একজন ‘মা’ হতে-সাহস লাগে

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
গোধূলীর আলো, মা, ma, amma, ammu, আম্মা, আম্মু, সন্তান, পটল, মায়ের সাহস, একজন মা

একটি গ্রুপে একজন আপুর পোস্ট চোখে পড়ে, শিরোনাম আমার বাবুর সাথে সেদিন যা হয়েছিল”। আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। বুকটা কেঁপে উঠলো পুরোটা পড়ে। পুরো পোস্টে সে তার বাচ্চার করুণ মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে। কিভাবে তার ১০ মাসের বাচ্চার গলায় লিচুর বিচি আটকে যায়। আর কিভাবে তথাকথিত সচেতন কয়েজন ব্যাক্তি হাত ঢুকিয়ে তা বের করার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। ফলস্বরূপ বাচ্চার রক্তাক্ত কন্ঠনালী। তারপর আর কি, হাসপাতালের দ্বারপ্রান্ত। সেখানেও স্বল্পদক্ষ ডাক্তারের কাচি ( Scissors ) দিয়ে গুঁতোগুঁতি। অত:পর বিচির শ্বাসনালীতে প্রবেশ। বাচ্চার ছটফট, আইসিইউ তে ভর্তি। কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্বর। জ্বর শব্দটাকে আমি খুবই ভয় পাই। কারণ পরে বলছি। যখন লেখাটা পড়ছিলাম যেন চোখের সামনে সব ভাসছিল। বাচ্চাটা বাঁচেনি। ভাবলাম লেখাটা লিখতে মহিলার অনেক মনোবলের প্রয়োজন হয়েছিল। এটাও ভাবছিলাম তার দিনগুলো কাটছে কিভাবে। কি ভয়ঙ্কর! আপুটা বাচ্চার একটা ছবি দিয়েছিল বাবার সাথে। আজ পুরোটাই স্মৃতি।

 

আমার বাচ্চার ৫ মাস বয়সে হাম হয়। এই বয়সে এই রোগ খুব রেয়ার। ডাক্তার রাও দেখে অবাক হয়। ছোয়াচে  জনিত কারণে ওর হাম  হয়। অতিরিক্ত জ্বর আর আর শ্বাসকষ্টের কারণে ওকে হাসপাতালে ভর্তি করি। প্রতিটা মুহূর্ত আজও মনে আছে। ক্যানুলা করার সময় ছেলে আমার খুব ছটফট করছিল। যার কারণে ক্যানুলা করতে সমস্যা হচ্ছিল। মাকে ধরতে দিয়েছিলাম, নাতির প্রতি তার ভালবাসার কারণে সে বাচ্চাকে চেপে ধরতে পারছিলনা। আমি দেখছিলাম আমার বাচ্চার যন্ত্রণার মাত্রা বাড়তে। সাহস জুগিয়ে নিজেই বাচ্চার দুইহাত চেপে ধরলাম। ও নড়তে পারছিল না শুধু দুই পা ছুড়ছিল আর চোখ দুটো অপলক আমার দিকে, টপটপ করে পানি পড়ছিল। কাজটা করতে কতটুকু মনোবলের দরকার হয়েছিল জানিনা। প্রতিবার ইনজেকশন দেয়ার সময় বাচ্চা ছটফট করতো। ৫দিন এই যন্ত্রণা নিজ চোখে দেখেছি। এতক্ষণ যা বর্ণনা করলাম তা খুবই ছোট। পরের টার চাইতে অনেক কম বেদনা দায়ক।৯ মাস বয়সে হঠাৎ একদিন জ্বর। দেখতে দেখতে বাড়ল বিকেল হতে হতেই ১০৩। সবে মাত্র ওষুধ খাইয়ে বাইরে পাঠালাম মায়ের সাথে। একটু পর মায়ে আওয়াজ, “ও রুমা! তোর চাচিকে ডাক, তুই আসিস না।” ।  দৌড় দিলাম। দুর থেকে দেখলাম বাচ্চা আমার কাঁপছিল থরথর, যেন কেউ কারেন্টের শক দিচ্ছে। একটু পর আবার মায়ের আওয়াজ, “ও রুমা! শেষ! সব শেষ!” আমি স্থির হয়ে গেলাম। সারা শরীর কাঁপছিল। বুকে হাত দিতেই মনে হল বুকটা খালি হয়ে গেল। মা সিজদায় পড়ে গেল। আমার মুখ দিয়ে শুধু একটিই কথা বের হল,” হে আল্লাহ, আমি কি করলাম আমার ছেলেকে। আমার একটাই মানিক গো আল্লাহ, ও আল্লাহ। কি করলা।” আমি ধরেই নিয়েছিলাম ছেলেকে হারিয়ে ফেলেছি। ওর হাসিমুখটা চোখে ভাসছিল। অনুভূতিটা বর্ণনাতীত।

 

আমার ছেলে সেদিনের জন্য বেঁচে গেল। আমি আর এক কদম সতর্ক আর সাহসী হলাম। আপুটার লেখা পড়ে ভাবছিলাম অন্য  মা দের সতর্ক করার জন্য সে কত সাহস জুগিয়ে লেখাটা লিখেছে। বইয়ে পড়েছি, মানুষের মুখে শুনেছি “মা হতে সাহস লাগে, মা হলে মেয়েদের সাহস বাড়ে।” আসলেই সত্যি। এ কারণেই হয়তোবা হাজার হাজার মা বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে নেশাখোর স্বামীর লাথি গুঁতো খাচ্ছে, কোনো মা স্বামীর সাপোর্ট হারিয়ে নিজে শত প্রতিকূলতা পার করে হাল ধরেছে, কেউ আবার সন্তানের পেটের ক্ষুধা মেটানোর জন্য পতিতাবৃত্তি করছে, পৃথিবীর সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে। মা হতে সত্যি কতই না সাহস লাগে।

 

   গোধূলীর আলো সম্পর্কে আরো জানতে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে 

                                                                কফি হাউজের সেই আড্ডা টা আজ আর নেই

      মা নিয়ে ভিন্ন লেখা পড়তে ক্লিক করুন নিচে 

                                                              যখন কেও বোঝেমা ,তখন মা বোঝে

“মা”

 

 

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন