বাংলায় ইসলামী জীবনের ইতিকথা

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
বাংলায়_ইসলামী_জীবনের_ইতিকথা,

বাংলায় ইসলামী জীবনের ইতিকথা : 

আমাদের বাংলাদেশে জনসংখ্যার অধিকাংশ মুসলিম। কত দূরের সেই আরবে সূচনা হয়েছিলো ইসলামের। কিভাবে আমাদের জীবনে ইসলামের আগমন ঘটলো?  বাংলার জনগন কখন থেকে ইসলামের আলোর অন্তর্ভূক্ত হলো?বাংলায় ইসলামী জীবনের শুরুটা কিভাবে ছিলো? কখন থেকে ?

 

তুর্কিদের বিজয়ের আগে ,  ১২০৩ খৃস্টাব্দে বখতিয়ার খিলজীর বিজয়, ও বাংলায় মুসলমানদের রাজনৈতিক বিজয়ের  পূর্বেই , বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর ইসলাম প্রচারের খুব কাছাকাছি সময়ে বাংলায় আগমন ঘটে ইসলামের আলোর। এটা ঘটে আরব বণিকদের মাধ্যমে। যাদের  বিস্তার ছিলো মালাবার পেরিয়ে, চট্টগ্রাম হয়ে, সিলেট পেরিয়ে ,সুদূর চীন পর্যন্ত। আসুন ইতিহাসের পাতা থেকে জেনে আসি সেসময়ের জীবনের   কথা।       

 

মুসলমানদের   এদেশে আগমনের বিভিন্ন উপলক্ষেই হয়ে থাকতে পারত। হতে পারে  বাণিজ্য বা সেই সাথে ধর্মপ্রচার এবং দেশজয় এর ইচ্ছে । ইতিহাস বলছে এক  শ্রেনীর মুসলমানের আগমন হয়েছিলো বাংলায় বিজেতার বেশে। আর শুধু ইসলাম ধর্মের বানী প্রচারের জন্য কিছু দরবেশ,ফকিরের আগমন ঘটেছিলো ছিলো সুদূর সব দেশ থেকে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তারা ইসলামী বানী প্রচার করেছেন।  তবে এসবের আগেই,  তুর্কিদের বিজয়, বখতিয়ার খিলজীর বিজয় , মুসলিমদের বাংলা বিজয়ের আগেই এদেশে পৌছেছিলো ইসলামী সুমহান বানী।

 

বাংলায় ইসলাম আগমনের  নিদ্দৃষ্ট দিন-ক্ষন হয়ত ঠিক করা যাবেনা। কিন্তু ইতিহাসের মাঝে ঘুরতে গিয়ে হয়ত সে সময়ের খুব  কাছেও চলে যেতে পারি আমরা। সে সময়ের জীবনের কথা জানতে জানতে হয়ত ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসবে কোন সত্য। 

 

ইসলাম আবির্ভাবের পুর্বে  আরববাসীরা শুধু যে রক্তপিপাসু  ,বর্বর ছিলো তাই নয়, তাদের রক্তে ছিলো ব্যবসা।  ভৌগোলিক দিক থেকে বিবেচনা করলে আরব শস্য উৎপাদনের জন্য উর্বর ছিলোনা কখনই।  সেসময়ে আরবের অনেকেই ,জীবীকা অর্জনের জন্য ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলো। সেই মরুময় প্রান্তরে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং খাদ্যের যোগানের জন্য তাদেরকে প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকতে হয়েছিলো।দেশ পরিভ্রমণে আরব বণিকদের জীবনের উদ্দ্যেশ্য বা   ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে একমাত্র লক্ষ ছিলো জীবীকা নির্বাহ করা, দেশ শাসন করা তাদের উদ্যেশ্য ছিলোনা কখনোই। এটা নিশ্চই বলে দিতে হয়না আরব বণিকদের যে ব্যবসা ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বেই প্রচলিত ছিলো , তা ইসলামের আগমনের পরে কোন অংশেই কমে যায়নি। আরববাসীদের জন্য এই ব্যবসা ছিলো অতি প্রাচীন, এবং দেশ-দেশান্তরে তাদের বিস্তার ছিলো।

 

প্রাক- ইসলামী   যুগেই তাদের ব্যবসার বিস্তার ছিলো  সমুদ্রপথে আবিসিনিয়া পর্যন্ত এবং প্রাচ্যের চীন পর্যন্ত।   আরব থেকে সুদূর চীন যাত্রার পথে আরব বণিকদের কয়েকটি ঘাটি ছিলো।  প্রথম যদি বলতে হয় মালাবারের কথা এর পর-ই আসে আরব বণিকদের বানিজ্যের পথে অন্যান্য  মঞ্জিল চট্টগ্রামসিলেটের কথা।  

 

মালাবার এবং  চট্টগ্রামে আরব বণিকদের ইতিহাস সম্পর্কে বিষদ আলোচনার আগে আসুন আমরা বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মতের উল্লেখে আরব বণিকদের জীবনের কথা আর তাদের  সাথে বাংলার সম্পর্ক নিয়ে আরো কিছু তথ্য জেনে আসি।

 

১৯৬৮ সালে সত্যেন সেনের রচনায় “ মসলার যুদ্ধ” তে  উঠে আসে   অতিতে বাংলাদেশ ও ভারতে তথা তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশে  সংগঠিত এক ভয়াবহ যুদ্ধের কাহিনী। যদিও এ গ্রন্থ সত্যেন সেন বাংলা-ভারতে ইসলাম প্রচারের ঘটনাকে  কেন্দ্র করে লিখেন নি। তথাপি সমসাময়িক  ঘটনার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে এখানে উঠে আসে সে সময়ে বাংলা-ভারতে আরব বণিকদের মাধ্যমে ঘটে যাওয়া ইসলামের প্রচার ও প্রসারের কথা , উঠে আসে তাদের জীবনের কথা। 

 

এই গ্রন্থের আলোকে বলা যায় সে সময়ে বাংলা-ভারতে ইসলামের প্রচারে আরব বণিক দের ভূমিকা ছিলো উল্লেখযোগ্য।এ থেকে এও প্রতীয়মান হয়যে এদেশে হাজার বছর আগে থেকেই আরব বণিকেরা ব্যবসার নিমিত্তে আসতেন।  ঠিক সেই সময়ে যখন বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সা) এর জন্ম হয় এবং তিনি পরবর্তিতে যখন ইসলামী বানী  প্রচার শুরু করেন তখন ইসলামের জোয়ার আরব বণিকদের মাধ্যমেই প্রথম বাংলা-ভারতে এসে পৌছায়। আরব বণিকেরা এদেশের মানুষের সাথে মিশে গিয়েছিলো, ফলে ইসলামের প্রচার ঘটেছিলো অনেকটা নীরবে কিন্তু শক্তিশালীভাবেই।  আর বাংলা-ভারতে এই প্রচার ইতিহাসমতে শুরু হয়েছিলো বিশ্বনবীর জীবদ্দশায়ই। ইতিহাসের পাতা উলটে এও বলা যায় যে, সে সময়য়ই সাহাবি(রা) দের জামাত বাংলা-ভারতে এসেছিলো, এবং এখান থেকেও অনেকেই গিয়েছিলেন মক্কা-মদিনায়।

 

ইতিহাস আমাদের অতিতের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাদের জানিয়ে দেয় আমাদের শুরুটা।  সত্যেন সেনদের মত লেখকদের লেখনীতে ভর করে জীবন্ত হয়ে উঠে সেই সব ইতিহাস। আর আমাদের মত অনেকেই সেই ইতিহাস ঘেটে কিছুটা জানতে পারি।  ইতিহাস আসলে খুবি বিশাল এবং ব্যপ্তি অনেক। এটা স্পর্শকাতর ও বটে ।

 

সত্যেন সেনের লেখায় “মসলার যুদ্ধ” গ্রন্থে  ছড়িয়ে আছে সেই প্রাচীন যুগে বাংলায়-ভারতে আরব বণিকদের আগমনের ইতিহাস।

 

 এছাড়াও ইতিহাসে মসলা বিষয়ক বাণিজ্যে ভারত,ইন্দোনেশিয়া,চীনের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলার নাম।

 

“‘জাভা, মোলাক্কাস ও ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য দ্বীপে এমন সব মসলা জন্মাত, যা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। সেই সব মসলা এসে জমত সেই মালাক্কার বন্দরে। এই মসলা নিয়ে বাণিজ্য করার আগে চীন, জাপান ও পশ্চিমে ভারতবর্ষ, আরব ও পারস্য থেকে বণিকরা এই বন্দরে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। এ সম্পর্কে অ্যালবুকার্ক নিজেই লিখে গেছেন, প্রতিবছর মালাক্কায় ক্যাম্বে, চাওল, কালিকট, এডেন, মক্কা, জেদ্দা, করমণ্ডল, বাংলা, চীন গোর, …জাভা, পেন্ড ও অন্যান্য জায়গা থেকে জাহাজ আসে।’

(মসলার যুদ্ধ, পূর্বোক্ত  পৃষ্ঠা ৬৬)”

 

আসলে আরব বণিকেরা শুধু  ব্যবসায়িক উদ্দ্যেশেই এসে আবার চলে গিয়েছিলো এমনটা নয়, তাদের অনেকি এখানে পাকাপোক্ত ভাবে থেকে গিয়েছিলো, মিশে গিয়েছিলো এখানের মানুষের সাথে।

 

বলেছিলাম আরব দেশ থেকে সুদূর চীনের মাঝপথে আরবদের প্রথম ঘাটি মালাবারের কথা। এটি মাদ্রাজ প্রদেশের একটি জেলা ।  

মওলানা আকরাম খাঁ তাঁর “মুসলেম বংগের সামাজিক ইতিহাস” গ্রন্থে লিখেছেন,

 

    “আধুনিক গ্রীকদিগের মলি(MALI)  শব্দে বর্তমান মালাবার নামের উল্লেখ দেখা যায়। কিন্তু সম্পূর্ন ‘মালাবার’ নাম  আরববাসী কর্তৃক প্রদত্ত হয়- বিশ্বকোষ সম্পাদকের এই সীদ্ধান্তটা খুবই সংগত । আমাদের মতে মালাবার আরবী ভাষার শব্দ-মলয়+আবার= মালাবার। ……………………  মলয় মূলতঃ একটি পর্বতের নাম, আবার অর্থ কূপ্পুঞ্জ, জলাশয়। আরবরা এদেশকে মা’বারও বলিয়া থাকেন। উহার অর্থ অতিক্রম করিয়া যাওয়ার স্থল, পারঘাট। আজকালকার ভূগোলে পূর্বঘাট ও পশ্চিমঘাট । যেহেতু আরব বণিক এবং নাবিকরা এই ঘাট দুইটি পার হইয়া মাদ্রাজ ও হেজাজ প্রদেশে যাতায়াত করিতেন , এবং মিশর হইতে চীনদেশে ও পথিপার্শ্বস্থ অন্যান্য নগরে বন্দরে গমনাগমন করিতেন ,এই জন্য তাহারা এই দেশকে মা’বার বলিয়া উল্লেখ করিতেন। এই নাম দুইটি হইতে ইহাও জানা যাইতেছে,এই দেশের সহিত তাহাদের পরিচয় অতি পুরাতন এবং সম্বন্ধ ছিলো অতি ঘনিষ্ঠ।”

 

                                                                                                      (মুসলেম বংগের সামাজিক ইতিহাস, পৃষ্ঠাঃ ৪৭-৪৮)

 

মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.)  জন্মের বহুকাল পূর্বেই আরব বণিকদের মালাবারে আগমন ছিলো।

এ সম্পর্কে  আব্বাস আলী খান  তাঁর “বাংলায় মুসলমানদের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেছেন

 

“ তাঁরা হরহামেশা এ পথ দিয়ে অর্থাৎ মালাবারের উপর দিয়ে চট্টগ্রাম এবং সেখান থেকে সিলেট ও কামরূপ হয়ে চীন দেশে যাতায়াত করতেন। এভাবে বাংলার চট্টগ্রাম এবং তৎকালীন আসামের সিলেটও তাদের যাতায়াতের ঘাঁটি  হিসেবে ব্যবহিত হত। এর থেকে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, প্রাক ইসলামী যুগেই মালাবার, চট্টগ্রাম, সিলেট প্রভৃতি স্থানে আরবদের বসতি গড়ে উঠেছিলো”

                                                গ্রন্থঃ বাংলায় মুসলমানদের ইতিহাস, লেখকঃ আব্বাস আলী খান , পৃষ্ঠাঃ ১৫।

 

এ থেকে এটা বলা যায় , মহানবী (সা.) এর ধর্ম প্রচার শুরু করলে  তাঁর প্রচার আন্দোলন ছিল প্রবল, যার স্পর্শ এসে লেগেছিলো মালাবার,চট্টগ্রাম,সিলেট ও চীন দেশেও। সেসময় অনেকেই ইসলাম কে মেনে না নিলেও অনেকেই ইসলাম গ্রহন করেছিলেন এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি তাদের ছিলো পূর্ন আস্থা ও ভালোবাসা। সেসময়ে মালাবারের অনেক আরব মুহাজির ইসলাম গ্রহন করে সেখানেই স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে। তাঁরা মোপলা    নামে পরিচিত।   তাদের জীবীকার প্রধান উৎস ছিলো মাছ ধরা ও ছোট বড় নৌকায়  পন্য বা যাত্রী বহন করা। জীবিকার জন্য তাদের অনেকসময় পাড়ি  দিতে হয়েছিল ভারত মহাসাগর,যাতায়াত করতে হয়েছিলো আরব দেশে। এভাবেই ইসলামি দাওয়াতের স্পর্শে তাঁরা সিক্ত হন।  

 

মোপলদের সম্পর্কে আব্বাস আলী খান তাঁর “ বাংলায় মুসলমানদের ইতিহাস” গ্রন্থে উল্লেখ করেন-

 

“তাঁরা ছিলো কর্মঠ ও অধ্যাবসায়ী । সুন্দর ও বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী ছিলো তাঁরা। সাহসিকতায় এরা চিরপ্রসিদ্ধ। এরা দাড়ি রাখে এবং মাথায় টুপি পরিধান করে, এদের মধ্যে অনেকেই ধীবর জাতীয় এবং ধীবরদের মধ্যে ইসলামের বানী প্রচার করা ছিল এদের প্রধান কাজ।”

 

সময়ের পরিক্রমায় যারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত ছিলেন না, এমন অনারব মালাবার বাসীরাও ইসলাম গ্রহন করতে থাকে। মালাবারে অনারব মুসলিমদের মধ্যে দ্রুত ইসলাম বিস্তারের প্রধান কারন সম্ভবত মালাবারের স্থানীয় রাজার ইসলাম গ্রহন।

ইতিহাস মতে-

”চেরর রাজ্যের শেষ রাজা চেরুমল পেরুমল ইচ্ছাপূর্বক সিংহাসন পরিত্যাগ করিয়া মুসলমান ধর্ম গ্রহণ অভিলাষে  মক্কা নগরীতে গমন করেন”( বিশবকোষ- ১৪ঃ২৩৪)

 

মালাবারে স্থানীয় রাজা ইসলাম গ্রহণ করলেন। ফলে মালাবারের স্থানীয় অন্যন্য বাসিন্দারা যারা ইসলামের ছায়ায় আসেননি তখন পর্যন্ত তারাও ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উঠলেন। মালাবারে তৈরি হয় দশটি মসজিদ। অনেকেই দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে।  মসজিদ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই যে ইসলামের প্রচার-প্রসারে ভালো একটা প্রভাব পরেছিলো তা বলাই যায়।  সর্বশেষ উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা বলা যেতে পারে, খৃস্টীয় শপ্তম শতকেই ভারতের এই মালাবার  মুসলমানদের জন্য হয়ে উঠেছিলো শক্তিশালী এক ব্যবসা কেন্দ্র। এসব মুসলিমদের রাজনোইতিক কোন উদ্দেশ্য ছিলো না।তাদের জীবনীর দিকে তাকালে বোঝা যায় তাদের লক্ষ্য ছিলো ব্যবসা বাণিজ্য ও ধর্ম প্রচার করা।   

 

মালাবারের পরেই আসে চট্টগ্রামের কথা। মালাবারের পরেই মুসলিম আরব  মুহাজিরদের বাণিজ্য পথের আরেকটি প্রধান মনযিল ছিল চট্টগ্রাম ও সিলেট।  আরব মুহাজিরদের মধ্যে যারা মালাবারে স্থায়ীভাবে বাস করত তাঁরা তাঁরা চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে। একি সাথে এখানেও গড়ে উঠে তাদের বসতি। হয়ত সপ্তম শতকেই বাংলায় ইসলামাএর প্রথম বার্তা পৌছেছিল । তবে  হিজরি প্রথম শতকেই নাকি আর কিছু পরে চট্টগ্রামে ইসলামী বানী  প্রচার শুরু হয়েছিলো সে সম্পর্কে স্পষ্ট মতবাদ নেই। তবে খৃস্টীয় অষ্টম-নবম শতকে চট্টগ্রামের সাথে আরব মুসলমান বণিকদের সম্পর্ক যে ঘনিষ্ঠ ছিলো তা নিশ্চিত।  

 

ডক্টর আব্দুল করিম তাঁর “চট্টগ্রামের ইতিহাস” গ্রন্থে বলেন – 

 

খৃস্টীয় অষ্টম/নবম শতাব্দীতে চট্টগ্রামের সঙ্গে আরবীয় মুসলমান বণিকদের যোগাযোগ ছিল।  পরবর্তিকালে চট্টগ্রামে আরব ব্যবসায়ীদের আনা-গোনার আরো প্রমান পাওয়া যায়। আরব বণিকেরা চট্টগ্রামে স্বাধীন রাজ্য গঠন না করলেও আরবদের যোগাযোগের ফলে চট্টগ্রামের সংস্কৃতিতে তাদের প্রভাব এখনো পরিলক্ষিত হয়। চট্টগ্রামী ভাষায় প্রচুর আরবী শব্দ ব্যবহ্নিত হয়। চট্টগ্রামী ভাষায় ক্রিয়াপদের পূর্বে ‘না’ সূচক শব্দের ব্যবহার ও আরবী ভাষার প্রভাবের ফল। অনেক চট্টগ্রামী পরিবার আরব বংশোদ্ভূত বলে দাবি করেন।  চট্টগ্রামী লোকদের মুখাবয়ব আরবদের অনুরুপ বলে অনেকে মনে করেন। তাছাড়া চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকা যেমন , আলকরণ, সুলুক বহর( সুলুক-উল-বহর) ,বাকালিয়া ইত্যাদি এখনো আরবী নাম বহন করে। আগেই বলা হয়েছে যে কোন কোন পন্ডিত মনে করেন যে আরবী শব্দ শৎ (বদ্বীপ ) এবং গঙ্গা ( গঙ্গ ) থেকেই চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি হয়েছে।

                                                                                               (ইস্টার্ন বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার, চট্টগ্রাম পৃষ্টাঃ ১ )   

 

চট্টগ্রামে মুসলমানদের কয়েক শতাব্দি ধরে বসবাস থাকলেও, রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তাঁরা প্রতিষ্ঠিত ছিলোনা। তাদের মূল কাজ ছিল ব্যবসা বাণিজ্য ও ইসলাম প্রচার করা।  বখতিয়ার খিলজী কর্তৃক বাংলা জয়ের বহুদিন পরে সুলতান ফখ্রুদ্দিন মোবারক শাহ (১৩৩৮-১৩৪৯)  প্রথম বারের মত চট্টগ্রাম জয় করে তা মুসলিম শাসনের আওতাভূক্ত করেন।

 

এত যে  ইতিহাস, এত জীবনের কাহিনীর সাথে জড়িত চট্টগ্রাম এর মূল কারন সম্ভবত এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ   সামুদ্রিক বন্দর। এখনো এর গুরুত্ব কিছু কমেনি। আরব বণিক সহ, পারস্য দেশিয় ও বিভিন্ন ভিন্দেশী বণিক সম্প্রদায় এসেছিলো এই বন্দরে। অনেকেই চলে গিয়েছিলো, অনেকেই শুধু আসেন নি, এখানেই থেকে গিয়েছিলো। এদের মধ্যে অন্যতম আরব বনিকরাই । তাঁরা এখানে শুধু বাণিজ্য করেনি, পাশাপাশি ইসলামে সুমহান বানীকে এখানে বিস্তারে ভূমিকা রেখেছিলো। তাদের অনেকেই কাজ শেষে চলে গিয়েছিলো, অনেকেই এখানে পারিবারিক জীবন শুরু করেছিল। আস্তে আস্তে শান্তির বানী ছড়িয়ে পড়লো সারা বাংলায়। ধীরে  ধীরে চট্টগ্রামে ,সিলেট এবং সারা বাংলায় মুসলমানরা ছড়িয়ে পড়লো।আরব বণিকদের  অনেকেই ইসলাম প্রচার করেছিলেন ,চট্টগ্রামে সর্বোপরি  বাংলার অনেকেই ইসলাম ধর্মকে গ্রহণ করলেন মনে -প্রানে ।   ধীরে ধীরে চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে  সিলেট হয়ে সারা বাংলায় ছড়িয়ে গেলো ইসলামের সুমহান বানী।শুরু হলো ইসলামী জীবন।

 

তথ্যসূত্রঃ

 

১) সত্যেন সেনেরমসলার যুদ্ধ”, পূর্বোক্ত  পৃষ্ঠা ৬৬

 

 ২) মওলানা আকরাম খাঁ  এর গ্রন্থ “মুসলেম বংগের সামাজিক ইতিহাস” পৃষ্ঠাঃ ৪৭-৪৮

 

৩) গ্রন্থঃ বাংলায় মুসলমানদের ইতিহাস,   লেখকঃ আব্বাস আলী খান , পৃষ্ঠাঃ ১৫

 

৪) “চট্টগ্রামের ইতিহাস” –  ডক্টর আব্দুল করিম

 

অন্যান্য লেখনী পড়তে ভিসিট করুনঃ

ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার

মৃত্যু

আমার সন্তানেরা

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া