আমার ও আমাদের দপ্তর জীবনঃপর্ব ১

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
আমারজীবনী,জীবনী,জীবন

আমাদের দপ্তর জীবন বলতেই চোখের সামনে ভেসে একটা চারকোনা টেবল টেনিস কে কেন্দ্র করে  জনা কয়েক মানুষ। ভোরের আলোয় যেখানে হাফিজ ভাইয়ের কার্জক্রম শুরু হয়। দিনে যেখানে দু থেকে তিনবার চা পান চলে। যে যার ল্যাপ্টপ নিয়ে  বসে থাকে পাহারাদারের মত। সকালের কাজ শেষ হয়ে দুপুরের খাবারের ডাক পরতেই একটা ডিম্ব আক্রিতির টেবিল ঘিরে সবাই বসে যাই।

 

শনিবার ছাড়া অন্য দিন গুলো মোটামুটি একি নিয়মে চলে। সেদিন দূরাগত একজন আসেন, অফিসের আরেকটি চেয়ার দখল করতে। আলোচনা জমে উঠে, নিরীক্ষণ ধর্মী বিশ্লেষন চলে। আমি মাঝে মাঝেই দেরিতে উঠি। একবার এত দেরিতে উঠলাম , তখন মিটিং “শুরু হইয়া শেষের পথে” ।

 

ধুপ করে গিয়ে চেয়ার টায় বসে পড়লাম আর সবার কথায় মাথা নাড়াতে লাগলাম যেন সবি বুঝলাম। ৩০ মিনিট পরে মাথা কাজ করা শুরু করলে বুঝলাম, মিটিং চলছে, এতক্ষন বোধয় স্বপ্ন-ঘোরেই ছিলাম।

 

দপ্তরে প্রথম দিন কি বার আমার মনে নেই। একটা ব্যাগ নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে ছিলাম দপ্তরে।  বারে বারে ঠিকানা জেনে নিয়ে মনে করতে পারলাম না কোথায় যাবো। আবার আরমান ভাইকে কল করে মেসেজ দিয়ে ঠিকানা জেনে নিলাম। পৌছেই একটা রুমে নিজের জিনিস-পত্তর রাখলাম। একটা রুমের মাঝে বসে আছি চেয়ারে, মনে হচ্ছিলো রুমের দেওয়াল গুলো চারপাশে ঘুরছে।

 

আস্তে আস্তে সবার সাথে পরিচয় হলো। হাফিজ ভাইয়ের কথা আগেই বলেছি। তিনি রাঁধেন ভালো। রন্ধন তার নেশা এবং পেশা দুটোই।  মাঝেই মাঝেই ঝোলটা বেশ ভালো হয়েছে বললেই তার কাছ থেকে এক-দু চামচ ঝোল বাড়তি পাওয়া যায়!

 

আরমান ভাই এর চরিত্র বিচিত্র। আমি আত্মভোলা হলে তিনি কর্ম ভোলা, একটা কাজ যখন করেন আশেপাশে বোধকরি তুফান উঠলেও তিনি টের পাননা। নিজের কাজ শেষ হলে পরে জিজ্ঞেস করবেন কি”তুফান হইসে নাকি ভাই?”  তিনি কর্ম-যজ্ঞে বর্তমানে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন। মাঝে মাঝে মনে হয় তিনি কিছুই শুনছেন না। কিন্তু ১০ মিনিট বাদে যখন বলেন “ তো তার পর কি হলো?” তখন বুঝি তিনি শুনেছেন বেশ, কিন্তু তিনি যে শুনছেন এটা যারা বলছি তারা বুঝছিনা।  খেতে এবং খাওয়াতে তিনি উস্তাদ, উদার প্রকৃতির পরিচয় মেলে তখন! এছাড়াও আরো আছে , সব আজ বলা যাবেনা কিছু বাকি থাক।নিদারুন ঠান্ডা মাথায় তিনি অনেক গম্ভীর কথা বলে ফেলেন। যেরকম কথা বলতে গেলে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়, আর দিনের আরাম নস্যাৎ হয়ে যায়। তাঁর কাছে টেকনিকটা শিখে নিব ভাবছি! মাঝেই মাঝেই রাত বিরাতে ভূত দেখার মতই চমকে উঠি।ওয়াজেদ ভাই কাজ করছেন,ঢুলুঢুলু চোখে। মাঝে মাঝে তিনি তিন-চার ডাকে সারা না দিলে , মানুষ তাঁর দিকে অসহায় মত তাকিয়ে থাকে। অনেকে উঠে চলে যায়। আমি দুই দলেই আছি।

 

নাজিম ভাই, তার কথা না বললে গল্প অর্ধেক থেকে যাবে। কাগজের লেখার পাশাপাশি এখন কীবোর্ড দিয়ে লিখে চলছি ওনার সাথে কথা হওয়ার পর থেকে। সে অন্য এক গল্প! তাঁর সূত্র ধরে বাকিদের সাথে পরিচয়।  নাজিম ভাইয়ের কথা বলতে গেলেই প্রথমেই বলতে হয়,”ঠান্ডা মেজাজের মানুষ”। আমার মতে তাঁর একটা প্রশিক্ষন কেন্দ্র খোলা উচিৎ , নাম হতে পারে” স্থিরতাই সুস্থতা”। বিভিন্ন পরিস্থিতে তাকে ঠান্ডা থাকতে দেখে আশ্চর্য হয়ে যাই। কারন স্থিরতা আমার ধাতে নেই। নাজিম ভাইয়ের আরেকটা বড় গুন “ ঠান্ডা মাথায় কথা বলা” । আহ এই ক্ষমতা বড় দরকার আমার। আমার কথায় কথায় হাত-পা নেচে উঠে। কন্ঠের তরঙ্গ মাঝে মাঝেই এতটাই বাধ ভেঙ্গে দেয় আশেপাশে তাকিয়ে আমি নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানাই। নাজিম ভাইয়ের একটা ব্যাপার আমি ঠিক ধরতে পারিনা, তিনি কি চান! মাঝে মাঝে মনে হয় তিনি এরকম চান, পরক্ষনেই তাঁর কথায় মনে হয় ওরকম চান! এটা নিয়ে আমার আরো পরীক্ষা চালাতে হবে। সরাসরি জিজ্ঞেস করলেই হয়, তবে জিজ্ঞেস করা, আর  না জিজ্ঞেস করে বোঝার মধ্যে ব্যাবধান চিরন্তন। আমি দেখতে চাই তাকে বুঝতে আমার কতটা সময়ের প্রয়োজন!

 

রেজোয়ান ভাই ,আমাদের ত্রি-পলি ভাই। তিনি অনেক কাজেই পারাদর্শি। কোন কাজে বেশি আমি এখনো নিশ্চিত নই। প্রথম দেখে মুখচোরা মনে হলেও, আস্তে আস্তে দেখবেন মুখে কথার ফুল ঝরছে। চুপচাপ বসে কাজ করেন, আর কখন কাজ শেষ হবে সেটা তিনিও নিশ্চিত নন। কাজ শেষ করে ইউরেকা ইউরেকা বলে লাফানোর দলে নেই।  কাজের আগেও যেমন পরেও তেমন। হঠাৎ কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবেন”আরে ওটা? ওটা তো হয়েই গেসে ভাই”। মাঝে মাঝে উকিঝুকি মেরেও আমি বুঝতে পারিনা তিনি কি নিয়ে কাজ করছেন। তাই বোঝার চেষ্টা বাদ দিয়েছি। তিনি খাবার বেশি খান না। তবে ভাত খেয়েই পপ্স নামক একপ্রকার বিস্কিটের স্বাদ গ্রহন করেন। তাকে যখন জিজ্ঞেস করি”ভাই ওইটা কখন শেষ হবে?” তখন তিনি বলেন “মাসখানেকের মধ্যে বা আগামি বছর”। তখন বিরক্তিতে চিন্তা করি আর জিজ্ঞেস করবোনা!  আমি স্থির নই ,তাই পারিনা, আবার তাকে জিজ্ঞেস করি। আর মাঝেই মাঝেই তিনি বলে উঠে “ওমা,দেখেন নাই,ওটা তো হয়েই গেসে”।

 

লিখাটা শেষ করবো ভাবছি, এই সময় আরমান ভাই ঢুকলো ।  তাঁর এক ছোট ভাতিঝি  সকালে তেলাপোকার ওষৌধ খেয়ে , অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। সকালে দেখেছিলাম  উশকোখুসকো চুলে আরমান  ভাইকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যেতে।  এখন জানলাম রোগী সুস্থ আছে।   

আমি যদ্দুর বুঝি আমার চারপাশের মানুষ গুলো অনেক ভালো, এবং স্থির। এক আমি অস্থির এবং উচ্চমাত্রায় দুশ্চিন্তা গ্রস্থ ব্যাক্তি। হাজারের ভিড়ে তাই নিজেকে একলাই লাগে। যাক না জীবন জীবনের নিয়মে। আরো কথা বাকি আছে, অনেকের কথাই বলার আছে।সবার কথাই বলবো। এখানে প্রিয়জন আছে,দুলাভাই,আপু,ভাগ্নী-ত্রয়, চট্টগ্রামে প্রিয় আম্মু,আব্বু, আর আছে প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী । ফেলে আসা স্মৃতিদের কথা বলবো, দপ্তরের আরো ভাইয়েদের কথা বলবো, অন্য কোন দিন,অন্য কোন গল্পে……

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া