জীবনের গল্প : খুজে ফেরা – পাদুকা জোড়া

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
Bangladesh, amarjiboni, আমারজীবনী, আমার_জীবনী

অনেক কথা বলার থাকে, অনেক লেখা হয়,সব প্রকাশ করা যায় না,কিছু প্রকাশ করতে অবশ্য সমস্যা নেই।

মাসটার্স এর ভর্তি মাত্র শেষ। আমরা আবারো মো্হসিনিয়ান।  সকাল বেলা আমি, মাহামুদ, সাইমুন,মিজবাহ ছুটলাম রাইডারে বা ওইজাতিয় গাড়িতে চড়ে।  মিজবাহ আর সাইমুন কে অবশ্য দু মিনিটে আসবো বলে পাঁচ মিনিট দাড় করিয়ে রেখেছিলাম। সাব্বির সবার জন্য ফর্ম এর কাজ টা সমাধান করে চক বাজার অপেক্ষারত ছিল। অবশ্য এই ফর্ম তোলা,বা পুরন করার কাজটা অনার্স ফার্স্ট ইয়ার থেকেই তার ঘারে  পড়ে।

চক বাজার, আমাদের ২য় বাসস্থান যেটা,যেখানে আমাদের অনার্স জীবনের বেশির ভাগ সময় কাজে,অকাজে কাটিয়েছি, সেখানে তুর্না, মিজি,জোহরা,  তাসমিয়া,তাসনিয়া,তাহামিনা, নওরিন আগে থেকেই মজুদ ছিলো।  যাক, সেখান থেকে ফর্ম ফিলাপ করে, সোজা আমাদের কলেজ,আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম।

 ‘ডিপার্ট মেন্ট টা তোমাদের, আমাদের না, আমরা আসব যাব, বলতে পারবনা যে এটা আমাদের, তোমরা গর্ব করে বলতে পারবে আজকে থেকে যতদিন বাঁচো, এই ডিপার্টমেন্ট আমাদের”   কাইয়ুম নিজমি স্যার প্রায় বলতেন।  

আবার সেই কলেজ, কালক্রমে যদিওবা কিছুটা পরিবর্তন এসেছে,কিন্তু আমাদেরি তো! হাসিনা  ম্যাডাম  এখনো আছেন আগের মতন,প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর, উদ্যমী। চোখ দেখলে এখনো ভয় লাগে, আবার মায়ের মত অনেক কথা অকপটে বলে ফেলি তাকে। নতুন ডিপার্টমেন্ট হেড ফাতেমা ম্যাডাম বেশ ভালই গুছিয়ে নিয়েছেন। ভর্তি শেষ পর্যায়ে চিটাং কলেজে গেলাম ব্যাংক এ টাকা জমা দিতে।   কিছু একটা হাং গামা বেধেছিল বোধয়,  মিসবাহ এগিয়ে গেলো, সে নেতা শ্রেণি তে পড়ে। আমরা হাক ডাক দিয়ে তাকে নিয়ে আসলাম।

ভর্তি শেষ।কই যাওয়া যায়! কেও মেলা বলল, সি আর বি কেও ঘাট।এ যেনো মন্তব্যের মেলা। আমার মনে হচ্ছিল শেষ পর্যন্ত কোথাও যাওয়া হবেনা। আমি চুপ করে থাকলাম, আমি আরেকটা অপশন দিলে ঘটনা আরো ঘুরে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো সি আর বি যাওয়া হোক,সেখান থেকে মেলা। এক ঢিলে দো পাখি। আমরা রাইডার ধরলাম,নাকি টেম্পো মনে নেই।

আমরা রাইডার কে নিজেদের সম্পদ নয় সম্পত্তি  মনে করি, এর মাঝেও যে এত আনন্দ, এত উল্লাস এ আনন্দ সে আনন্দ মনে হয় না একটা প্রাইভেট কারের মেয়ে বা ছেলে কোনদিন পাবে। কারের ভিতর এসি ছেড়েও আনন্দ আছে সে আনন্দ যদি জৈবিক হয় আমাদের আনন্দ মনের ভিতরকার। রাইডার বা টেম্পুর ভেতরকার কথা না বললেই নয়। উঠার পরে খেয়াল করলাম,ড্রাইভার অল্প বয়সি। সে রিতি মত হাওয়াই জাহাজ চালাচ্ছে,,,, এই যেন অঘটন ঘটিয়ে বসবে।   সবাই এর মাঝেও হাসছে। যে একজন বলল,মরে গেলে সবাই মেধাবি বলবে।  আসলেই এই দেশে মৃ্ত্যুর  পরেই যত দাম। আমাদের কথা বার্তায়  ভিতরের আরেক ভদ্রলোম কিছুটা চমকালেন। আমরা নেমে যাওয়ার পর পর ওই ভদ্রলোক ও নেমে গেলেন। নেমেই হুট করে আরেকটাতে উঠে গেলেন। আমরা নেমে যাওয়াতে এই ড্রাইভারের উপর তার আস্থা আরো কমে গিয়েছে, আর আমাদের মৃত্তু নিয়ে যুক্তি নিশ্চই তার ভিতরে ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিলো।

গেলাম সি আরবি।  গাছের শিকড়ে বসলাম। এই পর্যায়ে, সাব্বিরের ভাষায় একটা হিজলা এগিয়ে আসল। ৫০ টাকায় ছাড়া পেলো। কেও ভয় পেল, তখন হিজরাটার একটা কথা সুন্দর লাগলো, “মানুষ হিসেবে দেখেন ভয় পাবেন না”

সেখান থেকে মেলা। ঢুকলাম। নেসবাহ পরে যোগ দেওয়ার কথা ছিলো। তনিমা বরাবরের মিত যাত্রার আগে ঝড়ে পরেছে। মেলায় গিয়ে ঘুরি, শুধুই ঘুরি, পকেটে টাকা তেমন নাই,  সমস্যা হচ্ছেনা সবাই দেখছি। দেখার মধ্যে যে আনন্দ তা পকেটে টাকা না থাকলে বহুগুনে বেড়ে যায়।  সে সময় আমি আর সাবু আসরের নামজ কায়েম করতে গেলাম,মেলার সাইডের মসজিদ এ। তাবু খাটানো মসজিদ। নামাজ পড়ার সময় আমার পাদুকা জোড়া পাশেই একটা বক্সে রাখা ছিলো। নামাজ শেষে পাদুকা নিতে গিয়ে দেখি নেই। এহ বিশ্রি কান্ড! সাথে সাথে মাথায় বেজে উঠলো”  নামজ পরতে এসেও চুরি” মুখে ও বোধয় বলেছিলাম।

কেও শুনে বলল। ভাই ” যে নামজ পড়তে আসে সে চুরি করেনা,যে চোর সে নামাজি সেজে চুরি করতে আসে”

কথাটা ভালো লাগলো। ধর্ম কে বর্ম বানিয়ে চুরি বা খারাপ কিছু  করা আর আসল ধর্মের মধ্যে 
জমিন আসমান ফারাক।

একজন নামাজি কখনো চুরি করেনা, চোর নামাজের সুযোগ কাজে লাগায় মাত্র। দুটো জিনিশ কে এক করা ঠিক নয়।আরো কয়েকজনের পাদুকা হারিয়েছে। যাক জুতো হারিয়ে মন খারাপ তেমন হলোনা। গ্রামে খালি পায়ে মেলায় যেতাম সে কথা মনে আসল।

বীর দর্পে খালি পায়ে বের হলাম।সাব্বির এর পাদুকা খোয়া যায়নি। তারটাও হারালে আরো জমত বেশ। দুজন পাদুকা পড়ে গেলাম,খালি পায়ে এলাম,হাস্যকর এবং মজার। আমি হাসি,সাব্বির ও হাসে। সে খবর টা বেশ হে হে করে প্রচার করল।” ইতা তো জুতা হারায়ে ফেলসে, ” ” ইতার জুতা চুরি গেসে” আমিও হাসি। ঘটনা সত্য এটা বুঝাবার জন্য।

সাইমুন দূর থেকে দেখে বলে,”কিরে জুতা মেরে দিসে বলে?”  তার কথা মনে হচ্ছে, খুব মজার ব্যাপার ঘটেছে। আমিও আবার হে হে মার্কা হাসি দিলাম,যেন ব্যাপারাটা আসকেই মজার। খালি পায়ে ফটো সেশন হলো। কেও একজন পাদুকা জোড়া গিফট দিয়েছিলো,তার মন খারাপ।মনে হচ্ছে চোর আমি। তাস্মিয়া বলতেসে কেন জুতো পরে সকালে বের হলাম। এ প্রশ্নের উত্তর কই! সকালে যদি জানতাম স্পঞ্জ ই তো পরতাম। যাক আমার হারাইসে, সুতরাং আমাকে সবাই জ্ঞান দিলো। আমি অবুঝ শিশুর মত হাসলাম।  মেলার দেখার জিনিশ হয়ে গেলো আমার খালি পা। খালি পায়ে হাটছিলাম, নিচে ঠান্ডা লাগছে,কোথা থেকে জানি মনে অনেক আনন্দ আসছে,যেনো পাদুকা হারালে আনন্দ লাগারই কথা।এত বন্ধুদের মাঝে দু:খ বিলাসের সময় কই।

যাক আমি আর সাব্বির নামাজের নিয়তে নামাজ পড়তে গেলাম,চোর চোরের নিয়তে চুরি করলো, শেষ,! আর কোন ফেরকা নাই।  

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া