একজন ম্যাশ ও একটি এশিয়া কাপের স্বপ্ন

Please log in or register to like posts.
Video

২০১৮ এর এশিয়াকাপে চলছে টাইগারদের দাপট।  চলছে ম্যাশ জাদু। দুবাই এ অনুষ্ঠিত নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকাকে বিশাল ব্যাবধানে হারিয়ে নিজেদের শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত টিমটাইগারের।এশিয়া কাপের জন্য রইলো শুভকামনা।অতীতের দুঃখ ভুলিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে আসুক একটি  এশিয়া-কাপ!   আজ বাংলাদেশ মুখমুখি হবে আফগানদের।  ২০১৮ এর এশিয়াকাপে তামিমের বীরত্ব দেখেছে বিশ্ব, আরেকটি ম্যাশ জাদুর অপেক্ষায় আমরা। 

আমাদের রূপকথার গল্পের নায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার  জন্ম  নড়াইল জেলায়, ১৯৮৩ সালের অক্টোবরের ৫ তারিখ।দলের অন্যতম বোলিং স্তম্ভ, তিনি ডান হাতি ব্যাটসম্যান।  তার ডাক নাম কৌশিক । কৌশিক থেকে মাশরাফি হয়ে ওঠার গল্পটা রুপকথাকেও  হার মানায়। একজন ক্রিকেটার একটা দেশের ক্রিকেট কে কতটা প্রভাবিত করতে পারে, ক্রিকেট ভক্তদের উত্তেজনার পারদ কতটা উঁচুতে উঠাতে পারে তা আমাদের মাশরাফি ,আমাদের নড়াইল এক্সপ্রেস মাঠে নামলেই বোঝা যায়। যখন তিনি মাঠে নামেন লাল সবুজের জার্সিতে, সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন ,তখন বুকের ভেতরটায় কোথায় যেন একটা শিহরন জাগে। 

 

৮ নভেম্বর ২০০১ সালে ম্যাশ এর টেস্ট অভিষেক হয় জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেক এর পর পরই টেস্ট আঙ্গিনায় পা রাখেন কৌশিক । আমাদের ম্যাশ বস। ম্যাশ তার প্রথম ম্যাচ টি খেলার আগেই খবরের পাতায় জায়গা করে নিয়েছিলেন তার গতির জন্যে। বাংলাদেশের পেস শূন্যতাপূরণের  ভার তার হাতেই পড়তে যাচ্ছে, এটা হয়ত তারই আগমনী বার্তা। হালকা গড়নের ছেলেটার, ঠোঁটের কোণে বাঁকানো হাসিটা প্রথম দেখাতেই মায়ার জন্ম দেয়।মাশরাফির ইতিহাস গড়ার শুরু জা্তীয় দলে ঢুকেই। প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ না খেলেও টেস্ট দিয়ে হাতে গো্ণা যে কজন ক্রিকেটার এর যাত্রা হয়েছিল কৌশিক ঢুকে গেলেন সেই ছোট্ট তালিকায়। গতির ঝড় তোলা কৌশিক রাতা রাতি হয়ে উঠলেন মাশরাফি।টেস্ট ক্রিকেটের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ একজন সত্যিকারের পেসার খুজছিল তখন। অ্যান্ডি রবার্টস ,ওয়েস্ট ইন্ডিজ  এর এই কিংবদন্তির নজরের আসা মাশরাফি হলেন শেষ পর্যন্ত পাওয়া সেই অমূল্য রত্ন, একজন জেনুইন পেস বলার। তাকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদ উপরে উঠছিল, ম্যাশ ও বুঝিয়ে দিলেন তিনি প্রত্যাশার ভারে নুয়ে পড়ার জন্যে আসেন নি।নিজের প্রথম শিকার বানালেন জিম্বাবুয়ের গ্র্যান্ড ফ্লাওয়ার কে।

 

মানুষের জীবন টা মসৃণ নয়। ক্রিকেটের জগতটাও কঠিন, সেটা কৌশিক ও বুঝলেন।কৌশিক থেকে মাশরাফি হয়ে ওঠা এ ক্রিকেটার তা মর্মে মর্মে বুঝতে পা্রলেন। যে ঘাতক ইনজুরি ম্যাশের পিছু ছাড়েনি আজো , এর সাথে মাশরাফির পরিচয় নিজের খেলা তৃতীয় ম্যাচে। দুটো বছর সেই  আঘাত এর কারনে মাঠের বাইরে ছিলেন ম্যাশ।ঘাতক ইনজুরি সারা জীবন ম্যাশের পিছু ছাড়েনি। কিন্তু এই আঘাত অদম্য ইচ্ছাশক্তির এই মানুষ টিকে টলাতে পারেনি এত টুকু। বাংলাদেশের পতাকাবুকে নিয়ে মাঠ কাপানো, আর আগুন ঝরা বোলিং এ প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়ার আকাঙ্খা তাকে প্রতিবার আরো শক্ত করে ফিরিয়ে আনে।এক দু বার নয়, অনেক বার শল্যবিদের শরণাপন্ন  হতে হয়েছে মাশরাফিকে। সাত সাতবার দু হাঁটুতে তার অস্ত্রোপচার  হয়েছে। একবার বা দুবার অস্ত্রোপচার  এর যন্ত্রনা যেখানে শেষ করে দিয়েছে অসংখ্য ক্রিকেটারের কেরিয়ার, মাশরাফি বস সেখানেই ব্যতিক্রম। দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করাটা গৌরবের , কিন্তু শুধু এই ভালোবাসার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয় এমন ক্রিকেটার খুব একটা নেই। মাশরাফি আছেন। তার মত কলিজাই বা কয় জনের আছে। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম  দায়িত্ব নিয়েই সতীর্থদের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে মাঠ ছাড়তে হয়। সে যন্ত্রণায় কাতর মুখটি , কত ক্রিকেটপ্রেমীর, কত মানুষের চোখের অশ্রু ঝড়িয়েছে তার হিসেব হয় না। এই ইনজুরির কারনেই মাশরাফি খেলতে পারেন নি ২০১১ বিশ্ব কাপ। নড়াইলের সুলতান তখন মাশরাফি। সেখানে সবাই তাকে “প্রিন্স অব হার্ট” বলে ডাকে।সম্ভবত তিনি একমাত্র ক্রিকেটার যাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করার জন্যে ,হরতাল পালিত হয়। মাশরাফির আকুল আবেদনে কান না দিয়ে  বিসিবি সে দিন বেশ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছিল !!! মাশরাফি ছাড়াই দল ঘোষনা করা হয়। দেশের জন্য নিজেকে উজাড়  করে দেওয়া ছেলেটার আবেগের মূল্য সেদিন ক্রিকেট কর্তা আর ক্রিকেট বোদ্ধারা কি দারুন ভাবেই না দিলেন। সেই দিনের মাশরাফির মুখের দিকে তাকানোর সাহস কোন ভক্তের হয়নি, এখনো সেই দিনের ছবি গুলো মনের মধ্যে হাহাকারের জন্ম দেয়।

মাশরাফি ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন বস। প্রিন্স অব হার্টস তো এত সহজে দমে যাওয়ার নয়। বিশ্ব কাপের আগেই তার নাম কৌশিক থেকে হয়ে গিয়েছিল পাগলা।এই নাম  বাংলাদেশ কে জয়ের পথে আনা অজি কোচ ডেভ হোয়াট মোর এর দেওয়া । আসলেই পাগলা। নিজের জন্যে না ভেবে দেশের কজন ই বা সর্বস্ব দেয়।২০০৭ এর বিশ্বকাপ এই মাশরাফি নামের যথার্থতা প্রমান করলেন যেনো।  ২০০৭ এর বিশ্ব কাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ। ম্যাচের আগেই ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানার মৃত্যু সংবাদ এ ক্রিকেট ভক্তরা মর্মাহত। প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু মাশরাফিকে করেছিল জর্জরিত। বন্ধুকে হারানোর কষ্ট যেনো, ভারতের উপর ই মেটালেন ম্যাশ। সে দিন বাংলাদেশ শুধুই দেশের জন্যে না, ম্যাচ টি জিততে নেমেছিল মানজারুল রানার জন্য। ম্যাচের আগে মাশরাফির সেই উক্তি “ধরে দিবানি” এখনো ক্রিকেট প্রেমিদের মাঝে জীবন্ত। ভারত কে ধরে দেওয়ার মুল দায়িত্ব টাও সেদিন যেন মাশরাফি নিজেই নিয়েছিলেন। ৩৮ রানে তুলে নিলেন চার উইকেট। ধরিয়ে দিলেন ভালো করেই।  অনেক অর্জনের মাঝে আক্ষেপ হয়ে থাকবে সেই ২০১১ এর বিশ্বকাপ । শুধু বিশ্বকাপ না খেলার আক্ষেপ ই নই। এর পরই তাকে অবসর নিতে হয় তার প্রিয় ফরমেট টেস্ট থেকে। এই কিছু দিন আগেও টেস্ট খেলার জন্যে তার আকুতি ছিল, শুধু একটি টেস্ট। কিন্তু না তিনি সে সুযোগ পান নি। একটি টেস্ট এর জন্যে হয়তো দেশের ক্রিকেট তাকে ওডিয়াই থেকে ও হারাতে চায় নি বলেই। তার স্ত্রী সুমি হয়ত ম্যাশের দুঃখ সবচেয়ে বেশি বুঝবেন। কতবার! এগারো বারোবার মাঠ থেকে মাশরাফি কে ছিটকে দিয়েছে এই চোট। মাশরাফির বুকে কত যে যে অশ্রু লুকানো সে কয়জন বুঝবে। সদা হাস্য রত মুখের আড়ালে সাদা পোষাক পড়ে আরেকবার মাঠে নামতে না পারার যন্ত্রনা যে তাকে কিভাবে পোড়ায় তা বোঝা বড় দায়। তবে পঙ্গুত্বের ঝুকি সত্বেও  তার আরেকবার সাদা পোষাকে মাঠে নামার আকুতিতে, শেষ বারের মত সাদা পোষাকে নামার যে বাসনা, সেখান থেকেই তার আবেগের মাত্রা টা বোঝা যায় ।তার টেস্ট খেলতে না পারার আক্ষেপ টা পোড়ায় সারা দেশের অগনিত ক্রিকেট ভক্তদের।

 

প্রথম দুই বার অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েও ছাড়তে হয়েছিল ইনজুরির কারনে। কিন্তু তৃতীয় বার মাওশরাফি ফিরে এলেন নতুন রুপে, এ এক অন্য  মাশরাফি, বাংলাদেশের ক্রিকেট কেই বদলে দেওয়ার প্রত্যয় যার চোখে মুখে। তিনি বদলে দিয়েছেন।। ক্রিকেট কে তিনি যতটা দিয়েছেন, ক্রিকেট তাকে এর ভগ্নাংশ ফিরিয়ে দিতেই পারে।প্রথম প্রতিপক্ষ সহজ টিম জিম্বাবুয়ে। জিম্বাবুয়ে কে ধবল ধোলাই করে দলে ফিরে এলো আত্মবিশ্বাস , এই বাংলাদেশ ই এর আগে নেপাল , আফগানিস্তানের হাতে হেনস্ত হয়েছিল।তবে সম শক্তির এ দলের সাথে জয় টাকে কেও ততটা গুরুতব সহকারে নেয় নি। চমকটা আসলো সামনে। যে মাশরাফি আনফিট আখ্যা পাওয়ার কারনে ২০১১ বিশ্বকাপ খেলতে না পারার আক্ষেপে পুড়েছেন। সেই তিনি ২০১৫ বিশ্বকাপে  বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বে । বলা হয় সমূদ্র কিছুই রাখেনা সবকিছু ফিরিয়ে দেয়। সময়ের সমুদ্রে মাসরাফি যেন  সেটাই ফিরে ফেলেন, মাশরাফির হয়ে সময় বুঝি বদলা টা নিল। মাশরাফির ও হয়তো কিছু হিসেব বুঝে নেওয়ার ছিল। বাংলাদেশ এর ঠিকানা পুল “এ” তে। বাংলাদেশর সঙ্গে ছিল সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া। ছিল সাবেক রানার আপ ইংল্যান্ড ও স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।এসব দলকে হারিয়ে বাঙ্গলাদেশ উঠে যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে এমন স্বপ্ন তখন চরম আশাবাদীরাও হয়ত দেখেন নি। কিন্তু অবিশ্বাসী দের চম়্কে দিয়ে ,তাদের অবিশ্বাস ভেঙ্গে দিয়ে বাংলাদেশ ইঙ্গল্যান্ড কে হারিয়ে উঠে গেলো কোয়ার্টার ফাইনালে। ইন্ডিয়ার বিপক্ষে সেই নো বল বিতর্কের কথা মনে আছে নিশ্চই, সেই নো বল বিতর্কের কারনেই, কোয়ার্টয়ার ফাইনা ল থেকে বিদায় নিতে হয় বাংলাদেশদের ।আম্পায়ার দের নেতিবাচক ভূমীকা বাংলাদেশ কে ঙ্কোয়ার্টার থেকে বিদায় করে দিলেও বাংলাদেশ  জয় করে নিয়েছিল বিশ্বের কোটি ক্রিকেট প্রেমির হৃদয় । সাবেক অনেক ক্রিকেট গ্রেট ওই ছিলো মাশরাফির প্রশংশায় পঞ্চমুখ, তবে বিরূপ কন্ডিশনে এই জয় কে অনেকেই ফ্লুক বলে আখ্যা দিয়েছেন।ইংল্যাণ্ড এর বিপক্ষে রান বাচানোর জন্যে মাশরাফির যে ঝুকি নেওয়া তার প্রশংশাও ছিল  গ্রেট দের কন্ঠে। তবে মাশরাফির প্রমান করার ছিল অনেক কিছুই, সাথে বাংলাদেশের ও।

 

যারা সেই জয় কে ফ্লুক বলেছিলেন, তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে ভুলটা ধরিয়ে দিল মাশরাফির নেতৃত্বে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ ।  এক এক করে বাংলার টাইগার রা বধ করলো পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিন আফ্রিকার মতো ক্রিকেট শক্তিকে। দেশের মাটিতে তাদের সিরিজ হারিয়ে বাধ্য করলো বিশ্ব ক্রিকেট কে , বাংলাদেশ কে সমীহ জানাতে।পাকিস্তান কেই সবচেয়ে বেশি নাজেহাল হতে হলো। ওয়ানডের পাশাপাশি টি টোয়েন্টিতে ও নাজেহাল হয়ে তারপর ই তারা ছাড়া পেলো।দেশের মাটিতে সিরিজ জয়ে অবশেষে একটা ছেদ পরলো, ইংল্যান্ড এর  বিপক্ষের সিরিজে, তবে সেখানেও লড়াই হয়েছিল হাড্ডাহাড্ডি । ক্ষুদ্র কিছু ভুলের খেসারত দিতে গিয়ে সিরিজ টা বাংলাদেশের হারতে হয়। এর মধ্যেই তার সাফল্যের জন্যে ম্যাশ পেয়ে যান বাংলাদেশের সেরা অধিনানয়কের মর্যাদা। ৫৩ ম্যাচে ৩০ জয় নিয়ে মাশরাফি ছাড়িয়ে গেলেন পূর্বসুরি হাবিবুল বাসার কে। ৩০ জয় পেতে হাবিবুল বাসার এর লেগেছিল  ৬৯ ম্যাচ।দুর্দমনীয় মাশরাফির নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ আরো ভালো ফলাফল বয়ে এনে দেশের পতাকাকে বিদেশের মাটিতে উচ্চ আসনে বসিয়ে আসেন। সেরা আট দলের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পৌছেছিলো সেমি ফাইনালে।

 

২৩৮ উইকেট নিয়ে এখনো বাংলাদেশের সুর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। ছুয়েছেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দুশ  উইকেটের ল্যান্ড মার্ক। বাংলাদেশি হিসেবে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব ও তার। দিন বদলের পালাতে মাশরাফি নড়াইল এক্সপ্রেস বা  কৌশিক নন,ম্যাশ নন তিনি গুরু।জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা তাকে শিখিয়েছে অনেক কিছুই। তাই তো হাস্য মুখে ফিরিয়ে দেন বীরের খেতাব, বলে দেন অবলীলায়্‌— বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা , কৃষকরাই আসল বীর, ক্রিকেট তো  জীবন হতে পারেনা, দিন শেষে এটা একটা খেলা। মাশরাফিকে বর্ননা করা  যাবেনা একটা ছোট খাট লেখায়। তিনি বাংলাদেশের তরুন ক্রিকেটার দের উপর ছায়া হয়ে আছেন। রুবেল কে বিপদে পথ দেখিয়েছেন তিনি। অফ ফর্মে থাকা সৌম্য,তাসকিন  কে সাহস যুগিয়েছেন তিনি। ইনজুরি ত্থেকে মাত্র ফিরে আস মুস্তাফিজ কে দিশা দিয়েছেন তিনি, পাশে থেকেছেন। নতুন ক্রিকেটার দের এই যে , অগ্রগতি এতে মাশরাফির অবদান কম নয়। অফ ফর্মে থাকা তামিম ইকবাল কে সাহস যুগিছেন, হয়ে যাবে ব্যাপার না বলে, সামান্য কথায় উড়িয়ে দিয়েছেন সতীর্থদের মনেরে মেঘ। ক্রিকেটার রা অফ ফর্মে থাকলে তার পরামর্শ নেন। তিনে যে তাদের গুরু।  একটা দল যখন এমন একটা গুরু পায়, দল টা তো বদলে যাবেই।

 

বাজিকরদের থেকে , আইসিএল থেকে মোটা অঙ্কের টাকার প্রস্তাব পেয়ে ও ফিরিয়ে দিয়েছেন মানুষটা। কেনো দিবেন না?লাল সবুজের জার্সি যার স্বপ্ন তাকে হাত করা , তাও টাকার বিনিময়ে , এই কাজ তো হবার নয়। দেশের জন্য তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। দেশের ক্রিকেটের জন্য তার আত্মত্যাগ অনসবীকার্য। যে মানুষ টা পঙ্গু  হবার ঝুকি নিয়ে খেলে যাচ্ছেন শুধু দেশের মানুষের জন্য, লাল সবুজের জন্য, তাকে কিন্তু বোর্ড তার প্রাপ্য সম্মান টুকু দিলোনা। অসময়ে তাকে বাধ্য করা হয়েছে টি ২০ থেকে অবসর নিতে। তিনি আর একবার সাদা পোষাকে মাঠে নামতে চেয়েছেন। হয়তো ব্যপারটা তার জন্য ঝুকি হয়ে যাবে । কিন্তু যে ভাবে তাকে “না” শুনতে হয়েছে ব্যাপারটা দেশের ক্রিকেট প্রেমিদের মনে আঘাত করেছে। আর মাশরাফির মন? ব্যাপার না, তিনি সব কিছু উপেক্ষা করে খেলে যাবেন দেশের জন্য, যত দিন প্রয়োজন মনে করেন। কারন একটা জিনিশ কি বুঝতে পারেন? একটা মানুষ কখন নিজের পঙ্গুত্বের কথা চিন্তা না করে ,নিজের জীবনের ঝুকির কথা চিন্তা না করে, সাত সাতবার অস্ত্রোপচার  হওয়া পায়ের কথা চিন্তা না করে লাল সবুজের জার্সি গায়ে মাঠে নেমে পরে?  সবাই পারেনা। মাশরাফি কে শুধুই তারকা বললে বোধয় ভুল হবে। এত বছরের ক্রিকেটের পথ চলায় লাগেনি কোন কলঙ্কের দাগ। বাংলাদেশের ক্রিকেট যাত্রার সাথে তার ক্যারিয়ার এর সময় কাল প্রায় সমান। তবু ও তিনি যেনো ক্রিকেটার থেকে বেশি কিছু। পৃথিবীর কোন তারকা এত আপন হয়ে উঠেনা, যদিনা মানুষ টাই অন্য ধাতে গড়া হয়।তার ক্রিকেটিও দক্ষতা আর তার নেতৃত্বের গুনাবলি হয়ত বলে বা লিখে শেষ করা যাবেনা ।তবে তার ক্রিকেটিও দক্ষতার চেয়ে বড় তার মন, তার কলিজা। সবাই তো এগারো বারো বারের ইনজুরিকে এমন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবার সাহস রাখেনা! মাশরাফি পেরেছেন। দাম্ভিকতা নয়, সাদা মাটা পাঞ্জাবি আর হুডখোলা রিকশার বাতাস তার কাছে অনেক বেশি প্রিয়। তিনি শুধু নেতা নন, শুধুই তারকা নন, এর চেয়েও বেশি কিছু, অনেক বেশি আপন, অনেক  কাছের একজন তিনি্‌।সবাই মাশরাফি বিন মর্তুজা হতে পারেনা,সবাই নড়াইল এক্সপ্রেস, প্রিন্স অব হার্টস কিংবা গুরু হতে পারেনা, একজন ম্যাশ,,একজন সত্যিকারের মানুষ হতে গেলে কলিজা লাগে কলিজা।

সামনে ২০১৯ বিশ্বকাপের স্বপ্ন । 

Updated version of  একজন ম্যাশ, একজন গু্রু, একজন নেতা 6 August,2018

 

রেফারেন্স :

 ১. https://en.wikipedia.org/wiki/Mashrafe_Mortaza

 

২. http://www.espncricinfo.com/bangladesh/content/player/56007.html

৩. https://biographybd.com/mashrafe-mortaza/

 

৪. https://www.worldbiographynews.com/mashrafe-mortaza-biography-career-facts-family-net-worth/

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া