ছাত্র জীবনের শুরু সেই তবে থেকে যবে থেকে স্কুল আঙ্গিনায় পা রেখেছিলাম-হোকনা খেলার ছলে। প্লে-নার্সারী শহরে পড়ার পর , ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পড়ি কালীপুর গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে। ক্লাস সিক্স থেকে নাসিরাবাদ । নাইন পর্যন্ত পড়ে টিসি নিএ এসে পড়লাম আবার কালীপুরের এজহারুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে। এস এ সি ছিলাম বিজ্ঞান বিভাগে।এস এস ই পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিলোনা,আসলে ইচ্ছে ছিলোনা । কিন্তু কেমনে জানি দেওয়া হয়ে গেলো । আল্লাহর হুকুম নিশ্চই। এর পর এম ই এস কলেজে ভর্তি হলাম ইন্টার পরার নিমিত্তে। তাও বিজ্ঞান বিভাগ। এর পর দুই দিন ক্লাস করে আর একবছর কলেজের আঙ্গিনা মাড়াইনি। একবছর শুয়ে, বসে, হেসে ,খেলে, ঘুরে-ফিরে, আর কিছু দুঃখ নিয়ে চষে বেড়ালাম বাংলার পথ প্রান্তর। এর পর শহীদ এন এম এম জে কলেজে ভর্তি হলাম ইন্টারের জন্য। এবার আর্টস নিয়ে। এর পর হাজী মোহাম্মদ মোহসিন কলেজে ভর্তি হলাম ।ইংরেজিতে অনার্স পড়ার সেই শুরু। এখনো সেই কলেজেই আছি। সেখানেই মাস্টার্স করছি। এই দীর্ঘ বছর গুলোতে পরিবারের বাইরে আর একটি পরিবার গড়ে উঠেছে, কখনো তাঁর নাম কখনো ফ্রেন্ডস ফরেভার, “কখনো কালবৈশাখী” , কখনো “ঈদ মোবারক” , সময়ে সময়ে এই গ্রুপের নাম বদলায়, মৌসুমে মৌসুমে নাম বদলায়। কারো হাতে টাকা নাই ,গ্রুপের নাম হয়ে যাবে “আজ টাকা নাই বলে” , ঘুরতে যাওয়ার প্লান হচ্ছে? নাম হয়ে যাবে “কোথায় যাবো?” বর্তমানে এই গ্রুপের নাম “রামাদান মোবারক” – “Ramadan Mubarak” । দিন বদলের পালা তে গ্রুপের নাম বদলায় কিন্তু চিরচেনা সদস্য গুলো এক ।
আমার কর্ম জীবনের শুরু বোধকরি ক্লাস এইট এ। সে সময় গল্প বই পরার খুব শখ ছিল,এখনো আছে। হাতে টাকা ছিলোনা, বই কিনতে পারছিলাম না । সে সময় এক প্যাপার বিক্রেতার সাথে দেখা হলো। তাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম সে প্যাপার বিক্রি করে পড়া লেখার খরচ চালায়। তাহলে আমি কেন নই! যে চিন্তা সেই কাজ! তাঁর সাথে চুক্তি করে তিনদিন পর থেকে নেমে পড়লাম কাজে। সকালে আজান দেওয়ার কিছু পর সে আমাকে প্যাপার এনে দিত, আর আমি পায়ে হেটে আমাদের এলাকায় প্যাপার গুলো ঘরে ঘরে বিলি করে আসতাম,সে তাঁর মত বিক্রি করতো, তাঁর প্যাপার বিক্রি বেড়ে গেলো, আমিও কিছু পেতে লাগলাম।সেই টাকায় বই কিনতাম, গল্প বই। আর গল্পের বই কম দামে কিনে বেশি দামে বেচার একটা ঝোক তখন থেকেই ছিল। এখনো তা বন্ধ হয়নি, বরং মাত্রায় বেড়েছে।
৬ মাসের বেশি প্যাপার বিক্রি করতে পারিনি। কাজটা কষ্টের ছিল,একেতো সাইকেল ছিলোনা, তাঁর উপর হেটে যেতে হত অনেক দূর। এর পর ক বছর শুধু পড়া লেখা। ক্লাস টেন এ উঠে চট্টগ্রামে চলে আসলাম,যদিও পরীক্ষা দিয়েছিলাম গ্রামে গিয়ে, সে অন্য ইতিহাস। এস এস সি দেওয়ার আগে নাকি পরে ঠিক মনে করতে পারছিনা,তবে আগে পরেই হবে । তিন মাস হাতে ছিলো, পড়ছিলাম, ভাবলাম ছোট ক্লাসের কিছু ছেলে মেয়ে পড়াই।বড় দের কে দিয়েই শুরু করতে হলো। সেই শুরু টিউশনি ময় জীবনের। প্রথম টিউশনি ছিল ক্লাস নাইন এর দুই ভাই বোন,উন্মুক্ত তে পড়তো। আমিও ৬/৭ মাস পড়ালাম, তার পর তারা চলে গেলো পরীক্ষার সময় কাছে আসায় । তখন মোবাইল ছিলোনা, বাসা বদলাবার পর তাদের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি।
এর পরের টিউশনি ছিল কালামিয়া বাজারের ভিতরে। ক্লাস ফোরের একটা ছেলে। নাম এত দিন পর মনে নেই। সে ছেলে ছিল বড় ডান পিঠে। তবে কিছু দিনের মধ্যে আমার সাথে তাঁর জমে উঠলো। আমার আবার বড় দের তুলনায় ছোট দের সাথেই বেশি যায়। সে ছেলের যে বেতন দিত তা দিয়ে পোষাচ্ছিলনা। আবার বাদ ও দিতে ইচ্ছে হচ্ছিলনা। শেষে তাঁর মা কে বললাম আর ৫০০ টা টাকা বাড়িয়ে দিতে। তাঁর মা এম্নেই আমার উপর খুশি ছিল, তাঁর ছেলে পড়তোনা, এখন পড়ে বলে । কিন্তু যেই টাকার কথা শুনলো অমনি ভোল পালটে গেলো । অনেক কথা বলেছিল। এর পর আর কি ! ছেড়ে দিলাম। এর পর সে গার্ডিয়ান অনেক বার ফোন করেছিলো(সে টিউশনির সময় মবাইল একটা ছিলো-নোকিয়া ১১০০) । আর যাইনি ও টিউশনে।
এরপর একটা টিউশনি করাতাম বাসার পাশেই। সে বাসায় গিয়ে ভদ্রতা করে বলেছিলাম নাস্তা দিতে হবেনা। সে বাসায় তখন থেকে শেষ পর্যন্ত পানি টা পর্যন্ত খুজে খেতে হত। ভাগ্যিস বলিনাই বেতন দিতে হবেনা। তবে সে টিউশনি অনেক দিন করেছিলাম পানি পান করে করে।
এর পরের টিউশনি জামাল খানে। একসাথে দুই জন পড়াতাম। যেতাম রিক্সায়, আসতাম রিক্সায়,মাস শেষে পকেট গড়ের মাঠ। মধ্যে দিয়ে ওই রিকশা চড়ে হাওয়া টাই খাওয়া হত। টিউশনির কথা বলতে গিয়ে মনে পরে, প্রথম তিন হাজার টাকার টিউশনির টাকায় ভাগ্নি জুভিরিয়ার জন্যে বেতের দোলনা কিনেছিলাম। এই টিউশনিটা ইন্টার এর সময়ের।
এর পর অনার্সে উঠলাম, একটা কোচিং এ পড়ানো শুরু করলাম, বেইস এ। এখানে একদা একদিন আমি নিজেই দুই দিনের জন্যে পড়েছিলাম,৬ মাসের জন্য ভর্তি হয়ে ,সে অন্য কাহিনি অন্য কোথাও বলব। থেমে নেই টিউশনি ময় জীবন। দুই ভাতিজাকে পড়াতাম , উপল,রিয়েল । দুই কামরায় ছোট বাসা মোহাম্মদপুরে। একরুমে উপল কে দিয়ে শুরু, এর পর রিয়েল । পরে আরো দুজন আসলো । জাওয়াদ, আর তাহাসিন। তাদেরর কে প্রায় এক বছর পড়ালাম। বাসায়। বাইরের টিউশনি ছেড়ে দিলাম । সকালে আসত তারা ,আমি মাঝে মাঝে ঘুমায়ে ঘুমায়ে পড়াতাম, ঘুমের মধ্যে “ঐ শেষ তোমাদের?” বলে আবার ঘুম, তাদের কে কি পড়া দিতাম,আর কি শেষ করতে বলতাম নিজেরি মনে থাকতনা। , তবে হ্যা মাসে এক দুইদিন ই এরকম হত। তাদের কে বেশ ক বছর পড়ালাম।
এর পর অনার্স থার্ড ইয়ার এ উঠে ঝোক চাপল ব্যাবসা করবো। দোকান দিলাম, স্ট্যাশনারীর, বই , খাতা , কলম ,অফিসের যাবতিও স্ট্যাশনারি নিয়ে বসে পড়লাম দোকানে। সে এক মজা। মানুষ আসে, জিনিশ কিনে, দোকানদার হিসেবে কাস্টমারে হাজার ঝাড়ি মুখ বুঝে সহ্য করি। দোকানদারদের অনুভূতি সম্পর্কে তখন জানতে পারলাম। মোবাইল এ ও টাকা রিচার্জ করতাম। বিকাশ করতাম। আর এত কিছুর মাঝে সেই ছোট বেলা থেকেই চলত লেখালেখির কাজ। দোপকানে বসে লিখতাম,পড়তাম ।,দোকানে থেকেই অনার্স থার্ড ইয়ার ফাইনাল দিলাম। দোকানে বসার জন্যে অনেকের বাজে মন্তব্য শুনেছি,অনেকের অনুপ্রেরনার বানী শুনেছি।দোকানে বসে কয়েক মাস আবার ছাত্র ও পড়িয়েছিলাম। আল্লাহর রহমতে সে বছরের পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি মার্ক্স পেলাম।
দোকানে থাকা কালিন আবার টিউশনি। ও হ্যা মধ্যে দোকান দেওয়ায় বাসার টিউশনি আর নাই। দোকান দার কেমনে ছাত্র পড়াবে। ছাত্রদের মধ্যে একজনের বাবা আমাকে দোকান না দিতে বলেছিল,আমি দিয়ে দিলাম সে ছাত্র নিয়ে গেলো। উপল আর রিয়েল কে অবশ্য এর পরেও পড়িয়েছিলাম। যেই দোকান দিলাম অমনি আমার মান কমে গেলো, এত দিনের টিউশনের অভিজ্ঞতার দাম চলে গেলো। অদ্ভূত পৃথীবী,অদ্ভূত তাদের নিয়ম।
জ্ঞানের দাম যে যায়না সেটা বুঝেছিলাম পরে। একজন ছিল, সে ইংরেজি শিখার জন্যে আগ্রহি ছিল । আমি ইংরেজিতে অনার্স পড়তাম। সেহেতু সে আমার কাছে ইংরেজি পড়তে চাইলো,কথা বলে হয়ত ভালো লেগে ছিল। দোকানে আর অনেক কাহিনী আছে সে সব অন্য কোথাও বলব। যাক! তাকে ৬ মাসের মত পড়ালাম। সবাই ভাবত এই ছেলে কেমনে দোকান করবে। আমি নির্বিকার ভাবে দেড় বছর দোকান করে গেলাম। এর পর আর কি! দোকান আর ভালো লাগেনা।
অন্য ব্যবসা ধরা লাগে যে! শুরু করলাম , কাপড়ের ব্যবসা । মেয়েদের শিলাই বিহিন পাকিস্তানি থ্রি পিস পাইকারি দরে কিনে এনে খুচরা দরে বেচতাম। অনেক জনের শেয়ার ছিল। লাভের চেয়ে ক্ষতি হল বেশি।তারপর ধরলাম গেঞ্জির ব্যবসা। কিছু বেচে, বাকি গুলো এখনো পরিধান করি।ব্যবসা জীবনের ইতি ঘটিয়ে ঢুকলাম চাকরি জীবনে। এফ এম ইন্টারনেশনাল এ চাকরি নিলাম। মনে করেছিলাম গিয়ে শুধু ইংরেজি পড়াবো। গিয়ে দেখি বাংলা,ইংরেজি সমাজ সব ই পড়াতে হচ্ছে। যাক! করে যাচ্ছিলাম চাকরি।সময় টা ভালই কেটেছিল। সবাই খুব বন্ধুভাবপন্ন ছিল। কিছু মানুষের আচরনে যদিও যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছি, তথাপি ভাল ছিলাম।দোষে গুনে সবাই ত মানুষ । কাটায় কাটায় একবছর কত দিন জানি করার পর চাকরি ছেড়ে দিলাম, আর ভালো লাগেনা। ফাইভ পর্যন্ত পড়াতে ,আগে থ্রি,ফোরের বাচ্চা কম ই পড়িয়েছি। রিজাইন দিয়ে চলে এলাম।
এর মধ্যে বের হলো আমার কাব্যগ্রন্থ “ মোহমুক্তি” , বইটা বের করে যেন জীবনের একটা স্বপ্ন পুরন হল। সামনে আরো বই বের করার ইচ্ছে আছে। আপাতত উপন্যাস নিয়ে কাজ করছি।
ইশকুলের চাকরি ছাড়ার পর দুই মাস ঘরে বসা। টিউশনি আগেই নাই। পকেটে টাকা নাই। ধার করে করে চলা। এর মধ্যে একটাই সুবিধা হল, গল্প লেখার জন্যে প্রচুর সময় পেলাম। এর পর ঢাকায় এসে একো্টা চাকরির অফার পেলাম । amarjibini.com (আমার জীবনী ) এ কন্টেন্ট রাইটারের কাজ। সেটাই এখন করছি, এইজে এখন লিখছি, এটাই চাকরি,এটাই পেশা, এটাই আবার নেশা । ইনশাল্লাহ চাকরি থাকলেও লেখালিখি চলবে, না থাকলেও চলবে, লেখা লেখি কম্পলসারি আমার কর্মজিবনে, অন্য কর্ম অপশনাল।