স্বপ্ন যাবে বাড়ি

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

সকাল থেকেই ছোট মেয়ে জিয়ারার মন ভালো, অনেক ভালো। এত সকালে সে উঠে হাসি মুখে ঘর ময় হেটে বেড়াবে আর মার কথায় উঠবে বসবে এ কিভাবে হয়। হঠাৎ ঘুম থেকে ডেকে তোলায় তাঁর কান্না করার কথা।  ছোট কাধে ছোট ব্যাগ নিয়ে ছোট ছোট পায়ে ঘর ময় হেটে বেড়াচ্ছে, তাঁর টুকিটাকি জিনিশ ব্যাগে ভরছে । তাঁর বড় দুই বোন জুভিরিয়া আর জুনাইরাও উঠে পড়েছে। তাঁদের সকালে উঠার অভ্যেস এমনেই আছে, সকাল বেলা উঠে তারা হিফজখানায় যায়। আজ কিন্তু অন্য কোথাও যাবে। তাদের কাঁধে একটা করে ব্যাগ আর চোখে-মুখে হাসি। তাঁদের গর্ভধারীনি মা আসমা ফিরোজার বৃষ্টির কি হঠাৎ করেই তাঁর শৈশবের ঈদ আনন্দের কথা মনে পড়ছেনা? অবশ্যই পড়ছে, অথবা সেও এখনো সেই শিশুতোষ আনন্দ উপভোগ করছে হয়ত।

বাইরে ঝুম বৃষ্টি। একেবারে যাকে বলে আসমান ফাটা বৃষ্টি । কি মেঘ কি রোদ কার সাধ্য তাঁদের ঠেকায়, আল্লাহর মর্জি থাকলে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই তারা বেড়িয়ে পরবে । সকাল ৭ টা বাজে। এখনি বের না হলে ট্রেনটা বুঝি মিস গেলো। এক গাড়িতে চাপাচাপি করে মা-মেয়েরা উঠে পড়লো। এক মেয়ে বসলো ব্যাগের উপর,আরে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া এক আধটু ঝাটকি-ঝামেলা না গেলে হয় নাকি। অন্য সময় হলে এনাদের চার জনেরি মেজাজ খারাপ হওয়ার কথা। একেত বৃষ্টি , তাঁর উপর সকাল-বেলা। কিন্তু এ তো আর যে সেই দিন নয় ভাই, আল্লাহর অশেষ রহমতে এ যে দির্ঘ দিনের পরে চট্টগ্রাম অভিমুখে তাঁদের যাত্রার দিন। বিরক্ত হলে চলবে কেনো!

পৌছে গেলো ট্রেন স্টেশনে, ৮ টা বাজার ১৫ মিনিট আগে। তাঁদের সাথে তাঁদের মামা ও গেলেন, তাঁদের ট্রেনে উঠিয়ে দিতে। সে না হয় দেওয়া গেলো, কিন্তু ট্রেনে একটা সিট বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, মামা চাইলে যেতে পারে । কিন্তু সে মামার অন্য মামার টেনশনে পরে আর যাওয়া হলোনা। কিন্তু তাঁর মনের মাঝে দোটানার ভাবটা যাচ্ছিলোনা। এই মনে হচ্ছিলো হুট করে বলে”আমি যাবো” । পরক্ষনেই বাস্তবতার টানে গলা দিয়ে বের হয়ে এলো “ আমি যাবোনা, তোমরা  দেখে শুনে যাও” । মন মানেনা , ট্রেন ছাড়েনা, ভাগ্নি ত্রয় এর সাথে একি ট্রেনে ঝুলে পড়ারর ইচ্ছেটা অনেক কষ্টে হজম করলো সে।

স্টেশনের চারধারে মানুষ।সবাই বাড়ি যাবে। সামনে ঈদ। সবাইকে দেখেই মনে হচ্ছে সবাই খুশি। কারন নেই তবুও হাসছে,মনের খুশি দাতের চাপে ,  চাপা রাখা বড় দায়। একজন বিদেশিনী দাঁড়িয়ে ছিলো অদূরে ।সে সব মানুষের সাথে ৫/১০ টা লাগেজ দেখে চমকিত হচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে। সে বেশ কিছু ছবিও তুলে ফেলল। এর পর পাঁচ সদস্যের একটা ফ্যামিলি হেটে গেলো তাঁর সামনে দিয়ে।পেছনে তিন ট্রলি ব্যাগ, সে ব্যাগের বাহার দেখে বিদেশিনীর ছবি তোলার মুড চলে গেলো, মুখটা বিস্ময়ে একটু হা হয়ে গেলো বুঝি। সে কি বুঝবে -কত ব্যাগে কত চাল। বিদেশিনী ভেবে পাচ্ছেনা ৫ জন মানুষের কয় টন কাপড় লাগে।  

কিন্তু সে তো জানেনা, এই সব ব্যাগে কত শত ভালোবাসারা বন্দী। কেও ঘরে খাবার নিয়ে যাচ্ছে বাড়ি পৌছে একসাথে খাবে বলে, কেও দুইই তিন বয়ামে কয়েক পদের খাবার নিয়েছে , দেশের বাড়িতে সে জিনিশ তাঁর বাবা-মা খেতে পায়না বলে। কিছু বাবারা ব্যাগ বোঝাই  করে নিয়েছে খেলনা, খেলনার জায়গা করতে গিয়ে হয়ত সে নিজের জল-গামছা টা নিতে ভুলে বসে আছে। কেও হয়ত পল্লিতে তাঁর বৌ এর জন্যে সাধ করে কিছু নিয়ে যাচ্ছে,যদিও জানে তাঁর পছন্দ বৌ পছন্দ করবেনা। কোন বাবা হয়ত গত বছরে কথা দেওয়া টেডি বিয়ার এই বছর নিয়ে যাচ্ছে। কেও নিজের বাদ দিয়ে সবার জন্যে কাপড় কিনে বাড়ি ফিরছে। আজ কেও খালি হাতে যাবেনা। নিজের জন্যে না হোক পরিবারের জন্যে কিছু নেওয়া চাই। সাথে নিজের ও দু-চারটা জিনিশ মিলে সবার ব্যাগের এই হাল। যাক সে কথা সেই বিদেশিনী মনে হয়না বুঝতে পারবে , কি ভালোবাসা-কি যত্নে নেওয়া জিনিশ গুলো পরম মমতায় মানুষ গুলোর সাথে সাথে বাড়ি যাচ্ছে।

ট্রেন চলে এলো। ট্রেনে উঠে পরলো ভাগ্নী  ত্রয়, আর মা। মামা উঠে কিছুক্ষন দাঁড়ায়, মনে মনে মাথা চুলকায়,এত লোকের মাঝে সরাসরি মাথা চুলকানো যায়না।  যেতে নাহি দিব হায় তবু যেতে দিতে হয় টাইপের মুখ করে নেমে গেলো সে। বৃষ্টিতে ট্রেনের জানাল গুলো ও কেমন ঝাপসা হয়ে আছে, নাকি চোখে সমস্যা ! কে জানে । তবু কিছুক্ষন উকি ঝুকি মারা হলো তাঁর, ট্রেন আস্তে ধীরে তাঁর সাপের মত শরীর নাড়িয়ে চলা শুরু করেছে। মামার ইচ্ছে হলো একটা লাফ দিয়ে উঠে যায়, আরে  ঙ বগীর দরজা এখনো খোলা। নাহ যাওয়া যাবেনা। ঝাপসা জানালার ভেতর দিয়ে যতদূর দেখা যায় সে দেখলো। এক ভাগ্নী নাকি তাঁর বোন বোধয় হাত নাড়ালো,সেও নাড়ালো, ট্রেন চলছে সেও হাটছে। নাহ ট্রেনের সাথে আর পারা যায় না। বলে দিতে হয়না, চট্টপগ্রাম অভিমুখে রওয়ানা দেওয়া ট্রেনটার সাথে পাল্লা দিয়ে সমান্তরালে তাঁর মনটা ছুটে চলবে, জানালার পাশে পাশে ।কিন্তু দেহ আর চলছেনা । মনটাকে ট্রেনের সাথে বেধে দিয়ে ধড় টা নিয়ে সে পা টেনে টেনে চলল।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন