতাম না বলে তেমন ভাবে যোগাযোগ হতো না। মারা যাওয়ার দু বছর আগে একদিন হঠাৎ শুনলাম তার অনেক বড় রোগ হয়েছে। সেই কথা শোনার পর তাঁকে আর আগের মত দেখতে পেতাম না।
একদিন শুনলাম ইন্ডিয়া গেছেন চিকিৎসা করাতে। কিন্তু ভালো হলেন না। প্রায় দু বছর রোগে ভুগে এই রমজানের শুক্রবারে তিনি ইহলোক ত্যাগ করে চলে গেলেন।ভালো মানুষ গুলো এমনি হয়। তিনি যেদিন মারা গেলেন, তখন আমি বাড়িতেই ছিলাম।আর প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিলো। কান্নার আওয়াজ শুনে দৌড়ে গেলাম সবাই, দেখে বুঝলাম তিনি আর নেই।তবুও ডাক্তার আনা হলো। আমার আগের গল্পের সেই আঃ ছালাম ডাক্তার এসে নাড়ি দেখে বললেন অনেক আগেই তিনি মারা গেছেন।কেন জানি বিশ্বাস হলো না। আমি তার মৃত্যুর খবর শোনার পড়েও একটু কাঁদিনি। কাঁদতে পারিনি কেন তাও রহস্য। তবে কেঁদেছিলাম কিছু সময় পরে। যখন তাঁর কবর খোঁড়ার জন্য জায়গা চাওয়া হলো, তখন তাঁর বড়ছেলে জানালো বাবা তার মায়ের কবরের পাশে কবরস্থ হবেন। মাষ্টারের শেষ ইচ্ছা ছিলো,তার মায়ের পায়ের নিচে শায়িত হবার।তাঁর ইচ্ছানুযায়ী ছেলেকে মায়ের পায়ের নিচে কবর দেওয়া হলো।দাফন শেষে যখন বাড়িতে আসি,তখন মনটা হু হু করে কেঁদে উঠলো, মাষ্টার নানা আর বেঁচে নেই। তিনি আর কোনদিন কথা বলবেন না
……… (সমাপ্ত)
লেখাঃ সাঈদ আল রবি
রচনাকালঃ ০৭ই জুন ২০১৯।