আরেকটি জন্ম! আর কিছুনা

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

জন্ম ! এই বিষয়ে আমার জ্ঞান বোধহয় একটু কম নিজের জন্মের সময়ের অনুভুতি সম্পর্কে কোন ধারনা নেই, বোধকরি  দশজন মানুষের যেমন অনুভুতি থাকে তেমনিই হবে হয়তো। যদিনা ছোট্ট কোন কুঁড়েঘরে জন্ম নেওয়া শিশু আর বিশাল ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যাবস্থার সুবিধা পাওয়া শিশুর জন্মে কোন পার্থক্য এই সমাজ বের করে, বের করলেও তাতে আমার কি আসে যায় সমাজের পার্থক্য সমাজের কাছে থাক। আল্লাহ  তায়ালা আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতোই আমাকে দুটো চোখ, দুটো হাত, দুটো পা দান করে সম্পূর্ণ রূপে পাঠিয়েছেন এতেই হাজার শোকরিয়া অনেকের তো এই সৌভাগ্যটাও হয়না।

জন্মের পর শোনা গল্প থেকে কিছু কথা হয়তো মনে আছে এই যা… ।

আমার জন্ম হয়েছিলো ঢাকার নন্দিপাড়া নামক একটি এলাকায়। নামটাতে সুন্দর একটা অর্থ লুকিয়ে আছে, নন্দি মানে  “আনন্দিত” তবুও সেই এলাকার লোকজন এই শব্দটার সাথে পরিচিত নন… বিশেষ করে দিন এনে দিন খাওয়া লোকেদের বসবাস সেখানে আর তাদের জীবনে এতো ভারি শব্দ বহন করার অধিকার বোধহয় সৃষ্টিকর্তাই উহ্য রেখেছেন। যাক ছিলাম এক জায়গায় আর বলছি আরেক জায়গার কথা, যদিও আমার ব্যাপারে সবাই বলে আমি একটু বেশি কথা বলি, হয়তোবা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিন্তু আমার সম্পর্কে আমার ধারনা মিশ্র, আমি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশি কথা বলি আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাকে নির্যাতন করেও কথা বলানো যায়না। অবশ্য জন্মের পর আমি বোধহয় একটু বিভ্রান্ত ছিলাম বুঝতে পারিনি এখানে আওয়াজ করা উচিত নাকি উচিত না, তাই বোধহয় জন্মের পর খানিকক্ষণ চুপ করে ছিলাম কিন্তু হঠাৎ সকলের কান্নাকাটির আওয়াজে বেশিক্ষন চুপ করে থাকতে পারিনি যখন দেখলাম তারা আমার ভাষায় কথা বলছে তখন একই সুরে কেদে উঠলাম। জন্মের সময় যার হাতের উপর প্রথম পড়েছিলাম সে একজন মহিলা, সম্পর্কে আমার নানী হন মানে আমার মায়ের মা, বড়ই গভীর সম্পর্ক তাইনা! পাশে বসে থাকা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা লোকটি আমার বাবা ছিলেন আর মা সেতো প্রথমেই আমার আওয়াজ না শুনতে পেয়ে মূর্ছা গেছেন। পৃথিবীতে প্রবেশের শুরু থেকেই শুরু হলো তাকে কষ্ট দেয়া। তিনিও হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছিলেন তখন থেকেই, যখন আমি তার উদরে সজোরে আঘাত করতাম – যে এই কষ্টের শেষ হয়তো তার মৃত্যুতেই শেষ হবে।

লোকমুখে শোনা কথা আমি সবার অনেক আদরের ছিলাম আমার বাবা প্রায়ই নাকি কাজ ফাকি দিয়ে বাসায় চলে আসতেন আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার জন্য, হবে হয়তো প্রথম সন্তান আবেগটাই অন্যরকম। আমার মায়ের খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিলো ১৪ কি ১৫ হবে, লোকমুখে শুনেছি আমি যখন তার গর্ভে অনেকে তাকে দেখে হাসাহাসি করতো আর বলতো এই পিচ্চিকে কেমন বিচ্ছিরি লাগছে। লাগাটাই স্বাভাবিক জীর্ণশীর্ণ একটি দেহ যার নিজের দেহের ভার বহন করার ক্ষমতাই পরিপূর্ণ হয়নি সে আবার এই ধরিত্রীর বোঝা বয়ে বেরাচ্ছে। জন্মের কথা চিন্তা করলে আমার একদিকে ভালো লাগে যখন মায়ের তখনকার চিত্র কল্পনা করি আর আনন্দ পাই তাকে বোঝা মুক্ত করতে পেরে আরেকদিকে খারাপ লাগে যখন চিন্তা করি জন্ম! কেবলই একটা প্রক্রিয়া মায়ের কাছ থেকে সন্তানকে আলাদা করার। যাক জন্ম নিয়ে এতটুকুও লিখবো আশা করিনি … আলহামদুলিল্লাহ।

আল্লাহ আমার নানী কে বেহেশত নসিক করুন যিনি এই প্রক্রিয়া সম্পাদনের মুখ্য ভুমিকায় ছিলেন, বেচে থাকতে কিছুই করতে পারিনি তার জন্যে কারন সামর্থ্য ছিলনা আর তার চাহিদাও ছিলোনা। আর আমার বাবা যিনি আমার জন্মের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আল্লাহ-তায়ালা তাকেও বেহেশত নসিব করুন। আর মায়ের কথা!! বললে শব্দের অপচয় হবে …… আর সবশেষে তাকে ধন্যবাদ যিনি এই অপরুপ সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টির পাশাপাশি আমাকেও সৃষ্টি করায় সময় দিয়েছেন।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
1
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

1

One comment on “আরেকটি জন্ম! আর কিছুনা

মন্তব্য করুন