একজন দুর্ধর্ষ স্ট্রাইকার – দ্য ফেনোমেনন এর রুপকথার গল্প

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

ফুটবলের লিজেন্ডদের কথা বলতে গেলেই আসে ফেনোমেনন এর নাম, ব্রাজিলের রোনালদের নাম। তাঁর খেলাটা যারা না দেখেছে তাঁর বুঝবেনা কতটা ভয়ঙ্কর আর একি সাথে দৃষ্টিনন্দন ছিলো তাঁর পায়ের জাদু। রোনালদো লুইস নাজারিও দ্য লিমা   ১৯৭৬ সালে ব্রাজিলে জন্ম গ্রহন করেন  । ফুটবলের তীর্থ ভূমি বলা হয় এই ব্রাজিল কে। ব্রাজিল নাম টার সাথেই ফুটবল খেলাটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে জড়িত। বাংলাদেশের সমর্থক দের মধ্যে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিকের সমর্থক দের সংখ্যাই বেশি। এটা বোঝা যায় বিশ্বকাপ আসলেই ঘরে ঘরে, রিকশার হ্যান্ডেলে , গাড়ীর স্টিকার হিসেবে যেভাবে এই দল দুটোর পতাকা ব্যাবহার করা হয় টা দেখেই ।ব্রাজিলিয়ান দের রক্তে মিশে আছে ফুটবলের উন্মাদনা। না খেয়ে থাকবে ,তবু ফুটবল খেলা তারা বাদ দিবেনা ।

পেলে -যাকে বিশ্বের সর্বসকালের সেরা ফুটবলার আখ্যা দেওয়া হয় তিনি ব্রাজিলের।  জিকো, রিভালদো, কাফু , রোনালদিনহর জন্ম এই ব্রাজিলে। ব্রাজিলের হলুদ জার্সির প্রেমে মজেছে অনেকেই, তাঁদের খেলার ধরন মুগ্ধতা ছড়িয়েছে বিশবে।আজকে বলব এই ব্রাজিলেরই এক লিজেন্ড, রোনালদোর কথা , যার জীবনে পরাজয় এসেছে খুব কম ।জীবনে যা জেতার তাঁর সবি জিতেছেন এই জীবন্ত কিংবদন্তি । একযুগের মত তাঁর পায়ের জাদুতে মাতিয়ে রেখেছিলেন বিশ্বকে ।  তিনি কেনো লিজেন্ড ?, কেনো কিংবদন্তি ?কেনো তিনি ফেনোমেনন ?কারন তাঁর আশ্চর্য ম্যাচ জয়ের ক্ষমতা, প্রতিপক্ষের ডিফেন্স দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে জোরালো শটে বা আলতো পায়ের স্পর্শে জালে ব জড়ানোর ক্ষমতা। তাঁর গোল ক্ষুদার কথা বলাই বাহুল্য। শান্ত-সুবোধ বালক হঠাৎ পায়ে বল পেয়ে হয়ে উঠেন দুর্দমনীয় । নিমিশেই প্রতিপক্ষের দুর্গ ভেঙ্গে দিতেন । আর প্রতিপক্ষের সীমানায় বল পায়ে ঘুরে বেরাতেন আশ্চর্য সাবলীলতার সাথে। তাঁর খেলা না দেখে থাকলে আসলে বোঝানই যাবেনা তাঁর খেলা দেখে কতটা তৃপ্ত হত মন ।ডি বক্সের ভেতর তাঁর চেয়ে বিপজ্জনক খেলোয়াড় আর ছিলনা, ভবিষ্যতে আসবে কিনা বলা যায় না।

২০ বছরে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে জিতেছেন ফিফার বর্ষ সেরার খেতাব। মাত্র ১৭ বছর বয়সে জাতিয় দলের হয়ে যাত্রার  শুরু ১৯৯৪ সালে। ১৯৯৪ এর বিশ্বকাপে খেলা হয়নি কোন ম্যাচ ।তবে ধীরে ধীরে নিজের জাত চিনিয়েছেন। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে ছিলেন নিজের সেরা ফর্মে।  সম্পূর্ন টুর্নামেন্ত জুড়ে ভালো খেলেন তিনি। ব্রাজিলের ১৪ গোলের ৫০ % ছিলো রোনালদোর অবদান। কিন্তু জিদান জাদুতে সেবার বিশ্বকাপের স্বপ্ন পুরোন হয়নি তাঁর। অপেক্ষায় ছিলেন তিনি, অপেক্ষায় রেখেছিলেন বিশ্বকে, রুপকথার গল্প লেখার যে তখনো বাকি।

 রুপকথার গল্পটা তিনি লিখলেন ২০০২ বিশ্বকাপে । সম্পুর্ন বিশ্বকাপ জুড়ে ছিল ফেনোমেননের রাজত্ব । ইংল্যান্ড বাদে সব বনিপক্ষ দলের জালে জরিয়েছেন বল। ব্রাজিল সে বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছিল । ২০০২ এর ফাইনালের কথা অনেকের ই হয়ত মনে থাকবে। সেই যে বিপক্ষের গোল বারে বল লেগে ফিরে এলো   , শেষে রুদ্ধশ্বাস জয় । ২০০২ বিশ্বকাপে ফাইনালে তাঁর পায়ের জাদু দেখছিলাম । হঠাৎ রোনালদের একচ্ছত্র আধিপত্য , গোলের পরেই ধারাভাষ্যকারের সেই ডাক ”গোওওওল , রোনালদোওওও , দ্য ফেনোমেনোন , গোওওওল……’ তাঁর করা আট গলের কারনে পেয়েছিলেন গোল্ডেন বুট ( Golden Boot ) । আর ব্রাজিল পেয়েছিল পাঁচ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তকমা ।

২০০৬ সালে সাবলিল ছিলেন না , ইঞ্জুরির কারনে কিছুটা বাধা ছিলো।তবে  ২০০৬ বিশ্বকাপে  ৩ গোল করে জার্ড মুলারের রেকর্ড ভেঙ্গে দেন । এর পর ধীরে ধীরে জাতীয়   দল থেকে অবসরে পালা চলে আসে। তাঁর রেকর্ড তাঁর হয়ে কথা বলে, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে লাগিয়ে ৯৮ ম্যাচে ৬২ গোল করেন, সবচেয়ে বড় কথা ব্রাজিল কে উপহার দেন আরেকটি বিশ্বকাপ। তাকে মাঠে নামতে দেখার সাথে সাথেই উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে যেত হাতের লোম ।রোনালদোর খেলা সম্পর্কে পুরোপুরি বুঝতে হলে ,তাঁর মাঠের খেলার সাক্ষী থাকতে হয়।সেই   টেকো মাথার নিরীহ দর্শন ভদ্র লোক টি যখন বল পায় তাঁর পায়ের কাছে ,আর বল পেতেই কেমন দুর্নিবার আর অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেন টা একমাত্র তাঁর খেলার সাক্ষীরাইবোঝে।অবলিলায় পাশ কাটাতেন একের পর এক ডিফেন্ডার কে। প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে তাঁদের পাশ কাটিয়ে , নিচে দিয়ে বল পাস করে আবার নিজেই সেই বল নিয়ে ছুটতেন ক্ষিপ্র চিতার মত। চার পাঁচ জন ডিফেন্ডারের দেওয়াল কে নস্যি বানিয়ে পায়ের আলতো জাদুতে বোকা বানিয়ে দিতেন প্রতিপক্ষকে।

১৯৯৮ আর ২০০২ এ একাই বিশ্বের মানুষকে ফুটবল অনুরাগী করতে তাঁর অবদান এর কথা  সবার প্রথমেই আসে। তাঁর সময়ে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী । ঠান্ডা মাথার ভয়ানক এই স্ট্রাইকারের মত খুব কম স্ত্রাইকারে জন্ম হয়েছে। কিভাবে একজন স্ট্রাইকার হিসেবে প্রতিপক্ষের  প্রতি ইঞ্চি জায়গা ব্যবহার করতে হয় তাঁর চেয়ে ভালো আর কে জানে ! দুর্দান্ত নিখুত ফিনিশিং এ একের পর এক গোল করে যেতেন । আর নেশা ভরা চোখে দেখে যেত সবাই। সর্বকালের সেরা নাম্বার নাইন  এর তালিকায় তিনি ই সেরা ।রোনালদো মানেই একের পর এক ম্যাচ জেতানো ওয়ান ম্যান ফুটবল টিম । সবচে বড় কথা রোনালদো হচ্ছে একটা অনুভুতি, এমন একটি নাম যা শুনলে বিশ্বের কোটি কোটি ‘৮০র দশকের জন্ম নেওয়া ফুটবল অনুরাগীর রক্তে নাচন ধরে ।

রোনালদো ৮০ আর ৯০ এর দশকের ফুটবল প্রেমিদের আবেগের আর এক নাম।  এমন একটি নাম শুনলেই রক্তে দোলা লাগে । ৭০ আর ৮০ এর দশপকে যাদের জন্ম তাদের অনেকের  রোমাঞ্চের নাম রোনালদো । রোনালদোর খেলা দেখে তাকিয়ে ছিল ৯০ এর দশকের হাজারো ফুটবল না বোঝা শিশু।  অনেকেই সেই প্রথম ২০০২ এ তাঁর বিশ্বকাপের খেলা দেখে প্রথম তাঁর খেলায় মুগ্ধ হয়ে , ব্রাজিলের প্রেমে মজেছিলো। এখন ব্রাজিলের হলুদ জার্সি দেখলে রক্তে নাচন লাগে, মনে ভেসে আসে সেই টেকো মাথার , হাসি মাখা মুখটার কথা , বল পায়ে যে হয়ে উঠত প্রতিপক্ষের জন্য দুঃস্বপ্ন ।রোনালদো সেই অনুপ্রেরনার নাম যাকে দেখে কিছু না ভেবেই মাথার চুল ফেলে দিয়ে তাঁর মত আগুন ঝরানো  আর নান্দনিক স্ট্রাইকার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলো অনেকেই।

রেফারেন্স     bn.wikipedia.org

                   

 

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন