সজীব কেমন আছো?
-আলহামদুলিলাহ্, আপনি কেমন আছেন ?
-আল্-হামদুলিলাহ।ভাই,খেলতে যাবেন না?
-রাশেদ,নুর,মামুন ওরা কী সবাই এসেছে?
-হুম ভাই।
-তো চল্ যাই।
বিকাল হলেই স্কুল মাঠে সবাই মিলে খেলতে শুরু করি।ক্রিকেট খেলাটাই বেশি করা হয়।পাড়ার সবার থেকে বয়সে বড় হওয়াই সবাই সম্মান করে।তাছাড়া খেলা-ধুলাও মোটামোটি ভালই।আমরা যখন খেলা শুরু করি তখন প্রায় দেখি একটা ছোট্ট ছেলে দাঁড়ায়ে থাকে। আমার মনে হই ছেলেটা খেলা দেখে অনেক আনন্দ পাই।
রাশেদ বল্ করছে আর নান্নু ব্যাট করছে।নান্নু একটা বল্ কে বাউন্ডারী মারে।বল্ ্ টা ঐ ছেলেটার ওদিকেই যাই।আমি ছেলেটাকে বললাম,বাবু বল্ টা দেও তো।সাথে সাথে সে বল্ আনতে চলে গেলো।বল্ ছুড়বার তার মুখে একটা মোলীন হাসে দেখি।যেন তার মতন সুখি মানুষ এই জগতে আর কেউ নাই।আমি নিজেও তার হাসি মাখা মুখ দেখে তৃপ্তি পেয়েছি।
-তোমার নাম কি?
-গুড্ড
-্ এই টাই কি তোমার আসল নাম?
-না স্যার।
-আমাকে স্যার বলা লাগবে না।তুমি আমাকে ভাই বলে ডাকবে।এবার বল,তোমার ভাল নাম কি?
-তমাল।
-এতো সুন্দর একটা নাম থাকতে সবাই তোমাকে গুড্ড বলে ডাকে কেন?
-ভাই আমি ছোট তো তাই।
-তুমি খেলা করবা?
-হুম ।
খেলা শেষে আমি তমালকে কাছে বসাই।তারপর জিঙ্গাসা করি,
-তুই কি করিস?
-কাজ করি।
-কি কাজ করিস?
-যখন যে কাজ পাই সেই কাজই করি।
-তোর বাসাই কে কে আছে?
-আমি আর অামার মা।
-তোর বাবা ?
-মারা গিয়েছে।
-কি ভাবে?
-জানি না ভাই
-মানে!
[সে বলতে শুরু করে]
শুনেছি আমার বয়স যখন তিন বছর তখন আমার বাবা একটা রোড এক্সিডেন্ট এ মারা গিয়েছে।মা আমাকে অনেক কষ্ট করে এত বড় করেছে।কিন্তু মা হঠ্যৎ অসুস্থ্য হবার কারণে আর কাজ-কামা ম করতে পারে না। তাই আমি কাজ করে মা ও আমার খাবারের ব্যবস্থা করি।
[আমি তো অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকায়ে থাকি আর মনে মনে ভাবি.এতোটুকু ছেলে ও কিভাবে ওর মায়ের জন্য কষ্ট করছে।]
আমি ওর চোখের দিকে তাকায়ে দেখি পানি টলমল করছে।আমি নিজেও চোখের পানি ধরে রাখতে পরি নাই।
-তুই প্রতিদিন কত টাকা পাস?
-এক এক দিন এক এক রকম।কোন দিন ষাট টাকা,কোন দিন চল্লিশ .কোন দিন সত্তর।আবার কোন দিন কাজ না থাকলে পাই না।
-তোদের কি এই টাকাই চলে?
-ভাই আল্লাহ যেভাবে চালাই সেই ভাবেই চলে। ভাই মাগরিফের আযান দিতেছে।চলেন নামাজ পড়তে।
[আমি যেন মুখের ভাষা হারায়ে ফেলেছি।কি বলবো বুঝতে পারছি না।আল্লাহ আমাকে ওর থেকে শত গুণ ভাল রেখেছে । তার পরেও আমি নামাজ পরি না,আল্লাহর পথে চলি না।]
-ভাই আমি তো আজ প্রস্তুত নাই আগামী কাল থেকে ইন্-শা-আল্লাহ নামাজ পরতে যাবো।
-ঠিক আছে ভাই।আল্লাহর পথে চলবেন।আল্লাহ কে খুশি করলে আল্লাহও আপনাকে খুশি করবে।
[সে চলে যাচ্ছে এমন সময় আমি তাকে ডাক দিই]
-এই তুই থাকিস কোথাই?
-রোডের পাশে যে বড় পুকুর আছে ঐই পুকুর পাড়ে।
-আমি চিৎকার দিয়ে বলি,কাল খেলতে অসিস।
-দূর একটা কন্ঠ ভেসে আসলো’ঠিক আছে ভাই”
প্রায় প্রতি দিনই সে খেলতে আসে।আমাদের সাথে অনেক মজা করে।
আস্তে আস্তে আমরা সবাই নামাজ পড়া শুরু করি।আমরা সবাই তমালকে নিজেদের সাধ্য মতন সাহায্য করি।এভাবেই আল্লাহর রহমতে দিন গুলো পার হয়ে যাচ্ছে।
হঠ্যাৎ এক দিন লক্ষ্য করি তমাল খেলতে আসে নাই।আমি সবাইকে জিঙ্গাসা করি,তমাল আসে নাই কেন?
-জানি না ভাই।
আমার সবাই ওর বাসাই যায়। আর যা দেখি তাতে সকলের চোখে জল চলে আসে।দেখি ওর মা বিছানাই শুয়ে আছে। তমাল নিপলক দৃষ্টিতে মায়ের মুখের দিকে তাকায়ে আছে আর মায়ের মাথায় পানি ঢালছে।আমাদের দেখা মাত্রই দৌড়ায়ে আমাকে জড়ায়ে ধরে কান্না শুরু করে-: ভাই ”আমার মা”,’আমার মা’
আমি যেন রোবট হয়ে গিয়েছি।বোবার মত ওর মায়ের দিকে তাকায়ে থাকি আর ভাবি,’মা তোমার এই ছেলের মত ছেলে যেন প্রত্যেক মায়ের গর্ভে জন্ম গ্রহণ করে’ ।
মা সম্পর্কিত আরো লেখা পড়তে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে
Pingback: নিশ্চুপ আর্তনাদ - আমার জীবনী