হারানো শৈশব

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে , শহরে । বলতে গেলে আমার শৈশবের একটা  অংশ যদি গ্রামে কাটে অপর অংশ তবে শহরে কেটেছিল । আবছা মনে পড়ে শহরে কোন এক বাসায় বেড়ে উঠছিলাম । সে বাসায় আমাদের সাথে আমাদের খালারাও থাকত । এর বেশি মনে পড়তে হলে কম্পিউটার মেমরি লাগে,তবে এটাও ঠিক মানুষের  ব্রেইন কম্পিউটারের চেয়ে শক্তিশালী । আম্মু তখন যদ্দুর মনে পড়ে আমিরুন্নেসা স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন । সাথে আমিও যেতাম বৈকি ! শেষ পর্যন্ত সেই কেজি স্কুলেই ভর্তি হয়েছিলাম । পড়ালেখা খুব একটা করতামনা। আমাদের সময় এখন কার বাচ্চাদের মত এত্ত ওজোন এর ব্যাগ বইবার দুর্ভাগ্য হয়নি। পড়া লেখার শুরু মনিরা আন্টির হাত ধরে। তিনি অফিসে যাওয়ার সময় কাজ দিয়ে যেতেন, অফিস থেকে এসে পড়া নিতে । ওহ! কিছু মনে না থাকলেও সেই দুর্বিষহ টেনশন এখনো মনে পড়ে।

খালা আমাকে পড়তে দেখলেই বেশ খুশি হতেন। তাই   একটা কাজ বেশ ভালোই রপ্ত করেছিলাম। খালার উচু হিলের আওয়াজ মাথায়গেথে গিয়েছিল। তার হিলের খট খট আওয়াজ সিড়িতে শুনতে পেলেই আমি পড়তে বসে যেতাম। বিনিময়ে চকলেট বা আইস্ক্রিম পেতাম । আব্বু গ্রামে থাকত ,প্রতি বৃহস্পতিবার তিনি আসতেন। সে এক মজার দিন ছিল।  তিনি কিছু আনতেন বলে নয়, তিনি আসতেন বলে । হ্যা মাঝে সাঝে তিনি কিছু আনলে সেটা আলাদা আনন্দের আমেজ নিয়ে আসত মনে । শৈশব বলতেই ফুটে উঠে দুরন্ত  একটা মুখের ছবি । হুম বেশ ভালোই ছুটাছুটি করতাম । শৈশবের কথা বললেই চলে আসবে চোর ডাকাত খেলার কথা। সেটা বেশ ভালোই চলত । শহরে তখন ও কিছু কিছু জায়গা শিশুদের জন্যে খেলার মাঠের প্রয়জোন মেটাত।

  গোল্লাছুট, কাবাডি, সাত চারা ,বড়ফ পানি, পাতা ছুয়ান্তি , মার্বেল , ফুটবল, ক্রিকেট কম খেলিনি। সাথে চড়ুই পাখি বারোটা ডিম পেড়েছে তেরোটা , মাংস চুরি, রুমাল চুরি এসব তো চলতই।সাথে চলত দুপুর বেলায় পুকুর জুড়ে সাঁতার । সে সময় কিন্তু সবি আউটডোর গেইম ছিল,  ঘরের ভিতর খেলতাম বলে মনে পড়েনা। একবার বাসায় ডাকাত এসেছিল মনে পড়ে, আম্মুর সাহসিকতা আর তানভীর মামার সাহসিকতায় আর আল্লাহর ইচ্ছায় সে যাত্রায় ক্ষতি তেমন হয়নি । তবে সেই প্রথম দুষ্ট লোকের মন্দ কাজ সম্পর্কে ধারনা পেয়েছিলাম । একবার মনে পড়ে আম্মুর স্কুলে বিশেষ বাদরামির ফলে প্যান্ট এর পেছন টা ছিড়ে গিয়েছিল। আমি আম্মুর চেয়ারের উপর উঠে গিয়েছিলাম। নিচে পড়ে প্যান্ট ছিড়ে গিয়ে হ্যান্ডেলের সাথে ঝুলছিলাম। আম্মু পরে বাসা পর্যন্ত আমার পিছনে ব্যাগের সাপোর্ট দিয়ে নিয়ে এসেছিল , মনে আছে বেশ । মনে না থেকে কি উপায়, সেই প্রথম ইজ্জত সম্পর্কে ধারনা হলো।

এরপর অবশ্য গ্রামে চলে আসতে হয়েছিল । কি কারনে মনে নেই। মানুষ বড় হলে সব কিছুতেই কারন খুজে, শৈশবে সে সময় কোথায় ! গ্রামে ক্লাস ওয়ান এ ভর্তি হয়েছিলাম মনে পড়ে ।  ভর্তি হয়ে প্রথম দিন এর স্মৃতিটাই বিরক্তিকর । মারামারি করে একটা অবস্থা, কারন বিশেষ কিছুনা, ওই বেঞ্চ নিয়ে আর কি! সে স্কুল আবার আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে তিন কি চার মিনিটের পথ । পড়া  লেখায় তেমন মন ছিলনা । মনে পড়ে কোন ক্লাসে একবার রোল ৭৬ হওয়াতে খুশি হয়েছিলাম।ভেবে ছিলাম ৭৬ তো ১০০ এর কাছে তার মানে অনেক ভালো করেছি। সেই প্রথম শিক্ষার ক্ষেত্রে রেংকিং পদ্ধতি সম্পর্কে জানলাম। স্কুল কামাই নিয়মিত হত, পেটের ব্যাথার নাম করে স্কুলে যেতাম না। সে ব্যাথা যে কি ব্যাথা মা নিশ্চই ধরতে পেরেছিলেন। নইলে পেট ব্যাথা বলায় মার খেয়ে স্কুল যেতে হয়ে ছিল কেনো !চোরের একদিন গৃহস্তের দশদিন।

আব্বু সে সময়টায় বাশখালী ডিগ্রি কলেজে কেমেস্ট্রি পড়াতেন। সকাল টাইম টা ছিল ব্যাচ পড়াবার টাইম। প্রচুর ছাত্র ছাত্রি আসত। পরে জেনেছিলাম, আব্বু টাকা খুজে নিতেন না। দিলে নিতেন, না দিলে নাই। সে সময়ের শিক্ষকরা এতটা পেশাদার ছিলেন না বোধ করি। কিন্তু আমি পেশাদার খেলোয়াড় ছিলাম , মানি সকালে উঠেই খেলা শুরু হত আরকি!একদিন মনে পড়ে আব্বু বাড়ির সারা উঠান দৌড়ে ছিলেন মারার জন্যে। কারন বারে বারে বলার পরেও আমি আব্বু ব্যাচ পরাবার সময় বল দিয়ে আওয়াজ করে করে খেলছিলাম। শৈশব পেরিয়ে কৈশরের দিকে এগিয়ে যাওয়া আমাকে অবশ্য সেদিন আব্বু নাগালে পায় নি।  আম্মু কিন্তু প্রায় নাগালে পেতেন। তার মাইরের একটা আলাদা স্টাইল ছিল।

হাতের কাছে যা পেতেন, নিয়ে সেই মাইর। শৈশবে জুতো, বেত, মেহেদী গাছের বেত, ঝাড়ুর শলা, বড়শির আর পরদার স্প্রিং এর মার খেতে খেতে আমার শরীর যেন বিড়ালের হাড্ডি হয়ে যাচ্ছিল। তবে হাজার দুষ্টোমির ফাকে, পড়া লেখা ঠিক ই চালিয়ে যেতাম ,আমার মত করে। রোল এক কোন দিন হইয়নি, ইচ্ছেও কোনদিন হয়নি, আফসোস হওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা। ছোট বেলা থেকেই ভাবতাম, এক ,দুই, হয়ে কি হবে। ৮০ পেলাম নাকি ৭০ পেলাম সেটা নিয়ে খুব একটা চিন্তা কখনো করিনি।আমি আমার মত, আল্লাহ যেভাবে বানিয়েছেন, আরেকজন হতে গেলে বিপদ। গ্রামে বর্ষা কালে বৃষ্টিতে ভিজার সে কি আনন্দ।  মনে পড়ে আম্মুরা দুপরে ঘুমালে আমি মাঝখান থেকে শরীর মুচড়ে বেরিয়ে পড়তাম, বাইরে গিয়েই দে ছুট, ভিজতাম, কাদায় জড়া জড়ি করে খেলতাম বন্ধুদের সাথে। আর সে সময় থেকে গল্প বই এর নেশায় আমাকে পেয়ে বসেছিল, আজো ছাড়তে পারলাম কই!সাথে লেখা লেখির নেশা। কবিতা লেখার কাজটা ছিল নিত্য সঙ্গী ।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন