ঈদ আনন্দ ও জলাতঙ্ক

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

সেদিন ঈদ ছিল,যে দিন টার কথা আজ বলব। কত সালের ঈদ মনে নেই । হবে হয়ত ,কোন এক কালের  ঈদ। কালের গহ্বরে যে কাল হারিয়ে গেছে। বলছিলাম ঈদের কথা। এর আগে “কাল” নিয়ে কিছু বলতে চাই, কিছু লিখতে চাই।  “কালের” গর্ভে যার জন্ম তাকে ‘কালের ‘ গর্ভেই হারাতে হয়।  কেও একটা পরিনত বয়সে হারায় সে গর্ভে, কেও বা কালের গর্ভে হারিয়ে যায় অকালেই। তবে এখন  না হয় তখন বা কোন একদিন এই কাল সবাইকে গিলে খাবে। তখন হয়ত কালে আবর্তে আমাদের কৃত কর্ম আমাদের জন্যে কাল হয়ে দাঁড়াবে। যাক কাল নিয়ে অনেক বলা হলো, ফিরে যাই সে কালের কথায়, হ্যা সেদিন ঈদ ছিল।

ঈদের চাঁদ দেখার সাথে সাথে আমরা যেনো হাতে ঈদের চাঁদ হাতে পেয়েছিলাম।  রাত কেটেছিল ঘুমহীন। আমরা ছিলাম অনেক জন। যৌথ পরিবারে বড় হয়ে ওঠায় সহযোদ্ধার অভাব ছিলোনা।   আমি মিজবাহ, হিমেল, আরাফ, জোবায়ের একসাথে ঘুমাতাম। মিজবাহ অবশ্য মাঝে মাঝে তার রুমে চলে যেত , হয়ত একটু শান্তির ঘুমের জন্যে। কারন একসাথে থাকলে ঘুম কম গল্প হয় বেশি।  ইহাব ভাই কে দেখা যায় রাতে আর বিকেলে। সকালের বেলা তার ঘুমের ঘোরেই কাটে, মাঝে মাঝে অবশ্য সকালেও দেখা হয়।

ঈদের আগের দিন রাতে যথারিতি দেরিতে ঘুমাতে গিয়েছিলাম।    জেগে উঠলাম বড়দের হাক ডাকে। হাক-ডাকের কথা আসলেই বলতে হয় দাদা ভাই ,মানে হিমেলের আব্বুর কথা। তিনি আবার খুব আনন্দ প্রিয় মানব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ।  ঈদের দিন সবাই খুব ভোরে উঠে ,গামছা নিয়ে পুকুরে গেলা। পুকুর কে আমি মজা করে পুস্কুনি ও বলি। আমি অবশ্য গামছা নিলাম না। এত জন আছে কেও না কেও তো নিবেই। কি দরকার গামছার বোঝা বইবার!  ঈদের নামাজে তখনো ভুল হত । কয় তাকবির কতবার, কোন সময় পরতে হবে এটা নিয়ে মনে দ্বিধা কাজ করত, সেখান থেকেই ভুলের উৎপত্তি ।

ঈদের নামাজের পর যথারিতি বাড়ি ফিরলাম। কোলাকুলি চলছে, আমি এর মাঝে হেটে গেলাম আমাদের বাড়ির সদর গেইট এ। খুব আনন্দ হচ্ছে, ঈদের আনন্দে বাতাস টাও যেন অনেক নির্মল লাগছে। গেটের কাছে দেখলাম  একটা জটলা।

একজনব কে জিজ্ঞেস করলাম …

-ভাই কি হয়েছে?

-একটা মানুষ ,পাগল মনে হয়, রাস্তায় পরে আছে,জলাতঙ্ক হইসে মনে হয় ভাই।

-সবাই কি দেখছে? কেও তাকে হাসপাতালে নিচ্ছেনা কেনো?

-আরে ধরতে গেলে সে যদি কামড় বা আচর দেয় সবার এ রোগ হবে।

 

আমি এগিয়ে গিয়ে দেখলাম, হাত পায়ে বিচ্ছিরি ঘা লোকটার।  খবর নিয়ে জানতে পারলাম, এই লোকের এক ছেলে আছে। কিন্তু অসুস্থ বাবা কে  সে আর ঘরে রেখে খরচ নাকি বারাতে চায়না। হে খোদা, এ কেমন দুনিয়া। পরে ইহাব ভাই, হিমেল, আরাফ,মিজবাহ রা আসলো। বড়রা সহ অনেকেই লোকটাকেসরিয়ে দিতে বলল। আমরা বললাম হাসপাতালে নেওয়া দরকার।  আমরা রিতিমত বিবাদে জড়িয়ে পরলাম। আমি আব্বুর সাথে তর্কে গেলাম বিষয় টা নিয়ে। আব্বু রেগে ছিল। আমিও দমে যাওয়ার পাত্র নই।

 

আব্বুর সাথে যুক্তি-তর্ক শুরু হয়ে গেলো।আমি বললাম…

 

– লোকটাকে এভাবে ফেলে রাখা যায় না।

-তো তুমি কি করবা,তুমি ছোট ,বড়দের কথা শুনলেই তোমার ভালো ।

-ফেলে দিয়ে আসতে বললে লোকটাকে ফেলে দিয়ে আসবো?

     -ফেলে আসতে কে বলসে,সরাইতে বলসে।

 -সরানো আর ফেলে আসা এক কথা।

 -তো কি করবা, কি করতে পারবা?

    -আমরাই ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাব।   

  -তোর যা মন চায় কর।আমাকে আর কিছু বলবিনা (আব্বু রেগে বললেন)

 

  -আচ্ছা(আমি হেসে বললাম)

পরে লোকটাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম নাকি মনে নেই। তবে ইহাব ভাই সহ আরেকজন লোক্ টাকে ধরে অন্যত্র সরিয়ে গাছের ছায়ায় রেখেছিল মনে পরে।  লোকটা মৃত্যু সাথে লড়ছিল। লোকটাকে অন্যত্র দিয়ে আসা হলো রৌদ্রের তাপ থেকে বাঁচিয়ে । মনে হচ্ছিল এত টুকুই যেন এ সমাজের দায় ! পরে শুনেছিলাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।  অনেকে বলেছিল, হাসপাতালে নিতে নিতে লোকটা মারা যায়। আমি বাড়ির পেছন ঘুরে আম্মুকে কথা গুলো বলে আসতে আসতে লোকটাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। লোকটা আজো বেঁচে আছে নাকি আমি জানিনা। তবে সেদিন ঈদ ও মানবতার দ্বন্দে পরে  আমি ঈদের খুশিটা গায়ে লাগিয়ে ঘুরতে পারিনি।

সারাটা দিন জলাতঙ্ক এ আক্রান্ত এক লোকের চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠত।  যার মনে হয়ত ছিল বাঁচার আকুতি , ক্ষীন হলেও হয়ত তাঁর বাঁচার আশা ছিলো। সবার ঈদ আনন্দে হয়ত সেই আশারো মৃত্য হলো।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন