যখন কেও বোঝেনা, তখন মা বোঝে

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

আমার মার নাম শাহানেওয়াজ বেগম . আমার প্রিয়  মানুষদের মধ্যে একজন । মাকে নিয়ে লেখায় তথ্যগত মুল্যের চেয়ে আবেগের মুল্য থাকে বেশি।  মা কে আমি ভালোবাসি? নাকি সম্মান করি, নাকি ভয় পাই ! বলতে হয় এ তিনটির মিশ্রণে যদি কোন আবেগের নাম থাকে তবে সেটাই মার প্রতি আমার আবেগ। সে আবেগের কোন নাম যদিও হয়না। এটা পৃথিবীর শুদ্ধতম ভালবাসা । আমার মার জন্ম ১৯৬৮ সালে।  কালীপুর গ্রামেই। বিয়ে হয় নাজিম উদ্দিন কায়েস এর সাথে-আমার বাবা। বাবাও কালীপুরের বসবাসকারি।

আমার জন্ম ১৯৯২ সালে।  ছোট বেলার মার স্মৃতি খুব একটা মনে নেই। যখন থেকে মনে আছে তখন থেকেই বলছি। সত্যি বলতে মাকে ছোট বেলায় যমের মত ভয় পেতাম।  চোখের দিকে তাকালেই ভয়ে আধমরা হয়ে যেতাম। ভয় আর ভালবাসার সংমিশ্র্ণ নিয়ে আমি মার কাছে আবদার করতাম। সে আবদার কখনো পুরোন হত, কখনো আবদারের মূল্য চুকাতে হয় চরম শাসন হজম করে।  মা আমার প্রিয় হওয়ার পেছনে মূল কারণ সম্ভবত বই। হুম, একমাত্র মা আমাকে বই পড়ার জন্যে শুরু থেকে উৎসাহিত করেছিলেন। এখনো করেন। আমার কবিতা আর গল্প লেখার শুরু ও মায়ের হাত ধরে। যখন কেও বোঝেনা ,তখন মা বোঝে ।

মনে পরে একটা  সময় যখন আমার জীবনের অন্ধকার সময় টা কাটিয়েছিলাম, আল্লাহ ছিলেন, এর পরেই মা ছিলেন আমার পাশে। শত বিপদের মাঝেও আর শত বঞ্চনার মাঝেও আমাকে ছেড়ে যান নি। তাই হয়ত তিনি মা ! মাকে কষ্ট কম দেই নি। আমার হাজারটা কাজ মা করে দিয়েছেন শত কষ্টের  মাঝেও, অসুখের সময় ,সময়ে অসময়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন, চোখের দুপাশে জল গড়াতো আর আমি ঘুমিয়ে পড়তাম ।

যখনি কোন বিপদে পরেছি, কোন ভুল করেছি   মাকে বলেছি। জানতাম কড়া শাসনের মুখে পরলেও ভালো জ্ঞান টাও তার কাছেই পাবো। ছোট বেলা থেকেই চট্টগ্রাম শহরে থাকতাম। ক্লাস ওয়ান এ আবার গ্রামে গিয়েছিলাম। যে সময়টায় শহরে ছিলাম, মার কঠোর শাসনে বেড়ে উঠে ছিলাম। ক্লাস  সিক্স এ আবার শহরে আসি। মার ভয়ে ইশকুল আর ঘর ছাড়া আর কোথাও যেতাম না।

আজো মনে পড়ে, ইশকুল পালিয়ে যখন অনেকেই অনেক জায়গায় যেত, আমি যেতে চাইতাম, ভয়ে যেতে পারতাম না। মা বাসায়, তবু ও মার কথা মনে আসলে ইশকুল পালিয়ে বেড়ানোর সাহস হতো না। হ্যা স্কুল পালিয়েছি কিন্তু সেটা স্কুলের মাঠ পর্যন্ত।  মার রান্নার কথা না বললে চলেনা। মা নাস্তা বানাতে পারেন কিন্তু কম বানান, তার হাতের রান্না গুলো বেশ মজার, বিশেষ করে ঝাল করে মুরগির গোস্ত ,।

মার ভালোবাসা ছিলো শাসনের আড়ালে।  তা না হলে হয়ত কখন কোথায় চলে যেতাম। ছোট বেলায় বুঝে গিয়েছিলাম মায়ের শাসনের নিচে ভালোবাসা।  হয়ত একদিন খুব মেরেছেন, সেদিন রাত্রে ঘুমের মধ্যে আমি অপেক্ষায় থাকতাম, মা আসতেন,হয়ত আমি ঘুমিয়েছি কিনা দেখতেন, তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন।  মা জানেন মাথায় হাত না বুলালে আমার ঘুম আসেনা। এই ঢাকা শহরে মাথার উপর মা আর আপুর হাতের পরশের অভাব বোধ হয় বৈকি! মাকে নিয়ে একটা গান খুব মনে পড়ছে…

মায়ের এক ধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম,
পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না
এমন দরদী ভবে কেউ হবেনা আমার মা গো, …

মায়ের ধরিয়া যঠরে, কত কষ্ট করে,
দশ মাস দশ দিন পরে গেল বেদনা,
এমন দরদী ভবে কেউ হবেনা আমার মা গো,
কি বলব প্রসবের ব্যাথা, মা বিনে সেই ব্যাথা
কেউ তো বুঝলনা মা গো,
মায়ের ঠেকিয়া সন্তানের দায়,
অকালে মা প্রাণ হারায়।

কেন সে মায়ের ভক্তি রাখনা? আমার মা গো।
মায়ের এক ধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম,
পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না।
এমন দরদী ভবে কেউ হবেনা আমার মা গো!

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
2
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

2

মন্তব্য করুন