সময় তখন ৪.১০।ভোর রাতের দিকে আচমকা এক দু:স্বপ্নে ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। দেখলাম,নির্জন এক নদীর তীরে খোলা চুলে দাড়িয়ে তুমি।আমি এসেছিলাম ভালোবাসার বার্তা নিয়ে।কথা দিয়েছিলাম একদিন আসব,তাই…।আমার পদশব্দে তুমি পাশ ফিরে তাকালে। জিজ্ঞাসা করলাম-“কেমন আছো,অধরা?”। তুমি উত্তর দিলে না।তোমার চিরায়ত হাসিটাও হাসলে না।আমি তখন ভীত,আর তুমি নির্বিকার।ভয় ভয় মন নিয়ে তোমার পাশে গিয়ে দাড়ালাম।কিছুই বললে না তুমি।সামনের শান্ত নদীটার দিকে তাকিয়ে দুজন,কেউই কারো দিকে দেখছি না।আমি বলতে শুরু করলাম আমার না বলা কথাগুলো,যা বলতে এসেছি……….
” ভেবেছিলাম কখনো বলবো না,তবুও কেন বলছি জানিনা।হয়ত এটাই শেষবার তাই,হয়ত এরপর আর কখনো সময় হবেনা বলার।হয়ত আমিই থাকবনা। ভেবো না এ আমার আদিখ্যেতা। আমি ভালোবাসা চাইতে আসিনি আজও। জানি,সেটার যোগ্য আমি নই।আমি ভুল করেছি অনেক আগেই,তাই বলে আমার ভুলে ভরা জীবনের সাথে তোমাকে জড়াতে আসিনি।কিন্তু কি অদ্ভুত,আজও শুধু আমার নি:শ্বাসটুকুই বাকি থাকে যখন আমি তোমাকে মিস করি। কতবার যে ভেবেছিলাম মাতাল হবো,মাতাল হয়ে তোমাকে ভুলে যাব।কিন্তু মাতাল হওয়ার পর তোমাকে আরো বেশি মনে পড়ে। তাইতো মাঝে মাাঝে ফিরে অাসতে ইচ্ছে হয়,সাজতে ইচ্ছে হয় তোমার রঙ্গে।হবে না জানি। তেমন কিছুই চাওয়ার ছিলনা আমার,আজও নেই।আর সবার মত প্রতিদিন রাত জেগে ফোনে কথা বলতে হবে না,শুধু মাঝে মাঝে আমার খবর নিও।ভালো না থাকলেও বলবো ভালো আছি। মাঝে মাাঝে হুটখোলা রিকশায় চড়তে যেয়ে রিকশাওয়ালা যদি জিজ্ঞাসা করে-“কোথায় যাবেন, মামা?”। সেবার তুমিই উত্তর দিও-“যেদিকে দু’চোখ যায়“। তখনো আমি পাশে থাকবো। মিথ্যে করেও কখনো আমাকে ভালোবাসি বলতে হবে না,শুধু বোলো-“তোমাকে মিস করি”,তাতেই আমি ভালোবাসা খুজে নিব।আমার স্বাদহীন ফুচকার প্লেটে ঝালটুকু বাড়িয়ে দিয়ে তুমিই আহ্লাদে খেও,আমি পাাশে বসে মন ভরে দেখব শুধু। দেখো একবার,আমার ছোট্ট টবে ফোটা প্রথম গোলাপটাই সযত্নে এনেছি তোমার জন্য।আজ তাই শুধু একটি বার,শেষবারের মত বলতে এসেছি– “অধরা.. সকালের সদ্য ফোটা প্রস্ফুটিত গোলাপের মতই তোমাকে ভালোবাসি”।
কথাগুলো শেষ হতেই অধরা পাশ ফিরে তাকালো। বাড়িয়ে দেয়া গোলাপটা তখনো আমার হাতেই।সে আমার কোন প্রশ্নেরই উত্তর দেয়নি।শুধু অপলক চেয়ে বলল-“তা আর সম্ভব নয় কোন ভাবেই।সময় অনেক দূর গড়িয়ে গেছে,আলাদা হয়ে গেছে দুজনার পথ। তুমি উপেক্ষা করতে পারো না অতীতকে,আর আমিও মেনে নিয়েছি নিয়তি। অতঃপর পাথরের ন্যায় দাড়িয়ে সে শুধু বলে চলল কিছু বাস্তবতার কথা…..।
অধরা চলে গেল।যেদিকটায় সে চলে গেেল তার ঠিক উল্টো দিকটায় হাটছি আমি। যদিও জানতাম এমনটাই হওয়ার কথা ছিল,তবুও কেন যেন অসার হয়ে আসে আমার সমস্ত শরীর। পা দু’টো পথ চলতে চায় না একটুও। চারদিকে তখন সন্ধ্যার আধাঁর ঘনিয়ে আসে।খুব চিৎকার করতে ইচ্ছে হয়,পারিনা। আচমকা মেঘগুলোই নেমে আসে বৃষ্টি হয়ে।
ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।বাইরে তখন প্রচন্ড বৃষ্টি।দু:স্বপ্নের ঘোর কাটিয়ে বাস্তবে ফিরে আসতে একটু সময় লাগল।ভাবলাম এ কেমন স্বপ্ন!!! পরক্ষনে বারান্দায় গেলাম হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁতে। দেখি ভোর রাতের বৃষ্টিতে তার জন্য রাখা গোলাপটি একেবারেই চুপসে গেছে,নুয়ে পড়েছে একপাশে। বুঝতে পারলাম যা দেখেছি তা স্বপ্ন ছিল না,হয়ত এটাই বাস্তব.. !!!