যার মা-থেকেও নেই

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
ঝুকি-জীবন,জুনাইদ,রাশেদ,desh,bio,biography

মিরপুর ডিও,এইচ,এস এর ৮ নম্বর এভিনিউ ধরে হাঠছিলাম। ডিও,এইচ,এস মানে ডিফ্রেন্ট অফিসারস হাউসিং সোসাইটি-প্রথম প্রথম এমনটাই বলেছিলো কে যেন ! পরে জানলাম ডিও,এইচ,এস মানে ডিফেন্স অফিসারস হাউসিং সোসাইটি।  এখানেই দেখা হয় আমার রাশেদের সাথে। প্রথম বার চায়ের দোকানে,২য় বার বৃন্দাবনের মাঠে। সেখানেই তাঁর জীবনের কিছু কথা তাঁর থেকে শুনেছি। আর ৩য় বারে তাকে দেখেছিলাম একটা বিল্ডিং এ ঝুলে থাকতে! সেবার বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি বুহতেই পারছেন।

 

রাশেদের জন্ম দিনাজপুরে। বয়স যখন ১৬ সেই তখন জীবিকার খোজে বাপের হাত ধরে চলে এসেছিলো  ঢাকায়। নিদারুন স্বপ্ন চোখে আর অভিলাশ নিয়ে ,দিনান্তে এক-মুঠো খেয়ে সংগ্রামের শুরু ঢাকায় আসার পর থেকেই।

 

জন্ম সম্পর্কে জীজ্ঞেস করলে এতটুকুই জানা যায়- গ্রামের এক ছোট মাটির ঘরে জন্ম তাঁর। মার প্রতি তাঁর এক-রকম ঘৃনা জন্মেছে মনে। বয়স যখন সাত তখন তাকে-আর তাঁর বাবাকে গ্রাহ্য না করে পরম মমতাময়ি! মা অন্য কারো সংদোষে দুষ্ট হয়ে ছেড়ে গেলো তাদের। পড়ে রইলো মিছে মায়া আর রাশেদের চোখে এক-রাশ বিশ্বয় ।

 

ভোরের আলোর রেশ কাটতে না কাটতেই রাশেদ বুঝতে পারলো এ জীবনে আলোর পরশ মেখে নয়, অন্ধকারে পথ মেপে চলতে হবে তাকে। মাতার অভাব পিতার দ্বারা পূরন করা সম্ভব নয়, এটা জগৎ মাত্রই জানেন!  তবে রাশেদের পিতার কমতি ছিলোনা ভালোবাসার, কমতি ছিলোনা মমতার। দূরের-দুষ্ট ছায়ার মত মায়ের দেওয়া বিষাক্ত অভিশাপ আজো তাড়া করে রাশেদ কে!

 

হাজার হলেও মা-তো। এখনো তাঁর জন্য মন কাদে রাশেদের। বাবাকে অবশ সে কথা বুঝতে দিয়ে ভাঙ্গা মনে আঘাত করেনা সে।  ঢাকার মিরপুরে তাঁর জীবন-যুদ্ধের বেশিরভাগ কেটেছে। এখানে তাঁর কৈশোর, কেটেছে হাড়ভাঙা পরিশ্রমে।

 

রিকশার চালক বাবার সাথে রাতে হেল্পারের কাজ করে দুজনে ভেঙ্গে ভেঙ্গে টেনে নিচ্ছিলো সংসার।

এখন রাশেদ বাবার কষ্ট লাঘব করে নিজেই কাধে নিয়েছে সংসারের হাল। দু-বেলা দুমুঠো খেতে আর কিছু লজ্জা-নিবারনে গায়ে দিতেই যে জোগাড় লাগে তাই করতে রাশেদের দিনান্তে আর সূর্যাস্ত দেখা হয়না।

 

এখন রাশেদ বিল্ডিঙ্গে বিল্ডিঙ্গে কাজ করে। সে যত ঝুকিরি হোকনা কেনো। যত ঝুকি বেশি টাকা তত বেশি। আর এতেই বাবার জন্য কিছু আরামের ব্যবস্থা রাশেদ হয়ত করতে পারে।  রাশেদের কাছে জীবনের এম্নেই দাম নেই। তাঁর কাছে  জীবন যা-ঝুকির জীবন ও তা!

 

 মমতাময়ি! মা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে রাশেদ কে আগলে রেখেছেন যে বাবা, তাঁর দিন দিন অবস্থার অবনতি হলো। রাশেদ বাবার সেবার জন্য রাতে তাঁর পাশ ছাড়া হয়না। রাশেদের বাবা রাশেদকে খুব করে বলছেন  একটা বিয়ে করেতে,কিন্তু রাশেদের কোথায় যেন বাঁধছে । তাঁর এই জগৎ, এর মানুষের উপর বিশ্বাস আসছেনা।তাঁর বাবার অবস্থা সে দেখছে! বিয়ের উপর তাঁর বিশ্বাস আসে কি করে!

 

ডুকরে উঠছে একটাই প্রশ্ন “কেন মা ছেড়ে গেলি! কি দোষ ছিলো আমার, কৈ গেলিরে মা-তুই”  ।

 

রাশেদের সাথে দেখা হয়নি শেষ তিন-চার দিন। মাঝে বেশ কবার তাঁর জন্য চিন্তা হয়েছে কিন্তু তাকে খুজে পাইনি। তাঁর নাম্বার নেই,কারন সে মোবাইল ব্যবহার করেনা। বাসার ঠিকানা জানিনা কারন জিজ্ঞেস করিনি। আবার দেখা হবে এই ভেবে বিস্তারিত ঠিকানাও  নেই-নি। বার বার তাঁর কথা মনে আসলেই তাঁর শিশুকালে পাওয়া আঘাতের কথা মনে পড়ে। আসলেই শৈশবে পাওয়া আঘাত আর জন্ম নেওয়া অবিশ্বাস সহজে মন থেকে আর বিদেয় নেয়না। কেন রাশেদের মা তাদের ছেড়ে অন্য-জনের সাথে পালিয়ে গেলো ! আসলেই কি রাশেদের মা দোষি ছিলো? নাকি কাহিনীর পেছনেও রয়েছে কোন কাহিনী? এ হয়ত আমি আর কোন-দিন জানতেও পারবোনা!

 

এমনকি হতে পারে, রাশেদ তাঁর মাকে শুধুই ঘৃনা করছে। তাঁর মায়ের হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে অন্য কোন কারন?  যদি এমনটা হতো,কারনটা জানলেই রাশেদ তাঁর মাকে আর ঘৃনা করবেনা! জগতের উপর তাঁর আবার বিশ্বাস ফিরে আসবে। কতই না ভালো হত!

 

রাশেদ-ও  হয়ত ভাবছে, সেদিন তাঁর মা যদি অন্যজনের সাথে চলে না যেত,অথবা তাঁর জীবনের গল্পটা যদি অন্যরকম হতো! কত চমৎকার-ই না হতো। এমন হাজারো রাশেদ আছে যাদের জীবন জুড়ে হতাশার মেঘের , আর দীর্ঘশ্বাসের আনাগোনা হরদম চলতে থাকে।    

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া