মাহাথির মোহাম্মদ ( জন্ম : জুলাই ১০, ১৯২৫ )। মালয়েশিয়াকে তিনি নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি।মাহাথির মোহাম্মদ ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দল পর পর ৫ বার সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। তিনি ছিলেন এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী । তিনি স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন ২০০৩ সালের ৩০শে অক্টোবর এ।ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদ ১৯২৫ সালে মালয়েশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এ্যালোর সেটর-এর নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা-মাতার ১০ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে ছোট।
মাহাথির বিন মোহাম্মদ শৈশবে মালয় এবং এর পর শহরের একমাত্র ইংরেজি স্কুলে শিক্ষা গ্রহনকরেন। বাসায় তাঁদের একজন ধর্মিয় শিক্ষক ছিলেন,যিনি তাঁদের ধর্ম শিক্ষা দিতেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে ১৯৪১ সালে জাপান মালয়েশিয়া আক্রমণ করে। জাপান ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল বন্ধ করে দেয় এবং এর পরিবর্তে জাপানি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। মাহাথিরের মোহাম্মদের বয়স তখন মাত্র ১৬।। তিনি জাপানি স্কুলে যেতে নারাজ ছিলেন।সে সময় মাহাথির স্থানীয় ছোট একটি বাজারে কলা বিক্রয়ের কাজ শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত পিতার চাপের মুখে তিনি ওই স্কুলে ভর্তি হন।তিন বছর পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় চলেছিল জাপানের শাসন।
তিনি সিথি হাসমা এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের মোট সন্তান সাত জন। সাত সন্তানের মধ্যে তিন জনকে তারা দত্তক নিয়েছিলেন। ১৯৫৩ তে তিনি চিকিৎসক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। তাঁর মতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের লোকেরা রাজনীতিতে ভালো করে। ডাক্তারের মতই একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দেশের ও দশের সমস্যা নির্ধারন করে তাঁর সমাধানে এগিয়ে আসে।
মাত্র ২১ বছর বয়সে তাঁর রাজনীতিতে যাত্রা শুরু হয়। সহপাঠিদের সাথে একত্র হয়ে তিনি “মালয়ান ইউনিয়নের “ প্রস্তাবের বিরুদ্ধচারন করেন। তিনি যখন সিঙ্গাপুরে ছিলেন মাহাথির সেখানের কলেজের মালয় ছাত্রদের নিয়ে ‘মালয় ছাত্র সংগঠন’ সংগঠন করেন। ছাত্র দের শিক্ষার মান উন্নত করা ছিল এই সংগঠনের একমাত্র উদ্দেশ্য। ১৯৬৪ সালে ৩৯ বছর বয়সে মাহাথির প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে ২য় বারের মত তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হন। পরবর্তিতে তিনি তিন বছর রাজনীতি থেকে অবসরে ছিলেন। পরবর্তিতে ১৯৭২ সালে তিনি আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় হয়ে উঠেন।
১৯৭৪ সালের নির্বাচনে জয়ি হওয়ার পর তাকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুই বছরের মাথায় তিনি উপ প্রধান মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।তখন তাঁর কিছু উন্নয়ন মুলক পরিকল্পনা থাকলেও তিনি তা বাস্তবায়ন করতে পারেন নি। ১৯৮১ সালের ১৬ জুলাই তিনি প্রধান মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর সকল পরিকল্পনা মুক্তভাবে বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হন। মাহাথির মোহাম্মদ এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ কাল নির্বাচিত প্রধান মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। টানা ২২ বছর দায়িত্বে থাকার পর ২০০৩ সালে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব থেকে সরে দাড়ান।
মাহাথির বিন মহাম্মদ আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রধান রুপকার। তিনি ছিলেন একজন সফল স্বপ্ন দ্রষ্টা। একজন সফল স্বপ্ন দ্রষ্টাই পারেন একটা জাতির ভবিষ্যৎ বদলে দিতে। তিনি সরকারি কাজের ক্ষেত্রে নিতি নির্ধারন করেন। সমস্যার সমাধানের জন্যে তিনি যথেষ্ট পরিকল্পনা করেন, এবং তা বাস্তবায়ন করেন। তিনি ইসলাম ধর্মের প্রতি সম্পূর্ন বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর মতে ইসলাম ধর্ম অর্থনতির অগ্রগতির পথে অন্তরায় হতে পারেনা। কারন ইসলাম শুধুই সপ্তম শতকের ধর্ম নয়, এটা সকল জাতির জন্যে সকল যুগের ধর্ম।
দেশ কে উন্নতির শির্ষে নিয়ে গেলেও মাহাথিরের সমালচনাও কম হয় নি। আনোয়ার ইব্রাহিম কে বরখাস্ত করেন তিনি। এজন্যেও তাঁর সমালোচনা কম হয় নি। তবে শুধু আনোয়ার ইব্রাহিম নয়, ক্ষমতা ছাড়ার পূর্বে ও পরে তিনি তিনি অনেকেরি সমালোচনা করেছেন । ২০১৮ সালের জানুয়ারি্তে মাহাথিরকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে মালয়েশিয়ার বিরোধীদলীয় জোট পাকাতান হারাপান।এবার তিনি তাঁর শিষ্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাড়িয়ে অতিতের ভুল সংশোধন করতে চান,এমন টাই তাঁর মত।
মালয়েশিয়ার সাধারন নির্বাচনে জয়ি হয়ে মাহাথির ইতিহাস গড়েছেন।নির্বাচনে ২২২ আসনের মধ্যে মাহাথির মোহাম্মদের পাকাতান হারাপান মোট ১১৩ আসনে এবং দেশটির ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বারিসান ন্যাশনাল ৭৯ টি আসনে জয় পেয়েছে।এর ফলে ক্ষমতা হারাতে হলো দীর্ঘ ৬০ বছর ক্ষমতায় থাকা বারিসান ন্যাশনাল। একটা সময় এই বারিসান ন্যাশনালের নেতা হিসেবেই দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিলেন মাহাথির বিন মোহাম্মদ। ২য় মেয়াদে রাজনীতিতে ফিরেই দাঁড়িয়ে গেলেন নিজের দলের বিপরীতে। থমকে গেলো বারিসান ন্যাশনাল এর ৬০ বছরের শাসনের পথচলা,পৃথিবী দেখলো ৯২ বছর বয়সি মাহাথির মোহাম্মদের চমক।
রেফারেন্স
Pingback: তিনি ছিলেন একজন সফল স্বপ্ন দ্রষ্টা-একজন সফল স্বপ্নদ্রষ্টাই পারেন জাতির ভবিষ্যৎ গড়তে