বিদায় এবি ডি ভিলিয়ার্স – ভালো থেকো ক্রিকেটের রাজপুত্র

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

একজন ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কে কত টুকু দিতে পারে?  এবিডি ( AB de Villiers ) আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কে যা দিয়েছে তা যাচাই করতে যাওয়ার সাহস হয় না আমার। তাঁর বিদায় বেলায় একটাই আক্ষেপ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেতিনি অনেক কিছু উপহার দিয়েছেন, কিন্তু ক্রিকেট থেকে তাঁর পাওয়ার ছিল আরো বেশি কিছু। একটা বিশ্বকাপ তাঁর পাওনা ছিল বৈকি ।  কিন্তু আর নয়। এবিডি সীদ্ধান্ত নিলেন । এবার সরে দাড়াবার পালা । তিনি হয়ত জানেন বা জানেন না তাঁর এই সরে দাড়ানো ক্রিকেট আঙ্গিনায় কত বড় শূন্যতার সৃষ্টি করবে। কিন্তু হয়ত এবি ডির শরীর আর সায় দিচ্ছেনা। হয়ত তাঁর জন্যে এটাই সেরা সময় সরে দাড়ানোর।তিন ধরনের ক্রিকেটেই সমান তালে তাঁর জাদু দেখিয়েছেন এবি ডি ।  তাঁর নানান ধরনের শটে মুগ্ধ ক্রিকেট বিশ্ব। একি সাথে সাহসী, আগ্রাসী, আর সৃষ্টিশীল ব্যাটসম্যান ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছে খুবি কম।

 

তিন ধরনের ক্রিকেটে সমান ভাবে তিনি রানের বন্যা বইয়েছেন, সুন্দর ব্যাটিং এর পশরা  সাজিয়েছেন। আজ এই শেষ বেলায় এসে তিনি হয়ত কিছুটা ক্লান্ত। ভুলে গেলে চলেনা যে একজন ক্রিকেটার এর ও একটা ব্যক্তিগত জীবন থাকে,যে জীবনে থাকে পরিবার,ভালোবাসা। ক্রিকেট কে এত কিছু দেওয়ার পর এবিডি  ক্লান্ত হতেই পারেন। কারন তিনি যখন মাঠে নামেন সর্বোচ্চ টা দিয়েই খেলেন,দলের জন্যে,দেশের জন্য । ২৩ মে,বুধবা্‌র ২০১৮ ! টুইটারে বার্তার মাধ্যমে এবিডি সকল ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কে বিদায় জানালেন । শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ই নয়, এবিডি বিদায় জানিয়েছেন  ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট কেও।হয়ত আর কিছুদিন খেলতে পারেন । দক্ষিন আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে টাইটান্সের হয়ে। স্পষ্ট ভাবে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন এখানেই থামছে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের রথ। নিজের অবসরের ঘোষনা দেওয়া এবি ডির বিদায় বার্তা জানানো ভিডিওর উচ্চারিত প্রথম দুটি শব্দ ছিলো “আমি ক্লান্ত” ।  তিনি সবাকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেছেন, তাঁর এ ঘোষনা তাতক্ষনিক ভাবেই কার্যকর হবে।

 

৭৮ টি টি-২০  , ২২৮ টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবং ১১৪ টি টেস্ট খেলা এবি ডির মনে হয়েছে , এবার সময় হয়েছে হাল অন্য কেও ধরার  ।টি ২০ তে ৭৮ ম্যাচে ২৬.১২ গড়ে রান করেছেন ১৬৭২ । সর্বোচ্চ রান ৭৯ । শতক নেই। ৫০ আছে ১০ টি । ওয়ানডেতে ২২৮ ম্যাচে ৫৩.৫০ গড়ে রান করেছেন  ৯৫৭৭ । সর্বোচ্চ ১৭৬শতক হাকিয়েছেন ২৫ টি অর্ধশতক ৫৩ টি। টেস্টে ১১৪ ম্যাচে ৫০.৬৬ গড়ে রান করেছেন ৮৭৬৫ টি । শতক হাকিয়েছেন ২২ টি , অর্ধশতক ৪৬ টি।

 

এবিডি এখন ক্লান্ত, হয়ত এখনো তাঁর ক্রিকেট কে আরো কিছু স্বপ্নিল হৃদয় ছুয়ে যাওয়া খেলা উপহার দেওয়ার সামর্থ আছে। তবে তাঁর অবসরের ঘোষনায় যুক্তিও আছে। ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই নতুন কে সুযোগ করে দেওয়াটাই হয়ত একজন সত্যিকারে টিম  প্লেয়ারের কাজ । তবু ও ভক্তদের হৃদয় মানছে কই! আগেই আভাস ছিল তিনি কয়েক টি ফরমেট থেকে অবসর নিবেন,তবে এভাবে সব ফর্মেট কে একসাথে বিদায় জানাবেন এটা হয়ত কারো কল্পনাতেও ছিলোনা। তিনি বেশি টাকার জন্যে খেলে বেড়াবেন এমন টাও নয়।  ঘরের গন্ডিতেই নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চান এবি। তাই বলতে হয় আইপিএলের ভাগ্যে শিকে ছিড়বেনা। তবে তাঁর আইপিয়েলে (IPL) খেলার বিষয়টা এখনো ধোয়াশার মধ্যেই আছে। সময় বলে দিবে সব কিছুর উত্তর। সবকিছুর একটা শুরু আর শেষ থাকে। এখানেই এবি থামছেন। গোটা বিশ্বের ক্রিকেট ভক্ত আর দক্ষিন আফ্রিকার ভক্তদের জানিয়েছেন তাদের জন্যে তাঁর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার কথা। এবির কথার সূত্রে বলা যায় ঘরোয়া ক্রিকেটের টাইটান্সের হয়ে খেলে যেতে তিনি ইচ্ছুক, তবে দেশের বাইরে আর নয়, আইপিএলে হয়ত এটাই তাঁর শেষ বছর। তাকে বিদায় জানানোটা কষ্টের , আরো কষ্টের যখন তিনি তাঁর ক্যারিয়ারের ভালো সময়ের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছেন। তাঁর সেই মন ভুলানো,  নজর কাড়া ক্রিকেটের নিত্যনতুন শট ক্রিকেট প্রেমীরা মিস করবে বলে দেওয়াই যায়।এবিডি জানিয়েছেন ফাফ দু প্লেসিস আর প্রোটিয়াদের বড় ভক্ত হয়েই থাকবেন তিনি আজীবন। এবিডি আজীবন দলের জন্যে ভালোটাই কামনা করবেন, দলের পাশে থাকবেন।তবে  দেশের হয়ে খেলাটাকে  এবিডি ও মিস করবেন এটা বলাই যায়। এবি জানিয়েছেন তিনি দক্ষিন আফ্রিকার কোচদের কাছে কৃতজ্ঞ ।আসলে সময়ে সময়ে ডি ভিলিয়ার্স এর বিরতিটা লাগছিলো ইদানিং । খেলার জন্যে এদেশ ও দেশ ছোটা ছুটি আর তাঁর শরীরে সইছিলোনা।এটাই হয়ত তাই কাল অনুযায়ী সীদ্ধান্ত ছিল এবির। ফর্মের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় চলে গেলেন অবসরে । ভক্তদের মনে আক্ষেপ রেখে গেলেন এবি । আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটের তুলির আঁচরে  মাঠের সবুজের মাঝে তাঁর ৩৬০ ডিগ্রী শট গুলো আর দেখা যাবেনা , আর এবিডি ঝর তুলবেনা ২২ গজে। এবিডি এটাই চেয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর যেন ঘরোয়া ক্রিকেটে আরো কিছুদিন তিনি খেলে যেতে পারেন। ভারত ও অস্ট্রেলীয়া বধের পর পরি অবসর নেওয়া হয়ত তাই এবি ডির ভালো একটি সীদ্ধান্ত।

অবেলায় তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে  চলে গেলেন, ক্রিকেট বিশ্বের তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার নেই। অনেক ক্রিকেটার অবসরে সীদ্ধান্তের পর আবার ক্রিকেট আঙ্গিনায় ফিরে এসেছে। তাই এবি ডির ভক্তরা আশা করতেই পারে। তবে আপাতত এবি ডি ডিভিলিয়ার্স এর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কে বিদায় বলার সীদ্ধান্তকে মেনে নিতেই হচ্ছে।  চোখের সামনে ভেসে আসে এবির হাওয়ায় উড়ানো বল, সীমান ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে। এবির ৩৬০ ডিগ্রী শট গুলো খুব বেশি মনে পরছে, তাকে বল করতে গেলে বোলার রা মাঝে মাঝেই দিশা হারিয়ে ফেলতেন। তাঁর ব্যাটিং দেখে এমন টা মনে হওয়া অপরাধ নয়, যে যেখানেই বল ফেলা হোক না কেনো এবি সেটা কে ছক্কা বানিয়েই ছাড়বেন।  কিন্তু, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ক্রিকেটের রাজপুত্রকে আজ বিদায় জানাতে হচ্ছে। সাল ২০০৪।ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছিলো এবিডির। মাঠ টাও স্মরনীয় হয়ে থাকলো ,হ্যা পোর্ট এলিজাবেথের কথাই বলছি।সে যাত্রা থামলো ২০১৮ তে এসে, হঠাৎ করেই। আর বন্ধুদের সাথে জম্পেশ আড্ডায় বসে দেখা হবেনা এবিডির জাদু। ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।  এবিডি ব্যাটিং এ নেমছে, শুনেই বসে যাওয়া হবেনা আর টিভির সামনে। টাইটান্সের হয়ে খেলার সময় বা ঘরোয়া কোন দলের হয়ে খেলার সময় তাঁর শট দেখে আবার মন খুশি হয়ে উঠবে। হয়ত তাকে দেখে আবার আক্ষেপ ও হবে। আহ কি হারালো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এখন অনেকের মত আশা করতেই পারি এবিডি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসবে। এবির শেষ ম্যাচের সাক্ষী হয়ে রইলো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা জোহান্সবার্গের টেস্টা টা।  ক্রিকেটের তিন ফর্মেট মিলিয়ে তাঁর ছক্কা ৩২৮ টি ।

ছোট বেলায় এবি টেনিস , রাগবি আর গলফ ও ভালো খেলতেন।হতে পারতেন অন্য কিছু  অথবা বাবার মত ডাক্তার হয়েও যেতে পারতেন, ফলাফল বেশ ভালই ছিলো ইশকুলের ফাইনালে।   না, সে সবের দিকে গেলেন না এবি, সব পিছনে ফেলেন চলে এলেন ক্রিকেটের ২২ গজে। ভাগ্যিস এসেছিলেন। না হলে যে ক্রিকেট বিশ্ব ক্রিকেটের এক রাজপুত্রের দেখা পেতনা।  বিদায় এবি ডি ভিলিয়ার্স। ভালো থেকো ক্রিকেটের রাজপুত্র।

রেফারেন্স: 

১. bn.wikipedia.org

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন