দুরন্ত কৈশোর

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

শৈশব পার করে কৈশোর এ পা দিলাম সময়ের আবর্তে। কৈশোর এর অধিকাংশ কেটেছে শহরে। এর ভিতরে চার টা স্কুল বদলেছি।শহরে আসলাম, আপু আসমা ফিরোজা বৃষ্টি ইস্পাহানী কলেজে চান্স পাওয়ার সুবাদে। আমার জন্য অবশ্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সরকারি কোন স্কুলে পড়তে না পারলে আব্বু বলে দিল ,যে কোন ইয়ে মার্কা স্খুলেই ভর্তি করাবে।বেশ টেনশন হচ্ছিল জীবনে প্রথম।  হাতে ছিল এক হপ্তা ভর্তির আগের প্রস্তুতির জন্য। আপু ছিল, সময়ে আমার শিক্ষিকা, সময়ে বন্ধু,সময়ে শত্রু। তবে সবকিছুই ছিল আসলে একধরনের মজা। যাক সে কথা। আপু আমাকে এ কদিন কিল, ঘুষি্‌, আর হাত দিয়ে মাখিয়ে ভাত খাইয়ে খাইয়ে পড়ালো। পরীক্ষা দিলাম।    রেসালট এর দিন ঘনিয়ে আসে। মনে ভয় বাড়ে। সবাই বলত গ্রাম থেকে এসে কিভাবে টিকবে ! কোচিং ও করেনাই।

রেসালট এর দিন হেটে যাচ্ছি রেসাল্ট আনতে। মনের ভেতর কাপন ধরেছিল। আব্বু সামনেই ছিল, আরো ভয় ধরিয়ে দিল” টিকলে এই রাস্তা দিয়ে যেতে পারবা, আর নাইলে…।” এই ধরনের মন্তব্য করে। রেসাল্ট দেখ লাম। লিস্ট এ আমি নাই। আপু ও ছিল, হঠাৎ আপুর চিল চিৎকার শুনে, ভিড় ঠেলে এগিয়ে গিয়ে দেখি অন্য লিস্ট এ আমি আছি। উত্তেজনায় কোন দিকে দৌড় লাগাবো বুঝছিলাম না। গ্রামের ছেলেটা ৪২ নম্বর এ টিকে গেলো। আমার ভাতিজা মেজবাহ ও ছিল, ১১ নম্বর পজিশনে সম্ভবত । সে দিনের আম্মু  আনন্দে কেদেছিল। সেই থেকে যাত্রা শুরু নাসিরাবাদ স্কুলে। আমার প্রানের নাসিরাবাদ। স্কুলে তখন তিন গোয়েন্দার খুব চল ছিল। একবন্ধু আনত। সবাই স্কুল ছুটির পর অথবা ক্লাস চলাকালিন বই নিচে রেখে পড়তাম। অবশ্যই পিছনেই বসতাম। বলা যায় ব্যাকবেঞ্চার ছিলাম আমরা কজন। সেখানেই পরিচয় হয়েছিল, রুমায়েত, রিফাত , সাফায়েত,তাহামিদ দের সাথে, ভাতিজা মেসবাহ তো ছিলোই। সে এক গোল্ডেন সার্কেল বলা চলে। কি করিনাই! কি কি যে করেছিলাম!

স্খুল পালিয়েছি ঢের, ক্লাস ফাকি দিয়েছি টয়লেটের নাম করে। আরিফ স্যারের ভয়ে স্কুলের বাইরে মাঠেই থেকে গিয়েছিলাম পিটির পর। পাটোয়ারি স্যারের সাথে বেশ মজা করতাম। তাই বলে আবার পড়া লেখা শিকেয় উঠিয়ে রাখিনে। সরকারি স্কুলের ছেলেরা এমনিতেও নিজেরাই পড়ে, যা পড়ার। বাসায় গভীর রাত অবধি পড়তাম। কখনো পাঠ্য বই কখনো বা গল্প বই। তবে হাজারো দুষ্টোমির ভিরে বই ছিল নিত্যসঙ্গী ।ভাড়া বাসায় থাকাকালিন পাশের বাসার ফখরুলের সাথে বেশ জমে উঠেছিল। আমি গ্রামের ছেলে, না খেললে হয়না। যে বিল্ডিং এ থাকতাম, সেখানের ছেলেরা নিচে নেমে কম খেলত। আমি ১ বছরের মধ্যে তাঁদের খেলোয়াড়  বানিয়ে ফেললাম। তাঁদের মায়েদের নালিশ , আবার প্রশংশা ও ছিল একটাই, আগে তো কেও খেলতোনা, এই জুনাই দ এসে সবাইকে ৪ টার পর থেকে মাঠে নামানোর অভ্যাস করিয়ে ফেলছে, এটা তাঁদের বাচ্চাদের শারীরিক বিকাশের জন্যে ভালো হয়েছে।। আবার একি সাথে শহুরে মানুষ বিধায় ধুলময়লা গায়ে মেখে খেলা তাঁদের পছন্দের ছিলোনা। আর আমার তাঁদের ক্রিটিসিজম বা ধন্যবাদ কোনটা নিয়ে চিন্তার অবসর ছিলোনা।

এর মধ্যে বাসা বদলেছিলাম অনেক। আবার ঘুরে ফিরে কাছাকাছি হয় । আম্মুর বাসা বদলানোর একটা শখ ছিল বোধয়। যেখানেই যেতাম বন্ধু জুটিয়ে ফেলতাম। আমাকে দেখে অনেকেই প্রথমে নির্ভেজাল ভাবলেও তারা পরে টের পেত কতটা  ভেজাল, আর প্যাচাল ছিলো। এতটাও খারাপ ভাবে নিবেন না! প্যাচাল বলতে কি কি উপায়ে কতভাবে খেলা যায়, একটা খেলাকে কয় ভাবে মডিফাই করা যায় এটা আমার একমাত্র কাজ ছিল। কিছু নাই? সমস্যা নাই। খেলা হবে। থোড় বড়ি খাড়া খাড়া বড়ি থোড় সিস্টেমে চলত আমার নিয়ম।আরো আছে সব বলা যায় না। নেতৃত্বে পেছনে থাকা আমার তখন কার অভ্যাস। সবাই নেতৃত্ব দিতে চায়। দেখনা। সমস্যা কি! আমি পেছন দিক থেকেই ব্যাকাপ্ দি না হয়। খেলায় ঝগড়া বাজলে ঝগড়া ছাড়াতে ওস্তাদ ছিলাম। দুই তিনে চার বুঝিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমোঝতা করে দিতাম।

সে সময় ডিডেক্টিভ এর অভ্যাস খুব ছিল। দি নাই রাত নাই, যে কোন লোকের পেছনে হাটা দিতা। টিকটিকি গিরি করার নিমিত্তে। আর এসে আম্মার হাতে রাম ধোলাই খেতাম। ততদিনে যে কোন ধোলাই হজম করার কেপাসিটি আমার হয়ে এসেছিল। একবার রাতে এশার নাম,জের পর একজনের পিছে হাটা দিলাম, পরে দেখলাম সে আমাদের এলাকার ডাক্তার,  হতাশ হয়ে ছিলাম সে চোর না হওয়ায়। ক্রিকেট বলের জোরে কত যে বাড়ির জানালার গ্লাস ভাঙ্গলাম,তার হিসেব আজো করা হয়নি, ভালো হত যদি হিসেব টা করার জন্যে হলেও আরেকবার সে সময়টায় ফিরে যেতে পারতাম। আফসোস সেটা হবার নয়।সে সময় শহর থেকে একসাথে বাসে করে ফ্যামিলির সবাই ঈদে বাড়িতে যাওয়াতে একটা অতি আনন্দের ব্যাপার ছিল।আমি,সৌহার্দ্য,হিমেল,আরাফ,মেজবাহ,জোবায়ের,আরিজ মিলে বাড়িতে কয় ডজন টেনিস আর ফুটবল হারিয়েছি, তার হিসেব আলিম ভাই এর দোকানে চা খেতে খেতে এখনো করি। গ্রামের বাড়িতে মনে পরে একবার সাহস দেখাতে গিয়ে জানালার পাশে শুয়েছিলাম, পাশে ছিল খাল, সে রাতে আর ঘুম যাওয়া হয়নি। আব্বু বলত আমি নাকি তাত্ত্বিক । যুক্তিতে হার মানতে চাইতামনা, নম্বর কম পেয়ে ও তার পক্ষে যুক্তি দেখাতাম,বাবা আমার,   অসহ্য হয়েই এই উপাধি দিলেন। ভাগ্যিস ঘর থেকে বের করে দেওয়ার রায় দেন নি।

ক্লাস এইট তখন সবে মাত্র পার হচ্ছি। পার হলাম। এইটের  কি যেন এক বৃত্তি পরীক্ষায়, আমি আর ভাতিজা পরীক্ষা অর্ধেক দিয়ে বের হয়ে এসেছিলাম মনে পড়ে সব উত্তর জানা সত্তেও। আবছা ভাবে মনে পড়ে খেলার টাইম চলে যাচ্ছিল। বৃত্তি দিব আরকি! যারা পাবে পাবে আরকি! উত্তর তো পারতেসি, তাইলে আর কি! এর চাইতে খেলা ভালো! এই ছিল তখন কার মনোভাব । এখনো যে বিশেষ বদলিয়েছে তা কিন্তু নয়। বরং বেড়েছে। তবে এখনো ফেলের সাধ পাইনাই, এবং এটাকে  একটু ভয়ই করতাম। পাশ করা লাগবে, নম্বর ফ্যাক্ট না। ৭৯ পাইলাম, এক বাড়িয়ে আশি নিবো? কি দরকার পাশ ত পাশি। সে চল্লিশ হোক আর আশি। একজন বিশেষ স্যারের কথা না বইললেই নয়। জিশু স্যার। আমার কৈশরের একমাত্র প্রিয় স্যার। অনীল স্যার আর জসীম স্যার কেও প্রিয় এর তালিকায় ফেলা জায়। তবে জিশু স্যার! তিনি তো তিনি।যে ছেলেটা বাউন্ডুলে ছিলাম, ৬০ দিন চুল না কেটে থাকতাম,তার কথায় আমি শীতের সকালে কোচিং থেকে বের হয়ে চুল কেটে আবার কোচিং এ গিয়েছিলাম। এটা ঘটেছিল  তার প্রতি ভক্তির কারনে।জোর করে ভক্তি আদায় করা যায়না , ভয় আদায় সম্ভব । ভক্তি আদায় করতে হলে একজন শিশুর,কিশোরের, মানুষের মনের ভাব আপনাকে বুঝতে হবে,তাহলেই আপনি একজন মানুষ কে বদলাতে পারেন। নয়ত নয়।জিশু স্যারের কিছু গল্প অবশ্য আমি জানি, যেটা এখানে বলা যাবেনা। খারাপ গল্প,এমনটা ভাববেন না যেনো।

এরপর নাইন এ উঠলাম। সাইন্স নিলাম, অনেক বড় স্বপ্ন ।সে সময় সাইকেল এ করে খুব ভোরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন খবরের কাগজ বিক্রি করতাম, প্রতি বিক্রয় এ সম্ভবত এক টাকা করে পেতাম। প্রায় ৬ মাস পেপার বিক্রির টাকা দিয়ে আনকোরা নতুন ২০ টা গল্পের বই একসাথে কিনেছিলাম মনে পড়ে।  সাইন্স নিয়ে আগ্রহ ছিল। স্বপ্ন টাও বড় ছিল। বাস্তবতা ঘেচাং করে তার ডানা কেটে দিলো। আব্বুরা ৫ জন সিএঞ্জিতে করে আসার সময় এক্সিডেন্ট করল। সেই এক্সিডেন্টের ঘটনায় প্রিয় মেজআব্বু ,জহির উদ্দিন মারা গেলেন। সে দিনের কথা কখনো ভুলবার নয়। কি কষ্ট, কি ব্যাথা, প্রিয়জন এর মৃত্যুতে ,প্রথম আঘাত ছিল সেটা। আব্বুর প্রিয় ভাই মারা যাওয়ায় আব্বুও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়লেন। এক্সিডেন্টের কারনে শারীরিক ভাবেও ভেঙ্গে পড়েছিলেন।  কিছু বুঝার আগেই গ্রামে চলে যেতে হল। নাসিরাবাদ স্কুল থেকে টিসি আনতে যেদিন গেলাম, সেদিনের কষ্ট টা আমি কিশোর মনেই শুধু বুঝেছি। আর কেও এটা বুঝবার নয়। সেদিন বুঝি আমার প্রথম মৃত্যু ঘটেছিল,শেষ মৃত্যুর আগে। আমার যাওয়ার ইচ্ছে ছিলনা, সে বয়স বা সাহস কোনটাই ছিলনা যে বলব আমি নাসিরাবাদ ছেড়ে যেতে চাইনা। সেই মানসিক যাতনা আমাকে পরবর্তি ক বছর বেশ ভুগিয়েছিল।

গ্রামে গেলাম। কবিতা লিখার একটা নেশা ছিল ছোট বেলা থেকেই। ভেবে ছিলাম প্রকৃতির মাঝে গিয়ে সেটায় আরো শান দেওয়া হবে। কিন্তু হিতে বিপরীত, মানসিক যাতনায় আমি সম্পূর্ন বিপর্যস্ত। কাওকে কিছু বলে বুঝাতে পারলাম না!কৈশরের যাতনা বুঝে সে লোক কই। গ্রামের স্কুলে মন টিকেনা। নাসিরাবাদে  যদি আমার জীবনের স্বপ্নের সময় কাটাই গ্রামের জীবনটা ছিল দুঃস্বপ্নের মত। সেখানে আমার নার্ভাস ব্রেকডাউন ঘটে। রাতের দুইটায় তিন টায় পুকুর আর হিন্দুদের চিতায় ঘুরে বেড়িয়েছি,নিজের অজান্তে।আর বুঝার পর চরম ভয় পেয়েছি। সেটাকে অনেকেই ইচ্ছাকৃত কৈশোরের এডভেঞ্চার প্রিয় মনের কারসাজি বলবেন! বলতেই পারেন! যে ওই পরিস্থিতির শিকার হয়নি তার পক্ষে সবি বলা বা ভাবা সম্ভব।  অন্তর্যামী জানতেন আমার তখন কার মনের পরিস্থিতি সম্পর্কে, আপনি বা আপনারা নয়। আমার সে সময় এর মন যে কষ্টে কতটা নির্মমতার দহনের শিকার হয়েছিল, আল্লাহ ই ভালো জানেন। রাতের তিন টা চারটায় উঠে কেনো মাথা কুটে আল্লার কাছে আশ্রয় চাইতাম,কি কষ্টে চাইতাম যাদেরভাগ্যে এমন ঘটেছে তারা ছাড়া অন্যরা বুঝবেন না।

আমার নিজের চেয়ে প্রিয় ছিল আমার বই, গল্পের বই। আমার সে সময় পড়ালেখার গ্রাফ যখন নিচের দিকে নামছিল তখন কেও আমার মানসিক অবস্থা নিয়ে খোজ নেন নি। সবাই ব্যাস্ত ছিলেন কারন খুজতে। কেও বলছিল ছেলেটা গাজা খায়, আর খারাপ ,গরল তরল খায়। আমি সেদিন কিছুই বলি নি। সময় সবকিছুর জয়াব দেয়। তবে প্রিয়জন্দের আঘাতে আমি জর্জরিত ছিলাম। কিছু প্রিয়জন হাতে গোনা কয়েকজন ছিলেন যারা আমার পাশে ছিলেন,সে দুঃসময়ে ,এদের মধ্যে অন্যতম আমার মা। তবে সে মার ও একটা সহ্যের সীমা থাকে। একদিন আমার সব গল্পের বই উঠিয়ে রাখার পরিকল্পনা করলেন তারা,বিজ্ঞরা। আমার বই থেকে আমাকে আলাদা করে দিয়ে শেষ আঘাত টা করেছিল তারা আমাকে। সে সময় আমি ঘুরে দাড়াই পৃথীবির বিরুদ্ধে, আপনাদের আমাদের তথাকথিত সমাজের বিরুদ্ধে। মাসুদ রানার বই এর জন্য মা আমার গালে কষে একটা চড় মারেন, সেটাই ছিল শেষ। আমার গালের চামড়া হৃদয়ের দহনের সাথে পুড়ে এতটাই শক্ত ছিল, চড়ের কোন আঘাত সেখানে অনুভূত হয় নাই। সে রাতে আমি তৈরি ছিলাম, বের হয়ে যাবার জন্য। কোথায় যাবো জানতাম না। শুধু জানতাম চলে যাবো সবাইকে ছেড়ে বহু দূরে।

একজন মা ই সম্ভবত সন্তানের আচরন সবার আগে বুঝতে পারে। মা আমার বের হয়ে যাওয়ার চিন্তা হয়ত ধরতে পেরেছিলেন। আমি শেষ বারের মত আমার ভাগ্নি জুভিরিয়া কে আদর করছিলাম,কারন আমি জানতাম বের হলে আর ফিরবোনা।। সেটা দেখেই হয়ত তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। মা সে রাতে আমার পাশ ছাড়েন নি, কাছ ছেড়ে জান নি। সারারাত কত কথা বললেন। সেই সময়টায় সেই স্নেহের ছায়া ও যদি না পেতাম, জানিনা সেদিন রাত্রে কোথায় যেতাম, বা আজ কোথায় থাকতাম। মা বুঝেন, কিন্তু আর কেও বুঝেনা। সবাই আমাকে খারাপ ভাবে এমন একটা সময় যাচ্ছিল। কিছু করলেও দোষ না করলেও দোষ টাইপের অবস্থা। কাওকে বুঝাতে পারিনা মনের কষ্ট। সেই যে নাসিরাবাদ ছেড়ে আসার পর পর ই আমার এ অবস্থার শুরু সেটা ও আমি বুঝেছিলাম পরে।

রাত বিরাতে ঘুরে বেড়াতাম, এভাবে চলছিল জীবন। খাবারের ঠিক ছিলোনা। আর প্রত্যেকটা মানুষ কে তখন আমি ঘৃনা করতে শুরু করেছিলাম। তাঁদের দৃষ্টীভঙ্গির কারনে। আমি যা নই তারা একবারো না বুঝে আমাকে তাই বানিয়ে দিলো!  এরপর টেন এ উঠলাম। ক্লাস করতাম না। নিজের মধ্যে খারাপ ছেলে খারাপ ছেলে একটা ভাব নিজেই বুঝতাম,আর সবাইকে বুঝতাম। আমাকে খারাপ ভেবেছো নাও আমি খারাপ। আসলে যতটা না ছিলাম, এর চাইতে বেশি দেখাতাম ,আমি খারাপ। কারো কথায় পাত্তা দিতাম না। থাকতে বললে চলে যেতাম, সবাই যেটা বলত আমি ঠিক সেটার বিপরীত বলতাম।  আমি কিছু বলার পর না শুনলে উত্তেজনাকর পরিবেশ তৈরি করতাম। আমি ততদিনে বুঝেছিলাম, এই পৃথীবিতে যদি টিকে থাকতে হয়, সত্যের সাথে সাথে আমাকে মিথ্যে সাহস ও দেখাতে হইবে। পৃথীবিতে হাতে গোনা কজন বাদে আপন মানুষ গুলো ও নিষ্ঠূর। নিষ্টুরতার মোকাবেলা আমি ততদিনে চরম নিষ্ঠুরতা দিয়ে দিতে শিখেছি, মুখের উপর না বলতে শিখেছি। মানুষ কে ততদিনে আমি কষ্ট দিতে শিখেছিলাম। না হলে আর বেঁচে থাকা লাগতনা। একজন ভালো ছেলে হয়ে বাঁচতে গেলে, আমাকে সে দিন মরতে হত।

অনেক সময় আমাদের সমাজ ই আমাদের খারাপ বানায়। আমি খারাপ না হলেও খারাপের ভূমিকায় অভিনয় করে গেলাম দিব্বি। আমি খারাপ? হ্যা খারাপ ,তো কি করবো এই টাইপের একটা ভাব ছিল। এই কাজ করলে আমাকে সবাই খারাপ বলবে? তাহলে আমি সেই কাজ টাই করব। এ যেন সহজ স্বীকারোক্তি।  সহজ কথায় ভাবটা ছিল এমন যে , হ্যা আমি খারাপ, এ নিয়ে তোমার, আপনার মাথা ব্যাথার দরকার নেই।তোম্রা আমাকে নিয়ে কি ভাবো সেটা আমার দরকার নেই। চরম খারাপ হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিলাম, কতটা খারাপ বা নির্দয় একজন কিশোর হতে পারে হতে বাধ্য হয়, অবাধ্য সমাজ কে বশে আনতে। এরপর বেশ ক বছর আমি ঘর ছাড়া ছিলাম। টেন থেকে ইন্টার পর্যন্ত এক একাই বেরিয়ে যেতাম দেশের দর্শনিয় স্থান গুলো দেখার জন্যে। আম্মুকে নিয়েই সে সময়টায় শুধু কক্সবাজার গিয়েছিলাম ১০ বারের উপর। সকালে যেতাম রাত্রে চলে আসতাম। সে সময় আমি একা ঘুরে ছিলাম রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ী, সিলেট, আরো বিভিন্ন জায়গায়। কয়েকবার যে আত্মহত্যার চেষ্টা করিনি তা নয়। আর সহ্য হচ্ছিলোনা, মনে এটাও ছিল আত্মহত্যা মহা পাপ। একদিন ভাবলাম মরেই যদি যাবো জীবনটাকে নিজের মত কাটিয়েই মরি।কে কি ভাবলো,কে কি বলল তখন থেকে আমি সে চিন্তা ও ছেড়ে দিলাম।যখন আল্লাহ মৃত্য দিবেন তখন মারা যাবো।

হ্যা মানুষের কষ্টে কষ্ট লাগে। তবে এখনো মানুষের উপকার করলেও বাইরের শক্ত আবরনের পেছন থেকেই করি। বুঝতে দিনা আমারো মন কাঁদে । শক্ত খোলস কিন্তু আমাদের সমাজের কিশোর দের কে আমাদের সমাজি পরতে বাধ্য করে, পরে এই সমাজি তাঁদের দোষারোপ করে। বিসিএস এর জন্যে পড়ার কথা বলে কিন্তু কই ছোট কালে বই পড়লে এত আঘাত কেনো। যে খারাপ সে ভালোর মাঝেও খারাপ হবে, যে ভালো পথে থাকবে সে হাজার খারাপের  মাঝেও ভালো পথে থাকবে। মানুষ টা ভালো না মন্দ, বেহেশতি না দোযোখের সে সিদ্ধান্ত আল্লাহ নিবেন। আপনার আমার নেওয়ার আমি প্রয়োজন দেখিনা। আইনের সে অধিকার থাকতে পারে তবে সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ।সীদ্ধান্ত্ একমাত্র আল্লাহ নিতে পারেন। কার কি রুপ শুধু আল্লাহই জানেন।

সে সময়টায় সিগারেট ধরলাম।। কারো সঙ্গদোষে , নয় নিজ দোষে। সেটাও মোটেও উচিত ছিলোনা। এবং সেই নেশা ছেড়ে দিতে আমার প্রানান্তকর চেষ্টা ছিলো। সেটাতে কতটুক সফল সেটাও আল্লাহ জানেন , বললেই হয়ত আপনারা বিশ্বাস করবেন না। তবে হ্যা মাত্রা কমিয়ে এনেছিলাম। মন থেকে চাইতাম এ অভ্যাস বাদ দিতে। এ অভ্যাস বাদ দিতে গিয়ে পান ধরলাম, এখন পান আর চার আবার বড় চাহিদা আমার।পাশাপাশি সে সময়  অন্য কিছু তেও টান যে দিনি তা নয়, তবে সেটা ওই এক বারি। এক দুবার সুরা পান করেছিলাম, সেটাও সেই এক দুইবার ই, ধর্মের কিছুটা পড়ালেখার কারনে এবং বিশ্বাস এর কারনে ও পথে আর যাইনি । পথে ঘাটে ঘুরে কত যে এক্সিডেন্ট করেছি তা আজো শরীরের দাগ গুলো দেখে হিসেব মেলাই। তবে শরীরের যে দাগ মিটে যায়, আপন জনের দেওয়া মনের সে দাগ মিটে কই! তাই সে কৈশোর থেকে আমি মানুষ কে যাচাই করি ভয়ে ভয়ে! মানুষ চিনা বড় দায় !  সমাজের ভালো মানুষ টাও, নিজেকে ভালো জানা মানুষ্টার ও মনের কোন কোনে কি পাপ লুকায়িত আছে তা আল্লাহ ভালো জানেন। আমার মনের খবর ও আপনাদের ও আমার চেয়ে আল্লাহ ভালো জানেন। আল্লার ঘরে গিয়েই শুধু মনে হত নিওরপেক্ষ কোন জায়গায় এসেছি। সবসময় যে নিয়ম করে মসজিদে যেতাম সেটা নয়, দিনে রাতে , অসহ্য মানসিক যন্ত্রনা নিয়ে মসজিদে ছুটতাম। পৃথীবি কে ঘৃনা করতাম, মানুষ গুলোকে ভালোবাসার আর অর্থ হয়না। নিজের মত করে বাঁচতে শিখেছিলাম তখন থেকেই।

যে সময় এস এস সি দিয়েছিলাম, সবাই ধরে নিয়েছিল জুনাইদ নির্ঘাত ফেল।  এক্সামের আগে শহরে চলে এসে ছিলাম জোর করে। সি এন জি করে গিয় গিয়ে এক্সাম দিতাম গ্রামে গিয়ে। তাও আবার বই ছিল গ্রামের বাড়ি। সে কি পরীক্ষা দিলাম আমি নিজেই জানিনা। ডাক্তারের দেওয়া কড়া ঘুমের অসুধে ভর করে আমি তখন চলি। সকালে ঘুমের মধ্যে বৃত্ত  ভরাট করে ,কষ্ট করে কি সব জানি লিখতাম। মনের ভিতর একটাই চিন্তা ছিল,লিখতে হবে থামা যাবেনা। সে সময় পরিচ্ইয় হানিফ হুজুরের সাথে। যাক সেই ফেল করা ছেলেটা পাশ করে গেলো। সবি আল্লার ইচ্ছা। ইন্টার এ ও একি অবস্থা, জুনাইদ তো এই বার ফেল, হাতে গোনা কজন বোধয় শুভাকাঙ্ক্ষী  ছিল মা, বাবা, আপু। দুলাভাই, ফরিদ ভাই, নাজিম ভাই তারা পাশেই ছিলেন,আরো কয়েক্মজন ছিল পাশে।তবে সিংহ ভাগ লোক যেন চাইত এটা শুনতে যে জুনাইদ তো পটে গেছে ,গোল্লায় গেল ছেলেটা। যাক আল্লাহ ইন্টার ও পাশ করায়ে নিলো এক চান্সে। এরপর আবার পড়ার সে স্পৃহা দেখা দিল। তিন চার মাস ধুমসে পড়লাম আর মোহসিন কলেজে  ইংলিশ এ চান্স পেলাম। এই যাযাবর লাইফে মনের সাধ মিটিয়ে কিন্তু বই পড়েছিলাম,। ওই যে যত বাধা এসেছি, সব কিছুর বিরুদ্ধে গিয়েছিলাম।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন