লি কুয়ান ইউ : তাঁর নেতৃত্বে সিঙ্গাপুর এখন বিশ্বের বুকে উন্নত রাষ্ট্রের মডেল

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

সিঙ্গাপুর দক্ষিন -পূর্ব এশিয়ার ক্ষুদ্র এক নগর রাষ্ট্র। এই নগর রাষ্ট্রই এখন বিশ্বের অন্যতম উল্লেখযোগ্য বানিজ্যকেন্দ্র। নগররাষ্ট্র হোক বা রাষ্ট্র ,    উন্নয়নের পেছনে থাকে কারো না কারো অবদান। সিঙ্গাপুরের আদর্শ বানিজ্যকেন্দ্র, আদর্শ রাষ্ট্র হয়ে ওঠার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি তাঁর নাম লি কুয়ান ইউ(Lee Kuan Yew) । “সিঙ্গাপুর” নামটির উৎপত্তি Singapura (সিঙ্গাপুরা )থেকে।আবার  সিঙ্গাপুরা  শব্দটি আসে সংস্কৃত সিঁহাপুরা  থেকে, যার  বাংলা অনুবাদ সিংহপুর 

লি কুয়ানের জন্ম ১৯২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ।তিনি হক্কা ও চীনা পেরানাকান বংশোদ্ভূত চতুর্থ প্রজন্মের সিঙ্গাপুরী ।তেলক কুরাউ ইংলিশ স্কুলের পর  ১৯৩৫ সালে র‌্যাফল ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন তিনি। তাঁর সে সময়কার সহপাঠি এবং ভবিষ্যতের সহধর্মীনি কোয়া জিওক চু এখানেই পড়তেন। কোয়া জিওক চু  ইংরেজি ও অর্থনীতি বিষয়ে লি কুয়ান কেও পরাজিত করার মত পারাদর্শি ছিলেন।১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত পিপলস অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন লি কুয়ান। তিনি ৪০ বছর ধরে দলের সাধারন সম্পাদক ছিলেন।

সিঙ্গাপুরের চোখ ধাঁধানো অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখেন দেশটির প্রথম প্রধান্মন্ত্রী, ও সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতার জনক হিসেবে খ্যাত লি কুয়ান ইউ।তাঁর যোগ্য  নেতৃত্বে ১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়ার কাছ থেকে সিঙ্গাপুর তাঁদের স্বাধীনতা অর্জন করে , এর পরের ইতিহাস, বদলে যাওয়ার, বদলে দেওয়ার।

১৯৫৯ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ এর হাত থেকে মুক্ত হয়ে স্বায়ত্তশাসিত সিঙ্গাপুরে পিএপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতায় আসে। সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন লি কুয়ান। ১৯৫৯ সালে লি কুয়ানের নেতৃত্বে পিএপি ক্ষমতায় আসে। লি কুয়ানের নেতৃত্বে বদলে যেতে থাকে সিঙ্গাপুর ।সিঙ্গাপুর  তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রথম বিশ্বের দেশে পরিণত হয়।লি কুয়ান তিন দশকের ও বেশি সময় ধরে সরকার প্রধান হিসেবে দেশ শাসন করেন। পিএপি দলটি দেশের সাধারন মানুষের আস্থা অর্জন করে ব্যাপক ভাবে ক্ষমতা বিস্তারে সক্ষম হয়। বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর পর ১৯৯০ সালে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান লি কুয়ান ইউ।

এই নেতা ৩১ বছরের শাসন কালে অপরাধ ধ ও দারিদ্র্যপীড়িত বন্দর-শহর থেকে সিঙ্গাপুরকে  এশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত করেন ।সিঙ্গাপুরের সংস্কারে নিত্য নতুন উদ্যোগ নেন লি কুয়ান ইউ । উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান ছিল তাঁর । বিভিন্ন দল,জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য ,শান্তি,ও  স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি।

সিঙ্গাপুর কে সবুজ ও পরিচ্ছন্ন রাষ্ট্রে পরিনত করতে উদ্যোগ নেন তিনি।।নিষিদ্ধ করা হয় চুইংগাম ও দেয়াললিখন । নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় পর্নোগ্রাফির উপর। সকল ধরনের অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন লি কুয়ান। এই বলিষ্ঠ নেতার প্রচেষ্টাতেই সিঙ্গাপুর এখন বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর। দেশটিকে দুর্নীতির অভিশাপ থেকে মুক্ত করার পেছনে তাঁর  অবদান অনস্বীকার্য

প্রাকৃতিক সম্পদ না থাকা সত্তেও যে একটা দেশ অর্থনীতিতে এতটা শক্তিশালী অবস্থানে চলে আসতে পারে তার উদাহরন লি কুয়ান। তাঁর নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে উন্নত রাষ্ট্রের মডেল এখন সিঙ্গাপুর। বিশ্বের বুকে অর্থনৈতিক ভাবে নতুন পথের দিশা দিয়েছে এই সিঙ্গাপুর।অনেক দেশের কাছেই লি কুয়ানের সিঙ্গাপুর উন্নয়নের এক আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবেই এখন পরিগনিত হয়।

উন্নয়নের জন্য তাবদ বিশ্বের বাহবা কুড়ালেও মানবাধিকার এর দৃষ্টিকোন থেকে তিনি অনেক বার প্রশ্নবিদ্ধ হন।এ সম্পর্কে লি কুয়ান বলতেনউন্নতি করতে হলে একটি রাষ্ট্র কে কিছু স্বাধীনতা ত্যাগ করতে হয়।    

ক্ষমতার পালাবদলে বর্তমানে সিঙ্গাপুরে ক্ষমতায় রয়েছেন স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দেওয়া লি কুয়ান লিউয়ের ছেলে এবং গোহ চক তংয়ের উত্তরসূরি লি সিয়েন লুং । রাষ্ট্রনায়ক লি কুয়ান ইউ সোমবার,২৩ মার্চ ,২০১৫ সালে  ৯১ বছর বয়সে মারা যান। কয়েক দিন ধরে জাতীয় পতাকায় মোড়া লি কুয়ানের কফিনে শ্রদ্ধা জানায়দেশের সহস্র মানুষ।লি কুয়ান শক্ত হাতে একসময়ের অনগ্রসর , একি সাথে ক্ষুদ্র এই ব্রিটিশ উপনিবেশকে আধুনিক নগররাষ্ট্রে পরিণত করেন। অপরদিকে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় দেশ চালানোর জন্য সমালোচনাও হয়েছে তাঁর। তবে এটা বলে দেওয়া যায় আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক লি কুয়ান ইউ।

রেফারেন্স

1. bn.wikipedia.org

2. www.prothomalo.com

3. www.prothomalo.com

4. www.prothomalo.com

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন