একজন আওয়াল মামা -আর কিছু গল্প

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
Abdul_aowal, poet, student, HMMC

প্রথম পরিচয় তিনি একজন মানুষ, ভালো আর খারাপের মিশেলে আর দশটা রক্ত-মাংসের মানুষের মত। ডিপার্টমেন্টের এক বড় ভাই রাতারাতি হয়ে গেলে ডিপার্টর্মেন্টের মামা ।  কোন সময় তিনি সবার মামা হয়ে গিয়েছিলেন সে কথা মনে নেই, তবে তাঁর পরিচয় বড় ভাই থেকে বেশি মামা হিসেবেই ছিলো। মামার সাথে কথা হয়, দেখা, অনেক কথাই হয়ত লেখা যায়, কিন্তু সেসব কথা আমি বলবোনা , সেসব হয়ত একদিন মামা নিজেই লিখবে। আজ শুধু বিচ্ছিন্ন কিছু কথাদের একটা ছিন্ন মালায় রুপ দেব। অনার্স প্রথম বর্ষে অনেক বড় ভাই এর সাথে পরিচয় হয় ,তাঁর মাঝে তিনি একজন।

আওয়াল ভাই থেকে আওয়াল মামা হয়ে ওঠার পেছনে অবশ্য অবদান টা মিজির। তাঁর মামা হওয়াতে আমরা সবাই তাকে মামা ডাকা শুরু করলাম, কালের বিবর্তনে এখন  মামা কে মামু ডাকি। এই যে বিবির্তন এটা একদিনে হয়নি ,কয়েক বছরে সিনিওরদের সাথে জুনিওরদের যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো, সে সম্পর্কের গোড়াতেই মামারা ছিলেন।আমি বাস্তবিক ভাবেই অবিশ্বাসীদের দলে। মানে সহজে মানুষ কে  বিশ্বাস করতে পারিনা। সত্যি বই মিথ্যা বলিবনা। আওয়াল মামাকে নিয়ে বাকিদের জানিনা আমার গবেষণার অন্ত ছিলোনা।চিন্তা করতাম তিনি কেমন, তাঁর মনোভাব কেমন্‌, সমস্যা হচ্ছে এই বুঝতে বুঝতে চিন্তা করতে করতে মামার সাথে ধীরে ধীরে আড্ডা জমে গেলো।

কলেজে যখন উৎসবের রং লেগেছিলো, সেই রঙের মাঝে রঙ্গিন মামার দেখা পাওয়া যায়। আওয়াল মামার সাথে নুর ভাই, মামুন ভাই, আরো অনেকের সাথে ধীরে ধীরে পরিচয় হচ্ছিলো। মনে ভয় ছিলো, সংশয় ছিলো, ভার্সিটির বড় ভাই, আমাদের বোধয় পাত্তা দিবেনা, আবার চিন্তা করতাম নিজেই পার্টে চলি। পরে কোনটাই হলোনা, মাঝে এই হলো যে বড় ভাইরা ডাকলেই ছুটে যেতাম, একসাথে মিলে রাঙ্গিয়ে দিতাম কলেজের ভেতর-বাহির।

মানুষ হিসেবে আওয়াল মামা কেমন সেটা যাচাই করার ভার আমার নেই,চাইলেও পারবোনা, স্বয়ং নিজের অবস্থান কোথায় তাই জানিনা, আরেকজনের হিসেব কি করবো , তবে একজন বন্ধু হিসেবে তিনি ভালো, বলতেই হয়। একবারে কথা মনে পড়ে মামা এসেছিলেন কলেজের অনুষ্টানে, তখন ও কলেজ সাজানো বাকি, বড়ভাই,বোনদের সাথে মিলে আমরা ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের আরো অনেকে কাজ করছিলাম। মামা সাইকেল চালিয়ে আসছেন সাই সাই করে। এসে থামলেন  গেটের কাছে, মামার অনুমুতি নিয়ে সেই সাইকেলে চড়ে চলে গেলাম রং আনতে ।

কলেজের কাজে আরো রং এর প্রয়োজন ছিলো। চকবাজারে গিয়ে রং কিনতে গিয়ে ফিরতি পথে দড়াম! পড়ে গেলাম, এক বৃদ্ধ কে সাইড দিতে গিয়ে। মামার সাইকেলের, বডি স্ট্রাকচার এতটাই নড়ে গিয়েছিলো যে,সাইকেল আর নড়তে চাইছিলোনা।

আমি থোড় বড়ি খাড়া খাড়া,খাড়া বড়ি থোড় করে সাইকেল সোজা করলাম, এদিকে ঘেমে যাচ্ছি টেনশনে মামা আবার কি বলে। কিছুক্ষনের পরিশ্রমে সাইকেলের বাকা অংশ সোজা করে, রওয়ানা দিলাম। সাইকেল থেকে নামলাম, মামা দেখি গল্পে মেতে আছে ,আস্তে করে সাইকেল টা মামা কে ধরিয়ে দিলাম । এর পর অপেক্ষার পালা কখন তিনি চিৎকার দিবেন “এই আমার সাইকেলের এই অবস্থা কে করসে? এই কা চালাইসে?”  দূর থেকে লক্ষ্য করছিউলাম, নাহ মামা আর সাইকেলের ধারে কাছেও যায় না। সেদিন সাইকেল করে বাসায় যাওয়ার সময় বুঝেছিলো কিনা জানিনা , হয়ত হালকা আওয়াজকে সাইকেলের মেকানিজমের সমস্যা ভেবে নিশ্চিন্তে বাসায় গিয়েছিলেন। পরে দেখলাম তাঁর সাইকেল বহাল তবিয়তে দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছে। একদিন জিজ্ঞেস করেছিলা, মামা সাইকেল কেমন চলে, বললেন, –চলে মানে? দৌড়ায়এটা  নিয়ে এখানে-ওখানে-সেখানে গেলাম।  আর এটা শুনে নিশ্চিন্ত হলাম।

poet, recitation, Mohsin_college, HMMC

মামার কাব্যপ্রতিভার কথা না বললেই নয়। সবার ঝোক গল্প আর উপন্যাসের দিকে, কবিতার ঝোক কম সবার। আমি নিজে সে পথের পথিক হওয়ায় মামার কাব্যচর্চা দেখে আনন্দিত হয়েছিলাম। তাঁর কবিতা দেখে আমার কেনো জানি মনে হয় তিনি তাঁর না বলা কথাদের ভাষা দেন কবিতায়। কেও প্রেয়সীর জন্যে,কেও প্রিয় জনের জন্যে লেখে। মামার কবিতায় আমি খুজে পাই জীবনের কিছু না বলা গল্পদের। তাঁর একটা কবিতা এখানে সবার জন্যে দিলাম

“তোকে চিরদিনের মত জিতিয়ে দিব বলেই আস্তে আস্তে হেরে যাচ্ছি আমি….

যেদিন আমি সম্পূর্ণ হেরে যাব….

যেদিন তুই সম্পূর্ণ জিতে যাবি….

জীবন বরণ করবে তোকে বরণডালা সাঁজিয়ে…

অথচ একটা সময় ছিল,

যখন তুই বলতি, আমিই তোর জীবন।

এভাবেই জীবন হেরে যায় জীবনের কাছে….

  এভাবেই পদচিহ্ন মুছে যায় ধূলাবালি আর বাতাসের মিশ্রণে….”

 

(লিখেছেন -আবদুল আওয়াল ,৪/২১/২০১৮,চট্টগ্রাম)

 

স্টেইজে ওঠার ব্যাপারে আমি নিজে বিশেষ ভাবে দুর্বল। ঠকঠক করে পা কাপতে থাকে ,স্টেইজে ওঠার কথা শুনলেই। আর মামার দেখলাম সেই টেনশন গায়েই লাগেনা।  স্টেজে উঠেই কবিতার শুরু, এর মাঝে কিছু তাঁর নিজস্ব রচনার ও আছে। স্টেজে উঠে জান হুট করে, ক্যারেক্টারের পাট করতে করতে পড়ে জান ধুপ-ধাপ। সবাই তালি দিয়ে উঠে, আবার নেমে এসে জিজ্ঞেস করেন –কেমন হইসে?  

আসলে এই পৃথিবীতে এক একজন এক এক রকম । মামা তাঁর মত। তিনি সহজে কিছু বলে ফেলেন, সহজে মিশেন, সহজেই পর এর সাথে আপন হয়ে উঠেন, আবার ঠিক একি ভাবে আপন-পর হয়ে যায়।  তিনি সহজেই সবকিছু বলে ফেলেন তাই জায়গায় জায়গায় ব্যপারটা ভয়ের হতে পারে। অনেকে অনেক কিছু বলতেই পারে -তাঁর হঠাৎ কিছু বলে ফেলা, হঠাৎ আবির্ভাব আর হঠাৎ প্রস্থান নিয়ে , আর আবেগের বসে তাঁর বলা কিছু কথা নিয়ে কিছু মানুষের আক্ষেপ থাকতেই পারে ।

ঠিক একি ভাবে তাঁর এই ধুম করে বলে ফেলাটা, মানুষের সাথে মিশে যাওয়াটা ভালো লাগে অনেকের। অনেকেই তাঁর সাথে কথা বলে শান্তি পায় এই ধুম করে বলে ফেলার কারনেই । অনেকটা বন্দীদশার মাঝে মামার কথার লাগাম ছুটে গেলে শুনতে ভালো লাগে বৈকি!  

তাঁর নিজস্ব একটা জীবন আছে ।সে জীবনে পরিবার ,পরিজন আর প্রেম আছে। প্রেম দখিনা হাওয়ার মত, এই আছে এই নাই । মামার জীবনে কে আছে কে নাই, কে ছিলো, কিভাবে গেলো বা কিভাবে এলো,সেই হিসেব মামাই রাখুক, আমি বিচ্ছিন্ন মালাটা গাঁথি ।

আর হে ইদানিং মামার এক কামরার বাসাটায় আমার আর মাহামুদের বেশ কবার যাওয়া হয়েছে। মামা ব্যাচেলর এর জীবন বেঁছে নিয়েছেন অনেক আগেই, সেই ছোট বেলায়। কম বয়স থেকেই টিউশনিময় জীবনের শুরু। ঘর ছেড়ে বের হয়েছিলেন , তবে ঘরেরি আছেন,  ঘর ছেড়ে কোথায় বা যাবেন? তিনি যে বয়েসে টিউশনি করে খরচ চালিয়েছেন সে বয়সে অনেকেই ভাড়া করে করে সাইকেল চালিয়েছেন আর বাবার থেকে পকেট খরচ খুজেছেন, এই জায়গায় মামা একটু ব্যতিক্রম।

তাঁর জীবনের গল্পে ছেদ রেখা বা একটা কাটা দাগ তাঁর বাবার মৃত্যু । যেদিন শুনলাম খবরটা , খারাপ লাগলো ,যেতে পারিনি বলে। তবে এটা ঠিক বুঝেছিলাম বাস্তবতার মাঝে থাকা তিনি মৃত্যু যে কতটা বাস্তব ঠিক-ই বুঝবেন ।  মামার সাথে আবার আড্ডার অপেক্ষায় থাকলাম। মামার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি সব , ত আর একদিনে বলে চুকিয়ে ফেলা যায়না,কিছুটা থাক পরের জন্যে।

 (চলবে……)   

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

One comment on “একজন আওয়াল মামা -আর কিছু গল্প

  1. Pingback: দেখতে দেখতে ভার্সিটির বড় ভাই থেকে হয়ে গেলেন আমাদের নুর ভাই

মন্তব্য করুন