নিশির ডাক

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

সময় টা ছিল গ্রীস্মকাল। সবে মাত্র নবম শ্রেনির ক্লাস শুরু হয়েছিল। শহরে থাকতাম, কিন্তু বাবা রা কয়েকজন একসাথে এক্সিডেন্ট করলো,  মেজ আব্বু এই ঘটনায় মারা গেলেন। এর পর থেকে জীবন টা বদলে গেলো। হঠাৎ করেই তল্পিতল্পা গুটিয়র গ্রামের স্কুলে ভর্তি হলাম। মন বসছিল না সেখানে। হয়তো কিছুটা মনস্তাত্বিক চাপেই ছিলাম সব কিছু মিলিয়ে। তাই  ঘটনা টা ঘটল। এখন একে মতিভ্রম বলবেন,নাকি নিশিতে পাওয়া বলবেন সে আপনাদের ব্যাপার। রাতে প্রায় ঘুম হত না গ্রামে গিয়ে। বাইরে বসে থাকতাম, গল্প বই পড়তাম,বিদ্যুৎ না থাকলে হারিকেনের আলোয় বই পড়তাম। এমনি একটা রাত ছিল। গল্পের বই টা নামিয়ে রেখে ঘুমাতে গিয়েছিলাম মনে আছে।

ঘুম ভেঙ্গে গেলো হঠাৎ করেই। দেওয়াল ঘড়ি টার দিকে চাইলাম। সময় টা দেখেও কেন জানি দেখলাম না। জিনিশ টা এমন যেন  একতা গাড়ি আমার দিকেই আসছে , আমি দেখলাম, কিন্তু দাঁড়িয়ে রইলাম। সরে যাওয়ার স্বাভাবিক বুদ্ধি আসলোনা। একেই বোধয় ব্রেন ফেড বলে। যাক , ঘড়ি দেখে আবার বিছানায় গেলাম। শহরে গরম লাগলেই গোসল করতাম। হয়ত তেমন টাই ইচ্ছে হলো।   আলনা থেকে আলগোছে তোয়ালেটা তুলে নিলাম। ঘরের দরজার ছিটকিনি খুলে, খালি গায়ে, লুঙ্গি পরে, গামছা টা কাধে নিয়ে হাটা দিলাম পুকুরের দিকে। পুকুরটা বাড়ি থেকে বেশি দূরে ছিল না, একটু ঘুরে যেতে হত। আর পুকুরের চার দিক টা ছিল বিভিন্ন বড় বড় গাছে ঘেরা। চাদের আলো ছিলো বেশ, কিন্তু আমি যেন কিছুই চিন্তা না করে যন্ত্রের মত হাটা  দিলাম। কয়েকটা কুকুর ডেকে ঊঠলো। আমি কিছুই তেমন চিন্তা করছিলাম না, যেন এত রাতে পুকুরে যাওয়া টাই স্বাভাবিক । পুকুরে গিয়ে তোয়ালেটা ঘাটে রাখলাম। তাঁর পর কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে পানিতে নেমে গেলাম। সব বুঝতে পারছিলাম, রাত গভীর এটাও মাথায় ছিল, ঘড়িতে রাত ২.২৫ বা ৩০ দেখেছিলাম তাও মনে ছিল। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু এসে যায় না।একেই কি নিশিতে  পাওয়া বলে! আমি একটা সময় সাঁতার কেটে পুকুরের ঠিক মাঝখানে গিয়ে থামলাম। কয়েকটা ডুব ও দিলাম।

আচমকা , কিছু একটা সম্ভবত বড় কোন মাছ ই হবে আমার পায়ে জোর ধাক্কা দেওয়ায় আমার যেন বাস্তব জ্ঞান হলো। হঠাৎ করে মনে হলো আমি কোথায়! সব মনে পড়লো, এতক্ষন যে অনুভুতি টা ছাড়া অন্য সব অনুভুতি ছিল সেটাই এবার আমাকে পেয়ে বসল। ভয়!চাঁদের আলোয় অপার্থিব লাগছিল হঠাৎ সবকিছু।পুকুরের গভীর পানির নিচে সব কালো , মনে হচ্ছিলো, ঘাপ্টি মেরে সেখানে বসে আছে কেও, এই বুঝি নিচে থেকে কিছু একটা উঠে আসলো বলে! শিরদাড়া বেয়ে একটা ভয়ের শিহরন খেলে গেল। পুকুরের নিচে দেও দানোর কথা শুনেছিলাম, হাস্যকর সব মন্তব্য মনে হত ওসব। কিন্তু তখন মনে হচ্ছিল এই বুছি বুড়ো আঙ্গুলে চুল পেঁচিয়ে টান দিল। সাঁতার দিয়ে পারে পৌছানোর  জন্যে মনটা আকুলিবিকুলি করছিল।কিন্তু পা নাড়াতেই পারছিলাম না, হাতের জোড়ে ভেসে ছিলাম। ভয়েই পা টা জমে গিয়েছিল বোধয়। ভয়ে জমে যাওয়া কাকে বলে সেই প্রথম বুঝলাম। শেষ পর্যন্ত চিন্তা করলাম, মৃত্য থাকলে তো হবেই, কিন্তু এভাবে ভেসে থাকার মানে হয় না ,মাঝ পুকুরে গভীর রাতে! চোখ বন্ধ করে সাতার দিলাম, মনে মনে ভাবছিলাম , এখন দিনের বেলা, এখন দিনের বেলা। পায়ে মাটি ঠেকতেই বুঝলাম পারের কাছে এসে পড়েছি। উঠে কোন দিকে না তাকিয়ে হাটা দিলাম। পুকুরের ঘাট দিয়ে উঠার সময় মনে হচ্ছিল, মাঝ পুকুর থেকে কেও তাকিয়ে আছে। দৌড় লাগানোর ইচ্ছা থাকলেও , দিলাম না। কারন দৌড়ালে শুনেছি আরো বেশি ভয় লাগে।  চাঁদের আলোটাও যেন কমে গেলো, কয়েকটা কুকুর তারস্বরে চিৎকার করছে। এর মাঝে পথ করে আমি হাটছিলাম। বাড়ির দরজা চোখে পড়ার সাথে সাথেই দৌড়, খালি মনে হচ্ছিল পেছনেও কে জানি দোউড়াচ্ছে। দেখার ইচ্ছে হলো, কিন্তু পেছনে ফিরে তাকালাম না, অতি কৌতুহল ভালোনা। দরজায় পৌছেই দরজা খুলে ঢুকে গেলাম। খোলাই ছিল। এত রাতে কে উঠবে ।

সকালে ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে। উঠেই রাত্রের দুঃস্বপ্নের কথা মনে পড়লো। কি  ভয়ঙ্কর স্বপ্ন ছিল। হাই তুলে বাইরে এসে দাড়ালাম, পরিচিত একজন এগিয়ে আসছিল, তাকে দেখেই জীবনের সেরা ভয় , বা ডর যাই বলিনা কেনো, আমাকে ঘিরে ধরেছিল। লোকটার হাতে আমার তোয়ালে, রাতে যেটা নিয়ে গিয়েছিলাম ঘাটে। আদিম ভয়ের একটা শিহরনের সাথে সাথে মাথায় একটা প্রশ্নই আসছিল।   কেন গিয়েছিলাম ! কেন যাওয়ার সময় মাথায় কিছু কাজ করেনি! আবার ভয়ের শিহরন লাগলো, মধ্য পুকুর আর তাঁর চার পাশ ঘিরে থাকা গাছ গুলোর অন্ধকারের লুকিয়ে থাকা্র কথা মনে করে। এর পর থেকে আর আগের মত পুকুরে সাঁতার এর মজা পাইনি অনেক দিন। সাঁতার কাটার সময় খালি মনে হয় পেছনে কে জানি সাঁতরায়।  তবে সময় অনেক কিছুই ক্ষতই নিয়ারাময় করে। এখন ধীরে ধীরে পুকুরের প্রতি লোভ টা আবারো বেড়েই চলছে। দেখাই যাক না কি আছে রাতের পুকুরে ঠান্ডা জলের নিচে। অবশ্য এত রাতে আর কখনো নামিনি পুকুরে ।আবার যদি নিশি্র ডাক আসে, হয়ত যাওয়া হবে। ঢাকা শহরে অবশ্য নিশি ডাকলেও পুকুরে যাওয়ার উপায় নেই। পুকুরের বড় অভাব বৈকি! রাতের অন্য ঘটনা অবশ্য আছে। সেটা আরো দীর্ঘ, , পরে একদিন লিখবো।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন