কুলের দেশে শৈশব ও কৈশোর

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

বাবা আমাদের কে এমন আদর-যত্ন করতেন যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমাদের পোষাক , খাওয়া-দাওয়া,ছোট-বড় ব্যাপারে খুব সচেতন থাকতেন। আমের মৌসুমে শহর থেকে বাড়ীতে যাওয়ার সময়, এক খাচি নয় ২-৪ খাচি আম নিয়ে যেতেন। গ্রামের নাম কালীপুর।  কালীপুরের লিচু একটা সময় রাজশাহির লিচুর মত প্রসিদ্ধ ছিল। আগের মত তেমন লিচু এখন আর নেই। দুপুরে ভাত খাওয়ার পর আম্মা আমাদের তালা বন্ধ করে ঘুমাতে বলত। লিচুর দিনে কোন মতে আম্মাকে ফাকি দিয়ে আগেই পালিয়ে যেতাম। তারপর আম্মার ঘুমাবার সময় হয়ে এলে, লিচু গাছে উঠেই লিচু খেতাম।    সে সময়ের কথা যখন কালীপুর লিচুর জন্যে বিখ্যাত ছিলো, সে সময় লিচুর দিনে কালীপুর লাল রঙ ধারন করত। আমি ছোট বেলায় খুব হাল্কা-পাতলা, ছিলাম,একটু গেছো বাদুড় টাইপের ছিলাম।

শীত কালে  বড়ই(কুল) কুড়াতে যেতাম। ভোরের আযানের পর পর আমরা বেড়িয়ে পরতাম । যে যত আগে যেতে পারে। আমরা তো দশ বোন ছিলাম। তাই আমাদের জীবনের কাহিনি প্রচুর। হঠাৎ একদিন  ক্লাস ফোর বা ফাইভের দিকে আমার ইচ্ছে হলো ‘Daily Routine’ নিয়ে লিখব। সেই থেকে আমার জীবনে লেখার শুরু। সবার অগোচরে দৈনিক ডায়রি লিখতাম। অনেক বোন চেষ্টা করেছে ডায়রিতে কি লিখি তা জানার জন্যে। অনেক জায়গায় ডায়রি টা লুকিয়ে রাখতাম।

একদিন বড় আপা বলল  “এই তোর ডায়রিতে কি লিখছিস আমাকে বল” ।

আমি বললাম “Personal Diary, কেও দেখা ঠিক না”।

কিভাবে জানি বড় আপা আমার ডায়রিটা খুজে সব পরে ফেলল। পরের বার আবার যখন বললাম ডায়রি দেখাবোনা তখন,

বড় আপা  বললেন , “তোর ডায়রির একটা লাইন বলি? “

আমি তো অবাক ।  হতবাক হয়ে বললাম “দেখি বল”

 

আপা আমার ডায়রির একটা লাইন বলে চলল,

”সকালে উঠিয়া আমি মুখ হাত ধুয়ে কচুর ছাড়া দিয়ে পানতা ভাত খাইলাম” ।

এটি আসলেই আমার ডায়রির একোটি বাক্য। বাক্যটি শুনার পর আসে পাশে যারা ছিল তারা হিহি করে হেসে উঠলো।  আমি লজ্জায় সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচলাম । জীবনের অনেক ঘটনা । কিছু হাসির ,কিছু আনন্দের, কিছু দুঃখ – কষ্টের ।  চট্টগ্রাম শহরের চকবাজার শহরে আমাদের বাসা ছিল। চট্টগ্রাম গুলজার বেগম স্কুলে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছিলাম। ঐ বয়সে আমি সবুজ হোটেলে গিয়ে সকাল বেলা মুরগির সূপ নিয়ে আসতাম।  চকবাজারে গিয়ে বাজার করতাম। একদিনের কথা- আম্মা পান আনতে পাঠালো, যেতে যেতে কখন যে আমার হাত থেকে টাকা টা পরে গেলো জানিনা। বাজারে গিয়ে দেখলাম ,আমার হাতে টাকা নেই। আমার সেকি কান্না।

অষ্টম শ্রেনীর শেষের দিকে আমরা গ্রামে চলে যাই। সেই কালীপুর। শহর থেকে যাওয়ার পর গ্রামের লোকজন এমন ভাবে তাকাত যেন জীবনে আমাদের মত কাউকে আর দেখেনি।  মনে হত চিড়িয়া খানার প্রানী দেখছে। আমাদের চলাফেরা, চালচলন সবাই অবাক হয়ে দেখত। গ্রামের ছেলে-মেয়েরা তখন সাধারনত স্কুলে যেত খালি পায়ে। আর আমরা যেতাম শহরের কায়দায় কালো জুত সাদা মৌজা পড়ে । গ্রামের ছেলে মেয়েরা সে সময় বই নিত হাতে করে,বা মাথায়  করে নতুবা বোগলের নিচে ধরে। আমরা শহরের শিখে আসা কায়দায় ব্যাগ করেই বই নিয়ে যেতাম। এসব দেখে প্রথম প্রথম স্কুলের-রাস্তা ঘাটের আর পাড়া প্রতিবেশিদের চক্ষু ছানা বড়া হয়ে যেত। তাদের হাব ভাব দেখে মনে হত আমরা জেন,অন্য জগতের প্রানী, বিদেশ থেকে এসেছি।  কত লোকের কত কথা, কেও ভালো বলত,কেও মন্দ বলত, কেও বলত ঢং দেখাচ্ছে। কেও বলত দশ জন মেয়েকে এত আদর করার কি দরকার। যাক সে কথা , ধীরে ধীরে বলব জীবনের আরো কিছু কথা ।আজ এই পর্যন্ত।

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
1
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

1

One comment on “কুলের দেশে শৈশব ও কৈশোর

মন্তব্য করুন