মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি একটি চিঠি

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

প্রিয় অজ্ঞাতনামা শহীদ,

পত্রের প্রথমেই স্মরণ করছি নাম না জানা অগুনিত লাখো মুক্তিসেনাদের, স্মরণ করছি সেই মা-বাবা, ভাই-বোন,আন্তীয় স্বজনদের, যাদের সোনার মতো ছেলে, বন্ধুর মতো ভাই স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন দিয়েছে।স্মরণ করছি সেইসব মুক্তিযোদ্ধাদের যাঁরা তাঁদের জীবন দিয়ে জয়ী করেছে আমার এই বাংলাকে, রক্ষা করেছে এই বাংলার মা মাটিকে।আমি ছালাম এবং শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সেই ত্রিশ লক্ষ শহীদদের যাঁদের রক্তেজ্বলে অর্জিত আমাদের লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা ও স্বাধীনতা,১৬ কোটি মাতৃপ্রাণের বহুমাতৃক এই দেশ।

প্রিয় আত্মত্যাগী বিজয়ীসেনা,

ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তেজ্বলে অর্জিত আমাদের লাল সবুজের পতাকা ও স্বাধীনতা, ১৬ কোটি মাতৃপ্রাণ বাংলা ভাষাভাষী অসহায় আত্নত্যাগী মানুষের চিরতরের গৌরব।

হে সূর্য সন্তানেরা,

তোমার চক্ষুলজ্জাহীন নির্লোভ নিজ প্রাণ নিবেদিত এবং আত্মত্যাগী জীবন উৎসর্গের অক্লান্ত পরিশ্রমের ভূমিকায় এই অফুরন্ত স্বাদের স্বাধীন দেশ উপহার পেয়েছি ।শ্বাস-প্রশ্বাসে ভাসিয়ে খাকতে পারি সকাল দুপুর রাত, বুক ভরে নিতে পারি নির্মল শীতল বাতাসের ঘ্রাণ,দিগন্ত বিসর্পিত নীল আকাশ, সাগরের বালুকণা ,স্রোতধারা ও আকাশ গর্জনের ডাক কানে শুনি ।কলকাকলিতে মূখরিত স্বদেশ সকাল, শিশির ভেজা ধান আর লতার মাঝে খুজে পাওয়া যায় তোমাদের রক্তের ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দ।পাল তোলা মাঝির নৌকার হাতছানির হাওয়া এখনও তোমাদের ডাকে।এখনও মাঝিমল্লার আর পথের পাঁচালি,রাখাল বাঁশিওয়ালা বন্ধু,বয়াতি আর মেঠোপথ তোমাদের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।প্রকৃতির এমন আশ্বাদান ও রুপবতী এ গ্রামীন শহরের প্রতিটি ধূলিকণা তোমাদের অশ্রুরোদন জ্বালাময়ী যন্তনার কথা এখনও বুকে ধারন করে আছে। 

হে স্বাধীনতা বীরযোদ্ধারা,

মুক্তিসেনা, ২১ শে ফেব্রুয়ারি, মিলিটারি, রাজাকার,৭ই মার্চ, ২৬ শে মার্চ,বঙ্গবন্ধু,১৬ডিসেম্বরের সংস্পর্শে আমি কখনও নিজেকে মিলিয়ে দেখেনি,আমি মিলিয়ে দেখেনি আকাশ পাতাল, নদী জল,সমুদ্র সৈকত,পাহাড় ঝর্ণার আবেগী শিহরণ। আমি শুনেছি রক্তকবরী গান,ভেসেছি তোমাদের রক্তের নোনাজ্বলে,ডুবেছি তোমাদের উৎসাহী আত্নত্যাগীর নিবেদিত প্রাণের শান্তনায়।জয়গানে কলোরবে মিছিল আর জনসমুদ্রের খরাস্রোতের হাত তালিতে স্মরণ করছি এ যাবৎ কাল।

হে বঙ্গসন্তানেরা,

আমি দেখেছি তোমাদের লাল নীল আর হলুদ ফুলের শুভাষিত শ্রদ্ধার মোড়কে।আমি দেখেছি তোমাদেরকে শহীদ মিনার পতাকার আধিপত্যে।আমি দেখেছি বাংলা জাতীয় সংবাদ পত্রের প্রথম শিরনামে,বাংলা সাদা-কালো টিভি চ্যানেলের পর্দায়,রঙ্গিন কিছু পোস্টারে আর ছবিতে।আমি দেখেছি লাল সবুজের রঙ এ আঁকা কচি কচি শিশুদের গালে আঁকা মহান স্বাধীনতা। আমি দেখেছি কালো ব্যাজে স্মরণ করা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র আর ছাত্রীদের মাথায় বাঁধা কাপড়ে।

প্রিয় মুক্তিযোদ্ধারা,

যখন অ আ ক খ ১ ২ পড়তে পারতাম, ঠিক সেদিন থেকেই তোমাদের অনুধাবন করতে পেরেছি।খুব অল্প বয়স থেকেই স্বাধীন বাংলার স্বাধীন বিশ্বকবির জাতীয় সংগীত শুনতে পেরেছি। ঠিক তখন থেকেই বইয়ের পাতা আর খবরের ইন্চি কলামের কোণায় কোণায় তোমাদের বীরত্বের কথা জেনেছি।তখন থেকে মুক্তিযোদ্ধ আর তোমাদের জীবন ত্যাগী ইতিহাস নিজের মধ্য অনুধাবন এবং নিজেকে সেভাবে গড়তে সক্ষম হতে পেরেছি । সেদিন থেকেই যেদিন থেকে বাবা বলতো ইতিহাসের পাতায় লুকিয়ে থাকা সকল শহীদের প্রতি সম্মান,শ্রদ্ধা আর প্রানভরে ভালোবাসার সহিত তোমাদের স্মরন করা উচিত।

প্রিয় মুক্তিসেনা,

দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী জীবনযুদ্ধ আর দেশ নিপীরণের সংকটের অক্লান্ত পরিশ্রমী একজন সৈনিক ও মুক্তিসেনা তুমি। স্বাধীনতার ঘোষক, বাঙালি জাতির হাতিয়ার বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দেওয়া প্রথম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তুমি। তোমাদের বীরত্ব আর সাহসী বন্দুকের গুলির কারণে,দেশকে উপহার দেওয়া তোমাদের স্বপ্নময়ী জীবন ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি আমার এ স্বাধীনতা। আমাদের এ মাথা তোলবার সাহস ।আমাদের নিরন্তর বেঁচে থাকার শীতল মাঠির পাটি।

ওহে রক্তঝরা মহান বীর,

আমি অতি ক্ষুদ্র সামান্য ইতিহাস ও ইতিহাসের কল্প কাহিনী সমন্ধে জেনেছি ও পড়েছি।এই অজান্তে জানা অজানার বেড়া জালে ভূল ক্রটির অন্তরালে আমার এ সামান্য লিখনে আমি ক্ষমা প্রাপ্তি।অঝড়ে কেঁদেছি আমি দেহ ত্যাগ আর মা বাবার মানিকের রতনের ফিরে না আসার গল্প পড়ে। ক্ষনে ক্ষনেই উৎকন্ঠা হয়ে উঠেছি তোমাদের দেশের প্রতি এমন দরদ দেখে। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর ক্ষুদ্র এই অনধাবন হয়তো তোমাদের কাছে এতো চিঠির ভিরে ঠেলে উঠতে পারিনি।তবুও আমার পক্ষ থেকে আমার এই অল্প পরিসরে লেখার মাধ্যমে তোমাদের হয়তো যথাযথ মূল্যায়নে শ্রদ্ধা, সালাম আর ভক্তিতে স্মরণ করতে পারলা না।তারপরও পরম শ্রদ্ধা আর সন্মানের সহিত স্মরন করলাম।

 

ইতি

লেখক মোঃ মাসুদ রানা

গ্রামঃ চৌবাড়ীয়া ,পোষ্টঃ বেলতৈল -৬৭৭০,থানাঃ এনায়েতপুর ,উপজেলাঃ শাহজাদপুর, জেলাঃ সিরাজগঞ্জ,

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

2
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

2