মিশর- ক্বারীদের জন্য বিখ্যাত এটা হয়ত অনেকেই জানেন। বা অনেকেই আমার মতই সাম্প্রতিক সময়ে জেনেছেন। এখানে জন্ম নিয়েছেন অনেক বিখ্যাত, সম্মানী ক্বারীগণ । এই দেশেই জন্ম পৃথিবীজোড়া খ্যাতি অর্জন করা আর সুন্দর কন্ঠে প্রান আনন্দে পূর্ণ করা ক্বারী আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদের । তিনি ছিলেন তাঁর সময়কালের অন্যতম ক্বারীদের মধ্যে অনন্য।
তাঁর কন্ঠ ছিলো মন্মুগ্ধকর। তাঁর কন্ঠে কোরআন তেলাওয়াত শুনে মুগ্ধ হয়েছেন অনেকেই। তাঁর সুললিত কন্ঠের জন্য তাকে বলা হত দ্যা গোল্ডেন থ্রোট। ১৯২৭ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি মিশরে জন্মগ্রহন করে। বংশের মধ্যে প্রথম ক্বারী ছিলেন তিনি। তাঁর দাদা ছিলেন ধর্মিয় শিক্ষক। একটা প্রবাদ আছে উঠোন্তি মূলো পত্তনেই চেনা যায়। আব্দুল বাসিত ছোট বেলা থেকেই কোরআন কে ভালো বাসতেন, ভালো বাসতেন ক্বারীদের মত কোরআন তেলাওয়াত করতে। এরি ধারাবাহিকতায় মাত্র ১০ বছর বয়সেই পবিত্র কোরআন মুখস্ত করে ফেলেন। মহল্লার মসজিদে তারাবি নামাজ পড়ানোর সুযোগ পান মাত্র ১৪ বছর বয়সে।
আব্দুল বাসিতের সুললিত কন্ঠের কোরআন তেলাওয়াত যে কাউকে করত মোহমুগ্ধ। করে দিত মোহাচ্ছন্ন। তাঁর সুরের মূর্ছনায় আনন্দ লাভ করেছেন মুসলিম , অমুসলিম সকলেই। অনেকেই শুধুমাত্র তাঁর কন্ঠে এহেন তেলাওয়াত শুনেই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন।
অন্যান্য ক্বারীদের মত তিনি হতে চাইতেন। ক্বারী ক্বারী মোহাম্মদ রিফাত ছিলেন সে সময় মিশরের জনপ্রিয় । ক্বারী মোহাম্মদ রিফাতের ক্বারী প্রচার করা হত রেডিওতে যদিও আব্দুল বাসিতের এলাকায় কোন রেডিও ছিলোনা। নিজের পছন্দের ক্বারীর তেলাওয়াত শুনতে তিন কিলোমিতার পথ হেটে এক মেয়রের বাসায় যেতেন আব্দুল বাসিত।
এর থেকে কাছে আর কোথাও রডিওর ব্যবস্থা ছিলোনা। একটা জিনিশের প্রতি কতটা ভালোবাসা আর একাগ্রতা থাকলে একজন মানুষ শুধু মাত্র রেডিও শুনতে তিন কিলো পথ্ হেটে পাড়ি দিতে পারে! পরবর্তিতে তিনি হয়ে উঠেন পৃথিবীর বিখ্যাত ক্বারীদের মধ্যে অন্যতম । ধীরে ধীরে কোরআন তেলওয়াতের নীয়মনীতি দখলে আনেন দক্ষতার সাথে।
১৯৭০ এর দশকে তিন তিনবার তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ক্বারীর খ্যাতাব অর্জন করেন। মিশরের প্রেসিডেন্টের সাথে একবার রাশিয়া সফরকালে তিনি কোরআন তেলওয়াত করেন। একপর্যায়ে রাশিয়ার অমুসলিম ডেলিগেটররা অর্থ না বুঝলেও শুধু মাত্র সুরের কাপনে, সুরের শক্তির কাছে নিজেদের অশ্রু বিসর্জন দেয়! হত এটা ছিলো প্রানের গভীর থেকে উঠে আসা কোন আবেগপূর্ন আকুতি। যার কারনে না বুঝেও শুধুমাত্র সুর শুনেই কেঁদে উঠজেছিলো তাদের প্রান। হয়ত সীল হয়ে যাওয়া অন্তরে এ সুর ঢেউ তুলবেনা। কিন্তু এখনো যে দুয়ার সম্পূর্ন বন্ধ হয়নি সেখানে কম্পন সৃষ্টি করবেই এই সুর।
এবার এক কেরাত মজলিশের গল্প শুনুন!
একদিন ক্বারী আব্দুল বাসিত গেলেন কোরআন তেলাওয়াত করতে মজলিশে গেলেন। সেখানে তাঁর জন্য বরাদ্দকৃত সময় ছিলো মাত্র ১০ মিনিট। কিন্তু যখন তিনি তেলাওয়াত শুরু করলেন কিছুটা ভিন্নতা দেখা গেলো। তাঁর কন্ঠের সুরে মুগ্ধ হয়ে সবাই তাকে অনুরধ করলো আরো কিছুক্ষন তেলাওয়াত করতে। তিনি ১০ মিনিটের স্থলে ১;৩০ মিনিট তেলাওয়াত করলেন। সময়জ্ঞান ভূলে সবাই শুধু শুনতেই থাকলো! এমনি মোহ, এমনি মায়া তাঁর কন্ঠে।
সারাজীবন তাঁর তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিমোহিত করেছেন মুসলিম অমুসলিম সকলকেই। মনকে প্রশান্ত করেছেন, আবেগের অশ্রু এনেছেন , মহান আল্লাহর বানী তাঁর সুললিত কন্ঠে মানুষের অন্তর দূর্গে আঘাত করেছে ।
অবশেষে এই সুললিত কন্ঠের ক্বারী ১৯৮৮ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।
আল্লাহ তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন এই দোয়াই করি।
ক্বারী আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ এর তেলাওয়াত শুনতে ক্লিক করুনঃsurah yasin full recitation