মৃত্যুর পয়গাম

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
death, মৃত্যু

তাঁর আসার কথা ছিলো রাতে। কিন্তু এলেন পরদিন সকালে । রোজার দিন তাই কথা বিশেষ হলোনা। চিন্তা করছিলাম কোথায় ছিলেন তিনি। এর মাঝেই ইফতারের আগে নাকি পরে মনে নেই।  হঠাৎ কথা উঠলো।

বললেন কালকে হঠাৎ এক ঘটনার কারনে আসতে পারেন নি। আমি জিজ্ঞেস করলাম কি সেই কারন । কত কিছু ভাবলাম,কিন্তু যেটা ভাবলাম না সেটাই উত্তর এলো।

তিনি বললেন “ যে বড় ভাইয়ের বাসায় দাওয়াত ছিলো ইফতারের তাঁর বাবা হঠাৎ মারা গিয়েছিলো” ।

একটু চমকে গেলাম কারন মৃত্যু ঘটিত কারনে যে লেট , সেটা একবারো মাথায় আসেনি। বাস্তবতায় এতটাই  মজেছি , কঠোর মৃত্যুর বাস্তবতা যে আমাদের প্রতি পদে পদে পাশে আছে তাঁর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।

বললাম , “কিভাবে?”

“একসাথেই  ইফতার করেছিলাম, এরপর বড়  ভাইয়ের বাবা হঠাৎ করেই মারা গেলেন’ ।

“কেও কি কিছু বুঝে উঠতে পারেনি?”

“ নাহ, তিনি ইফতারের পর নামজ সেরে রুমে গিয়ে শুয়ে ছিলেন, এর পর আর ফিরে আসেন নি “  ।

“ওনার বয়স হয়েছিলো? রোগ ছিলো?’

“বয়স ৭৫ এর মত, বার্ধক্যে ধরেছে আগেই, নামজ পরতেন চেয়ারে বসে” । বুঝলেন-  লোকটা আরেকটু ঝুকে এসে বলল ,  “ভদ্রলোকের একটা আফসোস ছিলো তারাবিটা পড়তে পারছেন না বলে ।” 

‘মৃত্যুর আগে যন্ত্রনার কোন আওয়াজ শুনেন নি আপনারা?”

“নাহ সেটাও শুনিনি , তবে বড়  ভাই বাবু  তাঁর বাবা রুমে যাওয়ার পর জিজ্ঞেস করেছিলো,তার বাবা আর রুম থেকে বের হবেন কিনা, তাঁর বাবা উত্তর দিয়েছিলেন, আমি আর আসবনা , হয়ত তিনি মেসেজ টা দিয়ে রেখেছিলেন আমরা বুঝতে পারিনি”

“ হতে পারে “ আমি বললাম। মনে মনে তখন চিন্তা করছিলাম মৃত্যুর কথা।

তিনি বললেন “ মৃত্যু কত কাছে তাই না? , এক সেকেন্ড এর ভরসা নাই”

আমি কেন জানি ভয়ে ভয়েই বললাম “হুম”

আমার মনে পড়ে গেলো একটা বাউল  গানের কথা,

“একদিন মা-টি-র ভিতরে হবে ঘর

রে মন আমার

কেন বান্ধ দালান ঘর ।।

প্রাণ পাখী উড়ে যাবে পিঞ্জর ছেড়ে

ধরাধামে সবই রবে, তুমি যাবে চলে

বন্ধু বান্ধব যত,

মাতা পিতা তারার সুতো;

সকলই হবে তোমার পর

কেন বান্ধ দালান ঘর

রে মন আমার

কেন বান্ধ দালান ঘর ।

দেহ তোমার চর্মচর গলে পঁচে যাবে

শিরা-উপ শিরাগুলি ছিন্ন ভিন্ন হবে

মন্ডু মেরুদন্ড সবই হবে খন্ড খন্ড ।।

পড়ে রবে মাটির উপর

রে মন আমার

             কেন বান্ধ দালান ঘর”   (সংগৃহীত )

আরমান ভাই এর সাথে কথা হচ্ছিলো তাঁর বন্ধুর বাবার মৃত্যু নিয়ে।  আসলেই দুনিয়াটা অদ্ভুত মায়ার জালে ঘেরা। সামনে মৃত্যু অথচ আমরা চিন্তায় আছি কখন কি করব, কত টাকা জমাবো , কিভাবে সফল হবো তাই নিয়ে। কিভাবে একটা ব্যবসা কে দার করাবো সে চিন্তা আমদের আছে, আছে ক্যারিয়ার গঠনের দৃড় স্পৃহা, কিন্তু মৃত্যু আর পরবর্তি জীবন নিয়ে আমরা ভাবি কম ,সে জীবনের জন্যে আমাদের প্ল্যান কম। এসব চিন্তা করতে করতে নিজের জীবনের মোটিভ নিয়েই ভয় করছিলো। কিসের পেছনে ছুটছি মিছে মায়া নাতো?!

 

এমন সময় আজান টা দিলো। আরমান ভাই বলনে” চলেন নামাজ টা পরে নি , বিশ্বাস নাই জীবনের “

“হুম চলেন , ক্ষণস্থায়ী জীবনের বিশ্বাস নেই, আগের কাজ আগে সারা ভালো”

ভয়ে ভয়ে গিয়ে জায়নামজে দাড়ালাম, মনে হচ্ছিলো ওইটুকু পৌছানোর আগেই না মৃত্যুর বার্তা চলে আসে।

লেখাটির সাথে সম্পর্কযুক্ত আরো লেখা পড়তে নিজের লিঙ্কে ক্লিক করুন-

   এম্বুলেন্সের আর্তনাদ ও একটি মৃত্যু

রক্তদান ও কিছু অভিজ্ঞতা : জীবনের পাশেই মৃত্যুর হাতছানি

বন্দিনী আফিয়া সিদ্দিকা

 

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন