রহস্যময় নুর উদ্দিন চৌধুরী

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
Noor_U_Chowdhury, অদ্ভুত_সেই_ছেলেটি

-ভাই কেমন আছেন?

-ভালো, তোর কি খবর? গায়ের গোস্ত তো আরো বাড়াইসস

-জী ভাই , আপনার গায়ের গোস্ত আমার গায়ে জমতেসে

-হ্যা ,আমিও চিন্তা করতেসিলাম দুর্ভিক্ষের কারন টা কি

-পিক নিকের গেঞ্জি পাইসেন?

-হ্যা পাইসি তোরটা পাইসোস? হাহা , তোর তো আবার ডাবল এক্সেল এ হবেনা।

আমি আর কিছু বললাম না। কি বা বলতে পারি জনসম্মুখে বোল্ড করে দেওয়া মানুষটাকে । পরে বুঝতে পারলাম ইনি আমাকে না ,সুযোগে পাইলে কাওকেই কিছু বলতে ছাড়েন না। কিন্তু মিঠা একটা হাসি দিয়ে বলেন সব কথা, এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলেনা। আমি তাকে বুঝতে চেষ্টা করলাম। কিছুটা বুঝতে পেরেছি বৈকি এ ক-বছরে । রক্তদান আর রক্ত ম্যানেজের দিকে আমার ঝোক ছিলো, এটা বলতেই হয়, নুর ভাইকে কাছ থেকে দেখার পর সেটা বহুগুনে বেড়েছে ।

বড় ভাই আর ভাই এর মাঝে একটা ব্যবধান আছে। কলেজের বড় ভাই হয় ,ফ্যামিলির বড় ভাই হয়,-তবুও সবাই ভাই হয়ে উঠেনা । নুর ভাই কে নিয়ে কিছু লেখার আগে আমাকে হাজারটা চিন্তার জাল বুনতে হবে। কারন তাকে জালে ধরার চেষ্টা করে করে আমি ক্ষান্ত। একটা মানুষ কে চিনতে হলে তাঁর পাশে থাকা লাগে। নুর ভাইয়ের সাথে পরিচয় অনেক দিনের ,কিন্তু রহস্য এখনো অমিমাংসীত ।

প্রথম ভার্সিটি লাইফ শুরুর পরে, অনেক বড় ভাই এর মাঝে তাকে দেখা। প্রথম দেখায় ভেবেছিলাম কেমন জানি। মুখে হাসি, কিন্তু কোথায় যেন একটা কিন্তু লুকিয়ে আছে । পরে শুনে ছিলাম ইনি অদ্ভুত সেই ছেলেটি । আমি অবশ্য অদ্ভুত সেই ছেলেটির আইডি দেখে চিন্তা করছিলাম, ডিপার্টমেন্টের এই অদ্ভুত ছেলেটি কে হতে পারে। তাঁর সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছিলাম, অবশ্যই ভালো, আর কিছু শুনেছিলাম তাঁর প্রেম-কথা নিয়ে। 

অদ্ভুত_সেই_ছেলেটি, Noor_U_Chowdhury

দিন যত যায় আওয়াল মামা, মামুন ভাইদের ভিড়ে সেই অদ্ভুত ছেলেটির চরিত্র আরো অদ্ভুত ঠেকে। মানুষের কথার সাথে তাঁর স্বভাব যায়না। আবার তাকে দেখে মনে হয় হলেও হতে পারে। এমন একজন চরিত্র জনাব নুর উদ্দিন চৌধুরী। শেক্সপিয়ার এরকম একটা চরিত্র পেলে কাটা ছেড়া করে বারোটা বাজিয়ে দিতেন । এই চরিত্রের সাথে সব যায়! তাই তো ঠিক সমাধানে আসা যায় না তাঁর চরিত্রের ধরন সম্পর্কে।

এভাবে না বুঝে না বুঝে আরো বছর গেলো, কলেজের বড় ভাই ততদিনে হয়ে উঠলেন নুর ভাই। ভাই বোধকরি অনেকের অনেক কথাই জানেন, শুধু তাঁর কথা কেও জানেনা। বললেই তো জানবে! শেষ পর্যন্ত সমাধানে আসলাম মানুষ্ টা নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়।

বড় ভাই-বোনদের সাথে আমাদের মাঝে যে গোল্ডেন সার্কেল গড়ে উঠেছিলো, সেখানে এই বড়ভাইদের আর আপুদের আন্তরিকতাই দায়ি। আর নুর ভাই যেখানে-সেখানে-যখন-তখন কাওকে হুট করে কিছু একটা বলার ক্ষমতা রাখে, যেটাতে আবার কেও রাগ করেনা। এখানেই রহস্য। আবার তাঁর কোন কাজে কেও রাগ করলেও,তিনি বোধয় গায়ে মাখবেন না, যদি ঠিক কাজ টি করে থাকেন ।

তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন বিশ্বস্ত সূত্রে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য জানা যায় । তবে আবার মিলাতে গেলে প্যাচে পড়ে যেতে হয়।
বন্ধু মহলে তাঁর সুনাম বৈ দুর্নাম নেই, আর যদি কেও হুট করে দুর্নাম দিয়েই থাকে অদ্ভুত সেই ছেলেটি হয়ত বলে উঠবে-যার নাম তারি তো  বদনাম হবে। কথাটা খানিকটা সত্য। নাম -বদনাম ছাড়া মানুষ হয়না। নুর ভাই ও মানুষ ফেরেশতা নয়। চাকরি ধরা আর ছাড়ার ক্ষেত্রে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ।

 

সবকিছুর পাশাপাশি তাঁর লেখনীর ধার টাও চমৎকার । বিভিন্ন কাব্যের ছদ্মনামে,নামে বা বেনামে তাঁর লেখা পড়েছি, কিছু লেখা শুধুই ভালো লাগে, আর কয়েকটা লেখা আছে রক্ত ফুটানোর ক্ষমতা রাখে।  তাঁর লেখার মাঝে জীবন আছে, কারন তাঁর লেখা জীবন নিয়ে। তাঁর একটা লেখা পড়লে বেপারটা হয়ত বুঝতে পারবেন ———–

 

 

মাঝে মাঝে নিজেকে রেডিও মনে হয়। পার্থক্য একটাই, রেডিও শুধু বলতে থাকে আর আমি শুধু শুনতে থাকি।। কোন এক মহাপুরুষ বলেছিলেন প্রত্যেকটা মানুষ জীবনে একজন শ্রোতা চায় যে শুধু শুনবে, শুধুই শুনবে ।। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যক্রমে নাটকের এই রোলটা আমার ভাগ্যে পড়েছে। আমিও শুনি, হেডফোন লাগিয়ে ফুল ভলিউমে শুনি ……

কখনো রাতের ২ টায় বারান্দায় বসে কারো চাপা কান্না শুনি, কখনো রেস্টুরেন্টে বসে কোন এক গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ডের ঝগড়া শুনি, কখনো নদীর পাড়ে বসে কারো আধারের আর্তনাদ শুনি ।। এমন না যে এসব শুনে কোন এক গায়েবী পদ্ধতিতে আমি তাদের মুশকিল আহসান করে দিই।। তারপর ও কোন এক অদ্ভুত কারনে মানুষ আমার সাথে এইসব শেয়ার করে শান্তি পায়।। শ্রোতা হিসেবে হয়ত আমি খুব ভাল বলে………….

অনেকদিন পর মোবাইল স্ক্রিনে হঠাত করে পরিচিত কারো নাম্বার ভেসে উঠলে আমি শোনার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়, কোন বিরক্তি ছাড়া হাসিমুখেই শুনি। তারাও বলে, বলতেই থাকে, টানা কয়েকদিন, দিনে কয়েকবার, সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত। তারপর হঠাত একদিন সব ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আমি ও বুঝে নিই সিচুয়েশন আন্ডার কন্ট্রোল।। নেক্সট সমস্যায় পড়ার আগে আর কোন টেনশন নাই।। আমি ও দোয়া করি স্ক্রিনে যেন এমন সমস্যার দৃশ্যগুলো আর ভেসে না উঠে……

এত কিছু লিখার পিছনের মুল কারনটা হল “ভয়”।
কিছু গল্প শুনতে শুনতে প্রেম করার ইচ্ছাটা অনেক আগেই ইন্তেকাল করেছে। ভয় হয়, শুনতে শুনতে না জানি কখন বিয়ে করার ইচ্ছাটাও পরলোক গমন করে।। আল্লাহ সব সম্পর্কগুলো ভাল রাখুক, সুস্থ ও সুন্দর থাকুক প্রতিটি পরিবার…………………

(লিখেছেন-নুর উদ্দিন চৌধুরী/ ক্যান্সারের নিশিকাব্য, ৭ মে,২০১৮।চট্টগ্রাম) 

 

 

বলা হয়ে থাকে ইন্টেনশন থাকলেও অনেক কিছু প্রকাশ করেন না,চেপে যান । তিনি ক্লাসের ভালো ভদ্র ছেলেটি হলেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় তিনি অনার্সের প্রথম ও ২য় বর্ষে ক্লাস ফাকি দিয়েছিলেন খুব।মানে তাকে দেখাই যেতোনা ।পরে সেই তিনি ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে ফেললেন। পরে ধীরে ধীরে তাঁর পদচারনা বেড়ে যায়, এতটাই বেড়ে যায় তাঁর পুরা নাম টা কারো মনে না থাকলেও নুর ভাই কে সবাই চেনে। যদি সম্ভব হয়, তিনি যেকোন মানুষকে যতটা সম্ভব সাহায্য করেন। এর প্রমান অবশ্য পরে পেয়েছিলাম । কবিতার দিকে তাঁর ঝোক না থাকলেও গানের প্রতিভা তাঁর আছে। গানের কথা বলতে গেলেই ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের মামুন ভাইয়ের কথা আগে চলে আসে। তবে নুর ভাইকে বেশ কয়েকবার স্টেজ এ গানের প্রতিভার পরিচয় দিতে দেখেছি। গলাটা ভালো,অদ্ভুত সেই ছেলেটার।

Noor_U_Chowdhury, অদ্ভুত_সেই_ছেলেটি

রক্তের প্রয়োজনে, বিভিন্ন মানবতার কল্যানে তাঁর সাহায্য পেয়েছি প্রতিবার। এটা বলা ভালো তাঁর মত করে এমন ডেডিকেটেড খুব কমি দেখেছি। তিনি শুধু রক্তদাতা নয়, প্রত্যেক কে নিজেই এক একটা রক্তের ব্যাংক হতে সাহায্য করেছেন । আমার মনে হয় আপনি তাঁর বন্ধু হবেন কিন্তু আপনার গা থেকে এক ব্যাগ রক্ত ও যাবেনা তা হবেনা। এসব দেখেই অদ্ভুত সেই ছেলেটিকে নিয়ে ঘাটা ঘাটি বন্ধ করে তাঁর কাজ কর্ম দেখে গেলাম।

তাঁর কাজ কর্মের শেষ নাই। খাবার এর জন্যে তাঁদের একটা কি জানি গ্রুপ আছে। বলা গ্রুপ সম্ভবত। এ গ্রুপে যে ঢুকে সে আর বের হতে পারেনা। এই সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে যোগাযোগ করুন নুর ভাই এর সাথে। ভালো-আর খারাপের বিচার পরে হবে । এই বলা গ্রুপের কাহিনি শুনতে শুনতে আমি একদিন নিজেই সম্ভবত বলার দলে চলে যাচ্ছিলাম, পরে যাওয়া হয়নি,পরে হয়ত যাওয়া হবে। কিছু রুলস এন্ড রেগুলেশন্স আছে।সেই ভয়েই আমার পলায়ন।

কলেজের ফাংশানে আর কাজে তাঁর কাজের শেষ নাই। সকল বড় ভাইয়েরা আছেন,সাথে তিনি আছেন। একবার তাঁর সাথে দেখা করার কথা ছিলো, টাকার ব্যপারে। মানবতার প্রশ্ন যখন আসে পকেটে থাকলে তাঁর দিতে দ্বিধা নেই, আর দেওয়ার পর তাঁর নাম হওয়া নিয়েও মাথায় তাঁর পেইন হয়না। যাক,  যেতে যেতে চিন্তা করছিলাম তাঁর চারিত্রিক গঠন নিয়ে মনে হচ্ছে একটা অবকাঠামো দাড় করানো গেলো।

নুর ভাইয়ের সাথে কথার এক পর্যায়ে আমি বলেই ফেললাম-

 

 

-ভাই আপনি দেখতে যেমন তেমন না,আবার যেমন শুনি তেমন ও না

-কি বলস,তেমন না মানি কেমন?

– মানি আপনার নামে অনেক কথা শুনলাম কিন্তু আপনার সাথে যায় না।

-কি কথা?ভালো না খারাপ? আমাকে নিয়ে কি চিন্তা দেখি বলত?

-ইয়ে মানে আপনাকে দেখে মনে হয় রসিক মানুষ, আমরা ফার্স্ট ইয়ার থেকেই আপনার সাথে কার সম্পর্ক আছে কার নাই সেটা ঠিক করতে গিয়ে হিমশিম খেতাম।

-আমরা মানি? কে কে বলত ? ( তাঁর আবার সেই দুর্বোধ্য হাসি )

-আমরা মানি আমি, বাকিদের কথা বাদ দেন। আপনাকে দেখেই মনে হয় আপনার কাছের মানুষ আছে,কিন্তু হিসেব মিলেনা।

-কিরে তোরা তো আমাকে ইয়ে বানাই ফেলবি ,দুই দিন পর বলবি আমি বিয়ে করে ফেলসি।

-ইয়ে আসলে আপনাকে দেখে মনে হয়,আরকি।

-তোর কি মনে হয়?

– বলব? আচ্ছা বলে ফেলি, আপনার হাসিটাতেই সমস্যা, দেখলে মনে হয় মনের ভেতর অনেক কিছু, কিন্তু আপনি কিছু প্রকাশ করেন না।

-এটা মনে হওয়ার কারন?

-কারন আর কিছু না অদ্ভুত সেই হাসিটা

-ও, তোদের না,সবার মনে হয়, আসলে তেমন কিছুনা , কিন্তু সবাই ভাবে অনেক কিছু ,ব্যাপার কি আমাকে নিয়ে এই ধারনার, প্রেম ছাড়া কেও থাকতেই পারবেনা নাকি হ্যা?

-না মানে,ইয়ে পারে, কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হয় আপনি পারবেন না।

-কি জন্যে মনে হয় হাসি দেখে? ( সেই মুহুর্তে মনে হলো তিনি হাসি লুকানোর চেষ্টা করছে,আর এর ফলে আরো বেশি হাসছে, আর আমি কুতকুতে চোখে তাকিয়ে আরো কিছু বুঝার চেষ্টা করলাম)

-হ্যা, ভাই আর প্রেম না করে থাকবেন কেমনে, আপনারো গলায় কেও ঝুলে পড়বে ।

-তুই কি অভিশাপ দিচ্ছোস?,ভালো আছি ,খারাপ করে দিবি? এমনেই প্রেমের কাহিনী সমাধান করতে করতে দিন যায়।

-নাহ, আপনি দেখিয়েন যেইদিন পড়বেন সেদিন আর উঠতে পারবেনা না,ভালোভাবেই পড়বেন।

-আমার মনে হয় না (আবার সেই হাসি)

– পড়বেন আমি নিশ্চিত, আপনার হাসি দেখে চিন্তা হচ্ছে নাকি ইতিমধ্যেই পড়ে আছেন?

-আরে কি বলস,এখন না বললাম এসব থেকে অনেক দূরে ।

-আসলে আপনার কথাটা বিশ্বাস হয় তবে আপনার হাসি দেখলে কথাটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করেনা,মনে হয় যেনো আড়ালে তাঁর অন্য কথা।

যাক নুর ভাইয়ের সাথে কথা বলে তাঁর ব্যাপেরে চরিত্র নিয়ে চিন্তার যে কাঠামো দাড় করিয়েছিলাম সেটা ভেঙ্গে গেলো । আবার চিন্তা করতে করতে বাসায় ফিরলাম।

আর একবার নুর ভাইয়ের সাথে দেখা , কথা বলতে বলতে হাটছি, তিনি ঘুরপথে যেতেই আমি বললাম,আরে ভাই ওদিকে কেনো? বললেন হাটাহাটি ভালো, চর্বি বেড়ে যাচ্ছে, আমিও হাটতে হাটতে কথা বলছিলাম।

এক জায়গায় এসে আচানক বললেন

– “চলে আসছি।”

আমি বলি -চলে আসছি মানি?

-আরে আমার টিউশনিটা এই সামনের বিল্ডিং এ।

বুঝলাম,হাটার উপকারিতা কেমন, ধরা খেয়ে ধরা গলায় বললাম “একা যাবো এখন?”

তিনি বললেন “যা, হেটে গেলে উপকার হবে,হাটা দরকার” ।

আমি একা হাটা দিলাম ,  অদ্ভুত সেই ছেলেটা পেছন না ফিরে হাটা দিলো, আর আমিও হেটে হেটে যাচ্ছিলাম,আর চিন্তা করছিলাম “নাহ,চিনা গেলোনা “  ।

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন