হামিদুল ইসলাম এর সাথে দেখা হঠাৎ করেই। বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়ে ছিলাম, এদিক ওদিক দেখছিলাম চাতক পাখির মত একটা রিকশার আশায়। সে সময় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে এগিয়ে আসলেন একজন রিকশাওয়ালা। হাসি খুশি মুখ। দেখেই মনে হয় আহ! বেঁচে থাকার কি আনন্দ। রিকশায় উঠলাম,যাত্রার উদ্দেশ্যে, বৃষ্টিস্নাত দিন, বাতাস, রিকশা যেন হাওয়ায় ভেসে চলছে। চলতে চলতে কথা হচ্ছিল রিকশাওয়ালার সাথে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম নাম কি। সে হাসি মুখে জানালো হামিদুল ইসলাম। জানালো অনেক দিন ধরেই তিনি রিকশা চালাচ্ছেন। এর আগে চট্টগ্রামে জাহাজ ঘাটায় কাজ করেছেন দীর্ঘ সাত বছর। জানতে চাইলাম তাঁর পরিচয় । বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করলাম। জানালেন তাঁর বাড়ি বগুড়ায় । বর্তমানে ঢাকায় আছেন। চন্দ্রায় থাকেন। বাড়ি যান নাকি জানতে চাইলে জানালেন প্রতি মাসে বা দুই মাসে এক বার যান ১০ দিনের মত থাকেন বগুড়ায়।
জিজ্ঞেস করলাম এতদিন থাকলে , টাকায় হয় কিনা। হামিদুল ইসলাম এক গাল হেসে বলেন “হয় না আবার !” হলেও দশ দিন না হলেও দশ দিন তাঁর বাড়ি থাকা চাই। আমি বুঝলাম তিনি রিকশা চালিয়ে জীবন চালান ঠিক ই কিন্তু জীবন এর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে নারাজ।জিজ্ঞেস করে আরো জানলাম, তাঁর পুরো পরিবার বগুড়ায় থাকে, গ্রামের বাড়িতে, বাসা ভাড়া লাগেনা।আর তাঁর খারাপ কোন অভ্যেস নেই । তাই তাঁর যা আয় হয় তাই দিয়ে চলে যায়, শুধু চলে যায় না ভালো ভাবেই যায়। তাঁর তিন মেয়ে, তিন জন ই পড়া লেখায় আছে। আর হামিদুল ভাই প্রতি মাসে, দুই মাসে তাঁর রাজ্যে ঘুরে আসেন । তাঁর হাসি মুখ দেখলেই বুঝা যায় একজন শৌখিন রিকশা চালক তিনি। পরিবারের সাথে কিছু সময় কাটানো, তাঁদের সাথে থেকে জীবন টা কে তিনি উপভোগ করা, এসব তিনি বাদ দিবেন কেনো! তাঁর কাছে টাকাই সব নয় , তাই তো ৩০/৪০ দিন রিকশা চালিয়ে সোজা গ্রামের বাড়ি। তাঁর শখ পুরনের পথে,একজন শোখিন রাজকুমার,একজন সফল মানুষ।
আসলে অনেক অনেক টাকা হলেই যে মানুষ শখের লালন করে তা নয়, অনেক কম উপার্জন করেও প্রিয় জন দের সাথে জীবনের শখের সময় গুলো কাটানো যায় নির্ভাবনায়। মনে মনে ভাবলাম ‘লাখ টাকা কামিয়ে সবাই একজন শৌখিন হামিদুল ইসলাম হতে পারেনা” রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে চলে আসলাম বাসায়, মাথায় থেকে গেলো শৌখিন হামিদুল ইসলামের কথা।