আমার বিয়ে ও প্রেম-কথা

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

কিছু গল্প হৃদয় ছোঁয়ানো হয়। তাতে থাকে হাসি, কান্না, সুখ আর দুঃখ সমপরিমাণে।কারো ভালো লাগে আর কারো তিক্ততা…….

 

রবি ছিলো এক দুরন্ত ছেলে।গ্রামের ধরাবাঁধা নিয়মে থাকতে চেয়েছিলো সে। ভাগ্যের অন্বেষণে ইন্টার পাশ করেই ভর্তি হলো জেলার এক নামকরা অনার্স কলেজে। কিছুদিন বাদে সে চলে গেলো তার কলেজে পড়াশোনার জন্য। বাড়ি ছেড়ে থাকতে মন না চাইলেও বাড়ির উৎসাহে বাইরে থাকা শুরু করলো।নতুন পরিবেশ নতুন সবকিছু ভালোই চলছিলো। মায়ের বান্ধবীর বাসায় থাকতো, মেসে থাকলে কষ্ট হবে। উদ্বোধনী ক্লাশের দিন ক্লাশে ঘটে গেলো একটি ছোট্ট ঘটনা। বোরকা পরিহিতা এক মেয়ের সাথে ফাজলামির ছলে ঝগড়া বাঁধিয়ে ফেললো সে। মেয়েটি মুখ ঢাকে নি, তাই রবি তিরস্কার করেছে তাই নিয়ে ঝগড়া। পরদিন মেয়েটি কলেজে আসে কিন্তু রবিকে দেখে ক্লাশ না করেই বেড়িয়ে যায়। বাড়িতে গিয়ে মেয়েটি বলতো একটা বাজে আর ঝগড়াটে ছেলের কথা। এভাবেই চলতে থাকে সবকিছু।কে জানতো এই ঝগড়া একদিন বদলে যাবে ভালোবাসায়?……

 

রবি তার মত করে চলছিলো, বন্ধু বান্ধব আর হইহুল্লোরের মাঝেই। দেখতে দেখতে ফাস্ট ইয়ার পরিক্ষা শুরু হয়ে গেলো। রবি আবিষ্কার করলো সেই মেয়েটি তার পেছনে বসেছে। একই ডিপার্টমেন্ট আর রেজিষ্ট্রেশন একই সিরিয়ালে! সারা পরিক্ষায় কোন কথা হয় নি। ঝগড়া হয়েছিলো বলে কেউ কাউকে দেখতেই পারতো না। তারপর একদিন নতুন করে মেয়েটির সাথে পরিচয় হলো বাদশা(ছদ্ম) নামক এক বন্ধুর মাধ্যমে। ঝগড়া থেকে বন্ধুত্ব হলো মেয়েটির সাথে। তুমুল বেগে চলতে থাকলো তাদের বন্ধুত্ব।পাঁচজন সহপাঠী একসাথে কোচিং করে সবার মাঝে।এর মাঝে ২০১৫ এর নভেম্বরে একটি ঘটনায় রবি মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো। মাথায় আঘাত পাওয়ার পর সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। রবি লালমনিরহাটে গিয়ে অনেককেই চিনতে পারছে না। কোচিং জীবনের দুই মাসের অনেক স্মৃতি মনে নেই, কিন্তু সবাইকে মনে আছে।সব ঘটনাই আবছাভাবে মনে পড়ে, কিন্তু কেমন ঘুণেধরা। এদিকে তার বান্ধবী, ও হ্যা, মেয়েটির নাম বলা হয় নি, নাম ছিলো বৃষ্টি। সেই বৃষ্টির সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ চলতেই থাকলো। এত সুন্দর বন্ধুত্ব সেই বাদশা নামের বন্ধুটি মেনে নিতে পারলো না। তাই ছল বের করে রবির সাথে ঝগড়া করে বসলো বাদশা। এই ঝগড়ার মধ্যেই রবি আর বৃষ্টি বুঝতে পারলো তারা দুজন দুজনের প্রতি এক অজানা বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছে। তখনো কেউ কাউকে প্রপোজ করেনি। ২০১৬ এর ১২ ই ফেব্রুয়ারি দুজন দুজনকে একই সময়ে বলে ফেললো সেই কথা। চলতে থাকলও তাদের বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা। এদিকে তাদের অনার্স সেকেন্ড ইয়ার পরিক্ষার সময় হয়ে এলো। তাদের মধ্যে শত্রু হয়ে দাড়ালো বন্ধু বাদশা। তাদের এই ভালোবাসার কথা বৃষ্টির বাড়িতে বলে দিলো।আর সেই সাথে শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়……….

 

রবি পরিক্ষা চলাকালীন প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। বৃষ্টির সাথে কোন ভাবেই যোগাযোগ নেই।তার বাড়িতে ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র পরীক্ষার দিন গুলোতে তাদের দেখা হয় কিন্তু কথা হয় না।রবি আবিষ্কার করলো সে ভাত খেতে পারেনা, ভাত দেখলেই সে বমি করে। রবির মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা হতো, শেষমেশ ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিলো। রবি জানতো না যে অপরদিকে বৃষ্টিও একই পথের যাত্রী। রবিকে তার বাসার ভাবি খাওয়াতে পারতো না, হাটতে পারতো না,সারাদিন ঘরে শুয়ে থাকতো সে। এমন অসুস্থ আবস্থায় তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো। বাড়িতে সব জানাজানি হওয়ায় তার মমতাময়ী মা-বাবা আর দেবতুল্য ভাইরা এ সম্পর্ক মেনে নিলেন। কিন্তু মানলো না বৃষ্টির পরিবার।১১ ই জুন রাতে রবি খবর পেলো রাতে বৃষ্টির বিয়ে, সে দিশেহারা হয়ে গেলো। কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না। সে বাড়িতে প্রচণ্ড অসুস্থ আবস্থায় পড়ে আছে,রাত হতে হতেই সে ঢলে পড়লো বিছানায়……….

 

আজ ১২ ই জুন, সকালে বৃষ্টি বাড়ির সকল বন্ধন ছিন্ন করে ছুটে এসেছে রবির কাছে, রবিও সকল অসুস্থতা কে পেছনে ফেলে ছুটে এসেছে বৃষ্টিকে আপন করে নেবার জন্য। রাতে রবি বৃষ্টির এমন সংবাদে আর থাকতে পারেনি বাদশা, দুজনকে এক হতে সাহায্য করলো সে। সারাদিন অনেক পরিশ্রম করে কোর্টকাছারির মাধ্যমে দুজনের হাত এক করে দিলো বাদশা। ফিরে আসার সময় বিপদে পড়ে গেলো তারা দুজন। বৃষ্টির ভাইয়েরা হন্যে হয়ে ছবি হাতে তাদেরকে খুজছে।শেষমেশ তারা বাধ্য হয়ে বর্ডার দিয়ে আরেক বন্ধুর বাড়িতে চলে গেলো। সিমান্ত এলাকায় নওদাবাসে পাশার মামার বাড়ি আছে। সেই মামার বাড়িতে তারা ঘন্টা কয়েকের জন্য বিশ্রাম নিলো। এদিকে রবির ফোন ট্রেস করা হয়েছে। আর তাদেরকে ধরার জন্য সামনের ষ্টেশনে লোকজন অপেক্ষা করছে। পাশার মামা বুঝতে পেরে একটা বুদ্ধি করলেন। তারা তিনটি মোটরসাইকেলে করে সবাই হেলমেট পড়ে আসলেন। রবি সামনের গাড়িতে আর বৃষ্টি পেছনের গাড়িতে করে আরো তিনটি মোটরসাইকেল সহ মোট পাঁচটি গাড়ি চললো ষ্টেশন মুখে।কিছুক্ষণ বাদে ট্রেন আসলে তারা ইশারায় ট্রেনে চড়ে রওনা দিলো বুড়িমারীর উদ্দেশ্যে। সেখানেই সকলের উপস্থিতিতে তারা ধর্মীয়রীতি তে বিয়ে করলো। আর শুরু হলো দুটি হাত ধরে দুজনের আজীবন পথচলা……………….

পুনশ্চঃ

 

আজ ১২ই জুন ২০১৮,সাঈদ আল রবি(Rsp Robi)এবং রহিমা খাতুন বৃষ্টি(Rsp Bristy) র ২য় বিবাহ বার্ষিকী। আমরা দুজন ২০১৬ এর ১২ ই জুন বিয়ে করেছিলাম। সুখে দুঃখে আমার পরিবার এসে আমাদের পাশে দাড়িয়েছে। এত বড় ভালোবাসার অপরাধীদের নতুন করে বাঁচতে দিয়েছে । রবি আর বৃষ্টিকে সবাই বুকে আগলে রেখেছে। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন, আমরা যেন আজীবন সুখে দুঃখে একসাথে থাকতে পারি এবং আমরা আমাদের কাংখিত স্থানে যেন পৌছাতে পারি

 

rsp robir আরো লেখা পড়তে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে

                        ছেলেবেলার গল্প 

                     শালী ও পাঁচমিশালী

 

 

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

1
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

1

মন্তব্য করুন