আবরার ফাহাদ ও একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
abrar_fahad, আবরার_ফাহাদ

একটি জীবন, একটি মৃত্যু, একটি দেশের গল্প বলব আজ  । জন্ম হতে যেদেশের আলোছায়ায় বেড়ে ওঠা, যে দেশের স্বপ্ন বুকে লালন করে রাত দিন এক করে বিদ্যার্জন করা সে দেশেরই হাতে তার মৃত্যু।  হয়তোবা কতিপয় অমানুষ তার খুনের সাথে সরাসরি জড়িত , কিন্তু যে দেশের মাটিতে আবরার রা খুন হয় দায় সে দেশেরও থাকে। আবরার যদি এভাবে হুট্ করে আমাদের ছেড়ে চলে না যেত , হয়তবা তাকে নিয়ে এখনই কারো গদ্য লিখা হতোনা। 

 

 হয়ত আবরার আরো বেড়ে উঠতো , তখন তার জীবন নিয়ে লেখা হত অন্যভাবে। দেশ সেরা লেখক , অথবা শ্রেষ্ঠ বাঙালী হিসেবে ? কিন্তু এখানেই থেমে যায় আবরারের পদচারণা। জীবনের এমন একটা সময়ে যখন সবে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার শুরু।  দুঃখিনী মায়ের বুক চিরে বের হয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস আকাশের ক্যানভাসে এঁকে দেয় বিষন্নতার আঁচড়।  

 

১৯৯৮ সালের ১৩ মে কুষ্টিয়ায় কুমারাখালী গ্রামে  জন্ম আবরার ফাহাদের। কুষ্টিয়া মিশন প্রাইমারী স্কুল, কুষ্টিয়া জেলা স্কুল থেকে শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে আবরার ফাহাদের বিদ্যার্জন শুরু হয় ঢাকার নটরডেম কলেজে।  ব্যাচের মেধাবীদের মধ্যে অন্যতম ছিল আবরার ফাহাদ। মেধার জোরে এইচএসসি তে ঢাকা বোর্ডের সেরা ২০ এর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল আবরার ফাহাদ। এখান থেকেই হয়ত তার জীবনের রঙ্গীন স্বপ্ন ডানা মেলতে শুরু করে।  দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় আবরার। মা রোকেয়া খাতুন কিন্ডারগার্টেন এ পাঠদান করেন।

 

বাবা বরকতুল্লাহ ব্র্যাক এ অডিটর পদে আছেন। ছোট ভাই আবরার ফায়াজ ঢাকা কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র। সফল ভাবে এডমিশন টেস্ট এ উত্তীর্ন হয় আবরার চাইলেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ বা ঢাকা উনিভার্সিটিতে পড়তে পারতো। উল্লেখ্যযোগ্য সূত্র মতে স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং  নিয়ে পড়ার জন্যও মনোনীত হয়েছিল। তবুও সে বেছে নিয়েছিল বুয়েটকে। আর এখানেই কিনা রচিত হলো তার আর তার পরিবারের স্বপ্নের সমাধি। 

 

আবরার থাকতো শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর রুমে।  সে হয়তো কখনো না কখনো রুম নম্বর ২০১১ এর সামনে দিয়েও হেটে গিয়েছিলো। ছুটিতে থাকা আবরার  দ্রুত হলে ফিরে আসে, সামনে পরীক্ষা তাই।  

 

৬ অক্টবর , আনুমানিক রাত  আটটায় তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় ২০১১ নম্বর রুমে। তার উপর শুরু হয় অকথ্য নির্যাতন। আবরার কে আঘাত করতে ক্রিকেটের স্টাম্পকেও ব্যবহার করা হয়। এভাবেই একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে।  একটি পরিবার যাদের ছেলেকে হারায়। দেশ হারায় তার মেধাবী এক সন্তানকে।। 

 

প্রায় সাতঘন্টা পর , সোমবার রাত তিনটায় পুলিশ শেরেবাংলা হল থেকে আবরার ফাহাদ  এর মৃতদেহ উদ্ধার করে। 

 

“Some the hall residents claimed that Abrar was killed by the members of BCL, student body of the ruling Awami League, as he was called by the party activists for interrogation over his alleged involvement with Shibir.”

 

—  The Daily Star

 

আবরার ফাহাদ এর সহপাঠীদের মতে আবরারের ফেসবুক পোস্ট ই তার বিরুদ্ধে এই রোষানলের কারণ। পোস্টিতে আবরার ভারতের সাথে আমাদের দেশের চুক্তির যৌক্তিক সমালোচনা করে। 

 সাধারণের জ্ঞাতার্থে আবরারের সর্বশেষ ফেসবুক পোস্টটি এখানে উদ্ধৃত হলো,

 

১.৪৭ এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশেে কোন সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিলো। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।

২.কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েকবছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চাই না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউবিক মিটার পানি দিব।

৩.কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তরভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দিব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।

হয়তো এসুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-

“পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি

এ জীবন মন সকলি দাও,

তার মত সুখ কোথাও কি আছে

আপনার কথা ভুলিয়া যাও।”

 

তার ফেসবুক পোস্টটি কি তার মৃত্যুর কারণ ?তাকে  সন্দেহ করাই কি আবরারের মৃত্যুর কারণ?  একজন তার ভিন্নমত পোষণ করলেই কি তাকে সংখ্যাগরিষ্ঠের অত্যাচারে নির্মম মৃত্যুর স্বাধ গ্রহণকরতে হবে ?এটাই কি আমাদের দেশ ? এই কি স্বাধীনতা?  কোথায় যাচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ?  

 

  প্রশ্ন তোলা রইল জাতির বিবেকের কাছে। ক্ষয়িষ্ণু মানবতার কাছে। 

 

আবরারের মায়ের কষ্ট লাঘব হওয়ার নয়।  সন্তানের লাশ বাবার জন্য পাহাড়সম ভারী। এ বোঝা হালকা হবার নয়।  আবরারের বাবা, তার ভাই ,পরিবারের , আবরারের  নিজের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো নিমিষেই! একজন আবরার ফাহাদ হারিয়ে গেলো।  একটা তাজা প্রাণ শেষ হয়ে গেলো রাত ভোর হতেই।  

 

 

—–রচনাকাল : ৯ অক্টবর ,২০১৯।  

 

Reference:

  1. wikipedia

      2) The Daily Star

     3) Aljazeera

4) FB profile of Abrar Fahad

 

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

1
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

1