একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার। বাংলাদেশ জাতীয় দলের তিন ফর্মেটে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন । সেপ্টেম্বর ২০১১ থেকে রহিম জাতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। মূলত তিনি একজন উইকেট-রক্ষক এবং মাঝারি সারির ব্যাটসম্যান। ছোটখাটো গড়নের এই সদা হাস্যোজ্জ্বল খেলোয়াড়টি স্ট্যাম্পের পেছনে এক নাগাড়ে কথা বলার জন্য পরিচিত হয়ে আসছেন। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি তথা সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করেন।
তার পূর্ণ নাম মোহাম্মদ মুশফিকুর রহিম। ডাক নাম মিতু।তিনি জন্মগ্রহন করেন ৯ মেয়ে ১৯৮৭ সালের বগুড়া জেলায়। তার বাবার নাম মাহমুদ হামিদ তারা। মার নাম রহিমা খাতুন।তার স্ত্রীর নাম জান্নাতুল কিফায়াত মন্ডি।মুশফিক বগুড়া জিলা স্কুল এবং বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুশফিক ইতিহাস বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী মুশফিক ইতিহাস বিভাগে প্রথম-শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন।২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে তিনি জান্নাতুল কিফায়াতকে বিয়ে করেন।
তিনি একজন ডান হাতি উইকেট-রক্ষক ব্যাটসম্যান। তার উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। তার জার্সি নাম্বার ১৫।তিনি ডিপেন্ডেবল মুশফিক নামে পরিচিত।২০১৮ সালে নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে এর বিপক্ষে ২য় টেস্ট এ তার ও বাংলাদেশের হয়ে কোনো ব্যাটসম্যান এর হয়ে সর্বোচ্চ ২ টি ডাবল সেঞ্চুরি এবং উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গরেন।২০০৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে মুশফিক প্রথমবারের মত জাতীয় দলে সুযোগ পান। ইংল্যান্ডের মাটিতে এটাই ছিলো বাংলাদেশের প্রথম সফর। অপরিচিত পরিবেশ এবং সীম বোলিংয়ের মোকাবেলায় তাই বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের যথেষ্ট ভুগতে হয়। প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলে মুশফিক পরিবেশের সাথে ধাতস্থ হয়ে নেন। যার প্রমাণ সাসেক্সের বিরুদ্ধে তার ৬৩ রানের ইনিংস এবং নটিংহ্যাম্পশায়ারের বিরুদ্ধে করা অপরাজিত ১১৫* শুরুর দিকে যদিও তাকে কেবল উইকেট-কিপার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল, গা গরমের ম্যাচগুলোতে তার ক্রীড়া প্রদর্শন নির্বাচকদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। ফলশ্রুতিতে লর্ডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তিনি স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবেই দলে জায়গা করে নেন। ১৬ বছর বয়সী এই তরুণ প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৯ রানেই প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। দল অল আউট হয় ১০৮ রানে এবং সাকুল্যে তিনজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছুতে সমর্থ হন। এ্যাংকেল ইনজুরির কবলে পড়ায় সিরিজের বাকি ম্যাচগুলো তার আর খেলা হয়নি।
২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে মুশফিক বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেন। অন্যান্যদের মধ্যে এই দলে ছিলেন ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক তারকা সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল মুশফিকের নেতৃত্বে দলটি কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যেতে সমর্থ হয়।
২০০৬ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে মুশফিক আবার জাতীয় দলে সুযোগ পান। এই ট্যুরে তার সাথে সাথে ফরহাদ রেজা এবং সাকিব আল হাসানেরও ওয়ানডে অভিষেক হয়।হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে মুশফিক তার প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি করেন এবং পরের বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের জন্য খালেদ মাসুদের স্থলাভিষিক্ত হন।
জুলাই, ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে মুশফিক আবার দলে ডাক পান। এক ইনিংস ও ৯০ রানের বিশাল ব্যবধানে বাংলাদেশ পরাজিত হয়। মুশফিক, মোহাম্মদ আশরাফুলকে সঙ্গী করে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রেকর্ড ১৯১ রান করেন। ৮০ রানের একটি চমৎকার ইনিংস খেলেন মুশফিক।
২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপে অনবদ্য ৭১ রানের ইনিংসের জন্য বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান ম্যাচে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
##টেস্ট রেকর্ড-
বাংলাদেশ টিমের হয়ে টেস্ট অভিষেক হয় ২৬ মে ২০০৫ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (ক্যাপ নাম্বার ৪১)
টেস্টে তার ম্যাচ সংখ্যা ৬৬,রান করেছেন ৪০০৬ সেঞ্চুরি আছে ৬ টি ফিফটি আছে ১৯ টি। সর্বোচ্চ রান ২১৯। ব্যাটিং গড় ৩৫.১৪।
টেস্টে স্ট্যাম্পের পেছনে ক্যাচ ধরেছেন ১০২ টি আর স্টাম্পিং করেছেন ১৫ টি।
ওডিআই রেকর্ড–
তার অডিআই অভিষেক ৬ আগস্ট ২০০৬ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে (ক্যাপ নাম্বার ৮০)
ওডিআইতে ম্যাচ সংখ্যা ২১৬* রান সংখ্যা ৬১০০।সেঞ্চুরি আছে ৭টি ফিফটি আছে ৩৫টি।
তার ব্যাটিং গড় ৩৬.৩০। সর্বোচ্চ রান ১৪৪
স্ট্যাম্পের পেছনে ক্যাচ ধরেছেন ১৮০ এবং স্টাম্পিং করেছেন ৪৪টি।
##টি২০আই রেকর্ড —
তার টি২০ আই অভিষেক হয় ২৮ নভেম্বর ২০০৬ সালে জিম্বাুয়ের বিপক্ষে।
তার টি২০ ম্যাচ সংখ্যা ৭৭ রানের সংখ্যা ১১৩৮, ব্যাটিং গড় ১৯.৭৬। কোন সেঞ্চুরি নেই তবে ফিফটি আছে ৪ টি।তার সর্বোচ্চ রান ৭২। স্ট্যাম্প এর পিছে ক্যাচ ধরেছেন ৩১ টি স্ট্যাম্পিং করেছেন ২৮ টি।
ঘরোয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের হয়ে ২০০৬ সালে খেলেছেন রাজশাহী বিভাগে,২০০৭ সালে সিলেট বিভাগে ২০০৮ রাজশাহী বিভাগে ২০১২ সালে দুরন্ত রাজশাহীর হয়ে,২০১৩-১৫ সালে খেলেছেন সিলেট রয়েলসের হয়ে ২০১৬ সালে বরিশাল বুলস এবং ২০১৮-১৯ চিটাগাং ভাইকিংস এর হয়ে।
##সহ-অধিনায়কত্ব–
২০০৯ এর জিম্বাবুয়ে সফরে মুশফিক বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হন। তৎকালীন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় সাকিব তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং সহ-অধিনায়ক সাকিবের দায়িত্ব পান মুশফিক।২০১০ এর ২১ জানুয়ারী ভারতের বিরুদ্ধে হোম সিরিজের প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনে মুশফিক তার ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। মাত্র ১১২ বলে সেঞ্চুরি করে তিনি বাংলাদেশের দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক হন। ১১৩ রানের ব্যবধানে ভারত ম্যাচটি জিতে নেয়।
ঐ বছরের ৮ নভেম্বর ওয়ানডেতে মুশফিক তার সেরা ইনিংসটি খেলেন। জাতীয় ক্রিকেট লীগের একটি ম্যাচে তিনি রাজশাহীর হয়ে ১১৪ বলে করেন ১২০ রান।ডিসেম্বর, ২০১০ এ মুশফিকের জায়গায় তামিম ইকবাল সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পান।
##অধিনায়কত্ব–
২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে নিজেদের সেরা সাফল্যে রানার্সআপ হয়।এশিয়া কাপ ফাইনাল : হারলেও হারায়নি বাংলাদেশ।
টেস্ট ক্রিকেটে মুশফিকের অধিনায়কত্বেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করে।
## তার অনন্য রেকর্ড —
মুশফিকুর রহিম প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেন। ৩২১টি বল মোকাবিলা করে ২২ চার ও ১টি ছয়ের সাহায্যে ২০০ রান করেন। ২০১৩ শ্রীলঙ্কা সফরে তিনি এই রেকর্ডটি করেন। তিনি ৮ম উইকেট-রক্ষক যিনি টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন এবং ৯ম ব্যাটসম্যান যিনি টেস্টে ৬ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। ২০১৮ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিশতক করার মাধ্যমে ইতিহাসের প্রথম উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দুইটি দ্বিশতক করার রেকর্ড গড়েন মুশফিক। এছাড়া প্রথম বাংলাদেশি হিসেবেও দুইটি দ্বিশতকের রেকর্ড তার।
বাংলাদেশের সাবেক কোচ জেমি সিডন্সের ভাষ্যমতে, “রহিমের ব্যাটিং এতটা বহুমাত্রিক যে তিনি এক থেকে ছয় পর্যন্ত যে কোন অর্ডারে খেলতে পারেন।
অন্যান্য ক্রিকেটারদের মধ্যে মুশফিকুর রহিম খুবই পরিশ্রমী একজন ক্রিকেটার। তিনি প্র্যাকটিস সেশন নেট এ অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি সময় যাপন করেন।তিনি পরিশ্রম করতে খুবই পছন্দ করেন। তারে কঠোর পরিশ্রমই তাকে তার সাফল্যের চূড়ায় পৌছিয়ে দেয়। এভাবেই পেরিয়ে গেলো মুশফিকের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সুবর্ন কটি বছর।