শৈশবের হারানো দিনগুলি

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

আমি আকিব।

আমার  জন্ম বাংলার বৈচিত্রময় এক গ্রামে।গ্রামটার নাম ভাদড়া।গ্রামটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল ঝিনাইদহ জেলাই অবস্থিত।আমার শৈশব-কৈশোর কেঁটেছে গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলার সাথে। আমার জন্মের সঠিক দিন,বার,মাস বা সাল সম্পর্কে আমি অজ্ঞ। তবে সার্টিফিকেট অনুযায়ী ৫ই জানুয়ারি ১৯৯৫।গ্রামের আর কয়টা পরিবারের মত আমিও কৃষকের ছেলে।বাবা কৃষি কাজ করে আর মা গৃহিণী।বাবা কখনোই বিদ্যালয়ের চৌকাঠ পার হয় নাই। মা দুই-এক ক্লাস পড়েছে। তবে লিখতে বা পড়তে পারে না এমনটা না।আমি তাদের ছোট ছেলে।আমরা পাঁচ ভাই-বোন।তিন ভাই ও  দুই বোন।

আমার স্কুল জীবনটা শুরু ২০০০ সালে। ১৯৯৯ সালে স্কুলে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গঠনগত ভাবে ছোট  হওয়াতে পরবর্তী বছরে ভর্তি হতে হয়েছে। স্কুলটা আমার বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে হবে। আমাদের ক্লাস ৯:৩০ তেকে ১২:০০ পর্যন্ত হত। নতুন স্কুল ড্রেস পরে  পরম আনন্দে স্কুলে যাইতাম। সবাই মিলে স্কুলে অনেক মজা করিতাম। বন্ধুদের সাথে খেলা-ধুলা,গল্প-গুচ্ছ,আড্ডা এমনকি মাঝে মাঝে মারা-মারিও করা হইত। স্কুল শেষে বাড়িতে এসে বই,জামা-প্যান্ট পাল্টায়ে চলে যাইতাম পুকুরে।আমার মত অন্য সবাইও চলে আসিতো। সবাই মিলে পুকুরে ঝুপ-ঝাপ করে নেমে পরিতাম। পানির মাঝেই বিভিন্ন খেলায়  মগ্ন হইতাম। যেমন ডুব দিয়ে ধরা-ধরি, আলিফ লাইলার বিভিন্ন দৃশ্যের অবলম্বনে নানান ধরনের খেলা। খেলার মাঝে সময়টা কখন চলে যাইতো বোঝাতে পারিবো না। পুকুরের পানির অবস্থা  এতোটা খারাপ হইত যে,অন্যদের গোসল করিবার অবস্থা থাকতো না। এতো বেশি পানিতে থাকবার কারনে চোখ জোড়া লাল হইয়া যাইতো। চোখের লাল অবস্থার পরিবর্তনের জন্য চোখ পানিতে ডুবায়ে আমরা একটা ছন্দ বলিতাম, “পাখির চোখ লাল হ, আমার চোখ সাদা হ”। তখন বিশ্বাস করিতাম চোখকে সাদা করিবার এইটাই একমাত্র পন্থা।

বিকালে সবাই স্কুলের মাঠে নানা ধরনের খেলা করিতাম। ছুটির দিন সারাদিনই মারবেল খেলিতাম নতুবা মাঠে ঘুড়ি উড়াইতাম। তখন ভাবিতাম,এইটাই হয়ত জীবনের মূল কাজ হইবে। মাঠে যখন ছাগল চরাইতে যাইতাম,তখন দুপুরে খাবারের জন্য খাবার সাথে নিয়ে যাইতাম। মাঠে সবাই মিলে মজার মজার খেলা করিতাম। বাবলা গাছের সাথে ঝুলবাঁধিতাম।একে অন্যকে  ঝুলে বসাইয়া ঝুল খেলাইতাম।ছোলা,গম,ভুট্টার মৌসুমে এগুলা পুড়ায়ে খাইতাম।

রমজান মাসে সবাই নামাজ পরিতাম। অনেক ছোট থেকেই রোজা থাকবার চেষ্টা করিতাম। সাহরীর সময় মা যখন রান্না করতে উঠতো, তখনই উঠে পরিতাম। সবাইকে ডাকিতাম। খাবার খাওয়া হইলে মসজিদে নামাজ পরিতে যাইতাম। সারাদিন নানান ভাবে সময় পার করিতাম।ইফতারের সময় মাকে ইফতার তৈরি করিতে সাহায্য করিতাম।তারপর দাঁত পরিষ্কার করবার জন্য মেসওয়াক এর খোজে কাস্তে নিয়ে বের হইতাম। কখনো পুকুর পাড়ে,কখনো বা জঙ্গলে। মেসওয়াক সবাইকে বিতরন করিতাম।  ঠিক আযানের কয়েক মিনিট আগে সবাই ইফতারের প্লেট সম্মুক্ষে নিয়ে বসিয়া থাকিতাম। পানির গ্লাস হাতেই রাখিতাম। আযান দেবার সাথে সাথে পানি পান করিতাম। পানি পান করবার সাথে সাথে শরীল সতেজ হইয়া যাইতো। ইফতার শেষে নামাজের জন্য মসজিদে যাইতাম।

ঈদের আগের দিন সবাই চাঁদ দেখবার জন্য স্কুল মাঠে একত্রিত হইতাম।চাঁদকে দেখবার জন্য আকাশের পশ্চিম দিকটা চষে ফেলিতাম। সবাই খুজিতাম। আর বলিতাম, কে আগে দেখতে পারে। যে আগে দেখিত,সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে লাফাইয়া উঠিত। সবাই তার কাছে ছুটে যাইতাম। আর বলতাম,কোথায় কোথায়? তখন সে আঙ্গুল উচায়ে আমাদের দেখাত। চাঁদ দেখবার পরে কিযে ভাল লাগতো!পরের দিন সবাই এক সাথে গোসল করে ঈদগাহ মাঠে নামাজে যাইতাম। নামাজ শেষে বাড়িতে এসে ইচ্ছা মত খাইতাম।

শৈশবের সেই দিনগুলাকে অনেক মনে পরে।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন