এত বছর পরে বিয়ের ঘটনা ঠিক সে ভাবে মনে থাকেনা। যদিও কিছু কথা মনে আছে এখনো। বিয়ের আগে তাকে যেদিন প্রথম দেখি সেই দিনের কথা মনে আছে। সে যুগে এযুগের মত এত দেখাদেখির চল ছিলনা। মা বাবা পাত্র পাত্রি ঠিক করতেন, অনেক ক্ষেত্রেই সেটাই শীরোধার্য হত। বলছিলাম, বিয়ের কথা। বিয়ের এক সপ্তাহ আগে থেকেই ঝামেলা শুরু হলো। আত্মীয় স্বজন এসে বাড়ি ভর্তি। আমি কিছুটা চিন্তায় ছিলাম, এতদিন নিজের মত চলতাম এখন আরেক জনের সাথে জীবনটাই ভাগ বাটোয়ারা করতে হবে। বিয়ের দিন যত ঘনিয়ে আসছিল তত চিন্তা বাড়ছিল। সেলিনার ও নিশ্চই আরো বেশি চিন্তা হচ্ছিল। যথারিতি শুক্রুবার সবাই বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য যখন প্রস্তুত,সে দিন ই বিধাতা বিমুখ হলেন। সকাল থেকে লাগাতার ঝড়-বৃষ্টি। আরে এত কিছুর পর কিনা ঝড়ে বিয়েটা পন্ড হবে। যারা বিয়ে তে অংশ গ্রহন করার কথা অনেকেই আসতে পারলোনা। ঝড় বৃষ্টির এক দুপুরে তথাপি কনে আর বরের মুখ দেখা দেখি হলো। সে সময় তো আর এ সময়ের মত ছিলনা। সে প্রথম দেখা আর ভালো লাগা। তার চেহারা আনত ছিল, আমিও লজ্জায় অবনত মস্তকে ছিলাম। যে কাজির আসার কথা সে আর আসেনা।
চারদিকে ঝড় চলতেই থাকে, যদিও বা কমে আবার হালকা বেগে শুরু হয়। আমি অবশ্য পরিবেশ টা বেশ উপভোগ করেছিলাম। পরে সেলিনার মুখ থেকে শুনি উপভোগ করাতে সেও কম যায় নি। আসলে হয় কি – বর আর কনের বিয়ের ব্যবস্থার চাইতে নিজেদের অবস্থান নিয়েই চিন্তিত থাকতে হয় বেশি। এর মধ্যে যারা আছেন তাঁদের মধ্যে একজন কাজি ছিলেন, বলা জায় হাফ কাজি, মাঝে মাঝে বিয়ে পড়িয়েছেন, তবে এটা তার আসল কাজ না। তাকে টেনে টুনে রাজি করানো গেলো। এর পর বিয়ের কাজ টা শেষ করার জন্যে সবার আবার দৌড় ঝাপ শুরু হলো। আর আমরা বসে বসে সে দোউড় ঝাপ দেখতে লাগলাম। এর মধ্যে কে জানি বলল মেয়ে তো সুন্দর না। সে নিয়ে আবার দুই পক্ষের মধ্যে একটা বিতর্কের ঝড় উঠলো। শেষ পর্যন্ত আমার বাবা শাহারিয়ার হক বিতর্ক টাকে যুদ্ধে পরিনত হতে দিলেন না। এর পর আর কি। বিয়ে টা হয়ে গেলো ঝুম বর্ষায়, বর্ষার সেই আওয়াজে সেলিনার কান্নার আওয়াজ চাপা পড়ে গেলো। সবশেষ এ পালকি এলো্ ,সবার হৈচৈ অবস্থা। পাল্কির পেছনে মানুষ ,সামনে মানুষ। কনে উঠলো, আমি প[শে হাটা দিলাম, এ যুগে আমার মনে হয়না এ দৃশ্য চোখে পড়বে আর । আজ এই বার্ধক্যে সে সময়ের স্মৃতি মনে আসলে কেমন জানি লাগে।
বিয়ে নিয়ে আরো লেখা পড়তে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে