বিয়ের নিমন্ত্রন রক্ষায় কুতুবদিয়া ভ্রমন ও একটি অন্যরকম দীর্ঘ-রাতের গল্প

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

এই বাস্তব ধর্মী গল্পের নাম দেওয়ার কথা  ছিলো-রত্রি গর্ভে কুতুবদিয়া দর্শন ও কিছু বিভ্রাট কিন্তু বদলে দিলাম, বিয়ের নিমন্ত্রন রক্ষায় কুতুবদিয়া ভ্রমন ও অন্য রকম একটি  দীর্ঘ-রাতের গল্প। কুতুবদিয়া দ্বীপে নামার পর থেকে একটা অনুভূতি হচ্ছিলো।কেমন যেন শূন্য শূন্য ভাব চারদিকে। রাস্তা পাকা,কিন্তু মানুষ নেই, জন নেই, রস্তার পাশে কোন ঘর নেই,পরিচিত কোন মুখ নেই। কবিতা লিখে ফেলছি নাতো ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে! আমরা হাটা শুরু করলাম। যার বাড়ীতে বিয়ের দাওয়াত ছিলো, তার বাড়ী কিভাবে খুজে পাবো, ভাবছিলাম। কারন যার বাড়ীতে দাওয়াত, খোজ নিয়ে জানলাম এমন দুজন আছে।রস্তায় মানুষ ও হাতে গোনা কয়েকজন চোখে পড়ছিলো। শেষতক আরেকজনকে পেলাম যে ঠিকানাটা বরাবর চিনতে পারলো। তবে মাথায় বাজ পড়লো যখন শুনলাম আরো   মাইল  আষ্টেক হাটতে হবে। আমরা খোলা মাঠের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। মাঝে মাঝেই রাস্তার পাশেই ঘাসের উপর বসে কিছু খেয়ে নিচ্ছিলাম। এর মাঝেই এক পথিকের কাছে শুনলাম নির্বাচনের ঝামেলার কারনে এই জনশূন্যতা।  দুই পক্ষের বিবাদে সাধারন মানুষ বলি হতে চায়না আর। কতক্ষন লেগেছিলো মনে নেই, হাটছিলাম তো হাটছিলাম, এ যেন দিগন্তরেখা পর্যন্ত আমাদের ছুটে যাওয়ার পণ। শেষ পর্যন্ত আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে নেমন্তন্ন রক্ষা করতে বিয়ে বাড়িতে গিয়ে পৌছালাম। কখন,কোথায় কিভাবে যে কেটে গেলো বেলা,সে বুঝেছিলাম সাঝবেলায়।  মনের মধ্যে আশ্চর্য রকম অনুভূতিদের উদয় ঘটছিলো। গ্রামের বাড়িতে রাতের বিয়ে বলে কথা। অনেক আশা নিয়ে,মাঠ-ঘাট,বিল পেরিয়ে,তেপান্তরের যেন মাঠ পেরিয়ে যেখানে গিয়ে পৌছালাম, সে যেন এক প্রকৃতির স্বর্গ কন্যা। সেখানেই ঝুম করে নেমে আসলো আঁধার। তখন বুঝলাম সেখানে বিদ্যুৎ এর চল নেই,যখন দেখলাম অনেক গুলো  পিদিম,আর হ্যাজাকবাতি জ্বলে উঠছে। যাক বিয়ে বাড়িতে ঢুক তে গিয়েই আবার আশ্চর্য হওয়ার পালা। বাড়ি বলতে খড়-খুটো দিয়ে এক কামরার বাসা। এবার সে রুমে বর-কনে থাকবে,নাকি শশুর-শাশুরি, নাকি অতিথিরা সে  এক মহা চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়ালো।অগত্যা নতুন দের জায়গা ছেড়ে দেওয়া পুরানের দায়িত্বের মাঝে পরে  বিধায় বর-কনেকে জায়গা ছেড়ে দিতে হলো।

 

রাত্রে খাবারটা বেশ চমকপ্রদ হলো। প্রতিটি গাছের পাশে পিদিম জ্বলে, তার মাঝেই চলে খাওয়া দাওয়া। এতটুকু বেশ মজার লাগলো। খাবারের পাট চুকলো। বিয়ে বাড়িতে গান শুরু হলো।শহরের মত নয় মোটেই। গান করছে বাড়ির লোকেরাই,তালে তালে কিছু ছেলে নেচে যাচ্ছে। কতক্ষন আর রাতের আঁধারে বসে থাকা যায়,যেখানে মশারা মেতে উঠে ছিলো রক্ত চোষার উৎসবে। অগত্যা উপায় না দেখে আমরা কজন বাড়ির পাশেই ধানের মাঠে গিয়ে বসলাম। বলা ভালো মাঠ ছিলো বটে তবে ধান ছিলোনা। সেখানে উচু মত একটা জায়গায় গাছের নিচে বসলাম,রস্তার পাশে করে। বসে বসে গান শুনছিলাম,মোবাইলে। সে মোবাইলের চার্জ ও যখন ঘন্টা খানেকের মধ্যে শেষ হলো আমরা পরলাম ফাপড়ে। একেতো মশার কামড়,তার উপর গরম,গাছের পাতা টিও যেনো না নড়ার পণ করেছিলো। এর মধ্যে গ্রামের কিছু নেতা গোছের লোক এসে আমাদের বলে রাত্রে বাইরে না ঘুরতে। তাদের সাথে তর্কে গেলাম না সাথে আনা লাঠি-সোটা দেখে। আমাদের তখন বেহাল দশা, বিয়ে বাড়ি গিয়ে দেখি সব চুপচাপ। যে যার বাড়ি গিয়ে শুয়ে পড়েছে,বরের বাপ-মা ও বুঝি কারো ঘরে ঠাই নিয়েছে। আমি হেটে আবার আগের জায়গায় চলে গেলাম, ইহাব ভাই আসছিলো তার হালকা চার্জ নিয়ে বেঁচে থাকা মোবাইল নিয়ে টেপা-টেপি করতে করতে। মোবাইল স্ক্রীন এর দিকে তাকিয়ে হেটে আসছিলেন। আমি তাকিয়ে ছিলাম, মনে পড়ে সাবধান করেছিলাম, “ভাই সামনে,,,”।  এর আগেই দেখি ইহাব ভাই নেই, রস্তার পাশে পানি ভর্তি ছোট পুকুর টাতে নিমজ্জিত হয়েছেন। তাকে দেখা যাচ্ছিলোনা। এমন সময় খেয়াল করলাম, এক হাত উচিয়ে মোবাইল ধরে আছে একটা হাত। ইহাব ভাই নিজে ভিজলেও তার মোবাইল কে ভিজতে দেননি।অতঃপর আমরা কিছুক্ষনের মধ্যেই নিমজ্জিত হলাম ঘোর অমানিশায়।  সে কি আঁধার,  নক্ষত্রের দেখা নেই, এক বিশাল অন্ধকার প্রকোষ্টে আটকা পড়েছি যেনো। এত কিছুর পরেও দেখলাম রাত ১০ টা। সময় যেনো থেমে আছে কোন বন্দরে,এখনো নোঙর তোলেনি। মশার কামড়ে অতিষ্ট আমরা।  যখন গরমে,ঘেমে, ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে ভাবলাম এই বুঝি ভোর হবে তখন ঘড়ি দেখে চোক্ষু   চড়ক-গাছ। ১১:১৫ বাজে। এ যেনো বিভিষিকাময় এক কল্পনার রাত,যেখানে সময় খুবি ধীরে চলে। নিজেদের কষ্টে নিজেরাই হেসে নিজেরাই কেঁদে ভাসাই বুক অবস্থা। অবশ্য গরমে শরীর ঘামে ভিজে চপচপে হয়ে গিয়েছিলো আগেই। এমন সময় বুঝি কেও একজন পিদিম জ্বেলে এলো।

 

আমাদের নিমন্ত্রণকারী। যার দেখা আসার পরে এই ২য় বার মাত্র পেলাম। সে জানালো ঘুম গিয়ে এসেছে।  মনে মনে তেজে মরছিলাম, আহা! আমার নিমন্ত্রণকারী।  উপরে কিছু বললাম না। পাছে রাত্রি বাসের শেষ নিবাসের আশা ও না শেষ হয়ে যায়। সে আমাদের এক মাটির ঘরে নিয়ে গেলো, সেখানের ঘরের ছাদ বুঝি আমার বুক সমান উচু। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো। ইহাব ভাইয়ের যেনো বাঘের চামড়া এই গরমেও তার হালকা নাক ডাকার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিলো। আহ ঘুম আমার! আমি হয়ে গেলাম, রাতের গর্ভে একলা মানব সন্তান। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো, বের হয়ে এলাম। চেয়ার নিয়ে বসে পড়লাম। ভয়ে ভয়ে ঘড়ি দেখলাম। হা!খোদা ২:৫০ কি ৫৫ বাজে। এরপর সারারাত বসে ছিলাম। আর রাতের আঁধারে পেছনে আওয়াজ হলেই সেদিকে ভয়ে ভয়ে তাকাই। কিছুই নেই!আসলেই পুরোটাই আদিম আতংকের   অনুভূতি ছিল। একজনকে মনে হলো দেখলাম, আঁধারে দৌড়ে যেতে,লম্বা মত। ভয়ে ভয়ে বুক সমান ঘরে এসে ঢুকলাম।  আরো কতক্ষন পর জানিনা ফজরের আজান দিলো। মনটা যেনো প্রশান্তিতে ভরে গেলো।  সেদিনের সূর্যোদয় এর কাছে চাঁদেরহাট হাটে চাঁদ দেখাও নস্যি।এর পরে ভোরের আলো ফুটলো অন্ধকার কে ভাসিয়ে দিলো একঝলক আলো। এরপরে যাত্রা ফেরার যাত্রা,যেটার খুব কমি মনে আছে। বোধকরি ফিরতি যাত্রার পুরোটাই ঘুমিয়েছিলাম। শুধু এত টুক মনে আছে দিনের কুতুবদিয়া অনিন্দ সুন্দর। সে রাতে কে দৌড়ে গিয়েছিলো কিছুটা দূর দিয়ে,তার উত্তর আজো অজানা। আল্লাহ নিশচই জানেন। থাক কিছু অজানা। অজানার দিকে যাত্রার উত্তেজনাই যে আলাদা!

 

গল্পের প্রথম অংশ পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-

 

লিংক –       কুতুবদিয়ার পথে আমরা কজন 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন