ঠুক ঠুক, দরজায় টোকা পড়তেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। চোখ না খুলেই পাশের মোবাইল এর তালাশ নিলাম। চোখ খুলে চক্ষু চড়ক গাছ! একি ১০ বেজে ৩০ যে! ঘুমের তল্পি-তল্পা গুটিয়ে সকালের কাজ সেরে বসে পড়লাম খটখটানি যন্ত্রটা নিয়ে । আমি আমার ল্যাপটপের নাম দিয়েছি খটখটানি যন্ত্র। আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, কাগজে কলমের খোঁচায় লিখতাম। এখন একটি যন্ত্রের উপর ভরসা করতে হয়।
আধুনিক জগৎ মানুষকে বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। এর বড় প্রমান প্রতিটি মানুষ নিজেই! এখন মানুষ বাস করে ভার্চুয়াল রিয়ালিটিতে এমন কি ব্যবসা ও করে সেখানে, হিসাবো সেখানেই। এখন মানুষের মেধার পরিচয় কাগজে নয় ইন্টারনেটে, কাব্য প্রতিভা আর বিজ্ঞানীরা এখন ইউটিউব এ ঝঙ্কার তুলেন।
আপনারা বলতেই পারেন এত কিছুর সাথে মোহাম্মদ কায়কোবাদের জীবনের সম্পর্কটা কোথায়! আছে আছে আলবৎ আছে। তিনিও লিখে গেছেন অসংখ্য গ্রন্থ, নেটে নয় কাগজের পাতায়। সে সময়ের মানুষ গুলোর কথা বলতে গেলেই, লিখতে গেলেই মনে পড়ে যায় তাদের জীবন ব্যাবস্থার কথা। আহ! কি সুন্দর ই না ছিলো।
হয়ত কোন এক কাক ডাকা ভোরে তিনিও লিখতে বসেছিলেন, যন্ত্রে নয় সাদা বা হালকা হলুদ কোন কাগজে বা ঘাম ছোটানো কোন টাইপ রাইটারে। যেহেতু তিনি একজন বিজ্ঞানী বা শিক্ষক এর পাশাপাশি কলামিস্ট, এবং লেখক ছিলেন সেহেতু এটা ধরেই নেওয়া যায় তিনি নিয়মিত কলমের ঘাম ছুটিয়ে দিতেন। অথবা আদি যুগের টাইপ রাইটারের শরীরে সাহিত্যের,শিক্ষার ঝঙ্কার তুলতেন।
বলছিলাম কলামিস্ট,শিক্ষক,বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড মোহাম্মদ কায়কোবাদের কথা । লেখাটা যখন শুরু করছি তখন সাকিব কে জিজ্ঞেস করলাম অধ্যাপক ড মোহাম্মদ কায়কোবাদকে চিনে নাকি।
সাকিব কিছুক্ষন মাথা চুলকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কবি কায়কোবাদ নাকি”?
আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম এই ভেবে যে তিনি কি কবিও ছেলেন নাকি! দারস্থ হলাম আমার সব-জান্তা না হলেও অনেক জান্তা বন্ধু অনীকের।
সে রাশভারী গলায় প্রথমে আমাকে ধিক্কার জানালো “ তুই ড মোহাম্মদ কাইকোবাদকে চিনিসনা? ১৯৫৪ সালের পয়লা মে তে তার জন্ম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে ছিলেন, লেখার হাত ও ছিলো বেশ”। বন্ধু অনীকের কথায় কায়কোবাদ সম্পর্কে জানার জন্য উৎসাহ পেলাম বেশ।
অনীক থেকে জেনেছিলাম আরো অনেক কিছুই। আমি তাকে এটা বললাম না যে” আমি কাতকোবাদ সম্পর্কে মোটামুটি জানি”। জানি বললে সে আমাকে জানাতে উৎসাহ পেতনা। শেষমেস তার কাছে জানা-অজানা মিলিয়ে বেশ ভালোই তথ্য পেলাম।
জানলাম কায়কোবাদের জন্ম মানিকগঞ্জে। এখন বলতে পারেন মানিকগঞ্জ কোথায়? মানিকগঞ্জ ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। তার গর্বিত বাবা মরহুম আনিছউদ্দিন আহমেদ ও রত্ন গর্ভা মা মাতা সাহেরা খাতুন । বাংলার সাহিত্যাকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র জন্ম দিয়েছেন আরো নক্ষত্রের। তার কর্ম জীবনে শিক্ষার দ্যুতি ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি হাজারের মাঝে। পৃথিবীর আলোর মুখ দেখেছে তার দুই পুত্র-সন্তান।
লেখাটার এই পর্যায়ে আমি থমকে আছি। এ ভদ্রলোকের সম্পর্কে আজকে যা জানলাম, যা এখনো লিখিনি, এতদিন কেন জানিনি। বিদেশের কোথায় কি হচ্ছে খবর রাখি! অথচ! আফসোস আমারি দেশের অনেকেই আমাদেরি গর্বদের চেনেনা। আমি নিজেই তো চিনতাম খাপছাড়া ভাবে। ধন্যবাদ বন্ধু অনীক কে!